সায়নি
সায়নিকে হঠাৎই সেদিন শুনতে হলো – “কেত মেরে সেলফি পাবলিক পোস্টাবি আবার পাবলিক এডমায়ার করলেও দোষ”। অবাক হয়ে গেলো সায়নি। আবারও যখন পম্পা বলে উঠলো – “আরে আকর্ষণের গ্রাফ নামছে না উঠছে এটা জানতে হবে তো”। সেদিন অপমানে সারা তার দুচোখের পাতা এক করতে পারলো না। ক্রমশ স্মৃতির ভীড়ে হারিয়ে গেলো ও। পম্পা কিন্তু ঘুমিয়ে পড়লো। অথচ সায়নি কতো বোকা পম্পাকে বন্ধু ভেবেছিল। আজ সায়নীর বয়স ষাট ছুঁই ছুঁই। তবে তার শরীরের বাঁধন ভালো। বয়স বোঝা যায় না। একদিন সে সত্যিই সুন্দরী ছিলো। কোমর ছাপানো লম্বা চুল, টানা টানা চোখ, পদ্মকলির মতো ঠোঁট। ছিপছিপে চেহারা। সবই ছিলো জীবনে ভালোবাসা ছাড়া। বাবা বিয়ে দিলেন বিশাল পয়সাওয়ালা এক বিজনেস ম্যানের সাথে। বিয়ের পরে জানতে পারলো তার স্বামী একাধিক নারীতে আসক্ত। কিন্তু বড্ডো দেরী করে জানলো সে, ততদিনে তার কোল জুড়ে ফুটফুটে এক সন্তান। তবুও সে তার স্বামীর বদগুণগুলো মেনে নিতে পারে নি, পঁচিশ বছর বয়স যখন স্বামীর থেকে আলাদা হয়ে গেলো, সমস্ত ভালোবাসা উজার করে দিলো তার সন্তানকে, আদরে, যত্নে তাকে বড় করতে লাগলো। সায়নী ভাবলো ওই পঁচিশ বছর বয়সে যখন সত্যিই সে কাউকে আকর্ষিত করতে পারতো, তখনই করেনি, চেষ্টাও করেনি আর আজ প্রৌঢ়ত্বের দোড়গোড়ায় এসে আকর্ষণ করবে? এতো দুর্দিন তার এসেছে! সেতো ফেসবুকে ছবি পোস্ট করে অন্য কারণে, একদিন সে থাকবে না এই পৃথিবীতে, অথচ তার ছবিগুলো থেকে যাবে।
সায়নি জানে তাকে বোঝার মতো কেউ নেই। তার বন্ধু কেউ নেই। বড্ডো একা সে ভীড়ের মধ্যে। অথচ কতো প্রলোভন ওর সামনে ছিলো! কেউ বলেছিল সায়নিকে সে রানীর মতো রাখবে, তার বাড়ি, গাড়ি সব সায়নির নামে লিখে দেবে। শুধু একবার সায়নি তাকে বলুক ভালোবাসে। নাহ্ সায়নি সেদিন প্রলোভনের হাতছানিতে ভেসে যায় নি। সে কারো সংসার ভাঙতে চায় নি। সে কাউকে কখনও বলেনি ভালোবাসে। সে কাউকে ভালোবাসতে পারে না। তাকেও কেউ ভালোবাসতে পারে না। এতোগুলো বছর যে একা চলেছে সমস্ত ভীড় থেকে নিজেকে সরিয়ে রেখে আর আজ এই বয়সে এসে তাকেই শুনতে হলো ছবি পোস্টায় পাবলিককে আকর্ষণ করার জন্য! ছিঃ ছিঃ এর থেকে সায়নির মৃত্যুও ভালো ছিলো! সেদিন সায়নি সারারাত ভাবলো, যদি সত্যিই একাধিক পুরুষ তার জীবনে থাকতো, তাহলে বোধহয় ভালোই হতো। সে শুধু ভালোবাসাকে ভয় পেয়ে গেলো সারাজীবন।
loading...
loading...
প্রৌঢ়ত্বের দোড়গোড়া আসলেই একটি ভয়ংকর অধ্যায়।
সায়নি’র জন্য দুঃখ পেলাম।
loading...
ঠিকই বলেছেন বন্ধু। সায়নিদের জীবন এমনই।
loading...
বেশ লাগলো। বাস্তব জীবন চতুর্দিকের। শুভেচ্ছা রইলো।
loading...
শুভেচ্ছা আপনার জন্যও অর্ক দা।
loading...
আসলে আমরা যখন সামাজিক জীব ভাবি
তখন নৈতিক কথা আছে-
সেখানে নিজেকে ভাবতে হবে
আমি কোন দিকে যাব!
কোন অনৈতিক ভাবনা পরিহার করাই ভাল
একা একা কিছু করা যায় না—-
loading...
সুন্দর মন্তব্য প্রিয় কবিবাবু।
loading...
বেশ সুন্দর। আন্তরিক ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন প্রিয় দিদি।
loading...
ধন্যবাদ কবি বাবু দা।
loading...