মনে পড়ে!

out. ৩০শে জানুয়ারি, ২০১১।
ওয়ালমার্ট কানেকশন সেন্টারে কাজ করছিলাম। এক বুড়ি মহিলা এলো উনার একটা ফোন লাইনের সার্ভিস দুই বছরের জন্য নবায়ন করাতে। আমি সিম কার্ডটা চাইলাম, বুড়িমা ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে কাগজে মোড়া একটা প্যাকেট বের করে আমায় দিলেন। আমি প্যাকেট খুলে সিমকার্ড বের করে কার্ডের সিমকার্ডের কুড়ি ডিজিট নাম্বার কমপিউটারে এন্ট্রি করছি আর ভাবছি, দুই বছরের জন্য চুক্তি নবায়ন করলে বুড়িমা একটা ফ্রি ফোন পাবে। বেশ ভালো হবে, এই পুরনো হয়ে যাওয়া চকোলেট বার পালটে একেবারে নতুন স্মার্ট টাচ ফোন পাবে।

বুঝতে পারছি না, বুড়িমা আদৌ ফোনের স্ক্রিন টাচ করে ফোন ব্যবহার করতে পারবে কিনা! একটু এদিক ওদিক হলেই ফোন নিয়ে ছুটে আসবে, “এটা কী ফোন দিয়েছো? স্ক্রিন লাইট জ্বলে না, আঙুল টাচ করার আগেই ফোনের কী-প্যাড চলে যায়!” ডিসপ্লেতে সাজানো ফোন দেখিয়ে বুড়িমাকে জিজ্ঞেস করলাম, কোন্ ফোন সেটটা তোমার পছন্দ? বুড়িমা বললো, আমার নতুন ফোন চাই না, এই পুরানো ফোনটাই থাকুক।

বললাম, নতুন ফোনের জন্য তোমাকে পয়সা দিতে হবে না, ফ্রি। বুড়িমা বলে, ফ্রি ফোন চাই না। আমার এই পুরানো ফোনটাই ভালো। এটা আমার স্বামীর ফোন। বললাম, হ্যাঁ, স্বামীর ফোন তাতে সমস্যা কি! তুমি এই ফোন কোম্পানির সম্মানিত গ্রাহক, দুই বছরের জন্য ফোন সার্ভিস নবায়ন করছো, তাই ফোন কোম্পানি তোমাকে নতুন ফোন উপহার হিসেবে দিচ্ছে। পুরানো ফোনটাও তোমার কাছেই থাকবে, স্বামীর জন্য বরং নতুন ফোনটাই নিয়ে যাও। নতুন ফোন হাতে পেয়ে নিশ্চয়ই তিনি খুশি হবেন। খুব সহজ এটার ব্যবহার, আমি শিখিয়ে দিবো।

বুড়িমা বললো, রিটা তোমার আন্তরিক ব্যবহারের জন্য অনেক ধন্যবাদ। আসলে আমার স্বামী এক মাস আগে মারা গেছেন। তার ফোন লাইনটা দুই বছরের জন্য রিনিউ করাতে এসেছি যাতে আমার কখনো মনে না হয়, মানুষটা নেই! আমি যতো দিন বেঁচে আছি, আমার হাজব্যান্ডের ফোনটাও থাকবে, এবং এই ফোনটাই থাকবে। আমার স্বামীর দেহ এখন মাটির নীচে, ধীরে ধীরে তাঁর দেহ মাটিতে মিশে যাবে। কিন্তু এই ফোনটার গায়ে আমার স্বামীর হাতের পরশ লেগে আছে, তাই না? যতদিন ফোনটা আমার কাছে থাকবে, ফোনের গায়ে আমার স্বামীর হাতের স্পর্শটুকু তো বেঁচে থাকবে।

নতুন ফোন নিলে তো নতুন ফোনের গায়ে আমার স্বামীর পরশ পাবো না! বুড়িমার হাত দুটো জড়িয়ে ধরে বললাম, আমি দুঃখিত। না বুঝে তোমায় কষ্ট দিয়ে ফেলেছি! বুড়িমা উলটো আমাকে জড়িয়ে ধরলেন, বললেন, তুমি দুঃখিত হবে কেন! তুমি তো ভুল করোনি, বরং আমাকে উসকে দিতে চেয়েছো, নতুন স্মার্ট ফোন নিয়ে বুড়োকে যেন চমকে দেই! আমারই কপাল খারাপ, অল্পের জন্য বুড়োকে চমকে দেয়ার সুযোগ হারালাম— বলে কী সুন্দর হাসি দিলো।
*************************

** ১২ বছর পর আজ হঠাৎ করেই সেদিনের বুড়িমার কথা মনে পড়ে গেলো। বুড়িমা কি আজও বেঁচে আছে? বেঁচে থাকলে কি আজও তার স্বামীর ফোনটা হাতে নিয়ে স্বামীর স্পর্শ অনুভব করে? নাকি এখন বুড়ো বুড়ি স্বর্গের বাগানে পাশাপাশি বসে পৃথিবীতে কাটিয়ে যাওয়া সুখের স্মৃতি নিয়ে খুনসুটি করছে!

–ওয়ালমার্ট সুপার সেন্টার

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
মনে পড়ে!, 5.0 out of 5 based on 1 rating
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

২ টি মন্তব্য (লেখকের ০টি) | ২ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ২৮-০৫-২০২৩ | ১০:৪৮ |

    জীবনের স্মৃতিগাঁথা। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

    GD Star Rating
    loading...
  2. নিতাই বাবু : ২৮-০৫-২০২৩ | ২৩:৪৩ |

    আমারও জানতে ইচ্ছে করে, বুড়িমা কি বেচেঁ আছে, না ওপারে চলে গেছে! চলে যাওয়ার কামনা করি না। বুড়িমা বেচেঁ থাকুক অনন্তকাল!

    GD Star Rating
    loading...