শাড়ী পড়ে এসো ফাল্গুনে

149

ঝরা বসন্তে ফুটেছে অগণিত ফুল। ফুল দিব দিব বলেই আর সাহস হয়নি। চুপে চাপে কেটে গেল কতগুলি বসন্ত। থাক সংখ্যাটা বলতে চাই না। তোমরা মেয়েরা যেভাবে বয়স লুকিয়ে রাখো, আমি না হয় আমার পেরোনো বসন্তের অংকটাও লুকিয়ে রাখি। আজ ফুল ফোটা বসন্ত। তার মধ্যে ১৪ ফেব্রুয়ারি। বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। দিবস সম্পর্কে ধারণা, প্রাক ইতিহাস তোমার জানা। তা আর নতুন করে বলতে চাই না। ভালোবাসা তো প্রতিদিনই হওয়া দরকার। বছরের একটি দিন ঘটা করে, ধুমধাম করে পালন করে যাব, এটা আমার কাছে বড্ড বেমানানই লাগে।

যাই হোক, আজ নদীর তীরে বসে বাদাম খেতে ইচ্ছে করছে। হয়তো বলবে, গোলাপ না দিয়েই বাদামের কথা বলছি। আজ ৩৬৫ গ্রাম বাদাম কিনবো। তারপর সেই বাদাম নিয়ে নদীর কিনারে বসে চার পা নদীর জলে রেখে সিক্ত হব। আর বাদাম খেতে থাকবো। প্রয়োজনে আবারও ৩৬৫ গ্রাম বাদাম কিনবো। এভাবে প্রতিবারই ৩৬৫ গ্রাম। হয়তো দোকানদার বিরক্তই হবেন, কিন্তু ইচ্ছে চাওয়ার কাছে কিছু করার নাই। আর গোলাপের কথা তুমি ভেবো না। তোমার পছন্দ আমি বুঝতে পারি। হয়তো সাহস করেই এতোদিন কাছাকাছি আসা হয়নি। এখন মেয়েরাই আগেভাগে লাভ ইউ বলে ফেলে। এখন আর বুক ফাটে, মুখ ফোটে না’এরকম অবস্থা নেই। এই দেখ, তোমার কথাই বলি, প্রথম তুমিই আমাকে প্রোপোজ করলে। আমি তো লজ্জাতেই বলতে পারিনি,তবে মনের ভেতর একটা সাহস তৈরি হলেও সেটা উদগীরণ করা সম্ভব হয়নি।

তুমি এই বসন্তে শাড়ি-ব্লাউজসহ সব ম্যাচিং করেই এসো। তোমার দেয়া পাঞ্জাবিটাও পড়বো আজ। যদিও লাজুক ছেলেটা আজ সাহসী হয়ে উঠতে চেষ্টা করছে। সেই সাহসের দূর্বার প্রতীক তুমি। তোমার সেদিনের আলতো স্পর্শ আমাকে উন্মাদ করে ফেলেছিল ভেতরে ভেতরে। বৈবাহিক সম্পর্ক থাকলে হয়তো ফুলশয্যা হয়ে উঠতো সেদিনের পূর্ণিমার রাতে। ভাগ্যিস লাজুক ছিলাম বলেই, কিন্তু তুমি তো রেগেই গিয়েছিলে। এযুগে এরকমটা হয় নাকি। গত ফাল্গুনের আগে জিন্স-টিশার্ট পড়ে এসে হাজির হলে তুমি। উদাম বুক। কামশ্রিত মুখ। এতে কিন্তু আমার মধ্যে আকর্ষিত হয়নি। তোমাকে শাড়িতেই বেশ মানায়। সব কিছু। এজন্যই এই ফাল্গুনের বসন্তে শাড়ি পড়তে বলছি। কেমন যেন বাংলার নারীর পুরো রূপ-যৌবন শাড়ীতেই ফোটে উঠে।

পাশ্চাত্য সংস্কৃতির আদলে প্যান্ট-টিশার্টৈ দেখতে মন চায় না তোমাকে। নদীর বুকে খোলা হাওয়া নেয়ার পর আমরা ফুলবনে যাব। কথাটা চেপে রাখতেই চেয়েছিলাম, তোমাকে সারপ্রাইজ দিব বলে। কিন্তু পারলাম না, আজ যেন ঝরণা ফোয়ারার মতো মন থেকে ভালোবাসা কথাগুলো বের হতে চাইছে। তাই বলেই ফেলি। এখন তো আর আগের মতো কাগজে-কলমে লিখতে হয় না। হাতে হাতে স্মার্টফোন, ইন্টারনেট, ফেসবুক/টুইটার, ম্যাসেঞ্জার, মেইল, কত অগণিত সোস্যাল নেটওয়ার্ক। তাই হাতের টাচেই লিখছি। তুমি আমাকে প্রায়ই চিঠি লিখতে বলতে। লিখতামও।

এখন প্রযুক্তির যুগ, ফেসবুক মেসেঞ্জারেই কত কথা হয়। প্রায় চব্বিশ ঘন্টাই এই মেসেঞ্জারে ডুবে আছে গোটা বিশ্বের প্রযুক্তি ব্যবহারে মানুষ। আমরা দুজনেও তেমনটা ব্যতিক্রম নই। তবে আমাদের কথা একটু কমই হয়। কম লেখা তোমার পছন্দ হয় না, যে কথাটাই লিখি না ক্যান, সেটা তোমার বড় হওয়া চাই, শিল্প থাকা চাই। তাই মাঝে মধ্যেই চিঠি লিখতে হয়। রাত পোহাবার কত দেরি-পাঞ্জেরির কবিতাটা মনে পড়ছে বারবার। রাতটা দীর্ঘ মনে হচ্ছে। কখন শেষ হবে এ অপেক্ষার দীর্ঘ রাত। কখন আমরা মিলিত হব, হাতে হাতে গোলাপ নিয়ে সামনে এসে বলবো-হ্যাপি ভ্যালেনটাইন ডে। আরো কত কিছু…।

ভোরের ট্রেনেই তুমি নেমে যাবে। তারপর একটি লোকাল বাসে চলে এসে ফোন দিবে। তোমার জন্য সবকিছু রেডি করে রেখেছি। জার্নিতে কত ক্লান্তি, তারপরেও আসছো আমাকে ভালোবাস বলে। ভালোবাসা সেটাই, যেটা কঠিনকেও জয় করে অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারে। তো তুমি ভোরের ট্রেনে আসছো, ভেবেই চোখে ঘুম আসছে না। প্রিয় মানুষের জন্য রাত জাগাটাও স্বর্গ হয়ে উঠে। তুমি সেই প্রেম স্বর্গ। থাক আর কথা বাড়াবো না।

অনেকদিন পর আবার লিখলাম। ভেবেছিলাম আরো কিছু লিখবো। সেই ধৈর্য আর কুলাচ্ছে না। প্রযুক্তি যুগে স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, কম্পিউটারে লিখতে লিখতে সেই কাগজ কলমে লেখার বিশুদ্ধতা যেন আমরা হারিয়ে ফেলছি প্রতিনিয়তই। তো পহেলা ফাল্গুনের শুভেচ্ছা নিও। বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে তোমাকে কাছে পেয়ে বলে যাব জমাটবাঁধা সেই ভালোবাসার গল্প। তুমি শুনতে শুনতে হয়তো খেই হারিয়ে ফেলবে। তবুও বলতে থাকবো, যতোদিন না আবার ৩৬৫ দিন ঘুরে আসে। #

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
শাড়ী পড়ে এসো ফাল্গুনে, 5.0 out of 5 based on 1 rating
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

১টি মন্তব্য (লেখকের ০টি) | ১ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ১৪-০২-২০২৩ | ২০:০২ |

    অনেকদিন পর আপনার অসাধারণ এক গদ্য-গল্প পড়লাম। পড়তে পড়তে নস্টালজিকও হলাম। অনস্বীকার্য যে, বরাবরই আপনার লিখা আমার খুবই ভালো লাগে।

    আশা করবো ভালো ছিলেন। সময় বের করে শব্দনীড়কে সময় দিলে ভালো লাগবে। শুভেচ্ছা। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

    GD Star Rating
    loading...