নারীদের পোশাকের ইতিহাস
শাড়ী নিয়ে জানার প্রথমেই জানা দরকার এই শব্দটির উৎপত্তি সম্পর্কে… “শাড়ী” শব্দটি এসেছে সংস্কৃত “শাটি” হতে যার অর্থ “এক ফালি কাপড়”। পরবর্তীতে প্রাকৃত এর বিবর্তনের কারণে “শাডি” বা “সাত্তিকা” শব্দ হতে শাড়ী শব্দে পরিণত হয়েছে… শাড়ীর উৎপত্তি জানতে হলে আমাদের ফিরে যেতে হবে সুদূর অতীতে। ইতিহাসবিদ রমেশচন্দ্র মজুমদার প্রাচীন ভারতের পোশাক সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন যে তখন মেয়েরা আংটি, দুল, হার এসবের সঙ্গে পায়ের গোছা পর্যন্ত শাড়ি পরিধান করত, উপরে জড়ানো থাকত আধনা (আধখানা)। শুরুতে নারীরা ছিলেন স্বল্পবসনা। ছিলো শুধু দু টুকরা কাপড়ে নিজেদের শরীর ঢাকতো। মৌর্য এবং সুঙ্গ যুগে নারী ও পুরুষেরা চারকোনা কাপড় পরতো। শরীরের নিচের দিকে কাপড়কে বলতো অন্তরীয় এর উপরের অংশকে উত্তরীয়। পাল আমলের কিছু ভাস্কর্য দেখেই তা অনুমান করা যায়। এই তথ্য অনুযায়ী বলা যায় যে, অষ্টম শতাব্দীতে শাড়ি ছিল প্রচলিত পোশাক। দক্ষিণ ও পশ্চিম ভারতে সেলাই করা কাপড় পরার রেওয়াজ আদিম কালে ছিল না। এই সেলাইবিহিন অখন্ড বস্ত্র পুরুষের ক্ষেত্রে “ধুতি” এবং মেয়েদের বেলায় “শাড়ি” নামে অভিহিত হয়। বয়ন শিল্পের উৎপত্তির সঙ্গে শাড়ির সংযোগ রয়েছে। তখন যেহেতু সেলাই করার কৌশল জানা ছিল না তাই সেলাই ছাড়া টুকরা কাপড় পরাই ছিল শাস্ত্রীয় বিধান।
কালিদাসের ‘কুমারসম্ভব’-এ শাড়ির কথা উল্লেখ আছে। ইলোরা অজন্তা গুহার প্রাচীন চিত্রাবলি বলে দেয়, খ্রিস্টাব্দ শুরুর সময়ে শাড়ির অস্তিত্ব ছিল। দক্ষিণ ও পূর্ব ভারতের নারীরা শাড়িকেই প্রধান বস্ত্র বানিয়েছে। সিন্ধু সভ্যতার ভাস্কর্যে পুরোহিতদের শাড়ীকেই ধুতির মতো পরিহিত অবস্থায় পাওয়া যায় এবং মনে করা হয় ধুতিই শাড়ী প্রচলনের ভিত্তি। অন্য আরেকটি মতবাদে বলা হয়ে থাকে, ভারতবর্ষের কেরালা প্রদেশে ব্যবহৃত দুই প্রস্থের পোশাক “মান্দাম নারিয়াথাম” হতে শাড়ীর উৎপত্তি। মোঘলদের মধ্যে সম্রাট আকবরই ভারতবর্ষের সংস্কৃতির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা শুরু করেন। সেই ধারাবাহিকতায় শাড়িতেও মোঘলাই আভিজাত্যের সংযোজন। মোঘলদের আগ্রহের জন্য মসলিনের শাড়ির উপস্থিতিও থাকত অন্দর মহলে। মোঘলদের জন্য মসলিন কাপড় সংগ্রহের জন্য সরকারি লোক নিয়োগ দেওয়া হত। তবে সেসময় শাড়ি পড়া হত এক প্যাঁচে।
ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ একেক রকমের কাপড় পরতো। দক্ষিণ ভারতে, এমনকি ঔপনিবেশিক আমলেও, কোনো কোনো নারী তাদের শরীরের ওপরের অংশ ঢেকে রাখতো না। ১৫শ শতাব্দীর পরে পোশাক আশাকে গ্রিক, রোমান, আরব এবং চীনা প্রভাব পড়তে শুরু করল। কি ধরনের কাপড় পরতে হবে তার লিখিত কোনো নির্দেশনা ছিলো না। তবে মুসলিম নারীরা সাধারণত নিজেদেরকে ঢেকে রাখতো। সেজন্যে তারা আলাদা আলাদা কয়েকটি কাপড় পরতো যেখানে থেকে সালওয়ার কামিজের জন্ম। ভিক্টোরিয়ান যুগে ব্লাউজের প্রচলন শুরু হলো। সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্ত্রী জনদানন্দিনী দেবী আজকে যেভাবে ব্লাউজ পরা হয় তার ধারণা তৈরি করেন, কারণ শাড়ির নিচে নগ্ন বক্ষের কারণে তাকে ব্রিটিশ রাজের আমলে তাকে ক্লাবে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। সেখান থেকেই আজকের ব্লাউজের সূচনা। মূলত শেরশাহর আমলে এক টুকরো কাপড় বুকে বেঁধে রাখা হতো। সে-সময় একে কাঁচুলি বলো হতো। আবার অনেকে বক্ষবন্ধনীও বলতেন। চোলি, উত্তরীয়া, স্তান্নাপাতা, কুরপুশিকা প্রভৃতি নামেরও উল্লেখ আছে অনেক স্থানে।
পেটিকোটের প্রচলন শুরু হয় মুসলমানদের আগমনের সাথে, তারাই ঘাগরা/ পেটিকোট পোশাকের ব্যবহার শুরু করে ভারতবর্ষে এবং শাড়ীতে সেলাইয়ের ব্যপারটি তারাই আরম্ভ করেন। পূর্বে কাপড়ে সেলাইয়ের প্রথাতো ছিলই না বরং কাপড়ে সেলাই কে অপবিত্র মনে করা হত। এভাবেই বিভিন্ন পথ অতিক্রম করে আজকের শাড়ী, ব্লাউজ,পেটিকোট তার নিজ রূপ ধারণ করেছে।
আংশিক তথ্য স্বীকার :
loading...
loading...
কত সব অজানা বিষয় আপনার লিখায় খুঁজে পাই। অসাধারণ প্রিয় শব্দ বন্ধু রিয়া।
loading...
অনুপ্রাণিত হলাম প্রিয় বন্ধু।
loading...
* প্রিয় কবি দি, বছরের শেষ ক’টা দিন আর শুরুর কিছুদিন একদম সময় পাইনি ব্লগে আসার। ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টি পাব নিশ্চয়ই।
ভালো থাকুন সবসময়।
loading...
loading...
মা জাতির শাড়ী নিয়ে যা জানা ছিল না, রিয়া দিদির পোস্ট থেকে তা জানা হলো। সুন্দর তথ্যবহূল পোস্ট। ভালো থাকবেন শ্রদ্ধেয় রিয়া দিদি। আমি সময়ের অভাবে ব্লগে বেশি সময় দিতে পারছি না। তাই ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন বলে আশা কারি।
loading...
সমস্যা কাটিয়ে উঠে চলে আসুন ব্লগে নিতাই দা। আমরা আপনার অপেক্ষায় থাকি। আপনার মন্তব্যেও যথেষ্ঠ অনুপ্রাণিত হই।
loading...
নারীরাই পোষাকের উদ্ভাবন করেছে। একটি লেখায় পড়েছিলাম এই লজ্জা ঢাকার ইতিবৃত্ত।
loading...
নারীরাই পোষাকের উদ্ভাবন করেছে; কথা সত্য প্রিয় গল্প দা। ধন্যবাদ।
loading...
অজানা তথ্য
জানলাম
ভাল লাগল
loading...
ধন্যবাদ কবি দা। শুভেচ্ছা।
loading...
রিয়াদি,
মুরুব্বির মন্তব্যের সাথে একমত ।অনেক নতুন ব্যাপার জানা হলো আপনার এই লেখা পড়ে । সুন্দর লেখার জন্য বড় একটা ধন্যবাদ আর নতুন বছরের শুভেচ্ছা ।
loading...
loading...
ভালো লাগলো। কিছু বানান ভুল আছে। আর প্রধান তথ্য সূত্র বা সূত্রগুলো উল্লেখ থাকলে ভালো হতো। আপনার সূত্র শতভাগ নির্ভুল বা পূর্ণাঙ্গ কি? খুব সম্ভবত বিশেষ কিছু পোষাকের সীমিত আকারে হলেও আরও আগে থেকে প্রচলন শুরু হয়েছিল। হয়তো শুরুতে অভিজাত বা ধনাঢ্যরাই এগুলো পরতো। বিশেষ করে ব্লাউজের ইতিহাস নিয়ে আমার ঘোরতর সন্দেহ আছে। আপনার তথ্য যদি সত্যি হয়, তাহলে তা বড়জোর আড়াইশ’ বছর আগেরই কথা! হতেও পারে। ওপার ওপার দুই বাংলাতেই অনেক গ্রামে এখনও নারীরা গ্রীষ্মে ব্লাউজ পরে না। ওরকম হয়তো উনি ব্লাউজ পড়তেন না ।
যাই হোক আপনি লিখেছেন আপনাকে সাধুবাদ। তবে তথ্যগুলো সম্পূর্ন কিনা এনিয়ে আমি সন্দিহান। কারণ আপনার লেখায় এ অঞ্চলে পোষাকের ধারণা তেমন পুরনো বা আগের নয়।
শুভেচ্ছা ভরপুর প্রিয় ব্লগার। এরকম আরও লিখুন।
loading...
বানান ভুল সমস্যা আমার বহুকালের। এটা আমার জন্য নতুন কিছু নয়; তারপরও পাঠকরা সময় ব্যয় করে আমার লেখা গুলোকে প্রশ্রয় দেন সেখানে আমার কৃতজ্ঞতা।
ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে লেখাটিতে সূত্রের বরাত না থাকায় আপনার ঘোরতর সন্দেহ আছে জেনে আমি দুঃখিত।
এখানে যেটা আমি আলোচনা করার চেষ্টা করেছি, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আর্টিকেল পড়ে এবং জেনে, আমার স্মৃতি থেকে শেয়ার করার চেষ্টা করেছি মাত্র। এর বাইরে তেমন কিছু নেই। আপনাকে ধন্যবাদ অর্ক দা। 
loading...
আমরা যারা গ্রামীণ জনজীবন সম্পর্কে খোঁজ খবর রাখি তারা জানি যে এখনও অনেক জায়গায় এক প্যাচে শাড়ি পরা হয়। কিছু কিছু জায়গায় এখনও অনেক মহিলাই ব্লাউজ পরেন না।
আপনার কাছে কোনো তথ্য থাকলে অবশ্যই জানাবেন অর্ক দা। আর মোবাইল থেকে বড় বড় আর্টিকেল লিখি তাই বানান ভুল হয়েই যায়। এখানে যা লিখেছি তা শতভাগ ঠিক।
loading...
না ঠিক আছে। আসলে আমি পড়ে রোমাঞ্চিত হয়েছি। বিশেষ করে ব্লাউজের ব্যাপারটা আমার কাছে বিস্ময়কর লেগেছে ।আপনার তথ্য সঠিক হলে, এই সামান্য পোষাকটির প্রচলন মাত্র আড়াইশ বছর আগে থেকে! উনিশ বিশ বা সামান্য এদিক ওদিক হতে পারে! সবমিলিয়ে চমৎকার লেখা, প্রচুর তথ্য দিয়েছেন। আপনার এই শ্রমলব্ধ পোস্টকে সাধুবাদ সাধুবাদ সাধুবাদ। আর তেমন কোনও বানান ভুল নেই। শুধু দুয়েকটা সামান্য ছোটো ভুল আছে, যা ‘টাইপো’ বলা হয়ে থাকে। যা আসলে বিদগ্ধ রচয়িতার খামখেয়ালিপনা হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারে।
এরকম আরও লিখুন। ঢের শুভেচ্ছা।
loading...
ধন্যবাদ অর্ক দা। অনেক অনেক ভালো থাকুন।
loading...