আত্মমর্যাদা

riaa Self Dignity বা আত্মমর্যাদা বোধ শব্দটির সাথে আমরা সবাই কম বেশি পরিচিত। তবে আমাদের ব্যক্তিগত বা সামাজিক জীবনে এর গুরুত্ব কতখানি তা হয়ত অনেকেই অনুমান করতে পারিনা। আত্মমর্যাদা এমন একটি ব্যাপার যা প্রথমে নিজের ভেতর উপলব্ধি করতে হবে। যখন আপনি নিজে নিজেকে আত্মবিশ্বাসী ভাবতে পারবেন কেবল তখনই আপনার আত্মমর্যাদা দৃঢ় হবে।

১. আপনি কোন এক অনুষ্ঠানে গেলেন, আর আপনার কোন এক আত্মীয় বসলো “তুই না একদম বোকা, ক্যাবলা।” আর আপনি এই কথা শুনে নিজে তো কোন প্রতিক্রিয়া দেখালেনই না, উল্টো চুপচাপ বিশ্বাস করে ফেললেন কথাগুলো সত্যি। খুব হীনমন্যতায় ভুগতে লাগলেন, অসহায় বোধ করতে লাগলেন। ভেবে ভেবে হয়রান হয়ে গেলেন, আপনি আনস্মার্ট, বোকা, ইত্যাদি। শুধু এটুকুই ভাবলেন না, আদৌ আপনি সেরকম কি না। খেয়ালই করলেন না, নিজের অজান্তেই কখন যেন আপনাকে বিচার করবার অধিকারটুকুও তাদের দিয়ে দিয়েছেন বুঝতেই পারলেন না। তাহলে এই ‘আমি’ যদি পরিপূর্ণ আত্মবিশ্বাস নিয়ে সবার সামনে না দাঁড়াতে পারি, নিজেকে সবসময় নিজের সম্পর্কে নেগেটিভ ভাবতে থাকি, তার জন্য দায়ী কে? – এই আমিই।

মনে রাখবেন প্রতিটি জীবন এক একটা লড়াই। কারো বেশি, কারো কম। হয়তো আপনার লড়াই ভীষণ ছোট থেকেই, প্রতিকূল আবহে লড়াই করে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন। কখনোই আপনি সব্বাইকে ডেকে ডেকে বা স্বল্প পরিচয়ে বলতে যাবেন না আপনার জীবনের লড়াইয়ের গল্প। এতে আপনি করুণার পাত্র হবেন। আপনাকে দেখে, বা আপনার সাথে কথা বলে কখনোই যেন কেউ আঁচ না করতে পারে আপনার জীবনের ব্যক্তিগত কথা। দৃঢ় মানসিকতার হোন। আপনার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছাড়া কখনোই কাউকে বুঝতে দেবেন না আপনার ব্যক্তিগত জীবন। আপনাকে যারা সত্যিই জানবে তারা করুণা নয় রেসপেক্ট করবে আপনাকে।

“To hide feelings when you are near crying is the secret of dignity.”

২. ছোটবেলা থেকেই কিন্তু আমরা অন্যের দেয়া সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত হয়ে অভ্যস্ত। এই যেমন ছোটবেলায় কাউকে যদি বলা হয় “তুই দেখতে ভাল না” “ইশ তুই কালো, মোটা, তুই অলক্ষ্মী, তুই সংসারের জঞ্জাল।” সে নিজেকে ভাল করে আয়নায় দেখেও না, অন্ধের মত বিশ্বাস করে ফেলে-সে সুন্দর নয়, সে হয়তো সত্যিই অলক্ষ্মী। কেউ যদি বলে ফেললো, “তোকে দিয়ে কিছু হবে না”- ব্যস, ওটাই বানিয়ে ফেলি জীবনের একমাত্র বিশ্বাস, কোনদিন হয়ত কিছু একটা করে দেখানোর চেষ্টাও করিনা। আমার অমূলক ঐ বিশ্বাসটা কখন যেন আমার চিন্তাটাকে নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করেছে, বুঝতেই পারিনা। নিজের চারপাশ দেখুন। আপনি এই বিশ্বের উৎকৃষ্টতম সৃষ্টি না হলেও নিকৃষ্টতমও নন। আপনি একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ এবং কারো না কারো চোখে অবশ্যই আপনি সুন্দর। আর আয়নায় নিজেকে দেখুন এবং মনে মনে বলুন :-

“May be I am not the best but certainly I am not the worst.”

৩. কেউ আপনার মন ভেঙেছে? কেউ আপনার প্রেম নিয়ে খেলছে? কেউ আপনাকে ঠকাচ্ছে? কখনই নিজেকে দোষারোপ করবেন না। মনে করুন যে যাবার সে চলে যাবেই। কিংবা ধরুন যে আপনার প্রেম, ভালবাসা নিয়ে খেলছে, প্রতিদিন আপনাকে মিথ্যে বলে ঠকাচ্ছে। তার জন্য মন খারাপ করবেন না। আবর্জনা আমরা আবর্জনার স্তূপেই ফেলে রাখি, তার অবস্থান ও সেইরকম জায়গায় রাখুন। জানবেন যে আপনাকে সত্যিই ভালোবাসে সে কখনোই আপনাকে ছেড়ে যাবেনা। শত ঝড় ঝঞ্ঝাতেও সে আপনার হাতই ধরে থাকবে। আর যে চলে গেছে, বা প্রতারণা করছে, জানবেন, তার আপনাকে গ্রহণ করার মত ক্ষমতা-ই নেই। যতটুকু ভালবাসা আপনার হৃদয়ে রয়েছে এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের কোথাও আপনার জন্যও ততটা ভালোবাসা জমা রয়েছে। সারাদিনের শত ব্যস্ততার মধ্যেও নিজেকে সময় দিন। নিজেকে ভালোবাসুন। শুধু আপনি যেমন, আপনি যা-সে জন্য। তাই নিজের সম্পর্কে উচ্চতর ধারণা, নিজেকে নিঃশর্ত ভাবে ভালবাসা কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় আমাদের জীবনে। মনে রাখবেন :-

“The best kind of people are the ones that come into your life and make you see sun where you once saw clouds. The people that believe in you so much, you start to believe in you too. The people that love your simply for being you. The once in a lifetime kind of people.”

৪. নিজের কাজের ইতিবাচক সমালোচনা করুন, ভিতরের নেতিবাচক স্বত্বাকে গুরুত্ব কম দিন। দেখবেন নিজের সম্পর্কে অনেক ইতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হয়ে গেছে। সারাদিনে অন্তত একবার এমন কিছু করুন, যা আপনি করতে সত্যিই ভালবাসেন। যে কাজটি আপনি করবেন, সম্পূর্ণ আপনারই জন্য, আপনার আত্ম উপলব্ধির জন্য। সব কাজে সবটুকু সাফল্য আসবেই-এমন ধারণা থেকে বেরিয়ে আসুন। বরং নিজের ভুল গুলোকে শুধরে নিয়ে সেগুলোকে বিশ্লেষণ করুন। নিজেকে প্রশংসা করতে ভুলবেন না কিন্তু।
জানবেন :-

“Nothing is more important than how YOU feel and think about yourself.”

৫. অন্যের সাথে নিজেকে তুলনা করার প্রবণতা থেকে থাকলে তা আজই বাদ দিন। আমরা এক একজন মানুষ এক একরকম, সবার ই আলাদা আলাদা ইতিবাচক দিক আছে বলেই মানুষ বৈচিত্র্যময়। তাই না? আরেকজন জীবনে কি পেল, আমি কি পেলাম না, আরেকজন কি হল আমি কি হলাম না, বা তার জীবনে কি আছে আমার কি নেই, এসব চিন্তা মাথায় আনার আগে একবার ভেবে দেখুন, আপনি কি পেয়েছেন, আপনি কি হয়েছেন আর আপনার কি আছে। নিজের দিকে তাকিয়ে দেখুন, এবং আপনি যা , তার জন্য কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করুন। নিজের প্রতি সম্মান দেখানোর এটা শ্রেষ্ঠ মাধ্যম। মনে রাখবেন, আপনার জীবন নামক এই গাড়িটার steering কিন্তু সম্পূর্ণ আপনারই হাতে।

“Politeness is a sign of dignity, not subservience.”
_______________________________

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
আত্মমর্যাদা, 5.0 out of 5 based on 1 rating
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

২ টি মন্তব্য (লেখকের ০টি) | ২ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ২৪-০৬-২০২৩ | ১২:৫৮ |

    ভেবে দেখুন, আপনি কি পেয়েছেন, আপনি কি হয়েছেন আর আপনার কি আছে। নিজের দিকে তাকিয়ে দেখুন, এবং আপনি যা , তার জন্য কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করুন। নিজের প্রতি সম্মান দেখানোর এটা শ্রেষ্ঠ মাধ্যম। মনে রাখবেন, আপনার জীবন নামক এই গাড়িটার steering কিন্তু সম্পূর্ণ আপনারই হাতে।

    “Politeness is a sign of dignity, not subservience.” https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

     

     

    GD Star Rating
    loading...
  2. আলমগীর সরকার লিটন : ২৫-০৬-২০২৩ | ১১:৩৪ |

    ভাল লেখেছেন কিন্তু আমি আত্মমর্যদা খুঁজে পেলাম না কবি দিদি

    সহজ সরল জীবনে আত্মমর্যদা থাকে না কেউ খুঁজেও না কারণ

    আমরা মানুষ মরণশীল এই ধরুণ আত্মমর্যদা,ব্যক্তিত্ব,সম্মান ইত্যাদি

    নিয়ে থাকি কখনো সুসম্পাক চিন্তাই করেনি, সম্পাক হলো একটা ধর্ম

    যেখানে সম্পাক নেই সেখানে আত্মমর্যদা ব্যক্তিত্ব সম্মান ইত্যাদি কোন মানে হয় না- সহজ সরল ভাবাটাই সহজ। ভাল থাকবেন

    GD Star Rating
    loading...