তখন সবে চাকরিতে ঢুকেছি। তিন বছরের ছেলেকে কাঁধে ফেলে ব্ল্যাক ডায়মন্ডে বর্ধমান- আসানসোল ডেলিপ্যাসেঞ্জারি করি। এক সহযাত্রী বন্ধু তাঁর কবিতার বই উপহার দিলেন। নাম, “আউটডোরে একলব্য”।
বহু বছর পর ঘটনাক্রমে স্মৃতিতে উঠে এল সেই বইটির শিরোনাম।
সেদিনের বর্তমান যখন স্মৃতিতে ফিরলো, সেই তিন বছরের ছেলে তখন মহানগরীর ১ম শ্রেণির সরকারি হাসপাতালের ইন্টার্ন। যার সঙ্গে তার স্টেডি এ্যফেয়ার, তিনি ও তাই। দেখা করতে গেলে মেয়েদের হোস্টেলে মায়েরা, ও ছেলেদের হোস্টেলে বাবারা আতিথ্য পান। বলছি প্রায় বছর দশেক আগের কথা।
তো, আমি সেদিন হবু লেডি ডাক্তারদের হোস্টেলে। ছাদ থেকে ইয়াব্বড় বড় চাঙড় খসছে যখন তখন। প্রায় তিনতলা হাইটের একতলা সাহেবি আমলের ছাদ থেকে ঝালরের মত মোটা ঝুলের জবরজঙ্ এবং তার বিচিত্র দুর্গন্ধ ( মেয়েরা দুঃখ করল,কাকিমা আমরা ঝুলঝাড়া নিয়ে খাটে উঠেও নাগাল পাইনা)। ইংরেজ আমলের বিশাল ডান্ডাওলা ভিনটেজ স্পেশিমেন সিলিং ফ্যান মিনিটে তিনটে পাক খেতে বিকট গর্জন ছাড়ে, ‘ঘটাং ঘট’ যেটা আমার কানে পৌঁছয়, ‘ঘ্যাঁচাং ফু, খাবো তোকে’….। অগত্যায় নাকের ডগায় তালপাখা নাড়তে নাড়তে রাতভোর পড়ে চলেছেন হবু লেডি ডাক্তাররা, কখনো রত্তিটাক ঘুমোচ্ছেন ও। মানুষ উঁচু লম্বা জানলা বরাবর তীব্রবেগে ঝর্নার চেহারায় নিষ্ক্রমিত হচ্ছে ওপোর তলার লেবার রুমের দুর্গন্ধী – পাইপ ফাটা জল। বাধ্যতায় বন্ধ জানলা সর্বক্ষণ। হাত- মুখ ধোবার বেসিন, টয়লেটের প্যান ছত্রিশ ভাগে ভাঙ্গা। এবং ওই ভাঙ্গা স্থানে মান্ধাতার আমলের পুরু ময়লার পলেস্তারা শতমন হারপিকেও হার মানেনা।
বারান্দা – সিঁড়ি সমেত গোটা বিল্ডিং কুকুর – বেড়াল – মশা- মাছির উন্মুক্ত অভয়নিবাস। ওদের উৎপাতে ঘরে একটা দানা খাবার রাখার উপায় নেই। মাঝরাতে নাইট সেরে পেটের ভেতর নাড়ি ভুঁড়ি ছেঁড়া ছুঁচোর কেত্তন নিয়ে রুমে ফিরে,অত রাতে না কিচেন- না ক্যান্টিন খোলা পেয়ে জল গিলে শুয়ে পড়া ছাড়া গতি নেই। ওদেরই মধ্যে একটু সচেতন একজন ব্যাগে ফেলে রাখা কাঁচা পাউরুটি চিবোতে চিবোতে, সারাদিনের গাধার খাটুনির ক্লান্তিতে, অসহায়ভাবে ঘুম রাজ্যে সেঁধিয়ে গেলে তার বুড়ো আঙ্গুল সমেত পাউরুটি মুখে তুলে ডালকুত্তা দে দৌড়।
মাঝরাতে আর আউটডোর কই!
ইমারজেন্সিতেই রক্তাক্ত একলব্য বাধ্য হ’ ল তার বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ, তারই দেখভালের দায়িত্বে থাকা সরকারী গুরুবৃন্দের শ্রীচরণে উচ্ছুগ্যু করে দিতে। এবং গুরুও, পরম্পরানুযায়ী, অত্যন্ত ভাল র্যাঙ্ক থাকা সত্বেও, আজীবনের জন্য তার সার্জারি পড়ার সুযোগ কেড়ে নিল।
loading...
loading...
স্মৃতিকথন দারুণ ভাবে উপস্থাপন করেছেন দিদি ভাই। নমষ্কার।
loading...
ধন্যবাদ রিয়া।
loading...
স্মৃতিভাষ্য নিয়ে উচ্চ বাচ্য করার দুঃসাহস আমার নেই। মুগ্ধ চোখের শুধু একটি উচ্চারণ … দারুণ প্রিয় বন্ধু।
loading...
কৃতজ্ঞতা বন্ধু।
loading...
* স্মৃতিকথন বেশ লেগেছে…
ভালো থাকুন সবসময়।
loading...
ভাল থাকুন আপনি। ধন্যবা।
loading...
ভাল থাকুন আপনিও। ধন্যবাদ দিলওয়ার হুসাইন ভাই।
loading...
অসাধারণ স্মৃতিচারণ! শুভেচ্ছা দিদি

loading...
অনেক শুভেচ্ছা জানা।
loading...
corr. জানাই
loading...