মাছ ধরা

মাছ ধরা

বাড়িটা ছিলো ভীষণ disciplined। সবকিছু নিয়মের মধ্যে। দুপুর একটার মধ্যে বাড়ির সবার খাওয়া হয়ে যেতো, ঠিক চারটের সময়ে চা পর্ব। আর প্রতিদিন এই সময়ে দাদুর বন্ধুরা আসতেন। তাদের সাথে চলতো দাদুর সংস্কৃত পর্ব। দ্বিতীয় ছাদে। প্রথম ছাদে ঠাম্মার বন্ধুরা। কারণ ঠাম্মার বন্ধুরা লোহার ঘোরানো সিঁড়ি বেয়ে উঠতে পারবেন না। আর আমি তখন আমার বন্ধুদের সাথে বাড়ির পাশের মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছি। নীচের ঘর থেকে পড়তে পড়তে কাকাই একবার খেয়াল রাখছে আর ছাদ থেকে দাদু। আর আমি তখন ডাংগুলি খেলতে ব্যস্ত। নাহলে ক্রিকেট, কিংবা কুমির ডাঙ্গা। আমার খেলার সময় ছিলো চারটে থেকে ছটা।

বাড়ি মানুষগুলো ছিলো ভীষণ হুজুগে। যখন যেটা হুজুগ হবে তখনই সেটা করতে হবে। হঠাৎ একদিন মা আর বড়মার ইচ্ছে হল সিনেমা দেখতে যাবে, কিন্তু নিয়ে যাবে কে? অতএব ধরা হল জেঠুকে। নিয়ে গেলো জেঠু। একদিন মেমদাদুর ফোন এলো বাড়িতে, তার পুকুরের মাছ বড় হয়েছে। অতএব মাছ ধরা হবে। মেমদাদু ছিলেন আমার ঠাম্মার ছোট ভাই, তখনকার বিলেত ফেরত ইঞ্জিনিয়ার। আর তিনি যাকে বিয়ে করেছিলেন তিনি ইংল্যান্ডের মানুষ। তাই আমি ডাকতাম মেমদাদু আর মেমদিদা। মেমদিদা পরিষ্কার বাংলা বলতেন, সুন্দর করে শাড়িও পরতেন। ভীষণ সুন্দরী ছিলেন। ব্যস ফোন আসার সাথে সাথেই দাদু জানিয়ে দিলেন আগামী রবিবার মাছ ধরতে যাওয়া হবে। ছোটকার বাড়ি। মেমদাদুকে দাদু ছোটকা বলে ডাকতেন।

যথাযথ ভাবে দিন গড়িয়ে রবিবার এসে গেলো। আর বাড়ি জুড়ে সাজসাজ রব। মাছের চার বানানো হচ্ছে, কাকাই বানাচ্ছে। ছিপ দেখে নেওয়া হচ্ছে, চাকাও। সাঙ্ঘাতিক ব্যস্ত কাকাই, কারণ কাকাইও পছন্দ করে মাছ ধরতে। আমার জন্যও একটা ছোট ছিপ আনা হয়েছে, কাকাই এনেছে। না আনলে তো আমি ভীষণ বায়না শুরু করবো তাই। কাকাই আগে থেকেই এইসব ব্যবস্থা করে রেখেছে। দাদু ধুতি আর বাংলা শার্ট পড়তেন। সাদা ছাড়া অন্য রং পড়তে দেখিনি কখনো। ঠাম্মা একটা চওড়া লাল পাড়ের শাড়ি, আজ একটু বেশিই গয়না পড়েছেন। যেহেতু ভাইয়ের বাড়ি যাচ্ছেন। শম্ভু দাদু আমাদের গাড়ি চালাতেন। দাদুর বয়সী তাই দাদু বলতাম। কাকাই ও জামা প্যান্ট পড়ে তৈরি হাতে একটা প্যাকেট। মেমদাদুর বাড়ির জন্য গিফট, ঠাম্মা কিনেছেন। সাজুগুজু করে আমরা রওনা দিলাম। গাড়িতে বসে হাতটা জানলার একটু বাইরে রেখে ছিপগুলো শক্ত করে ধরে রেখেছি। যেহেতু এপাড়া আর ওপাড়া তাই তাড়াতাড়ি পৌঁছে গেলাম। মেমদাদুর বাড়ির পেছনের দিকে একটা পুকুর করেছিলেন শুধু মাছ ধরবেন বলে।

বাড়ি থেকে খেয়েই বেড়িয়েছিলাম তাই দুপুরে ওই বাড়ি গিয়েই দাদা, কাকাই, মেমদাদু লেগে গেলেন মাছ ধরার কাজে। আমি ঠাম্মার পাশে বসে মেমদিদাদের জন্য আনা গিফট দেখছি। আর বিরক্ত হচ্ছি ওদের সাংসারিক গল্পে। চিন্তা করছি, ইশ! আমাকে ছাড়ে কাকাই না জানি কত মাছ ধরে নিলো, আবার আমার ছিপও নিশ্চয়ই কাকাই নিয়ে মাছ ধরছে। ঠাম্মার কাছে অনেক্ষণ ঘ্যানঘ্যান করার পরে পারমিশন পেলাম মাছ ধরার। দৌড়ে গেলাম পুকুর পাড়ে। হুম, যা ভেবেছি ঠিক তাই, আমার ছিপ কাকাই নিয়েছে! যাবার সাথে সাথেই হাতের ইশারায় চুপ করতে বলল। আমি চুপচাপ বাঁধানো বেদীতে বসে রইলাম। আর যেই মাছ উঠছে ওমনি আমি আনন্দে হাততালি দিয়ে উঠছি। তারপর কি জানি কি ভেবে কাকাই আমাকে ছিপ দিয়ে চুপটি করে বসে মাছ ধরতে বললেন। কাকাই একটু দূরে দাঁড়িয়ে দেখছেন আমার মাছধরা। উফফ, কি যে ধৈর্যের কাজ মাছ ধরা! এইসব কি আমার পোষায়? আমি তো স্থির হয়ে বসতেই পারছি না। এতো নড়াচড়া করলে কি আর মাছ আসে! অবশেষে কাকাইকে ডেকে বললাম তুমিই ধর মাছ, পছন্দ হয়নি আমার এই খেলা।

সেইদিন অনেক মাছ ধরা হয়েছিল। কিছু মাছ আমরা নিলাম, কিছু মাছ মেমদাদু নিলো, কিছু মাছ শম্ভু দাদুকে দেওয়া হল। কিছু পাড়ার লোককে। সব মাছ ভাগাভাগি করে রাতের বেলায় মেমদাদুর বাড়িতে দারুণ খাওয়া দাওয়া করে মাছ সাথে করে নিয়ে বাড়ি এলাম।

[আমার কাকাই ভালো নেই, ডাক্তাররা জবাব দিয়ে দিয়েছেন। কতস্মৃতি ভীড় করে আসছে। আজ এই লেখাটা থাক।]

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

৬ টি মন্তব্য (লেখকের ৩টি) | ৩ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ১৩-১২-২০১৮ | ১৭:৪৫ |

    কাকাই এর মাছ ধরা। কাকাই এর জন্য আমাদের প্রার্থণা রইলো। তিনি ভালো থাকুন।

    GD Star Rating
    loading...
    • রিয়া রিয়া : ১৩-১২-২০১৮ | ১৯:১২ |

      কৃতজ্ঞতা প্রিয় বন্ধু। ধন্যবাদ।

      GD Star Rating
      loading...
  2. মোঃ খালিদ উমর : ১৩-১২-২০১৮ | ১৭:৫৮ |

    কাকাই এর জন্য আমাদের প্রার্থণা রইলো। তিনি ভালো থাকুন।

    GD Star Rating
    loading...
    • রিয়া রিয়া : ১৩-১২-২০১৮ | ১৯:১৩ |

      ধন্যবাদ খালিদ দা।

      GD Star Rating
      loading...
  3. মরুভূমির জলদস্যু : ১৩-১২-২০১৮ | ২২:৪৮ |

    গত সপ্তাহে একটি পুকুর সেচে মাঝ ধরিয়েছি। সব দেশী মাছ।

    GD Star Rating
    loading...
    • রিয়া রিয়া : ১৪-১২-২০১৮ | ১৯:২৬ |

      Smile আনন্দিত হলাম ছবি দা। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Trumpet.gif.gif

      GD Star Rating
      loading...