নিজের সাথে আমার নিজের ছিলো অনেক কথা, খুনসুটি, ঝগড়া, আবদার, মান, অভিমান। এতো কথার মধ্যেও আমি কিন্তু কোনোদিন কথা দিইনি গুছিয়ে সংসার, নিকানো উঠোন আর পরিপাটি আলনার অথবা, রান্নার স্বাদের ঠিকঠাক মাপ। কিংবা নির্ভুল পুজোর আসন। অথবা রোজ পুজো করা। এইসব আমার জন্য নয়। আমার জন্য ছিলো খোলা মাঠ, চু কিতকিত, কিংবা মাঞ্জা দেওয়া ঘুড়ি, গুলি খেলা, ফুটবল, ক্রিকেট আরও কতো কি।
বড় বেশী দামাল ছিলাম আমি। সারাদিন দস্যিপনায় ভরপুর। দাদু ডাকতেন, বড়দিদি। দাদু খেতে বসলেই আমি ঠিক দাদুর পাশে। রাতে দাদুর পাশে ঘুমোনোর সময় দাদুর গল্পের ঝুলি থেকে গল্পেরা তখন টুপ করে চলে আসতো আমার ঝুলিতে।
মাঝেমধ্যে একলা যাপন ছিলো আমার প্রিয় স্বপ্নগুলোর সঙ্গে। আমাকে দেখেই তারা এসে ভিড় করতো। দুহাতের মুঠো খুশি থাকতো ওদের জন্য। ওদের সাথে বকম বকম করতে গিয়ে কখন যে সন্ধ্যে হয়ে যেতো খেয়ালই করতাম না। তারপর ঠাম্মা বলে উঠতেন এই ভরসন্ধ্যে বেলায় চুল খুলে কেউ ঘোরে! বেশ লম্বা চুল ছিলো আমার। বাঁধতে গিয়ে হিমশিম খেতে হতো। আবার কখনো জানলার খড়খড়িতে লুকিয়ে থাকা চোখ। দুপুর বেলার এক্কাদোক্কার ছক। আমি তখন বড্ডো অলস। আমার তখন আলসেমিতেই সুখ।
আমি কিন্তু কোনোদিন কথা দিই নি শুধুমাত্র সুখের, প্রশ্নহীন বাধ্যতার, আর অনেক সম্মানের। অথবা, লোক-দেখানো তোয়াজ, মায়াবী ব্যবহার।
ছোটবেলায় জেনেছিলাম আমি অলক্ষ্মী। এই শব্দটা কেমন যেনো অস্পৃশ্য। তখনও পাভেল, ইভান আর তাতিয়ানা গেরস্ত ঘরের নাম হয়ে ওঠেনি। তখনও রদ্ধশ্বাসে পড়ে ফেলতাম, “ইস্পাত”, “মাদার”। এই অলক্ষ্মী নামেই হয়তো অলক্ষ্যে হেসেছিলেন সেই সুপার ন্যাচারাল পাওয়ার! তাইতো জীবনের খেলাঘরে লক্ষ্মী নয় দুর্গা হয়ে উঠতে পেরেছিলাম।
যখন বৃষ্টি হতো লুকিয়ে ভিজতাম ইচ্ছেমতো। আর তারপর হ্যাচ্চো হ্যাচ্চো। আবার কখনো রোদ পোহানো আমের আচার মন। আবার কখনো মেঘবিলাসী ঠাকুরঘরের হাজার আলোর প্রদীপ। ঘরের কোণের খাঁজে খাঁজে চড়ুই পাখির পালক। জীবনের পথ চিনেছি গহীন বনের তুমুল ঝড়ের।
আলতা পাতা-কাজল লতা চোখের কোণের জল। তুলসি মঞ্চ, আকাশ প্রদীপ,তারারা উজ্জ্বল। একলা চাঁদ, হিমেল রাত, একলা হাতে হাত। একলা ছাদের, একলা দুপুর, একলা মনের সাথ।
এইতো, শুধু এইটকুই আমি, ভুল নামতার সাথ। তবুও হাসতে পারি যখন তখন সন্ধ্যে কিংবা রাত। কখনও মেঘ পেরিয়ে রোদের ঝিলিক মাস কয়েকের দেরি, মন খারাপের বাদলা দিনে বৃষ্টি বিলাস বাড়ি।
loading...
loading...
মেঘবিলাসী ঠাকুরঘরের হাজার আলোর প্রদীপ। ঘরের কোণের খাঁজে খাঁজে চড়ুই পাখির পালক। জীবনের পথ চিনেছি গহীন বনের তুমুল ঝড়ের। বাদলা দিনে বৃষ্টি বিলাস বাড়ি।
loading...