আমি এক কাপ চা। তোমরা যে সকালে দুপুরে সময়ে অসময়ে পান করো আমি সেই চা। কখনো কি ভেবে দেখেছো… আমি ও যদি কথা বলতে পারতাম তবে কেমন হতো… আর কিই বা বলতাম ! আমার জীবনকাল তো মাত্র কয়েক মিনিট। কেউ আমায় খাও বেশী মিষ্টি দিয়ে… কেউ খাও কম দিয়ে। কেউ আমায় বিস্কুট ডুবিয়ে খাও। কেউ খাও বিড়ি সিগারেটের সাথে। তবে তাতে আমার অভিমান নেই। অভিমান এই যে আমার কথা কেউ ই বলে না। তাই আজ যখন বলার সুযোগ হলো একটু না হয় বলিই আমার গল্প।
আমার সম্পর্কে মানুষের মুখে প্রচলিত গল্প আছে চীনের নাকি এক রাজা ছিলেন। তিনি নাকি ছিলেন ভীষণ স্বাস্থ্য সচেতন। সবসময় ফুটিয়ে পানি পান করতেন। হঠাৎ এমনি এক সময় কোত্থেকে এক পাতা এসে পড়েছিল সেই পানির মধ্যে। সেই পাতাটাই নাকি ছিলাম আমি। সেই থেকেই নাকি আমার “চায়ের” জন্ম। সে গল্প সত্যি না মিথ্যা তা জিজ্ঞেস করো না বাপু…. সে ম্যালা দিন আগের কথা। বয়স ও হইলো অনেক সেই গল্প আমার মনে নেই।
তবে আমি গাছ হিসেবে ছিলাম অনেক আগে থেকেই। তবে ৫০০০ বছর মত আগে তোমরা গাছ থেকে পাতা পেড়ে প্রক্রিয়াজাত করে বানিয়েছিলে আমাকে। আমার নামটা আসে গ্রিক দেবী থিয়ার নাম থেকে। থিয়া থেকে চি… তারপর তোমাদের ‘চা’ তারপর থেকেই তোমাদের নিত্য সঙ্গী আমি ‘এক কাপ চা’। তখন ছিলাম একরুপে আস্তে আস্তে আমার বয়সটাও বাড়তে থাকে… রং বর্ণ ও বদলাতে থাকে এভাবেই আমার থেকে জন্ম নিয়েছে দুধ চা, লেবু চা, লবঙ্গ চা অপরাজিতা, মরিচ চা, মশলা চা, চকলেট চা, মাল্টা চা, সাত কালারের চা আরো কত কি… আমাদের বংশ এখন বিশাল বড় বুঝলে… কি কি প্রকারের চা পাওয়া যায় তা আমি বলেই শেষ করতে পারছিনে… যাকগে সে কথা। কিভাবে এলাম তোমাদের দেশে সেটা শুনতে ইচ্ছে হয় না তোমাদের? আমি ছিলাম সিলেটের জঙ্গলে। ১৯০ বছর ধরে শাসন করা ব্রিটিশরাই আমাকে উদ্ধার করে। সময়টাতেই আমায় খুঁজে পায় ওরা। আর তারপর থেকেই সকালে বিকালে সময়ে এসময়ের সঙ্গী আমি। আমার নাকি বেশ কিছু ঔষধী গুন ও আছে.. কি গুন তা আমি জানি না.. আমি তো বাপু ডাক্তার না। কি গুন তুমি তাদের থেকেই জেনে নিও।
জানো আমি রাজা, প্রজা, ভিখারি আমির সবারই। সারাদিনের ক্লান্ত শ্রমিক কিংবা ব্যস্ত কর্মকর্তা কর্মচারী কিংবা ছাত্র- শিক্ষক, বন্ধু সবার কাছের আমার আসা যাওয়া। রাজনৈতিক আলাপ আলোচনায় আমার আনাগোনা, অতিথি আপ্যায়নে আমি, কিংবা আড্ডাতে কোথায় আমি নেই বলো তো? মাঝে মাঝে তো আমার কাপে তোমরা ঝড় ও তুলে ফেলো! ঠান্ডা লেগেছে আমি আছে… তুমি ক্লান্ত আমি আছি.. তোমার মাথাব্যাথা আমি তো আছিই… রাত জাগা প্রয়োজন আমি আছি। রাজনৈতিক আড্ডা আরে আমি আছি না। আর কত থাকবো বলো তো.. সারাজীবন থাকতে থাকতে আমি তো আজ ক্লান্ত। আমায় নিয়ে অনেক সাহিত্যিক অনেক কবিতা গল্প লিখে ফেলেছে। এটা ভেবে বেশ গর্ববোধ হয় আমার। আমাকে খাওয়ার পর কাপে থাকা অংশটা তো ছুড়ে ফেলো মাটির বুকে.. আমার তখন অনেক কষ্ট হয়। আমি তো তোমাদেরই অংশ তারপরেও কেন? তোমাদের মনে একটুও দয়া হয়না বুঝি! যাক গে.. আমার আজ যাবার সময় হলো… আজ আসি যদি কখনো পারি অন্যদিন আরো কিছু বলবো….
শিক্ষার্থী–
শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউট
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
loading...
loading...
লেখা পড়ে বিমোহিত হলাম।
loading...
আপনারা আছেন বলেই কলম ধরতে সাহস পাই
loading...
অসাধারণ লাগে আপনার এমন লিখা। বারবার পড়তে ইচ্ছে করে। শুভেচ্ছা মি. গালিব।
loading...
ধন্যবাদ। দোয়া করবেন যেন আরো লেখা লিখতে পারি
loading...
নিশ্চয়ই দোয়া করি ভাই।
loading...