দিগন্ত পালিত-এর গল্প

ট্যাংরাকুমার
দিগন্ত পালিত (নবম শ্রেণি)

এক সুন্দর বিকাল। সুবোধ বিমলদার চায়ের দোকানে এসে বসল। চা খাওয়া হলে সে বন্ধুদের নিয়ে সিনেমা দেখতে যাবে। আজ তার পকেটে অনেক টাকা। এমনকি যাতায়াতের খরচাও সে বহন করবে। তাই তার মন আজ আনন্দে পরিপূর্ণ।

সুবোধ বিমলদার কাছে গিয়ে বলে, ও দাদা! এক কাপ কড়া করে দুধ চা বানাও তো। একটু তাড়াতাড়ি দাও। তাড়া আছে।

বিমলদা বলে, একটুখানি বোস। এই চা টা হয়ে গেলে তোর জন্য চাপাব।

সুবোধ বসে থাকে। শরৎকাল বলে আকাশে তুলোর মতো মেঘ ভাসছে। বিমলদার চায়ের দোকানের পিছনে সাদা কাশফুলের বাগান। একবার তাকালে আর দৃষ্টি ফেরানো যাবে না, এতই সুন্দর।

এমন সময় পাশ থেকে কে বলল, দাদা, একটু সরে বসবেন ?

সুবোধ সরে বসে। একজন লোক মৃদু হেসে তার পাশে বসল।

লোকটি বলল, দাদা কেমন আছেন? বহুদিন পরে আপনাকে দেখলাম।

সুবোধ লোকটিকে আগে কখনও দেখেনি। তাই একটু হকচকিয়ে গিয়ে বলল, আপনি আমাকে কবে দেখলেন? আমি তো আপনাকে কখনও দেখিনি।

— আপনি না-ও দেখতে পারেন তবে আমি আপনাকে দেখেছি। ওই তো সেদিন আপনি কাকার বাড়িতে যাওয়ার সময় কাদায় পড়ে গেলেন। খুব চোটও তো পেলেন। আপনার কাকা আর তার ছেলে ডাম্বু এসে আপনাকে ধরে বাড়ি নিয়ে গেল।

– মানে আপনি সেদিন ওখানে ছিলেন ?

— ছিলাম বইকি।

লোকটা এক বিন্দুও ভুল বলেনি। সত্যিই সে কাকার বাড়ি যাওয়ার সময় কাদায় পড়ে আছাড় খেয়েছিল। সুবোধ একটু লজ্জা পেল। লোকটা সুবোধের মনের অবস্থা বুঝে বলল, লজ্জা পাবেন না। এরকম তো হতেই পারে।

এসময় বিমলদা চা নিয়ে এল। পাশের লোকটাও এক কাপ চা নিল।

সুবোধ চায়ে চুমুক দিয়ে লোকটিকে বলে , আপনার পরিচয় টা তো বললেন না?

লোকটি বলল, আমার নাম ট্যাংরাকুমার পাল। আমি থাকি সোনামুখী পাড়াতে। ওখানে গিয়ে আমার নাম বললে যে কেউ চিনবে। ট্যাংরাকুমার চায়ে চুমুক দেয়। সুবোধ বিমলদাকে চায়ের দাম দেয়। কিন্তু টাকা ফেরত নেবার সময় একটা কয়েন নীচে পড়ে যায়।
ট্যাংরাকুমার বলে, আমি তুলে দিচ্ছি।

সুবোধ দ্যাখে ট্যাংরাকুমার তার মানিব্যাগ নিয়ে দাড়িয়ে আছে। মুখে তার হাসি।

সুবোধ অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করে, আমার মানিব্যাগ ….

— আপনি যখন বিমলদাকে টাকা মেটাচ্ছিলেন তখন এই মানিব্যাগ হয়তো আপনার পকেট থেকে পড়ে গিয়েছিল।

— আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনি দেখতে না পেলে যে আমার কি ক্ষতি হয়ে যেত…

সুবোধকে কথা শেষ করতে না দিয়ে ট্যাংরাকুমার বলে ওঠে, না না, এর আর এমন কী।

ট্যাংরাকুমার বিমলদাকে চায়ের দাম দিয়ে বেরিয়ে পড়ে।
সুবোধ মনেমনে ট্যাংরাকে আবারও ধন্যবাদ জানালো। সিনেমা শুরু হওয়ার সময় হয়ে গেছে। তাই সুবোধ হলের উদ্দেশ্যে রওনা দিল।

হলের কাছাকাছি একটা দোকান দেখে সুবোধ ভাবল, কয়েক প্যাকেট চানাচুর কিনে নেবে। সে পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করল। কিন্তু মানিব্যাগ খুলে সে দেখে ওর মধ্যে একটা কাগজ ছাড়া আর কিছুই নেই। কাগজে লেখা ছিল…

চারটে নোট আমি নিলাম। তবে এটা আমি নিজের জন্যে নিচ্ছি না। এই লকডাউনে সোনামুখী পাড়ার বহু মানুষ অর্থাভাবে খেতে পাচ্ছে না। তাই এই টাকায় আমি তাদের আজকে খাওয়ার ব্যবস্থা করেছি। আপনার যদি বিশ্বাস না হয় তাহলে আপনি এখানে এসে খোঁজ নিয়ে যেতে পারেন।

ইতি
ট্যাংরাকুমার

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

২ টি মন্তব্য (লেখকের ০টি) | ২ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ০৮-০৬-২০২০ | ২০:৩০ |

    অণুগল্পের এমন ধাঁচ বিশেষ করে আমার কাছে বেশ ভালো লাগে। অভিনন্দন রইলো গল্পকার দিগন্ত পালিত এর জন্য। আর শেয়ার করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। Smile

    GD Star Rating
    loading...
  2. ফয়জুল মহী : ০৮-০৬-২০২০ | ২২:৫০ |

     চমৎকার  লেখনী 

    GD Star Rating
    loading...