বেঁচে থাকার স্বপ্ন!

329 গতকাল ছিমছাম চেহারা, রুচিসম্মত সাজ পোশাকে একজন কালো মেম এলেন, ট্রলিতে খাবারের আইটেম। আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, আমার রেজিস্টারে উনি চেক আউট করতে পারবেন কিনা। ট্রলির ভেতরে চোখ বুলিয়ে মনে মনে অবাক হলাম, প্রচুর শাক-সব্জি, ফল, ওটমিল, ননী তোলা দুধের জার। এসমস্ত খাবার কিনে একমাত্র আমি, মেক্সিকানরা এবং ইন্ডিয়ানরা ( এখানে একমাত্র আমি বাংলাদেশী)। সাদা আমেরিকানরাও হেলথি খাবার কিনে তবে আমাদের মত ঘাস পাতা কিনে না, কালো আমেরিকানরা তো শুধু হাই সুগার দেয়া ড্রিংকস, চর্বিযুক্ত খাবার, আর মাংস কিনে। মাংসের কতরকম আইটেম যে কিনে ওরা।

আমি ভদ্রমহিলার জিনিসগুলো চেক আউট করার এক পর্যায়ে বললাম, ” তুমি দেখছি খুব হেলথি ফুড খাও”। মহিলা বললেন, “এ বছর থেকে শুরু করেছি হেলথি ডায়েট, কারণ আমি আমার নাতি নাতনিদের গ্র্যাজুয়েশান দেখে যেতে চাই।”
– তোমার নাতি নাতনিরা কে কোন ক্লাসে পড়ে?
– ওরা এখনও ছোট , ৮, ১০ আর ১৩ বছর বয়স।
– বাহ! নাতি নাতনির গ্র্যাজুয়েশান দেখার ভাবনা থেকে হেলথি ডায়েট শুরু করেছো, কী চমৎকার সিদ্ধান্ত।
– তোমার কি মনে হয় না আমি নাতি নাতনিদের গ্র্যাজুয়েশান পর্যন্ত বাঁচবো?

– বাঁচবেনা মানে? তোমাকে বাঁচতেই হবে। এত সুন্দর চাওয়া! আচ্ছা, খুব জানতে ইচ্ছে করছে, তোমার ডায়েটে কী পরিবর্তন এনেছো? তুমি কি ঘরে রান্না শুরু করেছো?
– আমি এখন ঘরে রান্না করি, মাংস প্রায় বাদ দিয়েছি, গ্রিলড চিকেন অল্প খাই, শাক সবজি বেশী খাই। ভাজাভুজি বন্ধ, আর সোডা ( কোল্ড ড্রিংকস) এক্কেবারে বাদ, নরমাল ওয়াটার খাই, রেস্টুরেন্টে যাইনা।
– দারুণ! তোমার স্বাস্থ্য খুব সুন্দর, তুমি নিশ্চয়ই আগে থাকতেই খুব স্বাস্থ্য সচেতন ছিলে, নাহলে হঠাৎ করে দৈনন্দিন জীবনে এতবড় চেঞ্জ নিয়ে আসা কঠিন কাজ। আচ্ছা তোমার বয়স কত জানতে পারি?
– আমার বয়স এই মাসেই ৬৭ পূর্ণ হবে।
– মাই গড! তোমাকে দেখে আমি ভেবেছিলাম ৫০-৫১ বছর বয়স হবে। মিসিসিপিতে খুব কম মানুষ দেখেছি যারা সত্যি সত্যি স্বাস্থ্য সচেতন, তুমি ব্যতিক্রম।
– আমি স্বাস্থ্য সচেতন ছিলামনা, কিন্তু এখন মনে হয় আর কিছুদিন বাঁচি, নাতি নাতনিদের গ্র্যাজুয়েশান দেখে যাই।
– তোমার জন্য অনেক শুভকামনা, তুমি নাতি নাতনিদের স্কুল, কলেজ, ইউনিভারসিটির সকল গ্র্যাজুয়েশান অনুষ্ঠানে থাকবে।

কালো মেম বুক ভরা আশা নিয়ে বাড়ির দিকে হাঁটা দিল।
** আফ্রিকান আমেরিকান জনগণের অধিকাংশই এখনও নিম্নবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্তের পর্যায়ে পড়ে। তাদের এহেন অর্থনৈতিক দুরবস্থার জন্য তারা নিজেরাই সত্তর ভাগ দায়ী, বাকী ত্রিশ ভাগ সামাজিক বৈষম্যের কারণে। এই কথাটি বলছি আমার নিজ দায়িত্বে, কারণ আমি নিজে নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেনীর মানুষ, আমার স্বামীও। আমাদের অর্থনৈতিক দুরবস্থার জন্য আমরা দশ ভাগও দায়ী ছিলাম না, কিন্তু আমরা আলোর পথে আসতে চেয়েছি বলেই আলোর দেখা পেয়েছি, আফ্রিকান আমেরিকান জনগণের আটানব্বই ভাগ নিজেদের দুরবস্থার জন্য তামাদি হয়ে যাওয়া বর্ণপ্রথাকে দায়ী করে, সরকারকে দায়ী করে (যদিও আমেরিকান গরীব জনগণ সরকারের কাছ থেকে ফুড স্ট্যাম্প পায়, বাচ্চাদের লেখাপড়ার সুবিধা পায়, কালোদের জন্য সুযোগ অতিরিক্ত কোটাতেও দেয়া আছে, চিকিৎসা সুবিধা পায়।)

কিন্তু ওরা সুযোগের সদ্ব্যবহার করেনা, ওদের খাদ্যাভ্যাস সুস্বাস্থ্যের পরিপন্থী। ওরা জাংক ফুড বেশী খায়, শাক সবজি খাওনা, জলের পরিবর্তে সারাক্ষণ কোক, ফান্টা খাচ্ছে, ভাজাভুজি খাবার এদের পছন্দ। এদের অধিকাংশই হাই ব্লাড প্রেশার, ব্লাড সুগার, কোলেস্টেরলের ওষুধ খায়। গ্র্যাজুয়েশান দূরের কথা, সমস্ত সুযোগ সুবিধা পেয়েও ওরা স্কুলের গন্ডিটাও পুরোপুরি ডিঙ্গাতে পারেনা। স্কুল পাশের আগেই রেস্টুরেন্টে ওয়েটার, ক্লিনারের কাজ নিয়ে পয়সা উপার্জন করা শুরু করে। খুব কম ছেলেমেয়ে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করে, প্রবেশ করেও ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবেনা।

আফ্রিকান আমেরিকানদের গড় আয়ু খুব কম, কারণ ওদের অলস, নেতিবাচক জীবনাভ্যাস। এজন্যই কালকের কালো মেমের বেঁচে থাকার কারণ এবং স্বপ্নের কথা শুনে ভীষণ ভালো লেগেছে। ঈশ্বর যেন ওনার আশা পূর্ণ করেন।**

.
( মুহূর্তে দেখা মানুষ)

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
বেঁচে থাকার স্বপ্ন!, 5.0 out of 5 based on 1 rating
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

১টি মন্তব্য (লেখকের ০টি) | ১ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ১৭-০৩-২০২৩ | ১২:১৪ |

    অসাধারণ প্রকাশ। মুগ্ধ পাঠ প্রিয় লিখক। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gif

    GD Star Rating
    loading...