বই আলোচনা
কালের নটরাজ (কাব্যগ্রন্থ)
কামরুল ইসলাম
আমি মহাকালের নটরাজ
ভূমি থেকে উত্থিত শিবের অগ্নিবাণ, দ্রোহী শুদ্র চণ্ডাল
আফ্রিকার লুমুম্বা, স্পার্টাকাস, রাশার লেনিন
আমিই শৌর্যসাধক, বীরত্ব আমার নাম
কালের মহিমায়, মহানিনাদের নৈপুন্যে
প্রেম ও শক্তির প্রদীপ জ্বালাই।
💢বাস্তবতার অনুধাবন অনুপম ভাষাশৈলী স্বতন্ত্র পঙ্ক্তিমালা কবিতায় লক্ষনীয়।
নটরাজের বার্তাঃ
হে কালজয়ী মানব ! তোমার জন্য শুভ বার্তা
বিশ্বব্যাপী নতুনেরে করে আবর্তন …..
নটরাজ মানবভূমির রূপ পরিদর্শের বিশ্বব্যাপী পরিভ্রমনে পরিব্যাপ্ত, ক্রমান্বয়ে বিশ্বরূপে আবগাহন…
বিশ্বরূপঃ
মহাসাগরের জলস্রোত ঘূর্ণিজল, উৎকণ্ঠার অবসাদে নটরাজ, শিল্পের উদ্যান ফসলি স্বপ্ন উঁকি দেয় জলের বুঁদবুদে, …… বিশ্বরূপের মঙ্গলপ্রদীপ-অফুরান নিবেদনে। (পৃষ্ঠা ১১-১৪)।
💢কবির কবিতায় চৌকষ শব্দচয়ন সতন্ত্র ধারা মনকে ভরিয়ে তোলে। রোমান্স, প্রেম, বিরহ জীবন ও জগতের বাস্তব প্রকাশ কবিতার পঙ্ক্তিমালায়।
নটরাজঃ
এ ভর আয়োজন বিমর্ষ হেমলকে নটরাজ দাহিত স্বপ্ন বাসরে চেয়ে থাকে বিশ্ব পটভূমির ওপর- এ কোন বিশ্বরূপ ! যে রূপে অবগাহিত, তা কী নটরাজের বিশ্বালয়!
গানঃ
এমন ভূবন তারে খুঁজে ফিরি, যে আছে প্রাণে প্রাণে মনের তারে প্রাণে প্রাণে খুঁজি, এ ভূবনে … ওগো দাও সেই পূণ্যভূমি, মানবের পূণ্যভূমি ওগো, খুঁজে ফিরি যে আছে প্রাণে প্রাণে ।
মর্ত্যবিহারঃ
উষসীর রূপের মর্ত্যবিহার নটরঙ্গিনী, আঁচলজুড়ে লাবন্য নুয়ে পড়ে-রৌদ্রের ভেতর মুঠো আলোয় ভরে থাকে বিস্ময়, নয়নের শোভায় প্রভাতের রূপে-সপ্তগ্রামের নগর …..
আয়োজনঃ
সন্ধ্যের খোলা আকাশ, পড়ন্ত রোদের প্রতিশ্রুতি, সজীব স্বতন্ত্র সত্তায় গভীর স্বপ্ন নিয়ে গড়ে তোলে অনুরাগ ….. শতাব্দীর তারার মেলায়-নটরঙ্গিনীর উৎসব।
নীলসন্ধ্যাঃ
বিমর্ষ অনুভূতির মায়াশ্রমের প্রেমলীলায় মগ্ন নটরাজ ও নটনন্দিনী।
চাঁদের নটরঙ্গঃ
নীলপদ্মের ভ্রমে শূন্যরূপে নটরাজ,রূদ্ররূপে করে গ্রস …. যদি জানতে-রূদ্রের অনলে চাঁদ,অপরূপার নটরঙ্গে। (পৃষ্ঠা ১৫-২৪)।
💢বিশ্বব্যাপী অস্তির সময় নাগরিক জীবনের বাস্তব উপলদ্ধি ও পূর্ণ সারসংকলন পরিলক্ষিত হয় কবিতায়, শক্তি ও প্রেমের প্রতিক নটরাজের উত্থান মঙ্গলময় ধারার নতুন সমন্বয়ে কবিতাকে করেছে প্রাণবন্ত।
মানচিত্রঃ
চারদিকে শুকনো পাতার শিস, ভ্রমনের গুঞ্জন
গাঙশালিক ভুলেছে পথ, পথের ঠিকান
ঘাসের ওপর ফড়িং প্রজাপতি, মাঠে মাঠে ঘাস
আমি নীরব শান্ত, শতকলের ঘুমন্ত নটরাজ, দ্বারের প্রহরী
আকাশজুড়ে মেঘ আর নীলিমার ভস্ম, পড়ে থাকে ঈগলের মানচিত্র।
নবীন আলো ক্রমশঃ মেলে ধরে প্রেম
বীণার সুরে অধীর অনুরাগ
তবু ঐ রূপখানির ভেতর নোনাজল
ভেঙেছে দেয়াল…..
ধূসর স্বপ্ন অভিসারে।
কেতকীঃ
আচার্যের ধর্ম কুটির অন্তরলোকের সৌন্দর্যলোক অষ্টাঙ্গিক মার্গে
পরিশোধিত, জীবনের মোহিত আবেশে সম্যক দৃষ্টিপ্রাপ্ত…..
অশনি বাহনঃ
জলে জলে তরঙ্গ-ভঙ্গে কলধ্বনির উচ্ছ্বাসে নটিনী
নৃত্যপটিয়সী, মৃদঙ্গের তাল-বেতাল উতাল উন্মত্তে
শাদাটে নীলে নীলে নিরন্তর ভাসমান উদাস আরতি
পরম রঙের জ্বলন্ত পূর্ণিমায় হিপ্লোলিটাসের অঞ্জলি।
নির্বসিত প্রেম অলয় মৈনাক পর্বত, নটরাজের ভ্রমবশতঃঅবজ্ঞায়
নটিনী প্রলয়িনীর রূদ্ররূপে….
নটিনীর প্রেমঃ
নটরাজের স্বপ্ন অনুভূতিতে নটিনীর কালচক্র অনুভূত, কালে কালে
এই চক্র নবকালের উদ্বোধনে সহায়তার প্রতীকরূপে আবির্ভূত….
ফাগুণের রূপেঃ
ফাগুণের রূপে, শূন্য পেয়ালা, তবু শূন্য নয়
অপরূপের রূপ, নিরন্তর সব পিয়াসে মগ্ন হয়
বসন্তের নারী, ফুল উদ্যান, সরাব যত সবি
জন্ম মোর ফাগুণে, উন্মত্ত ফাগুণের কবি।
এসো ধ্বংস করিঃ
মঙ্গল প্রভাতের সেই অনন্দধ্বনিতে তুমি ওঠো
সহস্র বছরের অভিশপ্ত নোনাজল, সেবন করো
দ্রোহে দ্রোহ কর আঘাত, ওরা ধ্বংস হোক।
অনুভূতিঃ
প্রশান্তির সূর্য উড়েছিল
ও-বেলায়
স্বপ্ন দোলে
দিকভ্রান্ত নাবিকের….
প্রলয়ের বাদ্যঃ
ততক্ষণে তটে তটে বিদ্রোহ,
মরা গাঙে পড়ে থাকে শাদা বক …
যদি কিছু হতে না পারি, তবে দ্রোহী হবো
ধ্বংস প্রলয়ের বাদ্য বাজাবো নিরন্তর।
পৃথিবীর বুকে সব প্রেম
শত রূপে শত ভাবে,
তবু নিরবধি
মানবের তরে মানব হয়ে….
নটিনীর অভিলাষঃ
ওগো মহাকালের নটরাজ। শক্তির পূজারি নটরঙ্গিনী তোমারি দ্বারে
পূজার অর্ঘ্য লও, এসো শক্তির যুদ্ধাস্ত্রে, এসো ভালোবাসায়, এসো প্রেম-প্রদীপে
মহাকালের নব সূত্রপাতে এসো, ধ্বংস করো বৈষম্যের আঘাত।
আমি যে প্রেমের সারথী, মহাকালের প্রেমবীণায় এসো
জীবনের জয়গানে এসো, এসো সৃষ্টি প্রলয়ের আনন্দযজ্ঞে।
গানঃ
এমনও প্রেম দিও নাগো তুমি
এমনও ভরা দিনে
নিশিদিন ভাবি তোমারে, ওগো প্রিয়
এমনও প্রেম দিও না গো তুমি
আমিই নটরাজঃ
আমিই সর্বকালের নটরাজ
যুগ থেকে যুগান্তরে, শতক থেকে শতকে
রোদ ও ছায়ার মতো বারবার ফিরে আসি
বীরত্বের মহাযজ্ঞে, সৃষ্টি প্রলয়ের বাঁশি বাজাই
মহাধূমকেতু হয়ে প্রেয়সীর ললাটে, এঁকে দেই
শান্তির বার্তা ! মহাশান্তির বিশ্বালয়। (পৃষ্ঠা ২৪-৬৭)
💢কবি, প্রাবন্ধিক, সংগঠক কামরুল ইসলাম বাংলা সাহিত্যের নতুন ধারার কবি, বিশেষ করে তার রোমান্টিক কবিতা, গান, গদ্য কবিতায় রয়েছে নতুনত্ব। আধুনিক কাব্যমালা, শব্দবিন্যাস, জীবনও বাস্তবতার অনুপম কথাচিত্র উপস্থাপন করেছেন কবিতার ক্যানভাসে, কবিতায় এঁকেছেন জীবনচিত্র। নিজস্ব শব্দচয়ন, বিষয়বস্তুর এক নিপুণ গাঁথুনিতে কবিতাকে করে তুলেছেন রঙিন। ঐক্যতান, প্রেম, বিরহের সতন্ত্র সত্তা আধুনিক কবিতার পাঠকের হৃদয়ে স্থান করে নিবে খুব সহজেই।
কালের নটরাজ
কামরুল ইসলাম
প্রচ্ছদ এঁকেছেন চারু পিন্টু
প্রথম প্রকাশঃ ফেব্রুয়ারি ২০১৬
প্রকাশকঃ মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন
একাত্তর প্রকাশনী
৭৮ দক্ষিণ সায়েদাবাদ
ঢাকা-১০০০
মূল্য : ১৫০ টাকা।
লেখকঃ
শান্ত চৌধুরী
কবি, প্রাবন্ধিক, সংগঠক
যোগাযোগঃ [email protected]
loading...
loading...
বুক রিভিউয়ে কথাকাব্যের দারুণ ব্যবচ্ছেদ ঘটিয়েছেন মি. শান্ত চৌধুরী। গুড লাক।
loading...
ধন্যবাদ প্রিয় দাদাভাই।
অনাবিল হউক প্রতিটি প্রহর ।
আপনার নতুন লিখা চাই পাতায়।
loading...
loading...
কালের নটরাজ (কাব্যগ্রন্থ) বই আলোচনাটি মন দিয়ে পড়লাম। যা বলার আপনিই বলে দিয়েছেন। পাঠকদের জন্য তেমন কিছু রাখেন নি কবি শান্ত চৌধুরী ভাই।
loading...
ধন্যবাদ কবি
loading...
মঙ্গল প্রভাতের সেই অনন্দধ্বনিতে তুমি ওঠো
সহস্র বছরের অভিশপ্ত নোনাজল, সেবন করো
দ্রোহে দ্রোহ কর আঘাত, ওরা ধ্বংস হোক।
মনে হলো অসাধারণ একটি কবিতার আলাপন। ভালো লিখেছেন ভাই।
loading...
ধন্যবাদ আপু ।
কবি লিখেছেন, আমি শুধু বই থেকে তুলে এনেছি।
শুভ কামনা সতত।
loading...
মুগ্ধ হয়ে পড়লাম কবি শান্ত ভাই।
loading...
ধন্যবাদ কবি দা
loading...
দারুন লিখেছেন!
এ ধারা অব্যহত রাখুন।
loading...
ধন্যবাদ ভাই
loading...
কবি কামরুল ইসলাম এর জন্য অভিনন্দন। যিনি নিশ্চয়ই ধন্য হয়েছেন আপনার রিভিউটি পড়ে। অভিনন্দন জানাচ্ছি প্রিয় কবি দা।
loading...
ধন্যবাদ রিয়া দি।
আপনার লিখার মতো, মন্তব্য ও চমৎকার।
শুভ কামনা নিরন্তর ।
loading...