মা হঠাৎ করে এমন একটা প্রস্তাব দেবে আমার কল্পনাতেও ছিলো না। মায়ের প্রস্তাবের উত্তরে কি বলবো কি করবো আমি কিছুতেই বুঝতে পারছিলাম না। আর মায়ের কথার অবাধ্য ও আমি কখনো হইনি। মায়ের অগোচরে ও আমি কখনো কিছু করিনি। যা বাকি ছিলো বলার সেটাও আমি বলে দিয়েছি এখন। বলে দিয়েছি যে আমি সুলেখাকে ভালোবাসি।
ঘটনার আকষ্মিকতায় আমি হতবিহ্বল। এতো রকমের মজার মজার খাবার, তবু গলা দিয়ে একটু খাবার নামলো না। কথাও যেন হারিয়ে গেলো মুখ থেকে। পুরো পৃথিবীটা যেন দুলে উঠলো হঠাৎ করেই। মনের মধ্যে থাকা স্বপ্ন গুলো ভেঙে গেলো টুকরো টুকরো হয়ে। আরো আঘাত পেলাম আমার অবাধ্যতায় মা বিষ খাবে জেনে।
বরাবরই আমার মা খুব বেশি পরিমান জেদী। আমি জানি কথার নড়চড় হলে তিনি সত্যি সত্যি একটা কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলবেন। মা যে এমন কথা বলতে পারেন আমি অবশ্য কোনদিন কল্পনাও করতে পারিনি। নানা চিন্তায় মাথা ধরে গেল মুহুর্তে। মায়ের ডাকে আবার সংবিত্ ফিরে পেলাম।
-কি হলো, কি চলছে মনের মধ্যে,কি এত ছাইপাশ ভাবছিস?
আমি মাথা নাড়লাম।
-ওসব উলটা পালটা মেয়ের চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো। ওসব মেয়েদের আমি খুব চিনি। সব খোঁজ খবর আছে আমার কাছে। তোর জন্য যার কথা ভেবেছি সে অতি রুপসী গুণবতী। একসাথে রাজকন্যা ও রাজত্ব সব পাবে। সারাজীবন রাজার হালে থাকতে পারবে।
-মা,আমার রুপসী গুণবতী মেয়ে চাই না। রাজকন্যা ও রাজত্ব ও চাই না।
-এখন তুমি মোহে আছো। আমার কথা এখন তেতো লাগছে। মোহ দিয়ে জীবন চলে না। সুযোগ সবসময় আসে না। আর যেনো আমি তোর ভালোই চাই। আর শোন কি চাই আর কি চাইনা সে আমি বুঝবো।
অনেক কষ্ট করেছি সারা জীবন এবার একটু সুখের মুখ দেখতে চাই্। উলটা পালটা কিছু করলে তোর খবর আছে এই বলে দিলাম। আমি কিন্তু আবারো বলছি, বিষের বোতল কিন্তু আমার কাছেই আছে।
বার বার এক কথা শুনে আমার অস্বস্তি ও বিরক্তি দুটোই আরো বেড়ে গেলো। মাকে কেমন জানি লোভী মনে হলো। অভাব হয়তো মানুষকে বদলে দেয়। নাকি এসবই বাস্তবতা!
আমি অস্ফুষ্ট স্বরে বললাম,
-মা তুমি চুপ করো। আমার এসব শুনতে ভালো লাগছে না।
-কেন ? চুপ করবো কেন? আমি কি খারাপ কিছু বলেছি?
আমার আর ভালো লাগছিলো না। আমি খানিকটা উত্তেজিত হয়ে বলেই ফেললাম
-ঠিক আছে, ঠিক আছে। তুমি যা বলবে তাই হবে। এবার একটু থামো। এসব অশান্তি আমার আর ভালো লাগছে না।
-সন্ধ্যাবেলা বাড়ি থাকবি। লোকজন আসবে।
কেন ভালো কিছু কোন সময়ই আমার সাথে হয়না ? বুকের মধ্যে কেমন যেন খাঁ খাঁ করতে লাগলো। চোখ ফেটে পানি আসতে লাগলো। সুলেখাকে যে আমি কথা দিয়েছি তার দুঃখ কষ্টে আমি সবসময় তার পাশে থাকবো। কখনো তার হাত ছাড়বো না্। কখনো না। সব কি তবে মিথ্যে হয়ে যাবে। হায় হায় আমি তো মিথ্যাবাদী হয়ে যাবো সুলেখার কাছে। কি ভাববে মেয়েটা? এত দুঃখী! ওর দুঃখগুলো কে ঘুচাবে? এই দুঃখী মেয়েটার সাথে আমি পথ চলতে চেয়েছিলাম। সারাজীবনের সঙ্আগী হতে চেয়েছিলাম। আমি পাশে না থাকলে, ও তো কচুরিপানার মতো ভেসে যাবে।
বিকালে একটু বের হলাম।মায়ের বারণ সত্তেও বের হলাম। সুলেখা আসবে। মা কি বুঝলো কে জানে গজগজ করতে লাগলো।
সঠিক সময়ে সুলেখা এলো। অন্যদিন সুলেখার চোখ মুখ সদা ঝলমল করে ওঠে আমায় দেখে। আমার সাথে সঙ্গটা সে উপভোগ করে তবে আজ তার চোখ মুখ কেমন যেন ম্লান দেখাচ্ছে। দূর থেকে দেখেই বুঝতে পারলাম। অনেক কান্নাকাটি করেছে সে। কি হয়েছে সুলেখার? তার সৎ বাবা তাকে কিছু বলেছে? বা অন্য কেউ?
প্রথমেই জানতে চাইলাম এত বিষণ্ন কেন দেখাচ্ছে তাকে? কি হয়েছে তার?
চুপ করে রইলো সে। অনেকক্ষণ চুপ করে রইলো সে। আমার হাতটা ধরে অনেকক্ষণ বসে রইলো চুপচাপ। তারপর তাকালো আমার দিকে। কি যে অসহায় দৃষ্টি আমি উতলা হয়ে জানতে চাইলাম
-কি হয়েছে সুলেখা কোন সমস্যা? কথা বলছো না কেন?
সুলেখা কোন কথা বলল না আবারো চুপচাপ। কোন কোন নীরবতা ভয়ঙ্কর উদ্বেগ তেরী করে। ধৈর্যের বাঁধকে ভেঙে ফেলে। কোথায় আমি আমার সমস্যার কথা বলতে এসেছি আর এখনতো দেখি সুলেখার এ অবস্থা। উফ! ভয়ঙ্কর সমস্যার আবর্তে জড়িয়ে যাচ্ছে যেন আমার এ জীবন। কঠিন সময় আসছে সেটা খানিকটা হলেও উপলব্ধি করলাম।
যা হোক সুলেখা যখন বলবেনা তখন আমি শুরু করলাম আমার সমস্যার কথা। আমি জানালাম আমার দম বন্ধ করা পরিস্থিতির কথা। অনেকক্ষণ আমরা চুপচাপ হাত ধরা ধরি করে বসে রইলাম। এবার হয়তো সুলেখা কিছু বলবে কিন্তু না সুলেখা চুপ করে রইলো কিছুই বলল না। কেন যেনো সুলেখা কিছু বলতে চা্ইলো না। বিকেল ফুরিয়ে আসছে বাড়ি ফিরতে হবে। আসার সময় সুলেখা খুব কান্নাকাটি শুরু করলো আমি তাকে অনেক করে বোঝালাম বললাম, আরে বাবা এখনই এতো ভেঙে পড়ছো কেন? এখনো অনেক সময় আছে কথাবার্তা প্রাথমিক পর্যায়ে তুমি খালি খালি চিন্তা করছো। দেখবে ঠিক ব্যপারটা আমি ম্যানেজ করে নিতে পারবো। তোমার কি হয়েছে তাই বলো।
এবার সুলেখা আমার হাতটা টেনে ধরে বসালো, বলল,
-তোমাকে বলা হয়নি এমন কিছু কথা আজ তোমাকে বলবো বলেই এসেছি। কিন্তু কিভাবে বলবো বুঝতে পারছিনা।
-কি কথা? যা আমি জানি না। কি বলবে? আমি সুলেখার চোখে চোখ রাখলাম।
সুলেখা হঠাৎ স্পষ্ট উচ্চারণে বলল,
-আমি তোমার সাথে মিথ্যা বলেছি ।
-কি মিথ্যা বলেছো?
-তুমি আমায় ক্ষমা করো।
-আগে বলো তুমি কি মিথ্যা বলেছো?
-না থাক তুমি আঘাত পাবে।
-আমি আঘাত পাবোনা তুমি বলো। বলো তুমি তোমার কি হয়েছে?
সুলেখা চোখ বন্ধ করে ফেলল তারপর ঢোক গিলে কোন রকমে বলল,
-আমি…..আমি বিবাহিতা !!!!!!! আমি তোমাকে মিথ্যা বলেছি। সত্য গোপন করেছি।
নিজের কান কে যেন বিশ্বাস করতে পারলাম না। এসব কি হচ্ছে আমার সাথে ?
loading...
loading...
সম্পর্কটা ভুল ছিলো শীর্ষক গল্পটিকে প্রথমে অণুগল্প ভেবেছিলাম। এখন দেখছি সার্থক একটি বড় গল্পের দিকেই এগুচ্ছে। ওয়েল ডান মি. ইসিয়াক। শুভ সকাল।
loading...
অনিন্দ্য সুন্দর লেখনী ।
loading...