অনেক উচ্চ আকাঙ্খা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় চান্স পাবার পর শিক্ষক হবার স্বপ্ন নিয়ে আসা ছেলেটা কোথায় যেন গিয়ে একটু খেই হারিয়ে ফেলে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস করতে গিয়ে প্রথম দিকে প্রতিটা ক্লাস সিরিয়াসলি করা ছেলেটাও কোথাও গিয়ে যেন ভাবতে শুরু করে আমার পক্ষে এগুলো সম্ভব নয়। বিশ্ববিদ্যালয় মানে স্বাধীন জায়গা। পুরো ক্যাম্পাসটাই আমার।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সব প্রোগ্রামে অ্যাটেন্ড করার পর একঘেয়ে লাগতে লাগতে একসময় পুরো ক্যাম্পাসটা নিজের করে নিতে আর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশাল জগতে এসে স্বাধীনতার সুখ পেতে নিজের ডানা মেলতে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার আগ পর্যন্তও যেই ছেলেটা নিয়মিত লেখাপড়ার কাজে সময় দিতো, সেই ছেলেটা ও কেন যেন একটু এলোমেলো হয়ে পড়ে… বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন বন্ধু, সিনিয়র ভাই -আপু এগুলো নিয়ে এক জগৎ গড়ে ওঠে। জগতটাতে নেই কোনো বাঁধা। দেখবার, বলবার মত কেউ নেই। সারাজীবনে একটা সিগারেটে টান না দেওয়া ছেলেটাও এখানে এসে হয়ে যায় চেইন স্মোকার!
মনস্তাত্ত্বিকভাবে প্রতিটি মানুষই চায় নিজেকে সুপিরিয়র পজিশনে নিয়ে আসতে; যখন সে অনুভব করতে থাকে পলিটিক্যাল পার্টির দিকে গেলে অন্যদের থেকে এগিয়ে থাকা যায়, ক্ষমতা দেখানো যায়, তখন সে নিজেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনে যুক্ত হয়ে যায়। দেশপ্রেমের জায়গা থেকে রাজনীতি সেটি কিন্তু নয়। স্রেফ ক্যাম্পাসে নিজের অাধিপত্য বিস্তার, নিজের বন্ধুদের ওপর ফাঁপরবাজির জন্য!
আবার আস্তে আস্তে পরিচিত হতে থাকে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের বড় ভাইদের সাথে যারা ঠিক একই পন্থায় জীবনের অর্ধেক অংশ হারিয়ে ফেলেছে কোন গন্তব্য ছাড়াই। চলতে থাকে আড্ডা,তাস ঘোরাঘুরি। পড়া বলে কিছু একটা জিনিস ছিলো সেটি মনে পড়ে পরীক্ষার আগের রাতে! কিছু ছেলে নিজেকে শাহরুখ খান, সালমান খান ভাবা শুরু করে… ঠিক এভাবেই কাটতে থাকে বছর… বছর পেরোলে তার জুনিয়র আসে জুনিয়রকে নিয়েও একই পথের দিকে এগুতে থাকে।
মুদ্রায় ওপিঠটাতেও ঘটে আরো অনেক কিছু। কোনরকমে ভর্তি পরীক্ষাতে পাশ করা ছেলেটাও ভালো করতে থাকে। অনেকক্ষেত্রে নিজ ধর্মের প্রতি অনেক বেশী মনোযোগী হয়ে যায়। নিজের পরিবারের দিকে তাকিয়ে দু তিনটে টিউশনি করিয়ে নিজের জীবনের লক্ষ্যের দিকে এগুতে থাকে। জীবন সংগ্রাম তো এদেরই।
আস্তে আস্তে বিভিন্ন সংগঠনের সাথে কাজ করতে করতে কাজের এক্সপেরিয়েন্সটা অর্জন করে নেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া হিসেবে নিজের দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে কাজ করে দেশ, সমাজের জন্য। জীবনে বিতর্ক না করা ছেলেটি, জীবনে কোনদিন বক্তৃতা না দেওয়া ছেলেটিও নিজের জীবন গড়ার জন্য প্রয়োজনীয় সকল কিছু অর্জন করে নেয় এই বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে!
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনটা বড়ই অদ্ভুত। কেউ সেই জীবনটাকেই কাজে লাগিয়ে নিজের জীবন বদলে ফেলে। আবার কেউ কেউ আবার তার জীবনটাকে গলা টিপে হত্যা করে ফেলে।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে রাজনীতি চর্চা হওয়া চাই সুস্থ রাজনীতির চর্চা। নিজের দেশপ্রেমের জায়গা থেকে দেশকে ভালোবাসার জায়গা থেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটা আনাচে-কানাচেতে যে জ্ঞান ছড়ানো থাকে তা অন্বেষণ হওয়া উচিৎ একজন ভার্সিটির পড়ুয়া স্টুডেন্টের কাজ। আমরা যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ি তাদের একটা বড় অংশই থাকি আমরা মধ্যবিত্তরা। যাদের পরিবার তাকিয়ে থাকে তার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া সন্তানটির ওপর।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষে আপনি কোথায় যাবেন সেটা নির্ভর করছে আপনার ওপর।কথায় বলে না, ছুরি দিয়ে ফল কেটেও খাওয়া যায় আবার মানুষ হত্যাও করা যায়!
loading...
loading...
"বিশ্ববিদ্যালয় জীবনটা বড়ই অদ্ভুত। কেউ সেই জীবনটাকেই কাজে লাগিয়ে নিজের জীবন বদলে ফেলে। আবার কেউ কেউ আবার তার জীবনটাকে গলা টিপে হত্যা করে ফেলে।" ___ সঠিক।
loading...
Good post
loading...