কবির জীবনে নারী :–
______________________
আমরা সবাই জানি তাঁর জীবনে তিনজন নারীর প্রভাব ছিলো সবথেকে বেশি। প্রেমিকাদের জন্য লিখেছেন অজস্র গান, কবিতা, ঘটিয়েছেন নানা ঘটনা। প্রেমের কবিতায় তাঁর তুলনা নেই। ব্যক্তিগত জীবনেও তিনি প্রেমে পড়েছিলেন বারবার।
কবি যাঁদের প্রেমে পড়েছিলেন, প্রথমেই আসে নার্গিসের কথা। ১৯২১ সালে কবি তাঁর বন্ধু আলী আকবর খানের নিমন্ত্রণে গিয়েছিলেন কুমিল্লার দৌলতপুরে। সেখানে এক বিয়ের অনুষ্ঠানে তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় সৈয়দা খাতুনের। কবি ওই বিয়ের অনুষ্ঠানে সবাইকে গান শুনিয়েছিলেন। নজরুলের গানের সুরে মুগ্ধ হলেন সৈয়দা খাতুন আর সৈয়দা খাতুনের রূপে মুগ্ধ নজরুল। কবি প্রেমে পড়ে গেলেন প্রথম দর্শনেই। সৈয়দা খাতুনও সমান আগ্রহে কবির প্রেমে সাড়া দিয়েছিলেন। সৈয়দা খাতুনকে ভালোবেসে কবি তাঁর নামও বদলে দিলেন। তিনি তাঁর নাম দিলেন নার্গিস। নার্গিস ইরানি শব্দ, যা এক সাদা ফুলের নাম। দৌলতপুরে থাকা অবস্থাতেই কবি সিদ্ধান্ত নিলেন, নার্গিসকেই তিনি বিয়ে করবেন। বিয়েও হয়ে গেল কয়েক দিনের মধ্যে। কিন্তু ইতিহাস রচনা করল এক দুঃখের নাটক। বিয়ে হলো ঠিকই, বাসর আর হলো না। কবির কাছে শর্ত রাখা হয়েছিল ঘর জামাই থাকবার। সেই রাতেই কবি অভিমানে বাসর ছেড়ে সেই বাড়ি ছেড়ে চলে যান। দৌলতপুর থেকে চলে আসেন কুমিল্লায়। কিন্তু কবির সেই অভিমানের কারণ কবি কোনো দিন কাউকে মুখ ফুটে বলেননি।
এর পর যদি কারও নাম আসে, তিনি হলেন মিস ফজিলাতুন্নেসার। তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম স্নাতকোত্তর মুসলমান ছাত্রী। ইতিহাস বলে, এই প্রেম ছিল একতরফা, মানে শুধু কাজী নজরুল ইসলামের দিক থেকেই। ফজিলাতুন্নেসার সঙ্গে কবির পরিচয় হয় ১৯২৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। কবি তখন মুসলিম সাহিত্য সমাজের দ্বিতীয় বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দিতে এসেছেন ঢাকায়। কবি একটু-আধটু জ্যোতির্বিদ্যা জানতেন। কাজী মোতাহার হোসেন সে কারণে কবিকে নিয়ে যান ফজিলাতুন্নেসার বাসায়। ব্যস! শুরু হয়ে গেল হাত দেখা। প্রথমে হাতে হাত, পরে চোখে চোখ। কবির মন প্রেমে টালমাটাল হয়ে উঠল। কবি চলে গেলেন ঢাকা ছেড়ে। কিন্তু ফজিলাতুন্নেসা থেকে গেলেন তাঁর মন জুড়ে। তার পর থেকে নজরুল লিখে চললেন একটার পর একটা প্রেমপত্র।
তবে শেষ পর্যন্ত নজরুলের জীবনসঙ্গিনী হয়েছিলেন প্রমীলা সেনগুপ্তা। প্রমীলাদেবীর ডাকনাম ছিল দুলি। জানা যায়, নজরুল ইসলাম কুমিল্লায় থাকা কালীন প্রমীলাদেবীর প্রতি অনুরক্ত হয়ে পরেন। প্রমীলাদেবীর সঙ্গে তাঁর আলাপ-পরিচয় ক্রমশ প্রেমে পরিণত হয়। তিমি তাঁর এই প্রেমের কথা লিখেছেন, তাঁর ‘বিজয়িনী’ কবিতায়। তাঁদের বিয়ে হয় ১৯২৪ সালের এপ্রিল মাসে। বিয়েতে বাধা ছিল একটাই, ধর্ম। বিবাহ-আইনের নানা চড়াই-উতরাই পার হয়ে তাঁদের বিয়েটা হয়েছিল স্ব-স্ব ধর্মপরিচয় বহাল রেখেই। তখন প্রমীলার বয়স ছিল ১৪ আর নজরুলের ২৩। নার্গিসকে উদ্দেশ্য করে কবি লিখেছিলেন, ‘হার-মানা-হার’। অবশেষে সেই ‘হার-মানা-হার’ পড়ালেন প্রমীলা সেনগুপ্তার কণ্ঠে।
দীর্ঘ রোগভোগের পর ১৯৬২ সালের ৩০ জুন মৃত্যুবরণ করেন কবিপত্নী প্রমিলা নজরুল। প্রায় ২৩ বছর পক্ষাঘাতগ্রস্থ ছিলেন তিনি। বাকরুদ্ধ অপ্রকৃতিস্থ কবিকে স্ত্রীর মৃত্যুসংবাদ দেন বন্ধু শৈলজানন্দঃ ”নূরু, দুলী আর নেই।” কবি ফ্যাল ফ্যাল করে বন্ধুর মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। হয়তো চেষ্টা করছিলেন, দুলী কে ছিলো তাঁর জীবনে, মনে করতে।বিষাদাক্রান্ত হয়ে পরে মন। মনে পড়ে কবির অমর গানঃ
‘ঘুমায়েছে ফুল পথের ধুলায় ওগো জাগিও না।’
শুনেছি প্রেম নাকি কবি মানসের প্রধান প্রেরণা। প্রেমিক কবি নজরুলের মন তো প্রেমময় হবেই। আর তাই প্রেম নজরুলের জীবনে এসেছিল বারবার—কখনো ঝড়ের মতো, কখনো নিভৃতে। কখনো রানু সোম (প্রতিভা বসু), কখনো কানন দেবী, আবার কখনো জাহানারা বেগম চৌধুরী, কখনো উমা মৈত্র। কবি বারবার ভেসে গেছেন প্রেমের জোয়ারে।
loading...
loading...
বিশেষ আগ্রহ নিয়ে পড়লাম। এই চ্যাপ্টারটি আমার কাছে ভীষণ অপরিচিত ছিলো। আজ আপনার পোস্ট আমাকে সমৃদ্ধ করলো বটে বন্ধু রিয়া রিয়া। ধন্যবাদ।
loading...
অনুপ্রাণিত হলাম প্রিয় বন্ধু।
loading...
অনেক কিছু জানলাম। ভাল পোষ্ট।
loading...
ধন্যবাদ দাদাভাই।
loading...
প্রেম না হলে কবিতার সৃষ্টিই ব্যর্থা
অনেক শুভেচ্ছা দিদি——
loading...