একান্নবর্তী পরিবার থেকে বৃদ্ধাশ্রম, এরপর কি?
ঋগ্ববেদের বিভিন্ন ঋগ পর্যালোচনা করলে একান্নবর্তী পরিবার ব্যবস্থা কত প্রাচীন তা বোঝা যায়। মানুষ পরিবার প্রথায় এসেছিল সভ্য হবার জন্য। সভ্যতা বিকাশে পরিবারের ভূমিকা যে অনস্বীকার্য তা এই প্রবাদ থেকে বোঝা যায়- ‘ব্যবহারে বংশের পরিচয়’ বা ‘পরিবার হচ্ছে শিশুর প্রথম পাঠশাল।’
পরিবারের গুরুত্ব সম্পর্কে আজ লিখতে আসিনি। আজ এসেছি পরিবারের গুনগত কাঠামো সম্পর্কে বলতে। ধরুণ- আপনি একটি গাছ লাগিয়েছেন এবং আপনার বন্ধুও একটি গাছ লাগিয়েছে কিন্তু আপনি গাছের গোড়া কেটে গাছ লাগিয়েছেন আর আপনার বন্ধু গোড়া সহ গাছ লাগিয়েছে। দুইজনই গাছ লাগিয়েছেন কিন্তু একজনের গাছ খুব দ্রুত বেড়ে উঠবে আর আরেকজনের গাছ হয়ত বেড়ে উঠবে বা মরে যাবে মাঝপথ। আমাদের পরিবার ব্যবস্থা সেই গোড়াবিহীন গাছ লাগানোর মতই হয়ে যাচ্ছে । আমরা যেখানে প্রকৃতির কোলে মানুষ হয়েছি, ঠাম্মা- দিম্মার মুখে গল্প শুনে ঘুমিয়েছি, তাদের শাসনে বড় হয়েছি সেখানে বর্তমান প্রজন্ম বড় হচ্ছে যন্ত্রের মাধ্যমে। প্রকৃতির দান এবং যন্ত্রের দান কখনো এক হতে পারে না। উন্নত জীবিকা নির্বাহের অজুহাত দিয়ে আমরা বর্তমানে একান্নবর্তী পরিবার ভেঙ্গে ছোট পরিবারে চলে যাচ্ছি। বাবা-মা কে গ্রামে রেখে বা দূরে রেখে সন্তান- স্ত্রী -স্বামী নিয়ে বসবাস করছেন। আপনি চাকরিজীবী আপনার স্ত্রী নিজের জগতে ব্যাস্ত।
সন্তানকে দেখাশোনা করার সময় নেই। আপনার সন্তান বড় হচ্ছে অনেক যন্ত্রের ছত্রছায়ায়। ফলশ্রুতিতে পারিবারিক মূল্যবোধ কিন্তু গড়ে উঠছে না। তার মধ্যে মানবিকতা সৃষ্টি হচ্ছে না। আপনি হয়ত ভাবছেন, টাকা কামাতে পারছি, সব চাহিদা পূরণ করতে পারছি আর কি দরকার। কিন্তু এই শেকড় বিহীন পরিবারের ফলাফল আসন্ন এবং এর পরিণাম ভয়াবহ। আপনার সন্তান হয়ত একদিন আপনাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আলাদা স্ত্রী সন্তান নিয়ে থাকবে কারণ, তার মধ্যে পারিবারিক বন্ধনের গুরুত্ব ও মূল্যবোধ গড়ে উঠেনি। এভাবে কি ভেবেছেন একবার??
একান্নবর্তী পরিবার আমাদের বাঙালি সংস্কৃতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। এই পরিবার নিয়ে রচিত হয়েছে কত নাটক এবং চলচিত্র। এই পরিবারে বটবৃক্ষের ন্যায় একজন কর্তা থাকে। তার পরামর্শেই সব কাজ হয়ে থাকে। তিনি ছায়ার মত সবাইকে আগলে রাখে। পারিবারিক মূল্যবোধ এখান থেকেই গড়ে উঠে। বাঙালি সংস্কৃতি বিলুপ্ত হবে যদি পারিবারিক বন্ধন মজবুত না হয়।
loading...
loading...
* সামাজিক হওয়ার ক্ষেত্রে একান্নবর্তী পরিবারের কোন বিকল্প নেই, আর দিন দিন আমরা নিউক্লিয়ার পরিবারে রূপ নিচ্ছি তার নেতিবাচক দিক হচ্ছে বৃদ্ধাশ্রম। আগামীর জন্য হয়তো অপেক্ষা করছে নিঃসঙ্গ বসবাস!
ভালো থাকুন সুপ্রিয় কবি দি…
loading...
একান্নবর্তী পরিবারের কোন বিকল্প নেই এটাই সত্য। ধন্যবাদ কবি দা।
loading...
কার্ল মার্কসের মতে সমাজ তথা সামাজিক মূল্যবোধ গুলোর মূল চাবিকাঠি হচ্ছে অর্থনীতি। অর্থনীতিকে ঘিরেই বিবর্তিত হয় সংস্কৃতি। আমাদের একান্নবর্তী সংসার সংস্কৃতিও এর বাইরে নয়। সামাজিক মূল্যবোধের বাইরে গিয়ে আমরা যদি একান্নবর্তী পরিবারের অটোপসি করি তাতে অর্থনৈতিক ফ্যাক্টর গুলো প্রকট হতে বাধ্য। উদাহরণ হিসাবে ধরতে পারেন স্ক্যান্ডিনেভিয়ান অনেক দেশে পরিবারের সংজ্ঞা। সরকারের ট্যাক্স এড়াতে ওসব দেশে অনেক জুটিই বিয়ের পিড়িতে বসতে চায়না। এখানে সামাজিক বাধ্যবাধকতার চাইতে অর্থনৈতিক বাস্তবতাই ড্রাইভিং ফোর্স হিসাবে কাজ করে। এ বিবর্তন মেনে নিয়েই আমাদের এগুতে হবে।
ভাল থাকুন।
loading...
ঠিকই বলেছেন দাদা। একদিনে সম্ভব নয়; প্রত্যাশা করি আমাদের দায়িত্ব এবং মানসিকতার পরিবর্তন হতে থাক। আমরা সবাই একসাথে থাকতে চাই।
loading...
'বাঙালি সংস্কৃতি বিলুপ্ত হবে যদি পারিবারিক বন্ধন মজবুত না হয়।' অমোঘ সত্য।
loading...
মূল সত্যই ধরেছেন প্রিয় বন্ধু। ধন্যবাদ আপনাকে।
loading...
একান্নবর্তী পরিবার থেকে বৃদ্ধাশ্রম কথাটা যেন মানতেই পারি না।
loading...
আমরা যারা এই ব্যবস্থাপনায় ঘর করছি বিপন্নতা ভাবতেই পারিনা দিদি।
loading...
একান্নবর্তী পরিবার এখন বিলুপ্তির পথে।
বৃদ্ধাশ্রাম এখন বাস্তবতা। এর থেকে বাচতে নিজেদেরই শক্ত হতে হবে।
loading...
আমাদের পারিবারিক সচেতনতার বাইরে আর কিছুই কি করার নেই ?
loading...
অতীব জরুরী একটি বিষয় তুলে আনার জন্য প্রিয় লেখিকাকে অশেষ ধন্যবাদ
loading...
পাঠ মনযোগে আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা দাদা।
loading...
অনবদ্য প্রকাশ দিদি কিন্তু এক ধরেনের অভিশাপ বলতে পারেন
loading...
আমি নিশ্চয় তাই বলি কবিবাবু। আপনাকে ধন্যবাদ।
loading...
একান্নবর্তী পরিবার আদতে একটা পারিবারিক পাঠশালা; সেখানে যে বিষয়গুলি পড়ানো হয় সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হল মনোজগৎ। শিশুর পারসোনালিটি ডেভল্যাপমেন্টের যে থিয়োরিগুলি রয়েছে সেগুলি পড়লে একান্নবর্তী পাঠশালার গুরুত্ব বুঝা যায়।
খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে দারুণ একটা পোস্ট দিয়েছেন।
loading...
আপনার আগমনে পোস্ট সমৃদ্ধ হলো মিড দা। ধন্যবাদ।
loading...
বর্তমানে satalite পরিবারের দাপটে একান্ন পরিবার বিলুপ্তির পথে।
প্রতিটি মানুষের পারিবারিক, সামাজিক ও জাতীয় শিক্ষা, সহিষনুতা, সাধারণ জ্ঞান, সহ মর্মিতা ইত্যাদি যাবতীয় শিক্ষার প্রথম ও শেষ বিকাশ হয় এই একান্নবর্তী পরিবারে।
কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো আজকাল মানুষ তাদের শিশুকে ফার্মের মুরগীর মত খাচায় পুষে সমাজের জন্য ক্ষতিকর একজন জড় পদার্থ তৈরী করছে তা ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারছেনা।
ধন্যবাদ এমন একটা বিষয়ে আলাপ করার করার জন্য।

loading...
আসলেই তাই। খুব ভাল বলেছেন মোঃ খালিদ উমর দা।
loading...
সব কয়েনেরই দুটো দিক আছে। একান্নবর্তী পরিবারের অসুবিধার দিক না থাকলে, কেউ নিজের ক্ষতি করতে তা ছেড়ে বেরিয়ে আসতো না।টাকা কামানো একান্নবর্তীপরিবারে থেকেই সম্ভব ও সুবিধজনক। পয়সা খরচ করে আয়া রাখার দরকার পড়েনা।
তবে একথা অস্বীকার করে লাভ নেই একদার একান্নবর্তী পরিবারে একে অন্যের সঙ্গে সর্বক্ষনের বিরোধ,ঝগড়াঝাটি, সুপ্ত র্যাগিং,ঘরের ভেতর ঘর তৈরির নির্মমতা শান্তিপ্রিয় মানুষ এড়াতে চেয়েছে। আর আছে পরিবর্তীত যুগের সময়ানুগ দাবী।
তবে খুব টাচি একটা বিষয়কেে তুলে ধরার জন্য ধন্যবাদ ।
একান্নবর্তী পরিবারেও বয়স্কদের অবহেলা ,অসম্মান দেখেছি। তারচেয়ে সম্মানজনক বৃদ্ধাশ্রম বার্ধ্যক্যের নিশ্চিন্ত আশ্রয়।
ভাল থাকবেন।
loading...
ভাল বলেছেন দিদি ভাই। প্রণাম জানাই।
loading...