ছড়া-সংলাপ
**************
স্বপ্নচারী
শংকর দেবনাথ
সূত্রধরঃ
মা আর বাবা আপিস ঘরে
হাপিস হয়ে থাকে,
কাজের মাসি পাশের রুমে
ঘুমিয়ে নাক ডাকে।
গ্রীষ্মদিনের নিঝুম দুপুর
দৃশ্য ভাসে চোখে,
মন হেঁটে যায় মেঠো পথের
কোন সে অরূপলোকে।
পথের পাঁচালি বইখানা
সামনে আছে খোলা,
বুকের ভেতর কল্প-সুখের
গল্পরা দেয় দোলা।
আঁখির মাঝে পাখির ডানা-
আকাশি নীল আঁকে,
মন হারানো কোন বাউলা
অচীন দেশে ডাকে?
অট্টালিকার কটমটানির
বন্দি জীবন-গোঠে,
সর্বনাশা ভালবাসায়
মন হাঁফিয়ে ওঠে।
ভাল্লাগে না একলা এমন
ছোট্ট ছেলে তপুর-
মন হতে চায় সঙ্গী কেবল
দুর্গা এবং অপুর।
নিরুদ্দেশে নি-উদ্দেশে
কেবল চেয়ে থাকে,
মিষ্টি সুরের বৃষ্টি ঢেলে
হঠাৎ কে গো ডাকে ?
কণ্ঠস্বরঃ
ভাই রে তপু! বাইরে এসো,
প্রাণের ডানা নেড়ে-
নাই রে বাঁধা, যাই রে চলো
বন্দি জীবন ছেড়ে!
তপুঃ
সঙ্গীহারা কারাগারের
নিদয় হৃদয়পুরে-
কে তুমি গো ডাকছো আমায়
অমন মধুর সুরে?
কণ্ঠস্বরঃ
অমন করে ডাকলে তুমি
কেমন করে দুরে –
থাকব বলো। তাইতো এলাম
তোমার স্বপ্নপুরে।
তোমার প্রাণের বন্ধু আমি
নিশিন্দিপুর বাড়ি-
আমিই অপু। ডাকলে তুমি
না এসে কি পারি?
তপুঃ
সত্যি তুমি দুর্গার ভাই?
কিন্তু কেমন করে-
এই শহরে দুই পহরে
আসলে আমার দোরে?
অপুঃ
শব্দরেখায় আঁকা তোমার
সামনে রাখা ওই
পথের পাঁচালির ভেতরে
গল্প হয়ে রই।
এবং থাকি তোমার মত
সব ছোটদের মনে-
বেরিয়ে পড়ি চোখ এড়িয়ে
মনহারানোর ক্ষণে।
তোমার মনে লুকিয়ে ছিলাম
মুখিয়ে ছিলাম একা
সুযোগ পেলাম- সামনে এলাম
এবং হলো দেখা।
তপুঃ
মুক্তিসুখে বুকটি ভরে
পাখির মত উড়ে,
মাঠ-ঘাট-বন ইচ্ছেমতন
বেড়াও তুমি ঘুরে।
ইশকুল এবং পড়ায় আমার
দিন-রাত্তির কাটে,
ঘোরার সময় পাই না মোটে
যাই না খেলার মাঠে।
রুটিন মানা জীবনখানা
ভাল্লাগে না মোটে,
কষ্টগুলো ‘পষ্ট ব্যথায়
বুকের মাঝে ফোটে।
নদীর ধারে মাঠের পারের
দূরের কোনো দেশে,
সমস্তদিন তাধিন তাধিন
বেড়াতে চাই হেসে।
সবুজ মায়ায় গাছের ছায়ায়
বুনোফুলের ঘ্রাণে,
খেলবো দু’জন সুজনসখা
ইচ্ছে জাগে প্রাণে।
অপুঃ
ইচ্ছে যখন দিচ্ছে তাড়া
মনের ভেতর থেকে,
যাই চলো ভাই আমার সাথে
বন্দিজীবন রেখে।
মাঠ-ঘাট-বন ঘুরবো দু’জন
উড়বো ডানা মেলে,
ভাবনাবিহীন সারাটা দিন
বেড়াবো আজ খেলে।
তপুঃ
নাই রে ছুটি, যাই কেমনে!
হায় রে তোমার সাথে!
আসবে টিচার। আমার কী ছার
সময় আছে হাতে?
গড়তে জীবন পড়তে হবে
মা-বাবার আদেশ এ’,
ফাঁকি দিলেই লাল আঁখিরা
সামনে দাঁড়ায় এসে।
ইচ্ছেগুলো দিচ্ছে মেরে
কণ্ঠ চেপে ওরা,
হুলের ঘায়ে ভুলেই গেছি
খেলা এবং ঘোরা।
নাই তো উপায়, যাও তুমি ভাই
পারলে আমায় ভুলো,
আমার এখন গিলতে হবে
বইয়ের আঁখরগুলো।
অপুঃ
সাচ্চা কথা বলছো তুমি?
আচ্ছা আসি তবে,
রাখলে মনে, ডাকলে আমায়
আবার দেখা হবে।
সূত্রধরঃ
যাচ্ছে ফিরে ধীরে ধীরে
আপন দেশে অপু,
কষ্টে-শোকে নিষ্পলকে
দেখছে চেয়ে তপু।
ভাবছে মনে এই জীবনে
নেই মজা-সুখ কিছু,
ভালই হতো যেতাম যদি
অপুর পিছুপিছু।
খেদ ও রাগে হঠাৎ জাগে
অদম্য জিদ মনে,
এই কারাগার ভেঙে এবার
যাবেই মাঠে-বনে।
“দাঁড়াও অপু” – বলল তপু
চেঁচিয়ে জোরে জোরে,
“চাই যেতে ভাই, নাও না আমায়
তোমার সাথি করে।”
বলেই দাঁড়ায়। এক পা বাড়ায়।
যাবেই অপুর কাছে,
তাকিয়ে দেখে চোখ পাকিয়ে
স্যার দাঁড়িয়ে আছে।
তন্দ্রাঘোরে মনরা কেবল
স্বপ্নে বেড়ায় ভেসে,
বুঝলো তপু। খুঁজলো আর
বন্ধু অপুকে সে।
loading...
loading...
এমন লেখাকে সম্ভবত পদ্য গল্প বলে। ঠিক বললাম কিনা জানি না কবি। ধন্যবাদ।
loading...
ধন্যবাদ। শুভকামনা সতত।
loading...
হা হা হা বেশ ভাল লেগেছে। পদ্য রুপে গদ্য। বেশ বেশ।
loading...
ধন্যবাদ। শুভকামনা সতত।
loading...
পদ্য কথায় নন্দিত শুভেচ্ছা মি. শংকর দেবনাথ।
loading...
ধন্যবাদ। শুভকামনা সতত।
loading...
সম্ভবত অনেকদিন পর এই ধাঁচের পদ্য সংলাপ পড়লাম কবি দা। ধন্যবাদ।
loading...
ধন্যবাদ। শুভকামনা সতত।
loading...
অসাধারণ কবি শংকর দা। খুব ব্যস্ত সময় পার করছেন মনে হয়।
আগের মতো আর নিয়মিত দেখি না যে !!
loading...
ধন্যবাদ। শুভকামনা সতত।
loading...
শুভেচ্ছা নিন প্রিয় কবি দা।
loading...
শুভেচ্ছা
loading...
বাব্বাহ, কি বিশাল কবিতা?
loading...
ধন্যবাদ। শুভেচ্ছা।
loading...