বুক রিভিউ উপন্যাসঃ খুঁজে ফিরি তারে

বুক রিভিউ উপন্যাসঃ খুঁজে ফিরি তারে
লেখকঃ জিল্লুর রহমান
প্রকাশকঃ নওরোজ কিতাবিস্তান, ০৫, বাংলাবাজার, ঢাকা।

বিষয়বস্তুঃ
আরশী মোবাইলের বাটন টিপলো, দুঃখিত এই মুহূর্তে মোবাইল সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না, অনুগ্রহ পূর্বক কিছুক্ষণ পর আবার ডায়াল করুন। সে মোবাইলটা বিছানার ওপর ছুঁড়ে দিলো, তোমারই বা দোষ কী? তোমার সঙ্গে তো আমি নিজেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছি, তুমিই বা নতুন করে সংযোগ দিবে কেনো ? তুমি কোথায় ফিরোজ ? কতদিন থেকে তোমাকে খুঁজছি, কতোবার তোমার মোবাইলে রিং দিয়েছি, কোনোদিন তোমাকে পেলাম না। তোমাকে আমার খুব প্রয়োজন, তুমি আমাকে বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখাতে, তুমি বলতে আমি যেদিন প্রমোশন পেয়ে অফিসার হবো সেদিন তুমিই সবচেয়ে বেশি খুশি হবে। আমি প্রমোশন পেয়েছি ফিরোজ, আগামী মাসে আমার একটা র‌্যাংক লাগবে, তুমি দেখবে না?

প্রমীর অকাল মৃত্যুর পর একমাত্র মেয়ে রিমার মুখের দিকে তাকিয়ে ফিরোজ দ্বিতীয় বিয়ের কথা কোনোদিন ভাবেনি। নীলফামারী থেকে জয়পুরহাট বদলি হওয়ার পর সে যে বাসা ভাড়া নিয়েছিলো সে বাসারই মেয়ে আরশী তখন বগুড়া আযিযুল হক কলেজের অনার্সের ছাত্রী। প্রথমদিকে ফিরোজ যখন অফিসে থাকতো তখন আরশী প্রায় সময় দোতলায় চলে আসতো, রিমার সঙ্গে কথা বলে সময় কাটিয়ে দিতো। একদিন আরশীর সঙ্গে ফিরোজের পরিচয় হয়। আরশী যেন খুব তাড়াতাড়ি ফিরোজকে আপন করে নেয়। ফিরোজও যেন তাই। অল্পদিনের মধ্যে আরশীর ভালোবাসার কাছে ফিরোজের বয়স, সরকারি চাকুরিতে তার পদমর্যাদা সবকিছুই যেন সে ভুলে গিয়েছিলো।

এমন সময় জয়পুরহাট পুলিশ লাইনে মহিলা পুলিশে নিয়োগের সার্কুলার দেখে আরশী প্রথমে ফিরোজের কাছে পরামর্শ চায়। ফিরোজ প্রথমে আরো লেখাপড়া করার পরামর্শ দিলেও আরশীদের আর্থিক টানাটানির কথা জেনে তাকে চাকরির চেষ্টা করার জন্য উৎসাহ দেয়। ভাগ্যক্রমে আরশী মহিলা পুলিশ পদে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়। মহিলা পুলিশে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়ে আরশী প্রথমেই ফিরোজের পা ছুঁয়ে সালাম করে। তারপর রংপুর পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে শুরু হয় ট্রেনিং। ট্রেনিং চলাকালে আরশীর সবসময় ফিরোজের কথা মনে হতো, তার মনে হতো ফিরোজই যেন তার সব। ফিরোজ জীবনেও ধীরে ধীরে প্রমীর স্থান দখল করে আরশী।

ট্রেনিং শেষে আরশীর পোস্টিং হয় রাজশাহী জেলার বাঘমারা থানায়। আরশী প্রথমে ভেঙ্গে পড়লেও ফিরোজ তাকে সান্ত্বনা দেয় এবং সব সময় তার পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেয়। ফিরোজ প্রায় আরশীর সঙ্গে দেখা করার জন্য রাজশাহী যেতো, সারাদিন দু’জনে নব-দম্পতির মতো রাজশাহী চষে বেড়ানোর পর ফিরোজ আরশীর সংসারের প্রয়োজনীয় সবকিছু কিনে দিয়ে জয়পুরহাট ফিরতো।

আরশীকে মহিলা আসামি নিয়ে প্রায়ই রাজশাহী যেতে হতো। সেখানে তার পরিচয় হয় কন্সটেবল নূরের সঙ্গে। তখন নূরের পোস্টিং ছিলো রাজশাহী মেট্রোপলিটন কোর্টে। ধীরে ধীরে দু’জনের মধ্যে প্রথমে সখ্যতা গড়ে উঠে, তারপর প্রেম। নূর আরশীকে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখায়, আরশী নূরের দেখানো স্বপ্নে বিভোর হয়ে ফিরোজকে ভুলে যায়। আরশী আর ফিরোজের বিষয়টিকে আরশীর বোন-দুলাভাই অর্থ উপার্জনের একটা মোক্ষম সুযোগ হিসেবে কাজে লাগিয়ে আরশীকে ফিরোজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে উৎসাহিত করে। ফিরোজ জয়পুরহাট থেকে বদলি হয়ে যায়।

নূর আরশীর সঙ্গে প্রতারণা করে। নূর-এর প্রতারণা আরশীর মনে ফিরোজের সঙ্গে তার আচরণের জন্য অপরাধবোধ জাগিয়ে তোলে। ফিরোজের সঙ্গে দেখা করার জন্য আরশী মনে মনে তাকে খুঁজতে থাকে। ইতোমধ্যে আরশীর প্রমোশন হয় এবং র্যাং ক পরানোর দিন নির্ধারিত হয়। ফিরোজের সঙ্গে দেখা করা আরশীর জন্য আরো প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। আরশী তার বান্ধবী রাজারবাগ পুলিশ লাইনে কর্মরত জেসমিনের সহযোগিতায় ফিরোজের হেডঅফিসের ঠিকানা বের করে। সেখানে যোগাযোগ করে জানতে পারে ফিরোজ কয়েক বছর আগে চাকরি থেকে রিজাইন করেছে। আরশী সেখান থেকে ফিরোজের ঠিকানা নিয়ে রওয়ানা হয় তার গ্রামের বাড়ির ঠিকানায়।

চাকরি ছেড়ে দিয়ে এইচ.বি.এস পজিটিভ ভাইরাসে আক্রান্ত ফিরোজ কাউকে না জানিয়ে তার একমাত্র কলেজ পড়ুয়া মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। নির্ধারিত দিনে রিমার বিয়ে হয়। বিয়ের পরদিন রাতেই ফিরোজ অসুস্থ ‘ হয়ে পড়ে। তাকে জরুরি ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়।
দিনাজপুরে ফিরোজের বাড়ি খুঁজতে গিয়ে আরশী একভদ্রলোককে জিজ্ঞেস করলো, আঙ্কল ফিরোজ সাহেবের বাড়িটা কোনো দিকে ? প্লিজ যদি বলতেন?
তিনি অদূরে আঙ্গুল দেখিয়ে দিয়ে বললেন, ফিরোজের বাড়িটাতো ঐদিকে কিন্তু ও তো-
কী হয়েছে আঙ্কল?
ও তোমার কে হয় মা?
আংকেল ফিরোজ সাহেব আমার পরম শ্রদ্ধেয় একজন মানুষ, তাঁর এক মেয়ে আছে নাম রিমা, তিনি আমাকে রিমার মতো স্নেহ করেন। ফিরোজ সাহেব আমার গার্জিয়ানের মতো, বন্ধুর মতো, তিনিই আমার সব।
ভদ্রলোক অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বললেন, তাহলে তো তুমি সব হারিয়েছো মা।
______________________________________

যারা ঘরে বসে খুঁজে ফিরি তারে সংগ্রহ করতে চান, এখানে ক্লিক করুন।

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

৯ টি মন্তব্য (লেখকের ৩টি) | ৬ জন মন্তব্যকারী

  1. শাকিলা তুবা : ১৭-০৪-২০১৯ | ২১:০০ |

    বইটি যখন পড়ার সুয্গে হয়নি, আপনার রিভিউতেই মন ভরিয়ে নিলাম। Smile

    GD Star Rating
    loading...
    • রোদেলা নীলা : ১৭-০৪-২০১৯ | ২৩:৩৬ |

      বইটি রকমারিতে পাওয়া যাচ্ছে ।

      GD Star Rating
      loading...
  2. সৌমিত্র চক্রবর্তী : ১৭-০৪-২০১৯ | ২১:০২ |

    পড়লাম কবি বোন রোদেলা নীলা। গুড। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gif

    GD Star Rating
    loading...
  3. সুমন আহমেদ : ১৭-০৪-২০১৯ | ২১:৪১ |

    বুক রিভিউ গুলোন আপনার হাতে বেশ মানাচ্ছে। শুভেচ্ছা জানবেন।

    GD Star Rating
    loading...
    • রোদেলা নীলা : ১৭-০৪-২০১৯ | ২৩:৪০ |

      আমার কাছে ভালো কঠিন কাজ মনে হচ্ছে ,এর চাইতে গল্প লেখা অনেক সহজ ।

      GD Star Rating
      loading...
  4. রিয়া রিয়া : ১৭-০৪-২০১৯ | ২১:৪৬ |

    স্থান কাল অপরিচিত হলেও উপন্যাসের থিম বুঝলাম। রিভিউ কিন্তু কঠিন একটি কাজ। সাফল্যের সাথে এগিয়ে নিয়েছেন জন্য শুভেচ্ছা প্রিয় কবি দি। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

    GD Star Rating
    loading...
  5. মুরুব্বী : ১৭-০৪-২০১৯ | ২১:৫০ |

    ভালো হয়েছে রিভিউটি। আপনাকে এবং ঔপন্যাসিক জিল্লুর রহমানের জন্য শুভকামনা।

    GD Star Rating
    loading...
  6. আনু আনোয়ার : ১৮-০৪-২০১৯ | ১৩:২৪ |

    কষ্ট করে রিভিউ করেছেন সেজন্য ধন্যবা,  জানাই। 

    শুকামনা আপনার ও জিল্লুর ভাই দুজনের জন্য।         

    GD Star Rating
    loading...