শীত যাই যাই করেও যাচ্ছেনা, এরকম আবহাওয়াতে আমার বেশ লাগে। চতুর্দিকে আলো ছড়িয়ে প্রবল প্রতাপে সূর্য উঠে গেছে। আজ বসন্তের প্রথম দিন। আমি গুটিগুটি পায়ে খোলা ছাদে এসে দাঁড়ালাম। বাবা ফিরে গেছে বেশ কিছুক্ষণ হলো। সকালের ট্রেন ধরবার তাড়া ছিলো। মনটা আমার ভীষণ রকমের খারাপ। আমি কোনদিন বাবা মাকে ছাড়া কোথাও একলা একলা থাকিনি, এই আঠারো বছরের জীবনে। স্বাভাবিক ভাবেই আমার চোখ বারবার শুধু ছলছল করে উঠছে অকারণ অভিমানে।
ছাদের উপর কবুতরের বাসার মতো ছোট্ট এক কামরার ঘর, একটা খাট, ছোট্ট একটা পড়ার টেবিল ও একটা আয়না। এই হলো আমার বর্তমান নিবাস। এই শহরে আমি এই প্রথম এসেছি, আশেপাশের কোনকিছু আমি চিনি না যদিও এর আগে কোন শহরে আমার থাকা হয়নি তবে এখন থেকে আমার শহুরে জীবনের শুরু বলতে হবে। সবে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে সরকারী কলেজে চান্স পেয়ে পড়তে এসেছি গ্রাম থেকে। কাছাকাছি গ্রাম বলে প্রথমে ভেবেছিলাম রোজ গ্রাম থেকেই আসা যাওয়া করবো। কিন্তু নিত্য জার্নি করে ক্লাস করা এবং ফিরে এসে পাঠে মন বসানো একেবারেই অসম্ভব আর এতে করে প্রচুর সময় ও নষ্ট হচ্ছে। তাই বাবা সিদ্ধান্ত নিলেন আমাকে শহরে রেখে পড়াবেন। এই বাড়িওয়ালা বাবার বন্ধু। খুবই ঘনিষ্ট বন্ধু। মা প্রথমে একটু আপত্তি করলেও পরে চোখের জল মুছে মেনে নিয়েছেন এই শর্তে যে প্রত্যেক সপ্তাহে বাড়ি আসতে হবে। বাবা বরাবরই শক্ত গোছের মানুষ তাকে কখনো কোন বিষয়ে ভেঙে পড়তে বা কাঁদতে দেখিনি। কিন্তু আজ ফিরে যাবার কালে তাকে অন্য রুপে দেখে আমার মনটা আরো বেশি বিষণ্নতায় ভরে গেল। বার বার কেবলি চোখ ভিজে উঠলো। শেষ বেলায় বলা কথাগুলো বার বার মনের ভেতর খচখচ করে বাজতে লাগলো।
পানি খাবেন?
হঠাৎ চিকন সুরের কণ্ঠে মেয়েটি জানতে চাইলো্। আমি নিজেকে দ্রুত সামলে নিলাম। এই সময়ে কেউ ছাদে আসতে পারে এটা ভাবতে পারিনি। চোখের জল মুছলেও গলাটা ভার ভার ভাবটা থেকে গেল ঠিকই। বেশ রাগ হলো<
– না খাবো না, তুমি কে?
-আপনি কাঁদছেন?
-কই? কে বলল?
-আপনার কি ক্ষিদে পেয়েছে? মা লুচি আর আলুর দম করছে। আমার মায়ের হাতের লুচি আলুর দম বিখ্যাত। খাবেন?
আচ্ছা জ্বালাতন হলো দেখছি এই মেয়ে তো বড় বেশি কথা বলে। বেশি কথা বলা মানুষ আমার একদম ভালো লাগে না্। আমি প্রশ্ন ছুড়ে দিলাম।
-তুমি কে? কি চাও? কোথায় থাকো?
মেয়েটি হিহি করে ঝনঝনিয়ে হেসে উঠলো। বাবা একসাথে এতো প্রশ্ন?
-আমি মধুরিমা। হি হি হি…. মধু বলতে পারেন।
-ঠিক আছে মধুরিমা তুমি এখন যাও্। আমি এখন ব্যস্ত আছি।
-আমি চলে গেলে আপনি বুঝি কাঁদতে বসবেন? কান্নাকাটি করা বুঝি ব্যস্ততা? আচ্ছা ছিঁচকাদুনে তো আপনি, আশ্চর্য!
-শোন মেয়ে তুমি কে আমি জানিনা, তবে আমি স্পষ্টভাষী। তোমাকে আমি একটা কথা পরিষ্কার জানিয়ে রাখি। আমি অন্যের ব্যপারে নাক গলানো একেবারে পছন্দ করি না। বুঝেছো?
-ঠিক আছে বুঝলাম। যাওয়ার আগে একটা প্রশ্ন ছিলো।
-কি?
-আপনার নাম কি? মানে কি নামে ডাকবো আপনাকে?
-আমাকে ডাকাডাকির এত প্রয়োজনই বা কি? তুমি যাও।
-বলুন না এমন কেন আপনি?
-কোন নাম নেই।
-তাই কি হয়! নাম ছাড়া মানুষ আমি এই প্রথম দেখলাম। আচ্ছা ঠিক আছে আমি যদি আপনাকে মিষ্টার স্পষ্টভাষী বলে ডাকি আপনার আপত্তি নেই তো?
মনে মনে ভাবলাম কড়া করে দুচার কথা শুনিয়ে দেই। বলবো বলে যেই প্রস্তুতি নিয়েছি পেছন ফিরে দেখি হাসতে হাসতে নুপূরের ছন্দ তুলে মধুরিমা দৌড়ে চলে গেল। এতক্ষণ রাগ হলেও কিছুক্ষণ পর সব রাগ গলে জল হয়ে গেল। হঠাৎ কেমন মায়া মায়া লাগলো্ এতো কড়া করে না বললেই পারতাম। রাগের মাথায় এতক্ষণ খেয়াল করিনি এখন চোখে ভাষা ছবিতে মেয়েটির মুখটি খুব মিষ্টি লাগলো্, মনে মনে ভাবলাম মধুরিমা নামটি মন্দ নয়। আবার এলে ঠিকঠাক ভাব করে নেব। যা কড়া ডোজ দিয়েছি আবার এলে হয়!
loading...
loading...
নাম তার মধুরিমা শীর্ষক অণুগল্পটি পড়তে কিন্তু বেশ। ড্রামাটিক পিকচারাইজেশন। অভিনন্দন কবি মি. ইসিয়াক। শুভ দিন।
loading...
শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইলো পাশে থাকার জন্য।
ভালো থাকুন সবসময় ।
loading...
মনোমুগ্ধকর লিখনী। শুভেচ্ছা ।
loading...