বাঙালি মুসলিম সমাজে প্রচলিত ব্রত ও মানত
সমাজবদ্ধ গৃহী মানুষ ঐশ্বরিক শক্তির কাছে পার্থিব কামনায় যখন নিষ্ঠাভরে বিশেষ ধর্মীয় আচার – আচরণ পালন করে -তখন তাকে ব্রত বলা যায়। ‘ব্রত’ কথাটির সাধারণ অর্থ হ’ল নিয়ম- সংযম। এই নিয়ম সংযমের মধ্যে দিয়ে ‘কামনা’ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত পুণ্যকর্মের অনুষ্ঠান ই হলো ব্রত। ব্রতের উৎপত্তির কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ‘বাংলার ব্রত’ গ্রন্থে জানিয়েছেন, নানা ঋতুর মধ্যে দিয়ে, নানান সব ঘটনা মানুষের চিন্তাকে আকর্ষণ করেছে এবং এই সকল ঘটনার মূলে দেবতা- অপদেবতার নানারকম কল্পনা করে নিয়ে তারা শষ্য কামনায়, সৌভাগ্য কামনায়, এমনই নানা কামনা চরিতার্থ করার জন্য ব্রত করেছে, কি আর্য, কি ‘অন্যব্রত’, সব দলই। ব্রত পালনের ইতিবাচক দিকটি হলো ব্রতীর মঙ্গল হওয়া, আর নেতিবাচক দিক হিসেবে বলা চলে, শত্রু, বা কোন অশুভ শক্তি ব্রতীর কোন ক্ষতি করতে পারবেনা।
ইসলামি শরিয়ত কিন্তু ব্রত- মানতের ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করেছে, – “মানত্ মানুষকে এমন কোন জিনিস এনে দিতে পারে না যা তার জন্য ( আল্লাহ কর্তৃক) নির্ধারিত ছিল না। হাঁ, মানত্ মানুষকে ঐ জিনিসের কাছে পৌঁছে দেয় যা তার জন্য নির্ধারিত করা ছিল। ফলতঃ আল্লাহতালা কৃপণের মাল বের করে থাকেন -(বুখারী)।”
ডঃ মোমেন চৌধুরীর মতে, প্রকৃতপক্ষে কোন মুসলিম ব্রত নেই। তবে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা বলছে, লোকায়ত জীবনে মুসলিম আমজনতার পালনীয় ব্রত- মান্নতের সীমা সংখ্যা নেই। একেশ্বরবাদের পাশাপাশিই রীতিমতো নিষ্ঠার সঙ্গে ভজন- পুজন করা হয় সংখ্যাতীত শাহ – গাজী – পীর- পীরানি- বিবি মায়েদের, এঁদের কাছে বিভিন্ন পার্থিব কামনায় মানত্ মাগা হয়, —
এগুলিকে ব্রত ছাড়া আর অন্য কিছু বলা যায়না।
মুসলিমদের মধ্যে যারা পীরবাদের ঘোর বিরোধী, তারা এই ব্রত- মানত্ গুলিকে ‘শেরেকি’ বলে চিহ্নিত করেন। বলেন হিঁদুয়ানি চাল। এ জাতীয় কথা বহু যুগ ধরেই চলেছে, অদূরে থেমে যাবার ও কোন লক্ষ্মণ নেই। কিছু ব্রতের নাম উল্লেখ করছিঃ
১. সত্যপীরের ব্রত। ২. খোয়াজ খিজিরের ব্রত। ৩. দশবিবির ব্রত( শুধু নারীরা করেন)। ৪. সৈয়দা বিবির ব্রত( ঐ)। ৫. বারো ইমামের ব্রত। ৬. শবে মিরাজের ব্রত। ৭. ফাতেহা মিলাদের ব্রত। ৮. মাদারপীরের ব্রত। ৯. আসন পীরের ব্রত ( নারী কর্তৃক)। ১০. হাজির পীরের ব্রত ( ঐ)। ১১. কালু পীরের ব্রত (ঐ)। ১২. কানু পীরের ব্রত (ঐ)। ১৩. দাতা পীরের ব্রত। ১৪. বালাপীরের ব্রত। ১৫. জেন্দাপীরের ব্রত। ১৬. জাহির পীরের ব্রত। ১৭. বদর পীরের ব্রত। ১৮. মছলন্দি পীরের ব্রত। ১৯. পাঁচ পীরের ব্রত। ২০. সোনাপীরের ব্রত। ২১. মানিক পীরের ব্রত। ২২. রাহী বা মুসাফির পীরের ব্রত। ২৩. জিজিঁর পীরের ব্রত। ২৪. মুসকিল আসান পীরের ব্রত। ২৫. শাহ্ জংলী পীরের ব্রত। ২৬. বন বিবির ব্রত। ২৭. বাস্তুবিবির ব্রত। ২৮. ওলা/ শীতল বিবির ব্রত। ২৯. উদ্ধার বিবির ব্রত। ৩০. বুড়ো পীরের ব্রত। ৩১. ষষ্ঠী / ষেটেরা বিবির ব্রত ( নারীর)। ৩২. ঘাউয়া পীরের ব্রত। ৩৩. ইমাম ব্রত।
____________
(খণ্ডিত ও সংক্ষিপ্ত)
ইহলৌকিক সুখ শান্তি কামনায় মূর্তিপুজা বাদ রেখে বাঙালি মুসলিম জনগন ব্রত মানত পালন করেই থাকেন। তবে সবাই যে নয় এটা বলাই বাহুল্য।
loading...
loading...
খুব একটা স্পষ্ট মনে হয়নি আমার কাছে ব্যাপারটা, তবে এসব ব্রতের সুত্র উল্লেখ করলে পাঠকের অনেক কিছু জানা হয়ে যেত।
loading...
বিশদভাবে বইটিতে আছে। সুত্র ঃঃ ক্ষেত্রসমীক্ষা ও লোকসংস্কৃতি সংক্রান্ত বেশ কিছু বই। এখানে এতো লেখা সম্ভব নয়। আমার চল্লিশ বছরের পরিশ্রম। এই জগতে অনেক ধাক্কা খেয়েছি,তাই একত্রে সবটা দিতে পারিনি ।
ধন্যবাদ জানাই।
loading...
ইহলৌকিক সুখ শান্তি কামনায় মূর্তিপুজা বাদ রেখে বাঙালি মুসলিম জনগন ব্রত মানত পালন করেই থাকেন। তবে সবাই যে নয় এটা বলাই বাহুল্য। লোকাচারের দর্পণে মুসলমান সমাজ গ্রন্থের খণ্ডিত ও সংক্ষিপ্তরূপ শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ দিদি ভাই।
loading...
ধন্যবাদ রিয়া।
loading...
ইসলামি শরিয়ত ব্রত- মানতের ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করেছে, – “মানত্ মানুষকে এমন কোন জিনিস এনে দিতে পারে না যা তার জন্য ( আল্লাহ কর্তৃক) নির্ধারিত ছিল না।”
loading...
ধন্যবাদ জানবেন ।
loading...
নিবন্ধটি পড়লাম।
loading...
ধন্যবাদ জানাই ।
loading...
"নানা ঋতুর মধ্যে দিয়ে, নানান সব ঘটনা মানুষের চিন্তাকে আকর্ষণ করেছে এবং এই সকল ঘটনার মূলে দেবতা- অপদেবতার নানারকম কল্পনা করে নিয়ে তারা শষ্য কামনায়, সৌভাগ্য কামনায়, এমনই নানা কামনা চরিতার্থ করার জন্য ব্রত করেছে, কি আর্য, কি ‘অন্যব্রত’, সব দলই।"
loading...
পড়ার জন্য ধন্যবাদ জানাই ।
loading...
স্বল্প সংখ্যক মুসলিম ব্রত বা মানত পালন করতে হয়তো আগ্রহী তবে সবাই বা বেশীরভাগ নয়।
loading...
একেবারে সঠিক । ভাল থাকুন ।
loading...