আজকের আলোচনা ক্ষমা নিয়ে

আজকের আলোচনা ক্ষমা নিয়ে :-

“একেবারে চূড়ায়, মাথার খুব কাছে আকাশের নিচে বিপুলা পৃথিবী,
চরাচরে তীব্র নির্জনতা। আমার কণ্ঠস্বর সেখানে কেউ শুনতে পাবে না।
আমি ঈশ্বর মানি না, তিনি আমার মাথার কাছে ঝুঁকে দাঁড়াবেন না।
আমি শুধু দশ দিককে উদ্দেশ্য করে বলবো, প্রত্যেক মানুষই অহঙ্কারী,
এখানে আমি একা—এখানে আমার কোনো অহঙ্কার নেই।
এখানে জয়ী হবার বদলে ক্ষমা চাইতে ভালো লাগে।
হে দশ দিক, আমি কোনো দোষ করিনি।
আমাকে ক্ষমা করো।”
(সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়)

ক্ষমা করা মহৎ গুণ। আমি নিজেও আমার প্রিয় জন দের ভুলের জন্য তাদের ক্ষমা করি। যদিও তারা নিজের দোষ স্বীকার করে না, তবুও তাদের সুযোগ করে দিই যাতে তারা নিজের ভুল বুঝতে পারে। কারন আমি বিশ্বাস করি বন্ধু একটা পবিত্র বন্ধন এটা তৈরি করতে অনেক সময় লাগে কিন্তু ভেঙ্গে যেতে একটি সামান্য বিষয় যথেষ্ট। তবে একটা জিনিস মনে রাখবেন। একটা কথা আছে, যদি কেউ নিজের ভুল বুঝে ক্ষমা চায়। একেবারেই মনে করবেন না সে বোকা ছিল? বরং সে এতোটাই মহৎ যে গুরুতর অন্যান্য না করা স্বত্ত্বেও নিজের মাথা নীচু করেছে শুধুমাত্র খুব বিশ্বাস করে বলে। ক্ষমা প্রার্থনার সাথে দুটি জিনিস জড়িয়ে থাকে অবিচ্ছেদ্যভাবে, একটি অনুতাপ ও অনুশোচনা আরেকটি হল আন্তরিকতা। এখানে আমি ক্ষমা চাওয়া বলতে আন্তরিকভাবে ক্ষমা চাওয়াকেই বুঝিয়েছি। অহংকার বেশির ভাগ মানুষেরি আছে (তবে কেউ কেউ অহংকারমুক্ত, সংখ্যাটা কম হলেও ), কিন্তু আমি এখানে অহংকার বলতে সর্বজনীন অহংকারের কথাসাহিত্য বলিনি, শুধু ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টাতে অহংকারের কথা বুঝিয়েছি । মনে করুন, আপনার মনে ১ % অহংকার আছে। কিন্তু আপনি কারো মনে আঘাত দিয়ে কথা বলার পরে বুঝলেন কাজটি আপনার অন্যায় হয়েছে। এক্ষেত্রে যদি আপনি ক্ষমা চাইতে পারেন তাহলে এক্ষেত্রে আপনাকে অহংকার মুক্ত বলতে পারি।

আপনার ও আপনার বন্ধুর মধ্যে যখন তর্কবিতর্ক শুরু হয়, তখন আপনারা প্রায়ই রাগে, অপমানে কিছু কথা এসেই যায়, ক্ষমার মধ্যে দিয়েই মীমাংসা করে ফেলা উচিত ছিল। সমস্যাটা কোথায়? আপনাদের মধ্যে কোনো একজন জানেন না যে, কীভাবে ক্ষমা করতে হবে বা কিভাবে ক্ষমা করতে হয়। তাই সময়ের বা ঈশ্বরের দোহাই দেন। কিন্তু অপরাধ কি সত্যিই এতো সাঙ্ঘাতিক থাকে? তবে, আপনিও তা শিখতে পারেন। কিন্তু, তার আগে বিবেচনা করে দেখুন যে, বন্ধুর একে অন্যকে ক্ষমা করা সত্যিই কি কঠিন? যদি কঠিন হয় তাহলে বন্ধুত্ব থেকে বেড়িয়ে আসাই ভালো।

যে-কারণে এমনটা ঘটে থাকে :-
কোনো এক বন্ধু তার অন্য বন্ধুর ওপর এক ধরনের প্রাধান্য বিস্তার করে রাখার জন্য ক্ষমা করতে চায় না। তারপর, যখন কোনো মতানৈক্য দেখা দেয়, তখন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আধিপত্য লাভ করার জন্য অতীতের কোনো ঘটনাকে তুরুপের তাস হিসেবে ব্যবহার করে। বন্ধুর অতীতের কোনো ভুলের কারণে সৃষ্ট ক্ষত দূর হতে দীর্ঘসময় লাগতে পারে। একজন বন্ধুই হয়তো বলতে পারেন ‘আমি তোমাকে ক্ষমা করেছি,’ কিন্তু যা ঘটেছিল, সেটার জন্য তিনি এখনও বিরক্তি পুষে রাখতে পারেন—হতে পারে, প্রতিশোধ নেওয়ার প্রবল ইচ্ছা পোষণ করতে পারেন। কেউ কেউ পুরোপুরিভাবে এইরকম বিশ্বাস নিয়েই থাকে করে যে, জীবনটা রূপকথায় বর্ণিত প্রেমের মতো হবে। তাই, যখন মতপার্থক্য দেখা দেয়, তখন তারা নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড় থাকে।

এক বন্ধুক ক্ষমা করতে চায় না কারণ ক্ষমা করার অর্থ কী হবে, সেই বিষয়ে তাদের ভুল ধারণা রয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ :

১. আমি যদি ক্ষমা করি, তাহলে আমি অন্যায়কে প্রশ্রয় দিচ্ছি।

২. আমি যদি ক্ষমা করি, তাহলে যা ঘটেছে তা আমাকে ভুলে যেতে হবে।

৩. আমি যদি ক্ষমা করি, তাহলে আমাকে আরও অন্যায় আচরণ সহ্য করতে হবে।

আসলে, ওপরে উল্লেখিত বিষয়গুলোর মধ্যে কোনোটাই ক্ষমা করার অর্থ প্রকাশ করে না।

আপনি যা করতে পারেন :-

ক্ষমার সঙ্গে জড়িত বিষয় মনে রাখুন। বাইবেলে, কখনো কখনো “ক্ষমা” শব্দটা “ছেড়ে দেওয়া” অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। তাই, ক্ষমা করার অর্থ সবসময় এই নয় যে, যা ঘটেছে তা আপনাকে ভুলে যেতে হবে অথবা অন্যায়কে প্রশ্রয় দিতে হবে। মাঝে মাঝে এর অর্থ হচ্ছে, আপনার নিজের ও সেইসঙ্গে আপনার বিয়ের মঙ্গলের জন্য আপনাকে একটা বিষয় এমনি এমনি ছেড়ে দিতে হয়।

ক্ষমা না করার পরিণতি মনে রাখুন। কিছু বিশেষজ্ঞ বলে থাকে যে, আপনি যদি বিরক্তি পুষে রাখেন, তাহলে আপনার বড়ো ধরনের শারীরিক ও আবেগগত সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়, যেগুলোর অন্তর্ভুক্ত বিষণ্ণতা এবং উচ্চ রক্তচাপ—আর আপনার বৈবাহিক সম্পর্কের ক্ষতির কথা না হয় বাদই দেওয়া গেল। তাই, উত্তম কারণেই বাইবেল বলে: “তোমরা পরস্পর মধুরস্বভাব ও করুণচিত্ত হও, পরস্পর ক্ষমা কর।”

ক্ষমা করার উপকারিতা মনে রাখুন। ক্ষমা করার মনোভাব আপনাকে ও আপনার বন্ধুকে ভুলের “হিসাব রাখার” পরিবর্তে, একে অন্যের প্রতি এই আস্থা রাখার সুযোগ দেয় যে, অন্য বন্ধুর কোনো মন্দ উদ্দেশ্য নেই। ফলে, সেটা আপনাকে এমন পরিবেশ তৈরি করতে সাহায্য করে, যে-পরিবেশে বিরক্তি নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং প্রেম বৃদ্ধি করার সুযোগ থাকে। – বাইবেলের নীতি:

বাস্তববাদী হোন। সেই সময়ে ক্ষমা করা আরও সহজ হয়ে ওঠে, যখন আপনি আপনার বন্ধুত্ব আপনাদের মধুর সময়ে যেমন ছিলো, ঠিক সেভাবেই গ্রহণ করে নেন। আপনি যা পাননি, সেগুলোর ওপর যখন মনোযোগ দেন, তখন আপনি যা পেয়েছেন, সেগুলো ভুলে যাওয়া খুব সহজ। জীবনের এই পর্যায়ে এসে আপনি কোন তালিকা নিয়ে ক্রমাগত চিন্তা করতে চান? মনে রাখবেন, কেউই নিখুঁত নয় আর এর মধ্যে আপনিও রয়েছেন।

প্রয়োজন হলে, বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করুন। যে-বিষয়টার কারণে আপনি অসন্তুষ্ট হয়েছেন আর কেন আপনি এইরকম মনে করছেন, সেই বিষয়ে শান্তভাবে ব্যাখ্যা করুন। সবথেকে বড় কথা, আপনি নিজের ভুল এড়িয়ে যাবেন না, সেটা স্বীকার করার সাহস রাখুন।

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

৮ টি মন্তব্য (লেখকের ২টি) | ৬ জন মন্তব্যকারী

  1. আনিসুর রহমান : ২৮-০৬-২০১৭ | ১৫:০২ |

    ক্ষমা নিয়ে বস্তুনিষ্ঠ ও সুন্দর আলোচনার জন্য ধন্যবাদ কবি রিয়া রিয়া । অন্যকে তার ভূলের জন্য ক্ষমা করা মানে নিজেকে এক দুঃসহ যন্ত্রণা থেকে মুক্ত করা ।
    সকলের উপর শান্তি বর্ষিত হোক !

    GD Star Rating
    loading...
    • রিয়া রিয়া : ২৮-০৬-২০১৭ | ১৮:৩৫ |

      শুভকামনার নিরন্তর

      GD Star Rating
      loading...
  2. মুরুব্বী : ২৮-০৬-২০১৭ | ১৬:৫৯ |

    নিজের ভুল এড়িয়ে না গিয়ে, সেটা স্বীকার করার সাহস রাখতে হবে।
    আত্ববিশ্বাস সমুন্নত রাখতে হবে।

    আলোচনার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ কবিবন্ধু রিয়া রিয়া। ধন্যবাদ।

    GD Star Rating
    loading...
    • রিয়া রিয়া : ২৮-০৬-২০১৭ | ১৮:৩৫ |

      অশেষ শুভকামনা বন্ধু

      GD Star Rating
      loading...
  3. দীপঙ্কর বেরা : ২৮-০৬-২০১৭ | ২১:০৪ |

    দারুণ আলোচনা
    ভালো লাগলো

    GD Star Rating
    loading...
  4. ছন্দ হিন্দোল : ২৮-০৬-২০১৭ | ২২:৪১ |

    ক্ষমা মহত্বের লক্ষণ
    বড় গুণ
    দুবলতা না ভেবে গুরুত্ব বড় ভাবতে ভুলে বসে আছি …
    সুন্দর পোস্টhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gif

    GD Star Rating
    loading...
  5. আলমগীর কবির : ২৯-০৬-২০১৭ | ৯:২২ |

    ক্ষমা যদি রিপ্রেসড হয়ে করতে হয় সেটা না করাই ভাল, ক্ষমা হওয়া উচিৎ স্বতঃপ্রবৃত্ত।
    সুন্দর লেখার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

    GD Star Rating
    loading...
  6. মামুনুর রশিদ : ২৯-০৬-২০১৭ | ৯:২৫ |

    যদি ক্ষমা করি তবেই ক্ষমা পাবো।

    সুশ্রী লেখনীর জন্য শুভেচ্ছা রিয়া দি।

    GD Star Rating
    loading...