ওয়ালমার্ট সুপার সেন্টার!

29 আজ রবিবার, নভেম্বরের শেষ। আমার কাজের স্কেজিউল ছিলো সকাল দশটা থেকে সন্ধ্যে সাতটা পর্যন্ত। যদিও অভ্যাসবশে এখনও সন্ধ্যে সাতটা বলি, আসলে এদেশে শীতকালে বিকেলে ঘড়িতে পাঁচটা বাজতেই সন্ধ্যে নেমে যায়। শীতকালে সাতটার সময় সন্ধ্যে থাকে না, রাত হয়ে যায়।

আজ বিকেলের দিকে এক প্রৌঢ় ভদ্রলোক ( কৃষ্ণাঙ্গ) প্রিপেইড ফোন কিনতে এসেছিলেন। আজ সারাদিন ফটোল্যাবেই কেটেছে আমার। বিকেলে চা বিরতি থেকে ফিরে সবে ইলেক্ট্রনিক ডিপার্টমেন্টের ফ্লোরে এসে দাঁড়িয়েছি। তখনই সেই কৃষ্ণাঙ্গ সাহেব প্রিপেইড ফোন দেখতে চাইলেন। ফোন পছন্দ করে দাম দেয়ার সময় হঠাৎ উচ্ছ্বসিত হয়ে বললেন,
— আরে, তোমার নাম রিটা! আমার X- wife এর নামও রিটা!

আমিও অবাক হওয়ার ভঙ্গি করে বললাম, — তাই নাকি! এক্স ওয়াইফের নাম রিটা, তোমার Present wife-এর নাম কি?
ভদ্রলোক মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল, দাঁড়াও এক মিনিট। আমার বর্তমান ওয়াইফের নাম পেটে আছে, মুখে আসছে না!

কৃষ্ণাঙ্গ সাহেবের অবস্থা দেখে আমি সত্যিই অবাক হলেও হেসে ফেলেছি। সাহেবের পাশে দাঁড়ানো এক শ্বেতাঙ্গ তরুণ কাস্টমারও হেসে ফেলেছে। এদিকে এক মিনিটেও সাহেবের প্রেজেন্ট ওয়াইফের নাম পেট থেকে মুখে আসছিলো না! ভদ্রলোক খুব বিব্রত ভঙ্গিতে হাসছিলেন। আমি খিল খিল করেই হেসে ফেললাম। বললাম, তোমার এক্স ওয়াইফ তো দারুণ লাকী! তোমার জীবন থেকে সরে গিয়েও তোমার হৃদয় জুড়ে আছে সে।
ভদ্রলোক তখনও মাথা চুলকাচ্ছে।
বললাম, এমনটা সবারই হয়। মাঝে মাঝে অতি প্রিয়জনের নাম মনে পড়ে না! ঘাবড়ে যেয়ো না, তোমার প্রেজেন্ট ওয়াইফ তো আর জানতে পারছে না যে তার নাম তুমি ভুলে গেছো!
— না না ভুলিনি, এখনই মনে পড়বে প্রেজেন্ট ওয়াইফের নাম।
বললাম, আসলে Rita নামের মেয়েরা খুবই পাওয়ারফুল হয়। খারাপই হোক অথবা ভালোই হোক, অত সহজে রিটাকে ভোলা যায় না।
দেখো, তোমার জীবন থেকে এক্স হয়ে গেছে যে রিটা, এখনও তার নামটাই তোমার মনে আছে।
ভদ্রলোক এবার ‘ ইউরেকা ইউরেকা’ ভঙ্গিতে বললেন,– মনে পড়েছে আমার প্রেজেন্ট ওয়াইফের নাম!
ওর নাম রেনে-এ!

বললাম, রে-নে-এ খুব সুন্দর নাম। আমার এক রাশান বন্ধুর নাম ছিলো রে-নে-এ।
সাহেব এবার বললেন, — তুমি কি বিবাহিত?
বললাম, – আমি বিবাহিত। আমার নামও রিটা এবং আমিও একজন পাওয়ারফুল লেডি। তবে আমি যদি কখনো আমার হাজব্যান্ডের এক্স ওয়াইফ হয়ে যাই, সে আমাকে ভুলতে না পারলেও আমার নাম ভুলে যাবে।
ভদ্রলোক বলে, ইমপসিবল! তোমার নাম সে ভুলতেই পারবে না!
হাসতে হাসতে বললাম,– আমি এতোটাই পাওয়ারফুল যে সে আমাকে নাম ধরে ডাকতে ভয় পায়!
– তাহলে তোমার হাজব্যান্ড তোমাকে কি নামে ডাকে?
– ইশারায় ডাকে।
-হোয়াট! ইশারায় ডাকে কেন?
– না, হাতের ইশারায় ডাকে না। সাউন্ড ইশারায় ডাকে।
– সাউন্ড ইশারা কি?
– তোমরা যেভাবে হেলো, হাই সাউন্ডে কাউকে ডাকো, অথবা স্ত্রীকে বেইবি বলো, আমার হাজব্যান্ড ওগুলোকেই একসাথে অনলি একটা সাউন্ড তৈরি করে আমাকে ডাকে।
– স্ট্রেইঞ্জ! সব মিলিয়ে একটা সাউন্ড! শুধু তোমাকে ডাকার জন্য স্পেশাল সাউন্ড ইশারা?
– হ্যাঁ। আমার হাজব্যান্ড আমাকে রিটা ডাকে না, ‘ এই’ বলে আওয়াজ দিলেই আমি বুঝে যাই, আমাকেই ডাকছে!
– আ-ই?
– না, আ-ই না, এ-ই!
– আ-ই সাউন্ডের চেয়ে রিটা ডাকা সহজ নয়?
— তোমার কাছে সহজ, কারণ তুমি এ-ই সাউন্ড করতে পারো না। রিটা নামটা তোমার কাছে এতো সহজ, তারপরেও তুমি এক্স ওয়াইফ রিটার ভয়ে প্রেজেন্ট ওয়াইফের নাম ভুলে গেছো।

আর আমার হাজব্যান্ডের রিটা নামেই এত ভয় যে, আমি এক্স হওয়ার আগেই আমার নাম ভুলে গেছে! কৃষ্ণাঙ্গ সাহেব প্রাণখোলা হাসিতে বলেই ফেললো, তোমার হিউমার সেন্স অত্যন্ত ভালো। ইয়েস, আমার এক্স ওয়াইফ খুবই জাঁদরেল ছিলো। তবে মানুষ হিসেবে সে ভালো।
— এই পৃথিবীর সকল রিটা জাঁদরেল হলেও মানুষ হিসেবে ভালো হয়। আমিও নাকি মানুষ হিসেবে ভালো— আমার হাজব্যান্ড বলেছে।
–সত্যিই রিটা ইজ আ পাওয়ারফুল নেইম, পাওয়ারফুল উয়োম্যান, আমি যেমন জানি তোমার হাজব্যান্ডও নিশ্চয়ই সেটা জানে।

– ‘ওয়ালমার্ট সুপার সেন্টার’ স্ক্রিপ্ট থেকে।

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
ওয়ালমার্ট সুপার সেন্টার!, 5.0 out of 5 based on 1 rating
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

১টি মন্তব্য (লেখকের ০টি) | ১ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ২৩-০২-২০২৩ | ১২:২৬ |

    সুন্দর প্রকাশ। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

    GD Star Rating
    loading...