প্রতিভাবানব্যক্তি দের মানসিক সমস্যা
প্রতিভাবানদের মধ্যে ‘বাইপোলার ডিসঅর্ডার’ বা ‘ম্যানিক ডিপ্রেশন’ এর নজির দেখা গেছে হাজার হাজার বছর ধরেই। ভান গঘ, সিলভিয়া প্লাথ কিংবা ভার্জিনিয়া উল্ফে’র মতো খ্যাতিমান চিত্রকর-কবি-লেখকদের জীবনযাপন দেখে সহজেই তা বোঝা যায়। অ্যারিস্টটল, প্লেটো ও সক্রেটিসের জীবন কথায়ও এইরকম উল্লেখ আছে। অ্যারিস্টটল একসময় দাবি করেছিলেন, “পাগলামির ধাত্ ছিল না – অদ্যাবধি কোনো মহান প্রতিভাধরের জন্ম হয়নি।” কিন্তু, পাগলামি-ক্ষ্যাপামি-বিষাদগ্রস্ততা বা ইত্যকার সব বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে প্রতিভার যোগসূত্রের বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা এতোদিন দুর্বলই ছিল। লন্ডনের কিংস কলেজের ‘ইন্সটিটিউট অফ সাইকিয়াট্রি’র গবেষকরা স্টকহোমের কারোলিনস্কা ইন্সটিটিউটের গবেষকদের সঙ্গে নিয়ে এ বিষয়ে সমীক্ষা চালিয়েছেন। ভ্যান গঘ -এর আঁকা বিখ্যাত সূর্যমুখী ‘বাইপোলার ডিসঅর্ডার’ স্থায়ী বিষাদগ্রস্ততা বা ‘ম্যানিক ডিপ্রেশন’ হিসেবে পরিচিত। ‘মুড’ বা ভাবের পরিবর্তনে ম্যানিয়া বা ‘ইলেশন’ থেকে সহজেই ‘ডিপ্রেশন’-এ চলে যেতে পারেন এমন বৈশিষ্ট্যের অধিকারীরা। ম্যানিক পর্যায়ে এঁরা নিজের সক্ষমতা বা অক্ষমতা সম্পর্কে অতিশয়োক্তিতে ভোগেন, কথাবার্তায় অভাবনীয় চাতুর্যের পরিচয় দেন এবং বিশ্রামহীন হয়ে পড়েন, অনিদ্রায় ভুগতে শুরু করেন।
১৯ শতকের মার্কিন লেখক এডগার অ্যালান পো ‘ম্যানিক ডিপ্রেশন’-এ ভুগেছেন বলে বিশ্বাস করা হয়। পো একবার বলেছিলেন, “লোকে আমাকে পাগল বলে। কিন্তু পাগলামিতেই বুদ্ধিবৃত্তির সবচেয়ে শিখরস্পর্শী অবস্থান নিহিত কিনা সেই প্রশ্নের এখনও সুরাহা হয়নি। ”জীবনভর মানসিক অস্থিতিশীলতার প্রমাণ দিয়ে গেছেন ভিনসেন্ট ভ্যান গঘ। অনেক জীবনীকাররই লিখেছেন, ভান গখ ডিপ্রেশন ও বাইপোলার ডিসঅর্ডারে ভুগেছেন। ১৮৮৮ সালে মানসিক আঘাতের চরম পর্যায়ে আর একটু হলেই ঘনিষ্ঠ বন্ধু পল গঁগার জীবননাশ করতে চলেছিলেন তিনি। ভালোবাসার প্রমাণ হিসেবে এক নারীকে নিজের কানের একাংশ কেটে উপহার দেন তিনি। কবি সিলভিয়া প্লাথ নিজেকে সামলাতে ভয়াবহ যন্ত্রণার শিকার হয়েছেন বারবার। আত্মহত্যার প্রবণতা, নিজেকে বৈদ্যুতিক শক দেওয়া থেকে শুরু করে কী করেন নি তিনি। এসব কারণে তাঁর কোনো সম্পর্কই টেকেনি। শেষপর্যন্ত গ্যাস-ওভেনে মাথা ঢুকিয়ে আত্মহত্যার পর প্লাথের এই চরম আত্মঘাতী প্রবণতার রহস্য নিয়ে বহু জল্পনা-কল্পনা করেছেন পাঠকরা। গবেষকরা বলছেন, সম্ভবত বাইপোলার ডিসঅর্ডারে ভুগেছিলেন প্লাথও। ভার্জিনিয়া উল্ফ ১৯১৩ সালে জীবনের প্রথম উপন্যাস ‘দ্য ভয়েজ আউট’ শেষ করার পরপরই ভীষণ ভেঙে পড়েছিলেন। উল্ফ নিজেই লিখেছেন, ‘”আমি বিয়ে করে ফেললাম এবং আমার মাথায় যেন আতশবাজির আগুনের ফুলকি ফুটতে শুরু করল। পাগলামির অভিজ্ঞতাটা আসলেই ভয়াবহ ভীতিকর৷ কিন্তু, আমি এখনই খুঁজে পাই যে, আমি যা কিছু লিখেছি, যেসব নিয়ে লিখেছি তা ওই আগুনের লাভাতেই জন্ম নিয়েছিল।”
প্রতিভাবানদের মধ্যে পাগলামির এমন অনেক উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। তবে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মনোবিশ্লেষক, মনস্তত্ত্ববিদ এবং মনরোগবিশষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিভাবানদের সঙ্গে পাগলামির যোগসূত্রটা আসলে এক ধরণের স্নায়বিক ভারসাম্যহনীতার মধ্যে নিহিত। ইন্সটিটিউট অফ সাইকিয়াট্রি’র সিনিয়র লেকচারার ড. জেমস ম্যাকাবে এই গবেষণার নেতৃত্ব দেন। ১৯৮৮ সাল থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত সুইডেনের ১৫ থেকে ১৬ বছর বয়সি স্কুলছাত্রছাত্রীর মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর সমীক্ষা চালান তারা। এইসব ছাত্রছাত্রীদের কতজন ৩১ বছর বয়সের মধ্যে বাইপোলার ডিসঅর্ডারের কারণে চিকিৎসা নিতে গিয়েছে হাসপাতালের রেকর্ড থেকে তাও দেখা হয়েছে। গবেষকরা জানান, উচ্চ প্রতিভাবানরা যেমন মানসিক ভারসাম্যহীনতার ঝুঁকিতে রয়েছেন তেমনি এই ঝুঁকি রয়েছে স্কুলে খুব খারাপ ফলাফলকারীদেরও। আর কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ ব্যাখ্যা করতে না পারলেও দেখা গেছে নারীদের চেয়ে পুরুষদের মধ্যে এমন পাগলামি জেগে ওঠার সম্ভাবনা বেশি।
চলবে …
loading...
loading...
প্রতিভাবানব্যক্তি দের মানসিক সমস্যা নিবন্ধটি পড়লাম। পড়ে যতটা মনে হলো আমি ব্যক্তি হিসেবে আমি অন্তত তাদের থেকে বেশী সুস্থ্য। সম্ভবত।
loading...
অনেক অনেক ধন্যবাদ প্রিয় বন্ধু।
loading...
শুভ কামনা রইল ——–
loading...
শুভেচ্ছা কবিবাবু।
loading...
প্রতিভাবান ব্যক্তিদের মানসিক সমস্যা নিয়ে লেখা সুন্দর একটা প্রতিবেদন পড়ছিলাম।হা,সমসাময়িক একটা পোস্ট।শুধু প্রতিভাবান ব্যক্তিরা নন,এই সমস্যা প্রত্যেক মানুষের মধ্যে কম বেশী দেখা যায়। চলুক লেখা টা। শুভ কামনা রইলো প্রিয় কবি রিয়া দিদি ভাই।
loading...
কথা সত্য। তারপরও বলি; আরও দুটি পর্ব রয়েছে কবি দিদি ভাই। তারপর না হয় কনকুলেশনে আসবেন। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
loading...
আমার মনে হয় আমিও এই পাগলদের মধ্যে পড়ি । অসম্ভব উলটা পালটা কাজ করে ফেলি । এরপর আফসোসে ভুগি । ওনারা না হয় প্রতিভাবান । আমার যে কি সমস্যা ! গুরুত্বপূর্ণ এবং মজার পোস্ট । চলুক । ভালো থেকো রিয়া ।
loading...
কি যে বলেন দিদি ভাই। প্রতিভাবানদের মধ্যে সামান্য অসম্ভব থাকবেই।
loading...
শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা। খুব ভালো লাগলো পড়ে, মুগ্ধতা আর জ্ঞান দুটোই বাড়িয়ে নিলাম, সত্যিই অতুলনীয় এক লেখা। আবারো শ্রদ্ধা।
loading...
আপনাকেও শ্রদ্ধা জানাই কবি কাজী রাশেদ। ধন্যবাদ।
loading...
লেখাটি এগিয়ে নিন দিদি। আলোচনায় জানা বা অজানা অনেক বিষয় আছে।
loading...