ছেলেটির পা নেই
দু’টো পা-ই নেই তার
পা দু’টো হারিয়েছে সে শিশু বয়েসেই
একটি গাড়ী এক্সিডেন্টে
তখন সে ক্লাশ থ্রীতে পড়ত।
একদিন কথা হলো তার সাথে আমার
বলল তার পা-না থাকার কষ্টের কথা
বললাম-কিভাবে চল ?
ক্রাচে ভর করে।
পঙ্গু জীবনে এ এক অধ্যায়
আমি ভাবতে লাগলাম–।পরে জিজ্ঞেস করলাম,
লেখাপড়া কর ?
হ্যাঁ করি, এবার এসএসসি জিপিএ-৪.৬৫ নিয়ে পাশ করেছি।
কলেজে ভর্তি হব ভাবছি, কিন্ত্ত টাকা নেই,
কলেজে ভর্তি হব কি করে ?
কথাটা শুনে কষ্টই অনুভব হলো-
পঙ্গু জীবনে রোজগার কোথায়?
যে সংসার তার অভাবের দৈন্যশালা!
আমি পড়তে চাই,
প্রথম শ্রেণীর একজন অফিসার হতে চাই,
গভীর স্বপ্ন নিয়ে বলে ছেলেটি।
আসলেই কি সম্ভব! তবু আমি তাকে উৎসাহ দিতে-
হ্যাঁ, তুমি পারবে, তোমার মধ্যে অদম্য ইচ্ছা-শক্তি আছে,
তুমি ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভর্তি হতে পার,অথর্ব (ছেলেটির নাম)
কোন বিষয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়লে ভাল হয়,বলতে পারেন?
কম্পিউটার সায়েন্স-এ
কম্পিউটার! কম্পিউটার!!
ছেলেটি বিস্ময়ে বলে উঠলো।
হ্যাঁ,কম্পিউটার।
কিন্তু টাকা পাব কোথায় স্যার?
টাকা তোমার হবে অথর্ব, সাহস যুগিয়ে বলি।
কেমন করে স্যার?
তুমি পার্ট জব করবে, আমি ব্যবস্থা করে দেই।
পার্ট জব!
হ্যাঁ পার্ট জব, এতে তোমার রোজগারও হবে
লেখাপড়া হয়ে যাবে তোমার।
ছেলেটি চিৎকার করে বলে উঠলো-
আমি পথ পেয়ে গেছি,
আমি এখন আমাকে নতুন করে আবিস্কার করব
সম্পূর্ণ রুপে নিজেকে গড়ে তুলব আমি
আমি হব সেরা কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারদের অন্যতম
পঙ্গু জীবনে ভিক্ষাবৃত্তি ভাল নয়,
ভাল নয় জীবনে অভিসাপ নিয়ে বেচেঁ থাকার
আমার পা নেই তাতে কোন দুঃখ নেই
দুটি হাত আর সুস্থ-সুন্দর মস্তিস্ক তো আছে
আমি এ দুটোকে কাজে লাগিয়ে
কাংখিত স্বপ্নকে জয় করবই আমি।
ছেলেটি পার্ট জব-এ কাজ নেয় কম্পিউটার সেন্টারে
অবশ্য পূর্বে তার কম্পিউটার ধারনাটা ছিল
এসএসসি তে কম্পিউটার বিষয়টিও ছিল।
এতে তার বুঝতে সহজ হয়েছে,আর
আগ্রহ জন্মেছে তার প্রবল,
তাই সে গভীর রাত পর্যন্ত পাঠ্যবাসে মগ্ন থাকে
কম্পিউটার সায়েন্স নিয়েই।
তার পা নেই, এতে তার বিন্দুমাত্র কষ্ট নেই,
প্রখর মেধাবী হওয়ায়,
তার কলেজের বন্ধুরা তাকে সহযোগিতা করে,
শিক্ষকদের বেশ অনুপ্রেরণাও পায় সে,
এতে সে আস্তে আস্তে পার করে কলেজের এক একটি অধ্যায়
তার প্রবল ইচ্ছা-শক্তি তাকে টেনে নিয়ে যায়,
সাফল্যের সোনালী জীবনে।
একদিন তার সাথে দেখা হল আমার
যার দুটি পা নেই, ক্রাচে ভর করে হাটে।
১১ বৎসর পর তার সাথে দেখা হয় আমার
গায়ে কোর্ট-টাই আর মাথায় ঝাকরা চুল
চোখে কালো সান গ্লাস
অফিস থেকে বের হয়ে আসছিল সে
কালো পাজেরো গাড়ী নিয়ে অপেক্ষা করছিল তার ড্রাইভার,
ওই মুহুর্তে তার অফিসে ঢোকার সময় দেখা হয়,
তার সাথে আমার,
ক্রাচে ভর করে দিয়ে আসছিল সে,
সে বেশ হ্যান্ডসাম ও মাথায় ঝাকরা চুল থাকায়
আমি চিনতে পারিনি প্রথমে তাকে-
সেই আমাকে চিনতে পেরে
কাছে এসে শ্রদ্ধায় সালাম করে বলল-
আনন্দানু চোখে
স্যার এতোদিন কোথায় ছিলেন?
আমাকে চিনতে পারছেন না, আমি সেই অথর্ব
সেই ছেলেটি যার দুটো পা ছিল না,
আজ আমি সফল একজন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার।
আজ আমার কোনকিছুর অভাব নেই,
অভাব নেই অর্থের,
আমি আমার জমানো তহবিল থেকে,
পঙ্গুদের সাহাযার্থে অর্ধেক-ই ব্যয় করি।
আমিও কেদেঁ ফেলি গভীর অপ্রকাশিত আনন্দে
১১বছর আগে কেমন দেখেছিলাম অথর্বকে?
আজ আমার সামনে সে কোর্ট-টাই পড়া
কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার।
আমি অবিভূত হই তার অসম্ভবকে জয় করে
আজকের এই সফল্য ব্যক্তিতে পৌছতে পারায়।
আমি জিজ্ঞেস করি, অথর্ব তুমি কি বিয়ে করেছ?
জ্বী স্যার,আমার সংসারে দুটি ছেলে-মেয়ে
তারা আজ প্রাইমারিতে পড়ছে
আমার স্ত্রী মোহনা কলেজের বাংলা লেকচারার।
চলেন স্যার ?
কোথায় অথর্ব ?
আজ নয় অথর্ব, অন্যদিন না হয় সময় করে যাব।
প্লিজ স্যার,না করবেন না,
আজ ১১ বছর পর আপনার দেখা পেয়েছি,
ওই দেখেন স্যার,কালো পাজেরো আমার
এসে দেখেন স্যার–।
আমি যেন আনন্দে বাকশক্তি হারিয় ফেলি,
অথর্বের চোখ-মুখে আনন্দের ঝিলিক দেখে।
আমি আর না করতে পারি না,
বাধ্য হয়েই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পাজেরো গাড়ীতে
বসতে হলো অথর্বের পাশে।
মনে হলো অথর্ব আজ আমাকে পেয়ে,
তার বাবাকে কাছে পাওয়ার আনন্দটা প্রফুল্ল চিত্তে অনুভব করছে।
গাড়ী চলতে থাকে বনানীর রাস্তা ধরে তার বাসার দিকে
রাজধানীর সব ব্যস্ততম মানুষগুলো ছাড়িয়ে,
আমি ভাবতে থাকি সেই দু-পা হীন পঙ্গু ছেলেটা
আজ কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হয়ে সাফল্যের সোনার হরিণটা ধরতে পেরেছে।
loading...
loading...
আমি ভাবতে থাকি সেই দু-পা হীন পঙ্গু ছেলেটা
আজ কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হয়ে সাফল্যের সোনার হরিণটা ধরতে পেরেছে।
* শুভরাত্রি।
loading...
পরিচ্ছন্ন কয়েকটি অভিনন্দন জানানো যেতে পারে অথর্বের জন্য। অথর্ব'রা ভালো থাকুক।
loading...
সেই অথর্ব এখন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। বাহ্ দোয়েল ভাই। দারুণ একটি ভালো লিখন হয়েছে।
loading...
এভাবে আমাদের সমাজের অনেক হতাশ জীবন সার্থক হয়ে উঠুক।
loading...