হানুকা ও আটদিনের উৎসব
ডিসেম্বর মাসে যেমন বড়দিন বা Jesus christ এর জন্মদিন পালন করা হয় ঠিক তেমনই এই ডিসেম্বরে আরও একটি উৎসব পালিত হয়, তার নাম হানুকা। এটি ইহুদিদের উৎসব। হানুকা শব্দটি হিব্রু শব্দ, যার অর্থ নিজেকে উৎসর্গ করা। এই বছর ২রা ডিসেম্বর এই উৎসব শুরু হয়েছে, চলবে ১০ই ডিসেম্বর পর্যন্ত। আটদিন ধরে এই উৎসব পালিত হয়।
পৌরাণিক ইতিহাস অনুসারে ১৭১ খ্রীষ্ট পুর্বাব্দে সিরিয়া দেশে Antiochus IV Epiphanes নামে এক রাজা রাজত্ব করতেন। রাজাকে ওই সময় অ্যান্টিওকাস এপিফ্যানেস অর্থাৎ দৃশ্যমান ঈশ্বর নামেও ডাকা হতো। তিনি গ্রীক ধর্ম পছন্দ করতেন, তাই তাঁর রাজ্যে গ্রীক ধর্ম প্রচলন করতে চেয়েছিলেন। গ্রীকদের অনেক দেবদেবীর মুর্তি থাকা সত্ত্বেও বারোজন প্রধান দেবতা ছিলেন, এঁরা হলেন- জিউস, হেরা, পোসেইডন, ডিমেটর, এথেনা, অ্যাপোলো, আর্টেমিস, এরিস, অ্যাফ্রোদিতি, হেপাস্টাস, হারমিস, হেস্টিয়া।
ইহুদিধর্ম গ্রীক ধর্মের থেকে একেবারেই আলাদা একটি ধর্ম। ইহুদীরা বিশ্বাস করেন যিহোভাহ অর্থাৎ ঈশ্বর এক নিরাকার। ঈশ্বর পৃথিবীতে তাঁর দূত বা নবীদের পাঠান তাঁর বাণী প্রচার করতে। এইরকম একজন হলেন মোজেস। ইহুদীরা মনে করেন তিনি ছিলেন মালাশী অর্থাৎ সর্বশেষ নবী। ইহুদী মতে যেহেতু ঈশ্বরকে দেখা যায় না তাই এঁদের মন্দিরে কোনো মূর্তি থাকে না। শুধু ঈশ্বরের প্রতীক হিসাবে বিশেষ এক ধরনের বাতিদানে বাতি জ্বালানো হয়। এই বাতিদানকে menorah বলে।
রাজা Antiochus IV Epiphanes এক যুদ্ধে হেরে গিয়ে পালিয়ে জেরুজালেম শহরে আসেন। শহরটি তখন সিরিয়ার অন্তর্গত ছিলো। বর্তমানে ইজরায়েল দেশের অংশ। যুদ্ধ হেরে যাওয়ার জন্য তিনি বেশ রেগে ছিলেন। জেরুজালেমের মত একটি সাজানো ইহুদি শহর দেখে তাঁর রাগ দ্বিগুণ হলো। তখন তিনি সেনাদের আদেশ দিলেন, জেরুজালেম থেকে ইহুদিধর্ম মুছে গ্রীক ধর্মে অনুসারী হোক সবাই। স্যাবাথ নিষিদ্ধ করা হল। দলে দলে ইহুদিদের জোর করে গ্রীক করা হতে লাগল। যারা রাজী হল না তাদের হয় মেরে ফেলা হলো, না হলে ক্রীতদাস করা হলো। মেনেলাউস হলেন ইহুদিদের প্রধান পুরোহিত, সে ইহুদি কম আর গ্রীক বেশি ছিলো। জেরুজালেমকে গ্রীক জীবনযাত্রা, গ্রীক ভাষা এবং গ্রীক নামে ভরিয়ে দেওয়া হল। ইহুদি ধর্মপালন নিষিদ্ধ করে দেওয়া হল। ইহুদি মন্দিরে গ্রীক প্রধান দেবতা জিউসের বিরাট মূর্তি বসানো হলো। মূর্তি জিউসের হলেও, মূর্তির মুখটি রাজা অ্যান্টিওকাসের মতো ছিল। জিউসের মূর্তির সামনে উৎসর্গ হিসেবে শুয়োর বলি দেওয়ার আদেশ দেওয়া হলো। শুয়োর বলি দেওয়ার ফলে ফলে ইহুদিদের মন্দিরটি অপবিত্র হয়ে গেলো।
জেরুজালেমের কাছেই এক গ্রামে ম্যাটাথিয়াস নামে এক ইহুদি ধর্মপ্রাণ পুরোহিত বসবাস করতেন। তিনি জিউসের মূর্তির সামনে শুয়োর বলি দিতে প্রথম অস্বীকার করেন। বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন এবং একজন সিরিয় সৈনিককে মেরেও ফেলেন। তবে তিনি বৃদ্ধ ছিলেন এবং এই ঘটনার কিছুদিনের মধ্যেই মারা যান। তাঁর পাঁচ ছেলে ছিলো। যোহান, সিমন, এলাজার, জোনাথন এবং জুডা। এই পাঁচজন তখন রাজা অ্যান্টিওকাস এবং গ্রীকধর্মের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করলেন। বিদ্রোহের মূল নেতা ছিলেন ছোটভাই জুডা। তাঁর ডাকনাম ছিল ম্যাকাবি, যার অর্থ হাতুড়ি। তিন বছর ধরে তাঁরা লুকিয়ে চুরিয়ে গ্রীকদের আক্রমণ করতে থাকেন। প্রতিদিনই কিছু ইহুদি লুকিয়ে এসে তাঁর দলে যোগ দিতে লাগল। তিন বছর পর সামনাসামনি যুদ্ধ হলে গ্রীকরা শোচনীয় ভাবে পরাজিত হন। ইহুদিরা সবার আগে জিউসের মন্দির দখল করে সেটিকে আবার ইহুদি মন্দির বানান। মন্দিরে ঢুকে তাঁরা অবাক হয়ে দেখেন যে মার্বেলের মেঝে ফেটে গেছে, ধনরত্ন যা ছিলো সবই চুরি হয়ে গেছে। মন্দিরটি ইহুদি মতানুসারে শুদ্ধ করা হয়।
মন্দিরটি পরিষ্কার করে ইহুদি বিশ্বাসে প্রতি রাতে একটি করে বাতি জ্বালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বাতি জ্বালাতে ব্যবহার করা যেতো একমাত্র বিশুদ্ধ জলপাইয়ের তেল, যা প্রধান পুরোহিতের অনুমোদিত। একমাত্র সেই তেলেই Menorah জ্বালানোর অনুমতি ছিলো। কিন্তু যুদ্ধের পর অনেক খুঁজেও এক বোতলের বেশি এই তেল পাওয়া গেলো না। এই তেল মাত্র এক রাতের জন্য ছিলো। কিন্তু সবাইকে অবাক করে আটরাত আটদিন ধরে menorah জ্বলেছিলো। সেই সময়ের মধ্যে ইহুদিরা আরো অনেক তেল বানিয়ে নিতে পেরেছিলেন। এই আশ্চর্য ঘটনাকে মনে রেখেই আটরাত ধরে হানুকা পালন করা হয়। হানুকার জন্য আলাদাভাবে তৈরি বিশেষ মেনোরার নাম হল হানুকিয়া, অর্থাৎ হিব্রু ভাষায় আটদিন। প্রতি বাতিদানে একটি করে অতিরিক্ত বাতি বা মোমবাতির জায়গা থাকে। তার নাম শামাশ।
ইহুদি ধর্মগ্রন্থ Talmud অনুসারে প্রতি রাতে একটি করে বাতি জ্বালানো হয়। তবে অনেকে একসাথে আটটি বাতিই রোজ রাতে জ্বালান। Christmas এর রঙ বলতে আমরা যেমন লাল আর সবুজ বুঝি, তেমনই হানুকার রঙ হল নীল আর সাদা বা রুপোলী।
loading...
loading...
তথ্য বহুল লেখাটির জন্য ধন্যবাদ দিদি ।
loading...
পাঠ মনযোগে কৃতজ্ঞতা সাঈদ চৌধুরী দা।
loading...
ভয়াবহ সত্য হলেও স্বীকার করছি আমার এই অর্ধশত বয়স পর্যন্ত আমি কখনো হানুকা বা এই জাতীয় সংবাদ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলাম। সত্যি বলছি আমার জানা ছিলো না। আপনার এই নিবন্ধে যেন চোখ খুলে গেলো। হানুকার রঙ নীল আর সাদা বা রুপোলী।
শেয়ার করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ এবং অভিনন্দন জানাই বন্ধু রিয়া রিয়া।
loading...
কোন ক্ষতি বৃদ্ধি হয়নি প্রিয় বন্ধু। আজকে পড়েছেন তাতেই খুশি।
loading...
বিস্তারিত । খুব ভালো লাগলো প্রিয় ব্লগার। শুভেচ্ছা গ্রহণ করুন ।
loading...
খুশি হলাম অর্ক দা। ধন্যবাদ।
loading...
চমৎকার লিখনি।
loading...
ধন্যবাদ ছবি দা।
loading...
* একদম একটা নতুন ধারণা পেলাম…
ধন্যবাদ সুপ্রিয়।
loading...
ধন্যবাদ প্রিয় কবি দা।
loading...