ছবিটি আমারই, ক্লাস নাইনে ওঠার পর তোলা হয়েছিলো। নবম শ্রেণীতে উঠলেই বোর্ডে নাম রেজিষ্ট্রেশন করতে হয়, তখন পাসপোর্ট সাইজ ছবি লাগে। খুব তড়িঘড়ি করে ছবিটি তুলতে হয়েছিলো। মার মা আমাদের ছবি তোলাতে ডি আই টি মার্কেটের প্রিন্স স্টুডিওতে নিয়ে যেতো।
সেদিন প্রিন্স স্টুডিওতে আমাকে নিয়ে যাওয়ার কেউ ছিলো না। মায়ের কথামতো আমি একা একাই চলে গেছিলাম ‘নাজ’ স্টুডিওতে। যদিও নাজ স্টুডিওতে যাওয়ার ইচ্ছে ছিলো না। কারণ আমরা জানতাম, নাজ স্টুডিওতে ভালো ছবি তোলে না। আমার বাবা নিজের পাসপোর্টের জন্য ছবি তুলতে মা’কে কিছুই না বলে মাতবরি করে নাজ স্টুডিওতে গিয়েছিলো। বাবার ছবি দেখে আমরা বাবার সামনে তো কিছু বলিনি, আড়ালে হাসতে হাসতে শেষ। পুরা বাংলা সিনেমার ভিলেন তুলিপের মতো লাগছিলো।
সেই আমাকেই কিনা যেতে হলো ‘নাজ’ স্টুডিওতে!
আমার ছবি দেখে হাসার বদলে রাগে জেদে আমি নাঁকি কান্না শুরু করেছিলাম। “আমার চেহারা এইরকম না। আমার এই ছবি চাই না” — বলে রাগে গনগন করছিলাম। মা তারপর সান্ত্বনা দিয়েছিল, আরে এই ছবি তো রেজিস্ট্রেশন ফর্মে লাগবে, তোর বাবার মতো এই ছবি তো পাসপোর্টে দিতাম না। তোর পাসপোর্টের ছবি প্রিন্স স্টুডিওতে গিয়ে তুলিস।
আজ ছবিটা দেখে হিসেব করলাম, প্রায় চুয়াল্লিশ বছর আগের ছবি! অথচ মনে হয় সেদিন। ছবির সাথে আমার চেহারার মিল না থাকলেও বাম চোখের তিলটা ঠিকই দেখা যাচ্ছে। আর মাথা ভর্তি চুলের চিহ্ন!
পরনে ছিলো পলিয়েস্টার কাপড় দিয়ে তৈরি জামা, দুর্গাপূজার সময় কাদির মামার কাছ থেকে স্পেশাল অর্ডার দিয়ে বানানো। জামাটার ছিলো ঘটি হাতা, আর কোটের মতো কলার।
( কাদির মামাঃ আমার মামার বন্ধু, সেই হিসেবে আমাদের মামা।
কাদির মামা পাড়ার একমাত্র দর্জি, যাঁর আলাদা দোকান ঘর ছিলো না। রাস্তার ধারেই নিজের ঘর। সেই ঘরের জানালা ঘেঁষে পা মেশিন বসানো ছিল। স্কুলে আসা যাওয়ার পথে দেখতাম, কাদির মামা ঘট ঘট করে রাজ্যের জামা প্যান্ট সেলাই করছে, আর ঘরে কাদির মামার বউ, বাচ্চারা যার যার কাজ করছে। )
চুয়াল্লিশ বছর পেরিয়ে গেছে, স্কুলে যাওয়ার পথটা আছে তবে বদলে গেছে।
কাদির মামা বেঁচে আছেন কিনা জানি না, তবে কাদির মামার সেই রাস্তার ধারে টিনের ঘরটা নেই, ঘরের চিহ্নও নেই।
রাস্তার দুই পাশে এতো বড়ো বড়ো দালান, ফ্ল্যাট বাড়ি উঠে গেছে, কাদির মামার ঘরটা ঠিক কোন্ জায়গায় ছিলো, সেই নিশানাও হারিয়ে গেছে!
loading...
loading...
ভালো থাকুন প্রিয় লিখক। অশেষ শুভকামনা রইলো আগামী দিনের জন্য।
loading...