গতকাল ছিলো বিশ্ব কবিতা দিবস… কবিতার উচ্চারণে ভেসে যাক সকল অন্যায়-অবিচার… কবিতায় মুক্তি হোক বিশ্ব মানবতার। ২১ মার্চ, বিশ্ব কবিতা দিবস। ১৯৯৯ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর ত্রিশতম অধিবেশনে একুশ মার্চকে বিশ্ব কবিতা দিবস (World Poetry Day) হিসেবে পালনের ঘোষনা করা হয়। কবিতা সংস্কৃতির এক নান্দনিক উপাদান, কবিতা সমাজের অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে অনড় উচ্চারণ।
পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিনিয়ত উড়িয়ে দেয়া হয় অজস্র কবিতার রঙ বেরঙের পালক। আমাদের মানবিক চেতনার চিরসুন্দর আঙ্গিনায় ওরা বর্ণিল বেলুনের মতো উড়ে যায় ভিন্ন বোধ, ভিন্ন অনুভূতি, ভিন্ন ভাষার সুবাস ছড়িয়ে। তাইতো চেক রিপাবলিকের কবি, Jarosav Seifert, Nobel Prize in Literature 1984, তাঁর To Be a Poet কবিতায় লিখেছেন,
“Life taught me long ago
that music and poetry
are the most beautiful things on earth
that life can give us.
Except for love, of course.”
কিছুটা অনুবাদ করলে এইরকম বলাই যায় …
“ভালবাসা ব্যতীত জীবনের আরও একটি সবচেয়ে সুন্দর আশীর্বাদ হল,
কবিতা ও সঙ্গীত।”
মনের ভাষা যা প্রকাশ করা যায় না সরাসরি তা অনেক সময় কবিতা হয়ে কলমে আসে। ঝরে পড়ে কাগজের বুকে । কবিতা একটি শক্তি , একটি অনুপ্রেরণা। আমরা সবাই কবিতা লিখি একটি আলাদা আলাদা অনুভূতি থেকে। তবে সব কবিতাই একসময় আমার বা অন্যর মনের ভাষার রূপ নেয়। কবিতায় প্রেম, দ্রোহ সব ফুটে ওঠে স্পষ্ট ভাবে। কবিতা হোক মানবতার মুক্তির সনদ।
কবিতা না থাকলে পৃথিবীর আর কী এত সুন্দর ও ছন্দময় হত! জানি না। জানি না কোথায় চন্দ্রপ্রভার রূপ এত মোহ জাগানিয়া শব্দে গাঁথা হত, জানি না কোথায় তুষার ঝরার শব্দগুলো জমা হত! জানি না আর কী দিয়ে তোমার-আমার কথাগুলো কবিগুরুর গানের সুরে বাঁধা হত? মেক্সিকোর কবি অক্টাভিও পাজ (Octavio Paz, Nobel in Literature 1990) তাঁর Motion কবিতায় লিখলেন,
“If you are the first snow
I am he who lights the hearth of dawn….
If you are the morning tide
I am the first bird’s cry….
If you are the sleeping land
I am the green cane”….
কিছুটা অনুবাদ এইরকম হতে পারে …
“তুমি যদি হও প্রথম বরফ,
তবে আমি হবো ভোরের শুকতারা,
“তুমি যদি হও প্রভাত স্রোত,
আমি হব প্রথম পাখির ডাক।
তুমি যদি হও সুপ্ত ভূমি,
আমি হব সবুজ ফসল অপার।”…..
কবিতা দর্শন। কবিতা মূল্যবোধের হাতিয়ার। কবিতা শেখায় বিনয়ী হতে, সহিষ্ণু হতে, মানবিক হতে। কবিগুরু তাই মাত্রাবৃত্তে লিখলেন,
“আমার মাথা নত করে দাও হে তোমার
চরণধুলার তলে ।
সকল অহংকার হে আমার
ডুবাও চোখের জলে ।”
…….
আমাদের প্রিয় কবি রবীন্দ্রনাথের যে কবিতা আমি মনেপ্রাণে ধারণ করি তা হলো …
“আমারে না যেন করি প্রচার
আমার আপন কাজে ;
তোমারি ইচ্ছা করো হে পূর্ণ
আমার জীবন-মাঝে।” (গীতাঞ্জলি)
কয়েকবছর আগে আন্তর্জাতিক কবিতা দিবস উপলক্ষে UNESCO প্রধান Ms Irina Bokova বলেন, “Poetry is one of the highest forms of linguistic and cultural expression. Giving complete creative and verbal freedom, it is an integral part of peoples’ identities and, like music, dance and art, also often helps us to create our own personal identity.”
সত্যিইতো, কবিতা স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্যের প্রকাশ। সেই স্বাতন্ত্র্য সংস্কৃতির, ভূ-প্রকৃতির এমনকি জাতির সোনালী ইতিহাসেরও। জীবনানন্দ তাঁর কবিতায় লিখলেন,
“হায় চিল, সোনালি ডানার চিল, এই ভিজে মেঘের দুপুরে
তুমি আর উড়ে উড়ে কেঁদো নাকো ধানসিড়ি নদীটির পাশে!” (হায় চিল, বনলতা সেন কাব্য)
অথবা
“সোনালি ধানের পাশে অসংখ্য অশ্বত্থ বট দেখেছিল, হায়,
শ্যামার নরম গান শুনেছিলো — একদিন অমরায় গিয়ে
ছিন্ন খঞ্জনার মতো যখন সে নেচেছিলো ইন্দ্রের সভায়
বাংলার নদী মাঠ ভাঁটফুল ঘুঙুরের মতো তার কেঁদেছিলো পায়। ”
(বাঙলার রূপ আমি দেখিয়াছি, রূপসী বাঙলা কাব্য)
এই যে চিল, ধানসিড়ি নদী, অশ্বত্থ, শ্যামা, খঞ্জনা , ভাঁটফুল ,প্রতিটি উপাদান এই বাঙলার রূপের প্রসাধনীর মতো। কবিতা কত সুন্দর হয়ে ওঠে প্রকৃতিকে তুলে ধরে। কত স্বতন্ত্র্য এই রূপ! কবিতায় কবির স্বাতন্ত্র্য রূপ ও স্পষ্ট হয়ে উঠে। কবিতা তথা সৃষ্টি কর্মের মাধ্যমে কবিও কাব্য সৃষ্টির পৃথক সত্ত্বা। এই পার্থক্য বুঝতে হলে বুঝতে হয় কবির সৃষ্টি, গভীর উপলব্ধি করতে হয় কাব্যের বার্তা। প্রতিটি কবি তাঁর নিজ নিজ সৃষ্টিতে পৃথক। তাই সেখানে তুলনা অমূলক, নিরর্থক। প্রকৃতি মানেই বৈচিত্র্যতা, প্রকৃতি মানেই ভিন্নতা। এখানে বিশালতা বৈচিত্র্যে, আকার কিংবা সংখ্যায় নয়। এই বৈচিত্র্যতার সবচেয়ে সুন্দর মিল হল সৌন্দর্য্য। আমাদের আর এক প্রিয় কবির কথা অনুযায়ী বলতেই পারি…
“কবিতা কবির অহংকার,
কিন্তু অহংকারীরা কবিতার কেউ নয় ”
তাহলে কবিতার অকৃত্রিম অভিন্নতা কী? কোথায় তার সেই সৌন্দর্য্য অন্তর্নিহিত?
কবিতা হলো অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে তীব্র উচ্চারণের আঘাত। কবিতা হলো অশান্তির দেয়ালগুলো ভাঙার কামান, কবিতা হলো অনাদিকালের প্রেম-ভালবাসার সতেজ সুর। আর কবিতার অভিন্নতা এখানেই। তাই তো কবিতাই পারে পৃথিবীকে সমন্বিত করতে।
loading...
loading...
প্রতিটি কবি তাঁর নিজ নিজ সৃষ্টিতে পৃথক। তাই সেখানে তুলনা অমূলক, নিরর্থক। প্রকৃতি মানেই বৈচিত্র্যতা, প্রকৃতি মানেই ভিন্নতা। এখানে বিশালতা বৈচিত্র্যে, আকার কিংবা সংখ্যায় নয়। এই বৈচিত্র্যতার সবচেয়ে সুন্দর মিল হল সৌন্দর্য্য।
কবিতাই পারে পৃথিবীকে সমন্বিত করতে। কবিতা দিবসের সাফল্য কামনা করছি বন্ধু।
loading...
কবিতা দিবস স্মরণীয় থাক। শুভেচ্ছা প্রিয় বন্ধু। ধন্যবাদ।
loading...
"কবিতা হলো অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে তীব্র উচ্চারণের আঘাত। কবিতা হলো অশান্তির দেয়ালগুলো ভাঙার কামান, কবিতা হলো অনাদিকালের প্রেম-ভালবাসার সতেজ সুর। আর কবিতার অভিন্নতা এখানেই। তাই তো কবিতাই পারে পৃথিবীকে সমন্বিত করতে"—-
চমৎকার পোস্ট ।
loading...
ধন্যবাদ কবি দিদি ভাই।
loading...
“ভালবাসা ব্যতীত জীবনের আরও একটি সবচেয়ে সুন্দর আশীর্বাদ হল,
কবিতা ও সঙ্গীত।” আসলেই তাই।
দারুণ সব মূল্যবান কথা। দামি পোস্ট!
loading...
ধন্যবাদ মিড ডে দা। শুভ কামনা।
loading...
কবিতা সংস্কৃতির এক নান্দনিক উপাদান, কবিতা সমাজের অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে অনড় উচ্চারণ। সুন্দর প্রবন্ধ।
loading...
ধন্যবাদ সুমন আহমেদ।
loading...
কবির কবিতায় মানুষের মন প্রাণ জাগ্রত হয়। অনেকসময় কবির কবিতা হয়ে ওঠে মানুষের বেঁচে থাকার সংগ্রাম । কবিতা দিবস চিরস্মরণীয় হয়ে থাকুক সবার অন্তরে।
loading...
কবিতা দিবস চিরস্মরণীয় হয়ে থাকুক সবার অন্তরে। শুভকামনা প্রিয় কবি দা।
loading...
আমার মনে হয় কবিতা হলো মিশ্রী দানা, যা দিয়ে বশ করা যায়
আবার ছুড়িও বেধানো যায়।
loading...
ঠিক তাই। শুভেচ্ছা খালিদ দা।
loading...
কবিতা হলো শিল্প। যার কাজ সৌন্দর্য সৃষ্টি। শব্দে শব্দে সৌন্দর্য।
loading...
ধন্যবাদ আপনাকে।
loading...
কবিতা হলো এক আকাশ নীল
কবিতা এক উত্তাল সমুদ্র
কখনো ধেয়ে আসা পাহাড়,
কবিতার জন্যই এই আশ্চর্য সুন্দর বেঁচে থাকা!
কবিতা দিবসের শুভ কামনায়।অতি চমৎকার পোস্ট।
loading...
অনুপ্রাণিত হলাম প্রিয় কবি রানু দি।
loading...
কবিতা দিবসের এই রূপধারাই হোক
এবং বয়ে আনুক
কবিতার ‘প্রেম নিবেদন’
মিশে যাক কলম ও কালি
অনেক শুভেচ্ছা রইল– কবি রিয়া দিদি
loading...
জ্বী অনেক ধন্যবাদ কবিবাবু।
loading...