ঘরে ফেরা হয় না সবার
পরিযায়ী, উড়ে বেড়ায়, ঘুরে বেড়ায় দেশ থেকে আরেক দেশে। প্রকৃতি ভৌগোলিক পরিবেশ আর আবহাওয়ার পরিবর্তনের উপর জন্য ওরা ছুটে চলে প্রকৃতির অনুকূল পরিবেশে। হেমন্তের শেষে কুয়াশাকে সাথে নিয়ে ছোট্টো শীত যখন গুটিগুটি পায়ে টুপটাপ ঝরে পরে গ্রাম থেকে শহরে, মাঠ থেকে খাল, বিল, জলাশয়ে। ঠিক তখনই তাদের আগমন হয় ঝাঁকে ঝাঁকে। শীতও আসে তাদের ডানায় ভরে করে, ভোরের আকাশকে বরণ করে নেবার জন্য মালার মতো ডানা মেলে উড়ে আসে বহুদুর থেকে।
প্রচণ্ড শীতের দেশ থেকে অপেক্ষাকৃত উষ্ণ শীতের দেশে খাবারের সন্ধানে হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে দল বেঁধে পাখিরা আসে রৌদ্রোজ্জ্বল পরিবেশ আর ঠান্ডা-রোদের মিশেল আবহাওয়ার দেশে। শীতের শুরুতেই ওদের পাখনার ঝাপটায় নান্দনিক ছন্দে মুখরিত হয়ে ওঠে নদ-নদী, খাল-বিল, ঝিল, জলাশয় এবং বিস্তীর্ণ সবুজ মাঠ।
পরিযায়ী পাখির ডানার কাঁপনে চঞ্চল হয়ে ওঠে প্রকৃতিও, তাদের কলতান, ডুব-সাঁতার, গুঞ্জনে- কুহনে-কুজনে নির্জন প্রান্তর হয়ে রূপবতী লাস্যময়ী। আবার শীতশেষে আমাদের এই বন্ধুরা চলে যায় তাদের পুরোনো ঠিকানায়। অনেকে আবার নতুন ভাবে ভালোবেসে এখানেই ঘর বাঁধে।
পরিযায়ী যে পাখিদের ক্ষেত্রেই হয় তা কিন্তু নয়। পরিযায়ী মানুষও ঘুরে চলে নিজেদের ইচ্ছেতে অনিচ্ছেতে। জীবন এতো বড় এক সংগ্রাম, সেই সংগ্রামে কেউ হারে, কেউ জেতে। তবুও মানুষ আশায় বুক বেঁধে জীবন শুরু করে দেয়। প্রধানত চারটি কারণে মানুষ দেশ ফেলে আরেক দেশে যেতে চায়। ১/ ইকোনমিক মাইগ্রেশন, ২/ সোশ্যাল মাইগ্রেশন, ৩/ পলিটিক্যাল মাইগ্রেশন, ৪/ এনভায়রনমেন্টাল কারন। অর্থাৎ যদি কোনো দেশে কোনো বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয় তাহলে অন্য কোথাও যাওয়ার চেষ্টা। প্রধান কারণ খাবার, বাসস্থান ও মানুষের মতো বাঁচবার স্বপ্ন। যেখানে কাজ পাওয়া যায়, যেখানে কোনো রাজনীতির থাবা কাউকে শেষ করে না দেয়, যেখানে প্রকৃতিতে খরা, প্লাবন, সুনামি, সাইক্লোন এসব নেই।
তাহলে প্রশ্ন আসতেই পারে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষের এ পরিযায়ীর শুরুটা কোথায়?
ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্বের দিক থেকে বিচার করলে এ পরিব্রজনের শুরু হয়েছিল খ্রিস্টের জন্মেরও হাজার হাজার বছর আগে। হলোসিন যুগের দ্রুত প্রাকৃতিক রদবদল মানুষের জীবন কঠিন করে দেয় বলে প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষকদের ধারণা। হঠাৎ করে সংঘটিত প্রাকৃতিক বিপর্যয় আর আহার সংকট মানুষকে বাধ্য করে অভিবাসনে। ধীরে ধীরে মানুষের সংস্কৃতিগত পরিবর্তন দেখা দেয়। এ সময়ে সংগ্রাহক জীবন থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে মানুষ অভ্যস্ত হয় শিকারি জীবনে। খনিজ ও শিলাখণ্ডের তৈরি হালকা ও নিক্ষেপযোগ্য বিভিন্ন ধরনের হাতিয়ার ব্যবহার করে মানুষ তখন জীবনধারণের প্রয়োজনে শিকার করত। এ সময়ই বিশ্বের অনেক গুরুত্বপূর্ণ অভিবাসন ঘটেছিল বলে প্রত্নতাত্ত্বিকদের ধারণা।আবার অন্য ভাবে প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষক থেকে শুরু করে নৃবিজ্ঞানী কিংবা ইতিহাসবিদ প্রত্যেকেই মানেন যে, একটি স্থানে রাজনৈতিক ক্ষমতার পরিবর্তন, সাংস্কৃতিক রূপান্তর কিংবা জীবনযাত্রার ধরনে আমূল পরিবর্তনের ক্ষেত্রে এর ভূমিকা রয়েছে। প্রখ্যাত তাত্ত্বিক এডওয়ার্ড ডব্লিউ সাইদ ‘রিফ্লেকশন অব এক্সাইল’ শীর্ষক দীর্ঘ নিবন্ধে দেখিয়েছেন, বিশ্ব সভ্যতার জন্য পরিযায়ী কতোটা গুরুত্বপুর্ণ।
loading...
loading...
'পরিযায়ী পাখির ডানার কাঁপনে চঞ্চল হয়ে ওঠে প্রকৃতিও, তাদের কলতান, ডুব-সাঁতার, গুঞ্জনে- কুহনে-কুজনে নির্জন প্রান্তর হয়ে রূপবতী লাস্যময়ী। আবার শীতশেষে আমাদের এই বন্ধুরা চলে যায় তাদের পুরোনো ঠিকানায়। অনেকে আবার নতুন ভাবে ভালোবেসে এখানেই ঘর বাঁধে।'
__ এই ই হচ্ছে ঘরে ফেরা আর না ফেরা। শুভেচ্ছা প্রিয় কবিবন্ধু। শুভ সকাল।
loading...
ধন্যবাদ বন্ধু।
loading...
খুব ভাল বিষয়ের আলোচনা
ভাল লাগল।
loading...
বিশেষ ধন্যবাদ কবি দা।
loading...
নান্দনিক ছন্দে মুখরিত হয়ে ওঠে নদ-নদী, খাল-বিল, ঝিল, জলাশয় এবং বিস্তীর্ণ সবুজ মাঠ।
পরিযায়ী পাখির ডানার কাঁপনে চঞ্চল হয়ে ওঠে প্রকৃতিও, তাদের কলতান, ডুব-সাঁতার, গুঞ্জনে- কুহনে-কুজনে নির্জন প্রান্তর হয়ে রূপবতী লাস্যময়ী। আবার শীতশেষে আমাদের এই বন্ধুরা চলে যায় তাদের পুরোনো ঠিকানায়। অনেকে আবার নতুন ভাবে ভালোবেসে এখানেই ঘর বাঁধে।…
যেন জীবন্ত কবিতা পাঠ করলাম।
অপূর্ব উপস্থাপনা। পাঠে মুগ্ধতা রেখে গেলাম। হে শ্রদ্ধেয় আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানাবেন।
loading...
আপনার মন্তব্যে অনুপ্রাণিত হলাম কবি দা। কৃতজ্ঞতা নিন।
loading...
পরিযায়ী পাখির জীবনের সাথে মানুষেরও মিল আছে। পরিযায়ী মানুষও ঘুরে চলে নিজেদের ইচ্ছে অনিচ্ছেতে। জীবন সত্যিই এক সংগ্রাম। তবুও মানুষ আশায় বুক বেঁধে জীবন শুরু করে। আশা না থাকলে মানুষ জীবন শুরু করতে পারত না।
সুন্দর বিষয়ে আলোচনার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
loading...