নাব্যতা

নাব্যতা

একটা একটা করে নদী সৃষ্টি হয় রোজ। একটু একটু করে মুছে যাই আমি। রোজ রোজ অবহেলায়। হয়তবা মাঝে মাঝে, কখনো পথ ভুলে আকাশের নাভি ঘেষে ওঠে চাঁদ। কখনও কখনও পথ ভুলে চাঁদের আলো পরে আমার ঘরে। নদী মুছে ফেলি রোজ। আবার নদী আঁকি নতুন। একা একা। একাই পথ চলা। অনেকটা মন জুড়ে একা। নদী বুঝি মুছে গেছে কিছু! তুলি হাতে বসেছি কাল। আরেকটা আঁকা হবে নিশ্চিত। তবু যা মুছে যায়, ধুয়ে নিয়ে যায় অনেক আকাশ।

একরাশ অভিমান? নাহ… রাগ? নাহ… তবে?

তবে…

তবে? কি বলি? আবারও ছাদের কার্ণিশে দাঁড়াই। আবারও দু হাত বাড়িয়ে দিই। কেউ নেই কোথাও নেই। কেউ বুঝে রাখেনি আমায়। আমাকেই বুঝে নিতে হয়, বার বার। তবু আমিই অবুঝ। সব বোঝাপড়া শেষ, সেই কবে, অনেক দিন আগে।

কেউ কি ছিলো?

ছিলো…

তাই হাতের মুঠি আলগা করে খুলে রেখেছি, যে যাবার সে চলে যাক। আর ওই আলগা মুঠিতেও যতটুকু থেকে যাবে, তা একান্ত আমার। সেই কোন এক সাঁঝবাতি ডুবু ডুবু বিকেলে, বৃষ্টি মেখে, আমাকে নিজের থেকে নিজেকে খুলে রেখে ভেসে গেছি নদী বেয়ে। তারপর সে নদীর উৎস মুছে যায়। মোহনায় লোনা স্বাদ।

চোখ দুটো বড্ডো অবুঝ বুঝি তখন?

তখন…

এই একটু আগে প্রচন্ড রোদে নেয়ে হেঁটেছি খানিক। দেখলাম একটা বসন্ত বউরির ছানা, গাছ থেকে পড়ে গেছে। আর তাকে ঠুকরে খেতে আসছে একটা কাক। থমকে চেয়ে থেকেছি। স্বার্থপর হতে আর পারলাম কই।

তারপর?

তারপর …

কাকটাকে তাড়িয়ে দিয়ে, পাখিটাকে হাতে তুলে নিলাম। তারপর একটা গাছের কোটর খুঁজে সেই খানে রেখে এলাম পরম মমতায়। মনে পড়ে বেশ কয়েক বছর আগে, একটি রক্তাক্ত পায়রা এসেছিল আমার আঙিনায়। তাকে সুস্থ করেছিলাম অনেক চেষ্টার ফলে। তারপর থেকে পায়রাটি আরোও অনেক পায়রাদের সাথে আমার কাছেই থাকতো। ওরা হয়তো খেলতে চায়নি বিশ্বাস, অবিশ্বাসের খেলা। ওরা হয়তো কিছুটা বুঝেছিলো আমায়। যা আর কেউ পারেনি। আর কেউ পারবেনা।

আচ্ছা বেশি বুঝে গেছি?

বুঝে গেছি…

কত কত বৃষ্টি ভিজেছি একা, রোদ মেখেছি দুহাতে, হিম হিম চাঁদের সাথে কত কত কথা বলেছি চুপিচুপি। কত ঘুম, কত হাসি, কত অভিমান। এইরম কিছু কিছু স্বচ্ছ সময় শুধু আমার, শুধু মাত্র আমারই থেকে যায়। আজ শুধু সময় বদলে যায়, ঋতু পরিবর্তনের মতো। আর ঘড়ির কাঁটা বলে যায়, টিক টিক ঠিক ঠিক ?

ঠিক ঠিক টিক টিক…

এত এত ভুল কেন করছি? বার বার বলছি আর হবে না এমনটা, তবু এমন। এতো বোকা আমি? অহংকার তো কবেই টুকরো টুকরো করে দিয়েছি। প্রতিশ্রুতি রাখতে পারিনি যা নিজের কাছে নিজের ছিলো। এ আমারই তো অক্ষমতা। বারবার বিশ্বাসের আয়নায় চির।

এত কেন ক্ষমতার কমতি হল আমার? দুর্বলতা?

দুর্বলতা…

আমার ঘরে জ্বেলেছি মিথ্যে নিয়ন আলো, মিথ্যে স্বপ্নের সাথে।খেলা, না খেলার মাঝে বিশ্বাস, অবিশ্বাসের লুকোচুরি খেলায় মিথ্যে প্রতিশ্রুতি। দম বন্ধ পরিবেশ। কোথাও কেউ নেই। কিচ্ছু নেই। আমার মধ্যে আমি নেই। তবু কি অবহেলে বলি আমার তো সব আছে, কোথাও কমতি পড়েনি কিছুর। একটা মন ছিল, আজ সেটাও নেই।

তব?

তব….

তবু আমি খুব ভালো আছি। তবু আমি খুব ভালো রাখি। তবু আমি খুব ভালো বাসি। তবু আমি ভালো ভাবি। ক্ষয়ে যেতে যেতে।

জানিস মন?

জানিস না। কিচ্ছু জানিস না……

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

৬ টি মন্তব্য (লেখকের ৩টি) | ৩ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ১৭-১২-২০১৭ | ১৪:৫৬ |

    জীবনের কথা, জীবনের একান্ত কথা, জীবনের শব্দ ব্যাকরণ আপনাতে অসাধারণ ফোটে।
    অভিনন্দন প্রিয় কবি বন্ধু রিয়া রিয়া। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

    GD Star Rating
    loading...
    • রিয়া রিয়া : ১৭-১২-২০১৭ | ২৩:০০ |

      অনুপ্রাণিত হলাম প্রিয় বন্ধু। Smile

      GD Star Rating
      loading...
  2. আমির ইশতিয়াক : ১৭-১২-২০১৭ | ১৭:৫৪ |

    কোথাও কেউ নেই। কিচ্ছু নেই। আমার মধ্যে আমি নেই। তবু কি অবহেলে বলি আমার তো সব আছে, কোথাও কমতি পড়েনি কিছুর। একটা মন ছিল, আজ সেটাও নেই।

    অসাধারণ লিখছেন কবি রিয়া রিয়া।

    GD Star Rating
    loading...
    • রিয়া রিয়া : ১৭-১২-২০১৭ | ২৩:০১ |

      ধন্যবাদ গল্প দা আমির ইশতিয়াক। শুভেচ্ছা নিন। Smile

      GD Star Rating
      loading...
  3. দাউদুল ইসলাম : ১৮-১২-২০১৭ | ১৮:২৭ |

    অনবদ্য লিখা আর শিল্প শৈলী! 
      পাঠে খুব ভাল লাগলো।  শুভেচ্ছা জানুন প্রিয় দিদি

    GD Star Rating
    loading...
    • রিয়া রিয়া : ১৮-১২-২০১৭ | ২১:৪৮ |

      আপনিও আমার শুভেচ্ছা নিন কবি দা। ধন্যবাদ।

      GD Star Rating
      loading...