মিথীলা একবার জিজ্ঞেস করেছিল, “মা বাংলাদেশে বিয়েতে মেকাপ দিয়ে বউয়ের গায়ের রঙ চেঞ্জ করে কেন? জামাইদের গায়ের রঙ চেঞ্জ করে না কেন? কালো বউকে সাদা বানায়, সাদা বউকে কালো বানায় না কেন? তোমাকে কি সাদা বানিয়েছিল?”
উত্তরে আমি বলেছিলাম, আমাদের দেশের অধিকাংশ কালো মেয়েগুলো বোকা। ওরা অযথাই গায়ের রঙ নিয়ে দুঃখ পায়, ওরা নিজেকে নিয়ে অহংকার বোধ করতে জানে না। আরে গায়ের রঙ কি কেউ ইচ্ছে করলেই বদলাতে পারে? কিন্তু চাইলেই গুণ অর্জন করা যায়। আসলে মেয়েগুলোরও দোষ নেই।
আমাদের দেশে মেয়েদের গায়ের রঙের ইমপর্ট্যান্স অনেক বেশী, মেয়েদের গুণের কদর কম। তাই বিয়ের সময় সবাই যেনো বউ দেখে সুন্দরী বলে, সেটা ভেবেই কালো মেয়েরা মেকাপ দিয়ে রঙ বদলায়। আর আমার কথা আলাদা। আমি তো ছোটোবেলা থেকেই বুদ্ধিমতী আর জেদী, তাই ছোটোবেলা থেকেই আমি বলতাম, “কালো, জগতের আলো”!
তাছাড়া আমার বাবা মা কেউই আমার গায়ের রঙ নিয়ে দুশ্চিন্তা করতো না। বাবা মা শুধু আমার লেখাপড়া নিয়ে চিন্তা করতো, আর আমার রাগ আর জেদ নিয়ে দুশ্চিন্তা করতো। বিয়ের সময় তোমার পাপা তো অনেক ফর্সা ছিল, আমি কালো ছিলাম। তাতে কি, কালো তো জগতের আলো। তাই বিয়েতে আমাকে মেকাপ দিয়ে সাদা বানায়নি। এমনকি আমার বিয়েতে আমাকে ঘরেই সাজানো হয়েছে। কারণ ঢাকায় বিউটি পার্লার থাকলেও নারায়ণগঞ্জে তখনও বিউটি পার্লারের চল আসেনি।
আমার পিসী আমার পায়ে আলতা, হাতে নেইল পলিশ দিয়ে আলপনা এঁকেছে। আর আমার বন্ধু দীনা চুলে কয়েকটা বেণী করে প্রতিটা বেণীতে তাজা ফুলের মালা পেঁচিয়ে তা দিয়ে ডিজাইনের খোঁপা বেঁধে দিয়েছে। আর তোমার প্রফেসর মামার মেয়ে গোপা চন্দনের আলপনায় আমার মুখ সাজিয়েছে।
জানো তো, তখন নারায়ণগঞ্জে ফুলের দোকানও ছিলো না। বিয়ে হতো কাগজের মালা দিয়ে। আমার বিয়েতে তাজা ফুল, তাজা ফুলের মালা এসেছে। আমার ইউনিভার্সিটির বান্ধবীরা হোস্টেলের বাগান থেকে ফুল এনেছে, আর গোপা ঢাকা ইউনিভার্সিটির কোয়ার্টারের বাগান থেকে ফুল এনে মালা গেঁথেছে।
আরেকটা কথা, আমার স্কিন তো খুব সেনসিটিভ, বিয়ের আগে খুব এলার্জি এটাক হয়েছিলো। তাই গোপা আমার মুখ সাজানোর সময় কোনো ফাউন্ডেশন, ফেস পাউডার ইউজ করেনি। সিমপল পন্ডস পাউডার হাতে ছড়িয়ে সেটাই মুখে হালকা করে দিয়েছে। চোখে গাঢ় কাজল, কপালে লাল টিপ আর চন্দনের আলপনা আর ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক। আমার বিয়ের সাজ কমপ্লিট।
অই সাজ দেখেই সবাই আমাকে সুন্দর বলেছে।”
এরপর আমার বিয়ের এলবাম খুলে আমার ছবি দেখালাম। মিথীলা খুব খুশি আমার বিয়ের ছবি দেখে।
loading...
loading...
যেন একটি পূর্ণ জীবনের গল্প। ভালো থাকবেন এই প্রত্যাশা।
loading...