আজ আমার অত্যন্ত প্রিয় কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্মদিন। শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা থুড়ি পদ্য (কারণ তিনিই বলে গেছেন “আমি কবিতা লিখিনা, পদ্য লিখি” ) এক আশ্চর্য ব্যাপার, বোধহয় কিছুটা তাঁর প্রথম জীবনের বোহেমিয়ান জীবনধারার মতই “UNPREDICTABLE” যা প্রাণ-প্রাচুর্যে ভরপুর, ছন্দের বিবর্তনে নেশা জাগিয়ে রাখে চিরন্তন ! কত অবিস্মরণীয় কবিতার লাইনের জন্মদাতা, যা এখনো মুখে, মুখে ফেরে। শক্তি চট্টোপাধ্যায় ছিলেন জীবনানন্দ-উত্তর যুগের বাংলা সাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান আধুনিক কবি। এই কবি বিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে বিশেষভাবে পরিচিত এবং আলোচিত ছিলেন। তিনি জন্মগ্রহন করেছিলেন নভেম্বর ২৫, ১৯৩৪ অর্থাৎ আজকের দিনে।
তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ: কাব্য- ‘সোনার মাছি খুন করেছি’, ‘হেমন্তের অরণ্যে আমি পোস্টম্যান’, ‘ধর্মে আছো জিরাফেও আছো’, ‘ছিন্নবিচ্ছিন্ন’, ‘প্রভু নষ্ট হয়ে যাই’, ‘পাড়ের কাঁথা মাটির বাড়ি’ প্রভৃতি।
শক্তি চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে একটা মজাদার গল্প বলে গেছিলেন অভিনেতা রবি ঘোষ –“..কোন মদ্যপায়ী লেখক বা গুনী ব্যক্তি হলফ করে বলতে পারবে যে তাকে একদিন রাত্রে GOVT. STATE BUS DRIVER বাড়ি পৌঁছে দিয়েছে! পারবে না। নাম করা লোকজন বাড়ি পৌঁছবার জন্য দামি গাড়ী আনতে পারে..আনতে পারে লরি, কিন্তু শক্তি চট্টোপাধ্যায় একটা আস্ত খালি STATE BUS আনতে পারে। কারণ – সেই STATE BUS এর DRIVER শক্তির কবিতার ভক্ত। ” এই রকম বহু ঘটনা আর কবিতার দ্বারা সৃষ্টি শক্তি নামক একটি মিথ যা আমাদের এখনো বিস্মিত করে, স্তম্ভিত করে।
শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কিছু কবিতাঃ-
**অবনী বাড়ি আছো
দুয়ার এঁটে ঘুমিয়ে আছে পাড়া
কেবল শুনি রাতের কড়ানাড়া
‘অবনী বাড়ি আছো?’
বৃষ্টি পড়ে এখানে বারোমাস
এখানে মেঘ গাভীর মতো চরে
পরাঙ্মুখ সবুজ নালিঘাস
দুয়ার চেপে ধরে–
‘অবনী বাড়ি আছো?’
আধেকলীন হৃদয়ে দূরগামী
ব্যথার মাঝে ঘুমিয় পড়ি আমি
সহসা শুনি রাতের কড়ানাড়া
‘অবনী বাড়ি আছ
** যেতে পারি, কিন্তু কেন যাবো?
ভাবছি, ঘুরে দাঁড়ানোই ভালো।
এতো কালো মেখেছি দু হাতে
এতোকাল ধরে!
কখনো তোমার ক’রে, তোমাকে ভাবিনি।
এখন খাদের পাশে রাত্তিরে দাঁড়ালে
চাঁদ ডাকে : আয় আয় আয়
এখন গঙ্গার তীরে ঘুমন্ত দাঁড়ালে
চিতাকাঠ ডাকে : আয় আয়
যেতে পারি
যে-কোন দিকেই আমি চলে যেতে পারি
কিন্তু, কেন যাবো?
সন্তানের মুখ ধরে একটি চুমো খাবো
যাবো
কিন্তু, এখনি যাবো না
একাকী যাবো না অসময়ে।।
** একবার তুমি
একবার তুমি ভালোবাসতে চেষ্টা কর –
দেখবে, নদীর ভিতরে, মাছের বুক থেকে পাথর ঝরে পড়ছে
পাথর পাথর পাথর আর নদী-সমুদ্রের জল
নীল পাথর লাল হচ্ছে, লাল পাথর নীল
একবার তুমি ভাল বাসতে চেষ্টা কর |
বুকের ভেতরে কিছু পাথর থাকা ভাল – ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়
সমস্ত পায়ে-হাঁটা পথই যখন পিচ্ছিল, তখন ওই পাথরের পাল একের পর এক বিছিয়ে
যেন কবিতার নগ্ন ব্যবহার, যেন ঢেউ, যেন কুমোরটুলির সলমা-চুমকি-জরি-মাখা প্রতিমা
বহুদূর হেমন্তের পাঁশুটেনক্ষত্রের দরোজা পর্যন্ত দেখে আসতে পারি |
বুকের ভেতরে কিছু পাথর থাকা ভাল
চিঠি-পত্রের বাক্স বলতে তো কিছু নেই – পাথরের ফাঁক-ফোকরে রেখে এলেই কাজ হাসিল –
অনেক সময় তো ঘর গড়তেও মন চায় |
মাছের বুকের পাথর ক্রমেই আমাদের বুকে এসে জায়গা করে নিচ্ছে
আমাদের সবই দরকার | আমরা ঘরবাড়ি গড়বো – সভ্যতার একটা স্থায়ী স্তম্ভ তুলে ধরবো |
রূপোলি মাছ পাথর ঝরাতে ঝরাতে চলে গেলে
একবার তুমি ভালবাসতে চেষ্টা করো |
** চতুর্দশপদী কবিতাবলী–
শক্তি চট্টোপাধ্যায়
ভালোবাসা পেলে সব লন্ডভন্ড করে চলে যাবো
যেদিকে দুচোখ যায়- যেতে তার খুশি লাগে খুব ।
ভালোবাসা পেলে আমি কেন পায়সান্ন খাবো
যা খায় গরিবে, তাই খাবো বহুদিন যত্ন করে ।
ভালোবাসা পেলে আমি গায়ের সমস্ত মুগ্ধকারী
আবরণ খুলে ফেলে দৌড় ঝাঁপ করবো কড়া রোদে…
ভালোবাসা পেলে জানি সব হবে । না পেলে তোমায়
আমি কি বোবার মতো বসে থাকবো-
ভালোবাসা না পেলে কি আমার এমনি দিন যাবে
চোরের মতন, কিংবা হাহাকারে সোচ্চার , বিমনা–
আমি কি ভীষণ ভাবে তাকে চাই ভালোবাসা জানে।
***
‘শিশিরভেজা শুকনো খড়’
শিশিরভেজা শুকনো খড় শিকড়বাকড় টানছে
মিছুবাড়ির জনলা দোর ভিতের দিকে টানছে
প্রশাখাছাড় হৃদয় আজ মূলের দিকে টানছে
ভাল ছিলুম জীর্ণ দিন আলোর ছিল তৃষ্ণা
শ্বেতবিধুর পাথর কুঁদে গড়েছিলুম কৃষ্ণা
নিরবয়ব মূর্তি তার, নদীর কোলে জলাপাহার …
বনতলের মাটির ঘরে জাতক ধান ভানছে
শুভশাঁখের আওয়াজ মেলে জাতক ধান ভানছে
করুণাময় ঊষার কোলে জাতক ধান ভানছে
অপরিসীম দুঃখসুখ ফিরিয়েছিলো তার মুখ
প্রসারণের উদাসীনতা কোথাও ব’সে কাঁদছে
প্রশাখাছাড় হৃদয় আজ মূলের দিকে টানছে
***স্টেশন ভাসিয়ে বৃষ্টি’
মনে পড়ে স্টেশন ভাসিয়ে বৃষ্টি রাজপথ ধ’রে ক্রমাগত
সাইকেল ঘন্টির মতো চলে গেছে, পথিক সাবধান…
শুধু স্বেচ্ছাচারী আমি, হাওয়া আর ভিক্ষুকের ঝুলি
যেতে-যেতে ফিরে চায়, কুড়োতে-কুড়োতে দেয় ফেলে
যেন তুমি, আলস্যে এলে না কাছে, নিছক সুদূর
হয়ে থাকলে নিরাত্মীয় ; কিন্তু কেন? কেন, তা জানো না।
মনে পড়বার জন্য? হবেও বা । স্বাধীনতাপ্রিয়
ব’লে কি আক্ষেপ? কিন্তু বন্দী হয়ে আমি ভালো আছি।
তবু কোনো খর রৌদ্রে, পাটকিলে কাকের চেরা ঠোঁটে
তৃষ্ণার চেহারা দেখে কষ্ট পাই, বুঝে নিতে পারি
জলের অভাবে নয়, কোন টক লালার কান্নায়
তার মর্মছেঁড়া ডাক; কাক যেন তোমারই প্রতীক
রূপে নয়, বরং স্বভাবে – মনে পড়ে, মনে পড়ে যায়
কোথায় বিমূঢ় হয়ে বসে আছো হাঁ-করা তৃষ্ণায়!
loading...
loading...
শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্মদিনে শব্দনীড় এর শ্রদ্ধাঞ্জলি। আমারও প্রিয় কবি।
loading...
শব্দনীড়ের অংশ হিসেবে আমারও শ্রদ্ধা প্রিয় কবি'র প্রতি।
loading...
কবিকে জন্মদিনে শুভেচ্ছা।
loading...
আমাদের শ্রদ্ধা।
loading...
কবি সম্পর্কে দারুণ ইন্টারেস্টিং কথা লিখেছেন। মজা পেলাম।
৬ টা কবিতা উল্লেখ করেছেন; আমার একটা কমন পড়েছে। (১/৬ %=১৭%) গ্রেস নাম্বার নেয়ারও জো নাই (বই পড়ায় আমি এমনই গরীব)। অথচ কী অসাধারণ লিখেছেন দুই বাংলার এই অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবিতা!
কবিকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা!
loading...
কবি সম্পর্কে দারুণ ইন্টারেস্টিং কথা লিখেছেন। মজা পেলাম।
৬ টা কবিতা উল্লেখ করেছেন; আমার একটা কমন পড়েছে। (১/৬ %=১৭%) গ্রেস নাম্বার নেয়ারও জো নাই (বই পড়ায় আমি এমনই গরীব)। অথচ কী অসাধারণ লিখেছেন দুই বাংলার এই অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি!
কবিকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা!
loading...
দুই বাংলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ এই কবিকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা। ধন্যবাদ মিড দা।
loading...
দুয়ার এঁটে ঘুমিয়ে আছে পাড়া
কেবল শুনি রাতের কড়ানাড়া
অবনী বাড়ি আছো ?
মনে করাইয়া দিলা । শক্তি আমার প্রিয় কবিদের একজন । শেয়ার করার জন্য আবার ধন্যবাদ ।
loading...
শক্তি দা আমারও প্রিয় কবিদের একজন। শুভকামনা দিদি ভাই।
loading...
আপনার প্রিয় কবির জন্ম দিনে শুভেচ্ছা রইলো। লেখাটি পড়ে শক্তি চট্টপাধ্যয় সম্পর্কে বেশ জানতে পারলাম। আর কবিতাগুলি বাড়তি পাওনা। বিশেষ করে 'একবার তুমি' অসাধারণ লাগলো আমার কাছে।
শুভেচ্ছা দিদি। ভালো থাকুন।
loading...
ধন্যবাদ গল্প দা মামুন। খুশি হলাম।
loading...
* প্রিয় কবির জন্মদিনে ভালোবাসা অফুরন্ত…
loading...
প্রিয় কবির জন্মদিনে আমাদের সকলের ভালোবাসা কবি দা।
loading...
বহুত আফসোস্ কি বাত হায়, কোই ভি হামারা জন্মদিনে কিছু লিখতা নাহি।
loading...
আপনার জন্মদিন আসলে কেউ না কেউ অবশ্যই লিখবে খালিদ দা। মন খারাপ করবেন না।
loading...
আপনার লেখা বরাবরই মুগ্ধ করে শ্রদ্ধেয় রিয়া দিদি। অনেকসময় কাজের ঝামেলায় মিস করি।
loading...
loading...
সত্যি অসামান্য প্রতিভাবান গুণী মানুষ! দেশ পত্রিকায় প্রয়াত বাদল বসু তাঁর সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করেছেন যে, ব্যক্তি জীবনে অত্যন্ত উন্নাসিক ও স্বাধীনচেতা ছিলেন। "অবনী বাড়ি আছো" কবিতাটি আমার এক চির প্রেরণার উৎস। কতো গতানুগতিকভাবে, মানে প্রচলিত আধুনিক কবিতার আড়ম্বরতা ছাড়াই কী গভীর প্রকাশ ভাবের। সত্যি অসাধারন!
গভীর শ্রদ্ধায় এই মহান কবিকে। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। শুভেচ্ছা। এরকম পোস্ট আমার কাছে খুব উপভোগ্য।
loading...
গভীর শ্রদ্ধায় এই মহান কবি। আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ অর্ক দা।
loading...
অসামান্য প্রতিভাবান এ কবির জন্মদিনে গভীর শ্রদ্ধা।
loading...
শুভেচ্ছা আপনাকে প্রিয় দিদি ভাই।
loading...