অনেক দিন পরে সকাল এসেছে খুব শান্ত হয়ে, প্রাচীন বটের মতোই ছায়া পেতে দিয়ে। এই হৈমন্তিক কুয়াশা ঘেরা স্নিগ্ধ সকালে সোহাগে বেহাগে আলতো আদরে জড়িয়েছে আমায়। ঘুম মাখা আধা আধি চোখে তাকিয়েছি। হিমে ওমে মাখামাখি গালিচার মতো তুলোট সকালে,চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে থেকেছি সোনালি ভোরের দিকে। মনে মনে বলেছি আজকে আবার ভোর মেখেছি আদর ছোঁয়াতে। মন তার দরজা খোলে অতি ধীরে।মাঝে মাঝে চেনা চোখের অচেনা ছায়ায়, অভিমানে প্লাবণ ডাকে চোখের দুই দীঘি। যা আজ ফল্গু হয়ে মিশে গেছে অজানায়।
তারপর চারপাশে আস্তে আস্তে নিস্তব্ধতা মেখে নিই, বহুদূরে ভেসে যাওয়া অচেনা সুর টেনে, একে একে গুনেচলি আমার রোজ নামচা। একলা দেওয়াল কান পাতে, মন পাতে, নিঃশ্বাস থেমে থেমে শোনে যেন রূপকথা। সেই সব কথা, যা আগে কেউ শোনে নি, এখন সবটুকু ভালোলাগা -মন্দলাগা, ভালোবাসা-মন্দবাসা, চোখ চিনে নেয় সাঁঝ-সকালে, কবিতার রেশটুকু সাথে নিয়ে, সেই হালকা ঠোঁট ঘেঁষা হাসিটাও রেখে দিই এই ঠোঁটে।
এক শব্দহীন দুপুরে স্মৃতির রোমন্থনে চলে স্বপ্ন মন্থন। আমাকে নিয়ে বড্ড ভাবনা ছিলো তোমার আমি জানি। প্রিয়তম, খুব স্পষ্ট ভাবেই জানিয়েছিলাম, আমি তোমারই আছি আর তোমারই থাকবো অনন্ত অপেক্ষার পশরা সাজিয়ে। আয়নায় একবার দাগ লেগে গেলে যেমন সেই দাগ ওঠে না, ঠিক তেমনিই আমার মন থেকে একবার ভালোবাসা থেকে সরে গেলে কিছুতেই আর সেই আগের বিন্দুতে যেতে পারি না। তাই যখন সময়ে অসময়ে ফোন করে বারবার ক্ষমা চাও হাসি পায় তোমার অভিনয়ে। আমার অক্ষমতা তোমাকে আর চলার পথে নিতে না পারার। আজকাল একটু ঘুমাতে চাই আমি সুখের আরেকটু ঘুম। ঘুমের ভেতরে মাথার সমস্ত শিরা উপশিরা ঘিরে চলা স্বপ্নের অভিযানে শান্তির সে ঘুম। একটা একটা করে পরত সরে সরে যায় আর আমার আমিকে খুঁজে চলি স্বপ্ন থেকে স্বপ্নান্তরে। বার বার খুঁজে চলা। এইরকম নিখোঁজ ভালোবাসা আলগোছে বারবার নিজেকে উজাড় করে দিই। চোখের পাতায় আলতো ছায়া মেখে, আলভোলা বাঁশী সুরে ভেসে যাই দূর থেকে বহুদূরে।
মন পথ চিনে ওড়ে। বাতাসে কুয়াশায় মাখামাখি। শীতের আগমনীর গন্ধ মেশে আমার স্বপ্নে। অনেক আলো পরে, স্বপ্নেরা ক্লান্ত হয় শেষে। অনেক ক্ষণ ঘুরে ঘুরে, স্বপ্নেরা জানিয়ে দিল ফুলস্টপ, তখন ফিরে এলাম আমার ছোট্ট ঘরটায়। যে মনটা কুচি কুচি হয়ে উড়ে চলে গেছিল এক পারিজাত গন্ধ মাখা হাওয়ার সাথে, শহরের আনাচ কানাচ থেকে খুঁজে খুঁজে কুড়িয়ে কোঁচড় ভরে ফিরে এলাম, একে একে গেঁথে নেবো এ লেখাটার সাথে।
আমার মনের সবচেয়ে তুলতুলে নরম মন টুকুও তোমাকেই দেবো বলেছিলাম। বলেছিলাম যত্নে রেখো। বলেছিলাম আমার সব চেয়ে ভাল লাগা টুকুও তোমাকেই দেবো, যে কষ্টে টুপ করে কেঁদেছিলো আমার দুই চোখ, সেইটেও রেখে দেবো তোমার পায়ের কাছে। ঝলমলে সকাল, সোনাঝরা রোদ, মন কেমন করা দুপুর, দুষ্টুমি মাখা বিকেল, গভীর ঘন রাত সব, শুধুই তোমাকেই দেবো। সেই ছোটো বেলার গ্রীষ্মের দুপুরের কুলপিমালাই, ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে জমা জলে ভাসানো কাগজের নৌকোটাও তোমার জন্য রেখে দিয়েছিলাম। হাসি-কান্না-হীরে-পান্নায় মোড়া আমার ভালোবাসা শুধুই রেখেছিলাম তোমার জন্য। এখন একলা চলায় অভ্যস্ত আমি। ভালোবাসা যত্নে রাখা বুকের গোপন সিন্দুকে। আজ আর তোমার জন্য কিছুই নেই।
এখন এই হিম হিম সকাল বেলায় অলিতে, গলিতে, মাঠে, ঘাটের আনাচে, কানাচে ঘাসেরা সব বিছিয়ে নেবে শিরশিরিয়া চাদর। মায়ের কোলে ওম নেবে পাখির ছানারা। পরিযায়ী পাখিরা ডানায় ডানায় বয়ে আনবে পশমিনা সকাল। বালির কোল থেকে পিড়পিড়ে পিঁপড়েরা বয়ে আনবে মিঠে সাগর। সূর্য্যের অফুরান আলো নিয়ে নিঃশ্বাসে, ঝরে পড়বে একটা একটা পাতা। আর ঠিক তখন এক এক ফুঁয়ে উড়িয়ে দেবো ইচ্ছে-বেলুন।
কুয়াশারা হাত ধরাধরি করে মুছে দেবে মন খারাপি নদীর সাঁকো। হীরের দানার মতন টিপটিপ করে পাতায় পাতায় ঝরে পড়বে শিশির। জানলা খুলে দেবো। বুকে ভরে নেবে মাটির আতর।
loading...
loading...
'একটা একটা করে পরত সরে সরে যায় আর আমার আমিকে খুঁজে চলি স্বপ্ন থেকে স্বপ্নান্তরে। বার বার খুঁজে চলা। চোখের পাতায় আলতো ছায়া মেখে, আলভোলা বাঁশী সুরে ভেসে যাই দূর থেকে বহুদূরে।' ___ একটাই তো জীবন কবি বন্ধু। চলুন নির্ভীক।
loading...
মেনে নিলাম প্রিয় বন্ধু। শুভেচ্ছা।
loading...
বেশ লেখেছেন রিয়া দিদি
loading...
পড়েছেন জন্য কৃতজ্ঞতা কবিবাবু।
loading...
আপনার লেখায় দারুন ভাবনার বাস্তবতা চলে আসে।
loading...
অভিমানে ভরা অনেক সুন্দর ভাবনার কাব্যিক প্রকাশ । চমৎকার।
loading...