২৫ তারিখ রাতে ঢাকা থেকে ““খাগড়াছড়ির পথে…”” রওনা হয়ে ২৬ তারিখ সকালে পৌছাই খাগড়াছড়িতে। দুপুরের খাওয়া দাওয়া সেরে রেস্ট নিয়ে আমাদের “খাগড়াছড়ি ভ্রমণ – শুরু” হয় “আলুটিলা গুহা” দিয়ে। আলুটিলা গুহা দেখে আমরা চলে যাই “রিছাং ঝর্ণা“ দেখতে। ঝর্ণা দেখা শেষে আমরা যাই প্রাচীন শতবর্ষী বটবৃক্ষ দেখতে। সেদিনের মত শেষ স্পট ছিল আমাদের “ঝুলন্ত সেতু“ দেখা।
পরদিন ২৭ জানুয়ারি খাগড়াছড়ি থেকে রাঙ্গামাটির দিকে রওনা হই একটি চান্দের গাড়ি রিজার্ভ করে। পথে থেমে দেখে নিই “অপরাজিতা বৌদ্ধ বিহার”। ২৭ তারিখ দুপুরের পরে পৌছাই রাঙ্গামাটি। বিকেল আর সন্ধ্যাটা কাটে বোটে করে কাপ্তাই লেক দিয়ে “সুভলং ঝর্ণা” ঘুরে।
কাপ্তায়ে নৌভ্রমণ শেষে হোটেলে যখন ফিরেছি তখন রাত হয়ে গেছে। রাতের খাবার শেষ করে রুমের সামনে হোটেলের ছাদে পাতা দোলনায় বাচ্চারা দুলতে লাগলো আর আমরা তিন তালার রুমে চলে গেলাম, রাত্রি কালীন আড্ডায়। অনেক রাত পর্যন্ত চলল আড্ডা, হ্রদের উপর ঝুলে থাকা বেলকুনিতে বসে। পরিচিত তারারা জলের নিচ থেকে উকি দিয়ে এক সময় মাথার উপরে উঠে আসতে লাগলো, তাই আমরা আড্ডার পাট চুকিয়ে ঘুমতে গেলাম।
পরদিন ২৮ তারিখ সকালে নাস্তা সেরে আবার প্রস্তুত বেড়াতে যাওয়ার জন্য। বসিরের আলসেমি রোগ আছে, তাই ও আমাদের সাথে বের হল না, রয়ে গেলো হোটেলেই।
হোটেলের ছাদে, বোট ওয়ালা চেষ্টা করে আমাকে রাজি করাতে ওর বোট নিয়ে ঘুরতে যেত।
আমরা বাকিরা বেরিয়ে পরলাম। রিজার্ভ বাজার থেকে একটা CNG নিয়ে নিলাম ঝুলন্ত সেতুতে যাব। আমরা আছি ৬ জন আর গাড়ির ক্যাপাসিটি ৫ জন, তাই আমি রয়ে গেলাম অন্য একটাতে যাব বলে। বাকি ৫ জন চলে গেলো, মিনিট পাঁচেক পরে আমিও আরেকটা CNG নিয়ে রওনা হলাম। ভাড়া নিয়ে কোন কথা বলা যায় না, সব যায়গার ভাড়াই রেট করা।
সেই অতি-পরিচিত ঝুলন্ত সেতুর সামনে এসেছি আবার। আমার মনে হয় বাংলাদেশের এমন কোন ব্যক্তি নাই যিনি এই সেতুর ছবি দেখেন নি। আমি অনেক অনেক বছর আগে একবার এসেছিলাম। আমার মনে হয় সেতুটার মূল আকর্ষণ এর অবস্থান এর জন্য। চারপাশের দৃশ্য আর মনোরম পরিবেশই একে এত আকর্ষণীয় করে রেখেছে।
বেশ কিছুটা সময় কাটালাম এখানে, চলল ছবি তোলাও।
ঝুলন্ত সেতু থেকে এবার যাব চাকমা রাজবাড়ি আর রাজবন বিহার দেখতে। এবার দুটি CNG ভাড়া নিয়ে নিলাম, খুব বেশি সময় লাগেনা বিহারে পৌছতে। সামনেই খেয়া ঘাট, নৌকো দিয়ে যেতে হবে রাজবাড়ি আর রাজবন বিহার দেখতে, পাশাপাশি দুটি দ্বীপে এই দুটির অবস্থান।
খেয়া নৌকোয় পার হয়ে প্রথমে গেলাম রাজবাড়িতে, যদিও জানি এখানে দেখার কিছুই নেই। পুরনো কাচারি বাড়িটা এখনও কোন মতে টিকে আছে, পাশেই নতুন একটি আধুনিক বাড়ি উঠে গেছে। সামনের মাঠটা আগরে মতই আছে, আর আছে সেই “ফতে খাঁ কামান”। ক্যামেরাটা ছিল ইস্রাফীলের হাতে, কি কারণে কে জানে তেমন কোন ছবি তোলেনি সে!
মাঠের পাশের এই হাতির বাচ্চাটা আমাদের বাচ্চাদের বেশ আনন্দ দিয়েছে
পূর্ব পরিচিত “ফতে খাঁ” কামানের পাশে বসে ছিলাম
হাতি ছেড়ে সব এবার কামানের উপর হামলা করতে এসেছে
এখান থেকে আবার নৌকোয় করে গেলাম পাশের টিলার রাজবন বিহারে। প্রথমবার যখন গিয়েছি তখন এখানে সবে মাত্র বিশাল এই টাওয়ারের কাজ শুরু করতে ছিল। অনেক বছর পরে আজ আবার আসলাম, আর হয়তো কখনো এখানে আসা হবে না।
এটার উপরে নাকি মৃতদের কি আনুষ্ঠানিকতা পালন করে
রাজবন বিহার
রাজবন বিহারের দক্ষিণ দিকের ঘাটে
স্বপনের খুব ক্ষধা….
রাজবন বিহারের দক্ষিণ দিকের ঘাটে
রাজবন বিহার পর্যন্ত সড়ক পথে যোগাযোগ আছে। কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে আবার বিহারের সামনে থেকে CNG নিয়ে ফিরে আসি হোটেলে। রাঙ্গামাটি ভ্রমণ শেষ, আজই চলে যাবো বান্দরবনে।
হোটেলের ছাদ থেকে কাপ্তাই
রাঙ্গামাটি টু বান্দারবান
পথে পারাপার…..
আগামী পর্বে দেখা হবে বান্দরবানে।
loading...
loading...
অসামান্য এবং অসাধারণ আমাদের বাংলাদেশ। দারুণ একটি পোস্ট।
loading...
ঠিক বলেছেন। আমাদের অল্প যায়গায় বৈচিত্রের অভাব নেই।
loading...
ছবি গুলোন ভীষণ মুগ্ধ করলো ছবি দা। মনে হলো আপনাদের সাথে ঘুরে ফিরছি।
loading...
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
এই পোস্টের বেশীর ভাগ ছবি তুলেছে বন্ধু ইস্রাফীল।
loading...
মন ভরে গেলো মরুভূমি ভাই। আপনার পোস্ট মাঝে মাঝে আমার সহকর্মীদের আমি দেখাই।
এতো অসাধারণ যে, ওদের চোখেও আমি আনন্দ দেখেছি। শুভেচ্ছা জানবেন।
loading...
আমার এই নগন্য পোস্টগুলি আপনার ভাললাগে এবং আপনে সেটা অন্যদের দেখান জেনে খুবই ভাল লাগলো। এটার আমার জন্য বিরাট পাওয়া।
loading...
প্রিয় জলদস্যু ভাই ,
"নয়ন ভরা জল গো তোমার আচল ভরা ফুল…"
নজরুলের গানটা একটু এদিক সেদিক করে বলি ।আপনার ফটো ব্লগ দেখতে দেখতে স্মৃতির ঝুড়িতে ফুল হয়ে থাকা রাঙামাটির হাসি খুশির স্কুল বেলার দিনগুলো মনে করে চোখ মুছলাম ।
কিন্তু কামানটা কি চাকমা রাজার বাড়িতে ? আমিতো মনে হয় দেখিনি সেটা। পুরোনো রাজবাড়ি লেকে ডুবে গেছে শুনেছিলাম । কোনো এক বছর লেকের পানি অনেক কমে গেলে নাকি রাজবাড়ীর কিছু অংশ ভেসে উঠেছিল ।এখন লেকের পানির কেমন অবস্থা ? রাজবন বিহারের এই টাওয়ারটা কোন সালে হলো ? এটাও আমি দেখিনি । এক্রফোবিয়া থাকা মৃতদেরতো এতো উঁচুতে উঠালেতো ঝামেলা হয়ে যাবে দেখছি !
খুব ভালো লাগলো রাঙামাটির ফটোগুলো দেখে আর আপনার বর্ণনা পড়ে ।
loading...
অসম্ভব সুন্দর মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে খন্দকার ভাই।
অনেক বছর আগে চাকমা রাজার বাড়ি একবার সামান্য ভেসে উঠেছিল কথা সত্যি। তখন আমিও পত্রিকায় পড়েছিলাম। সেইটি ছিলো আসল চাকমা রাজার বাড়ি। বাধ দিয়ে যখন কাপ্তাই লেক তৈরি করা হয় তখন সেটি ডুবে যায়। কিন্তু রাজাতো আর ডুবে যান নাই! তার একটা বাসভবন আছে। সেটাই এখন চাকমা রাজার বাড়ি। আর সেখানেই আছে কামানটি।
(খুব বেশীসম্ভব) ২০০১ সালে যখন গেছি তখন এই টাওয়ারটির নির্মাণ কাজ সবে শুরু হতে দেখেছি।
ভালো থাকবেন অহরহ।
loading...