গত দুদিন ধরে একটা কথাই বলে চলেছি, প্রেম একা একাই চালিয়ে যাওয়া সম্ভব, কারো সক্রিয় সহযোগীতা নাই বা জুটলো।
কথাটা সঠিক হলেও, শুরুটাতো প্রায়শই দ্বিপাক্ষিক ঘটনা।যদিনা সে প্রেম কারো অগোচরে ঘটে যায়। একজন হয়তো বা জানলোই না কোনদিন কী মহার্ঘ বস্তু তার সম্পূর্ণ অজ্ঞাতে তারই উদ্দেশ্যে একজন নিজের প্রাণকুটুরীর গভীর গহীনে পরম মমতায় লালন করে চলেছে। এই প্রেম প্রকাশ্যতঃ প্রকাশ্যে আনা একেবারেই অসম্ভব বলেই একজন আজীবন এমন গুরুতর ভার কন্ঠলগ্ন করে বয়ে চলেন। তবে এতে অাবশ্যিকভাবেই তাঁর একজাতীয় তৃপ্তি থাকে, যে কারণে আমরা বাইরে থেকে যেটা গুরুভার ভেবে হাপসে মরছি, তাঁর সেটা আদপেই কোনো ভার বলেই মনে হয়না। তাই তিনি পারেন।নইলে কেউ তো তাঁকে মাথার দিব্যি দেয়নি এমন কণ্টকিত পথে চরণযুগল রক্তাক্ত করার জন্য, সমাজের বেঁধে দেওয়া মসৃন পথ তো উন্মুক্তই রয়েছেই সবার জন্য :
থোড়- বড়ি – খাড়া,
খাড়া- বড়ি- থোড়।
সবাই কিছু এমন ধরে- বেঁধে দেওয়া মসৃন পথের পথিক হতে নাও চাইতে পারেন। এই লঘুস্য লঘু ততোধিক সংখ্যালঘু প্রেমিক / প্রেমিকাদের কথাই এতক্ষণ বলে এলাম।
…ভালবাসা কারে কয়?
সে কি কেবলই যাতনাময়?…..
এমনিতে স্বভাবতই প্রেম এক দ্বিপাক্ষিক আচরন বিশেষ। একজন ভ্রুপল্লবে চন্দনের বনে ডাক দিলে, অন্যজন সাড়া দিলে,তারপর এগিয়ে পিছিয়ে দুজনে এগিয়ে নেন খেলা। কখনো কখনো এই সাড়া দেবার পর্বটি সঙ্গে সঙ্গে না ঘটে দীর্ঘায়িত হয়ে থাকে। মেপে নিতে চান প্রোপোজারকে। এই মাপাজোকার মাপকাঠি প্রয়শঃই, ব্যতিক্রম নেই বলছিনা, বস্তুগত লাভক্ষতির অঙ্কেই হয়ে থাকে। তারপর শুরু হয়ে যায়, ওই শব্দে যাকে প্রেম বলি তার অন্তহীন খেলা। এই সম্পর্কে আবশ্যিকভাবে অন্তরঙ্গতা প্রয়োজন। এবং ক্রমশঃ মন থেকে তা শরীর পর্যন্ত পৌঁছে থাকে।
পরবর্তীতে এই প্রেম কাউকে কাউকে নিজের কাজের প্রতি অতি সিরিয়াস করে তোলে। দিনের চব্বিশ ঘন্টাকে পারলে আটচল্লিশ কি বাহাত্তর ঘন্টা বানিয়ে মুখে রক্ততুলে পরিশ্রম করে সে আগামীর যৌথ স্বপ্নকে সাকার করার লক্ষ্যে। আক্ষরিক অর্থে উত্তরণ ঘটে যায় তার জীবনে।
আবার এর উল্টোটাও হরহামেশাই নজরে পড়ে। প্রেম করতে গিয়ে কেরিয়ারের বারোটাও অনেকে বাজিয়ে ফেলেন। এসব ক্ষেত্রে, অনেক সময়েই, পিছলে যায় প্রেম।
অদ্ভুত শুনতে মনে হলেও, কারো কারো প্রেম আবার ‘সেরে’ ও যায়। ওয়ান ফাইন মর্নিং ‘সেরে’ ওঠা ব্যক্তি তখনো পর্যন্ত রুগ্নজনটিকে নিজের কলার তুলে শ্রাগ করে নায়কোচিত / নায়িকাসুলভ ভঙ্গিতে অম্লান বদনে মেসেজ করবেন :
শোন, আমি আর তোমার প্রতি আগ্রহ খুঁজে পাচ্ছি না….
উল্টোদিক তো ভেবলে গিয়ে পপাত্ ধরনী চ হতেও ভুলে মেরে দেয়…. গতকাল রাত দুটো পর্যন্ত যে কিনা…..
এতটাই অবিশ্বাস্য যে পরমূহুর্তে অভিমান করতেও বাঁধে না… সাত সকালে ঠাট্টা করবেনা বলে দিলাম….
…. ঠাট্টা নয়, সিরিয়াসলি বলছি। এমনি যদি সাধারণ বন্ধু থাকতে পারো, থেকে যাও।বিশেষ সম্পর্ক আর টানতে চাইছি না আমি….
যার তখনো প্রেম ‘সারেনি’ তার জন্যে তখন একতরফাভাবে কান্নার সমুদ্রে বহু- বহুকাল উথালি পাতালি করা ছাড়া গত্যন্তর কিছু থাকে না। সবাই তো আর ম্যুড চেঞ্জের মতো মূহুর্তের ক্ষিপ্রতায় পার্টনার বদলে ফেলার এলেম ধরেনা!! এবং এসব ক্ষেত্রে আইন,সমাজ,পরিবার কারো কোনরকম মাথাব্যথা থাকেনা বলে অত্যন্ত সহজেই দ্য এন্ড্ টেনে দিতে পারা সম্ভবপর হয়।
অতি সম্প্রতি আবার অন্য একটা ট্রেন্ড্ ও দেখতে পাচ্ছি। অনেক সময়ই নারীর ‘রোগ’ না সারলে, সরাসরি ধর্মাবতারের এজলাসে গিয়ে, প্ররোচনা দেওয়া স্বত্বেও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের নালিশ জানিয়ে, আদালতের মধ্যস্হতায় ব্যাপারটাকে বিয়ে পর্যন্ত টেনে নেওয়া যাচ্ছে। অবশ্য ‘ প্রেম’ ততক্ষণে পগার পার। এবং এ বিয়েও কত কিছু দিনের জন্য টিঁকে থাকবে, তা অনুমানেও আসেনা। বলাই বাহুল্য মাত্র, এই জাতীয় বিবাহে প্রেমের চেয়েও বেশি সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়ে থাকে।
…. ওরা সুখের লাগি প্রেম চাহে, প্রেম মেলেনা/ শুধু সুখ চলে যায়।…..
_______________
© রত্না রশীদ ব্যানার্জী।
loading...
loading...
আসলেই তাই। অসাধারণ বিশ্লেষণ হয়েছে বন্ধু। আগামী পর্বের সাথেও থাকবো।
loading...
ভাল থাকুন বন্ধু ।
loading...
আপনার লেখা থেকে অনেক কিছু শেখার আছে দিদি ভাই।
loading...
ভালবাসা নিও।
loading...
* মুগ্ধ পাঠকের মত পড়ে নিলুম…
loading...
ধন্যবাদ জানাই।
loading...