খাগড়াছড়ি ভ্রমণ – শুরু

২৫ তারিখ রাতে “খাগড়াছড়ির পথে…” রওনা হয়ে ২৬ তারিখ সকালে পৌছাই খাগড়াছড়িতে। শ্যামলীর বাস এসে তার শেষ গন্তব্য খাগড়াছড়ির শাপলা চত্বরের সামনে আমাদের নামিয়ে দেয়।

বাস থেকে নেমেই দেখি অস্ত্রধারী কয়েকজন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য দাঁড়িয়ে আছেন। অনেকেই এদের সাথে কথা বলতে অস্বস্তি বোধ করেন, আমি করি না, বরং আমার অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি এরা পথ আর হোটেল সম্পর্কে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য তথ্য দিতে পারেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হল না।
ওরা জানালো –
“আশেপাশে কোন খুব ভালো মানের হোটেল নাই। মোটামুটি মানের হোটেল আছে। ভালো মানের হোটেল পেতে হলে যেতে হবে শহর থেকে সামান্য দূরে।”
ওদের ধন্যবাদ জানিয়ে দলের কাছে ফিরে এলাম। যেহেতু সাথে ফ্যামেলি আছে তাই শহরের বাইরে হোটেলে ওটার প্রশ্নই আসেনা। ঠিক করলাম, সামনের রেস্টুরেন্টে সবাইকে বসিয়ে আমি আর ইস্রাফীল বের হবো কাছের হোটেল গুলির পরিস্থিতি দেখতে।

আমাদের সামনেই দেখলাম “মনটানা হোটেল” (রেস্টুরেন্ট), এখানেই সবাইকে বসে আপাতত সকালের নাস্তা করার কথা বলে আমি আর ইস্রাফীল বেরিয়ে এলাম।

আশেপাশে দুটি মোটামুটি মানের হোটেলের নাম পাওয়া গেলো, একটির নাম মনে নাই। অন্যটি নতুন হয়েছে “হোটেল নিলয়”।
নাম মনে নাই হোটেলে গিয়ে দেখি চার তালা পর্যন্ত সমস্ত রুমে তাদের গেস্ট আছে। আমাদের লাগবে ৩টি কাপোল বেড ও একটি সিঙ্গেল। কাপোল বেডের ভাড়া দিতে হবে ৬০০/= টাকা আর সিঙ্গেল ৪০০/= টাকা। রুমগুলি মোটামুটি বড়ই বলা চলে। আমাদের চলে যাবে, তবে সমস্যা হচ্ছে বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে পাঁচ তালাতে উঠাটা পছন্দ হচ্ছে না। এখান থেকে বেরিয়ে ফিরে আসলাম রেস্টুরেন্টে। ৫ তালার কথা শুনে সবাই এক বাক্যে নিষেধ করে দিল।

তাই নাস্তা করে আমি আর ইস্রাফীল গেলাম “হোটেল নিলয়”-এ। শাপলা চত্বরের পাশেই। এখানেও নিচে কোন রুম নেই ৩ তালাতে একটি আর ৪ তালাতে বাকি গুলি দিতে পারবে। মাঝারি সাইজের রুম। কাপোল রুম ৫০০/= টাকা আর সিঙ্গেল রুম ৪০০/= টাকা করে। যেহেতু আমরা সকালের প্রথম গেস্ট আর অনেকগুলি রুম নিচ্ছি তাই আমাদের কাছে প্রতি রুমে ১০০ করে কম নিবে।

আমরা চিন্তা করলাম একটা রাতেরই ব্যাপার কোন রকমে কাটিয়ে দেই। আগামী কাল রাঙ্গামাটিতে ভালো কোন হোটেলে উঠবো। ইস্রাফীল গেলো বাকিদের নিয়ে আসতে আর আমি বসে গেলাম হোটেলের ফর্ম পূরণ করতে। ৭টা ফর্ম পূরণ করতে করতে সকলেই চলে আসলো। আমি নিলাম ৩ তালার রুমটা বাকিরা উপরে।

যাইহোক, হোটেলে উঠে ফ্রেস হয়ে বেরিয়ে পরবো ঘুরতে।
এই প্রস্তাবে বসির রাজি হল না।
আমাদের অস্থির ড্রাইভারের কারণে সারা রাত ঘুমাতে পারে নি, তাই এখন ঘুম দিবে।
আমি বললাম ঠিক আছে ১১টার মধ্যে সবাই বেরিয়ে পরব। আপাতত বিদায়।
নিজের রুমে ঢুকতে ঢুকতে বসির বলল – “১২টার আগে ঘুমই ভাংবো না”।
দিনের বেলা আমার ঘুম হয় না, একটু গড়াগড়ি করে উঠে পরলাম।


খাগড়াছড়ির হোটেল “নিলয়” এর চার তালার বারান্দা থেকে নিচের ব্যস্ত রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছি। ঝকঝকে রোদ উঠেছে। বেরানোর জন্য অতি চমৎকার আবহাওয়া। সবাই রেডি, বসির এখনো ঘুমায়। বসির তার কথা রেখেছে ১২টার পরে ঘুম থেকে উঠেছে।


আমার মেয়ে সাইয়ারা, সব সময় সবার আগে রেডি।

সবাই যখন রেডি হয়ে বেরিয়েছি তখন দুপুরের খাবার সময় হয়ে গেছে। কোন দিকে না তাকিয়ে সেই “মনটানা” রেস্টুরেন্টেই গিয়ে বসলাম।


বাম দিক থেকে স্বপন ও বসির।

খাবারের অর্ডার দেয়ার ফাঁকে আমি উঠে গিয়ে চান্দের গাড়ী আর টেম্পোর ড্রাইভারদের সাথে আলাপ করে আসলাম।
আমরা যাব, প্রথমে আলুটিলা গুহা, সেখান থেকে রিছাং ঝর্ণা, তারপর শতবর্ষী বটগাছ আর সব শেষে ঝুলন্ত সেতু
চান্দের গাড়ী চাইল ৪,৫০০/= টাকা, আর টেম্পো চাইলো ২,২০০/= টাকা।
মোটামুটি একটা আইডিয়া নিয়ে আমি দুপুরের খাবারে ফিরে আসলাম।


আমাদের ভাড়া করা গাড়ী আসছে, বিরক্তি নিয়ে অপেক্ষায় আছে সাইয়ারা আর বুসরা।

খাওয়া দাওয়া শেষে ঠিক করলাম একটি টেম্পো নিয়েই যাওয়া হবে। টেম্পোর ড্রাইভারদের সাথে আলাপ করে শেষ পর্যন্ত ১,৮০০/= টাকায় রফা হল। শুরু হলে আমাদে যাত্রা……


অনেকটা পথের সওয়ারি আমরা, তাই বেশি করে তেল নিয়ে নিচ্ছে।

আমাদের প্রথম গন্তব্য শহর থেকে ৮ কিঃ মিঃ পশ্চিমে আলুটিলা পাহাড় চূড়ায় আলুটিলা গুহা। চলতে শুরু করার কিছুক্ষণ পরেই শহরের মূল অংশ পার হতেই শুরু হলে পাহাড়ি আঁকা-বাঁকা রাস্তা।


পাহাড়ি পথ


এই রুক্ষতার মাঝেও ফুটেছে কিছু পাহাড়ি ফুল


ফুটেছে পাহাড়ি কাশফুল


এটা কিন্তু পাহাড়ি ফল না।


পাহাড়ি ছড়ার উপরে এই ধরনের ব্রিজ অহরহই দেখা মিলে।

কোথাও উতরাই আবার কোথাও চড়াই। উতরাই গুলি সহজোই উতরে যাচ্ছে, কিন্তু কিছু কিছু চড়াই এতটাই বেশি যে আমাদের মিনিমাম দু’জন নেমে যেতে হচ্ছে। এমনও দু-একটা চড়াই এসেছে যেখানে প্রায় সবাইকেই নামতে হয়েছে।


আমাকে নামতে হয়েছে, নইলে এই চরাই চরতে পারবে না।


শীতে পাতা ঝরছে সমস্ত গাছেদের


শীতের সময় পাহাড়ে বেড়াবার সবচেয়ে খারাপ দিক এটা। পাহারগুলি থাকে মৃতপ্রায়।


পাতা ঝরা রাবার বাগান

বি.দ্র. : এই পোস্টের সবগুলি ছবি তুলেছে বন্ধু “ইস্রাফীল “।

চলবে……

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

৭ টি মন্তব্য (লেখকের ৩টি) | ৩ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ২৯-১১-২০১৮ | ১২:৪৬ |

    মিশন খাগড়াছড়ি'র চমৎকার শুরু হয়েছে দস্যু ভাই। রুম ভাড়া এতো কম দেখলাম যে !!
    শহরে নিশ্চয়ই হোটেল রুমের ভাড়া এর থেকে অনেক বেশী।

    GD Star Rating
    loading...
    • মরুভূমির জলদস্যু : ২৯-১১-২০১৮ | ২৩:৪২ |

      ধন্যবাদ মুরুব্বী ভাই মন্তব্যের জন্য।
      হোটেল নিলয় শহরের মধ্যেই ছিলো। ভাড়াটা বেশ কমই। তবে সময়টা কিন্তু ২০১৪ সালের।
      শহরের বাইরে যে হোটেল গুলি আছে সেগুলির ভাড়া বরং অনেক অনেক বেশী।

      GD Star Rating
      loading...
      • মুরুব্বী : ৩০-১১-২০১৮ | ৮:৪২ |

        Smile Smile এমন কিছু হবে অনুমান করেছিলাম।

        GD Star Rating
        loading...
  2. সৌমিত্র চক্রবর্তী : ২৯-১১-২০১৮ | ১২:৪৮ |

    শুধু পড়ে গেলাম মরুভূমি ভাই। পড়া আর দেখা ছাড়া বাংলাদেশ ভ্রমণ আমার দ্বারা হবে কিনা জানি না। Smile

    GD Star Rating
    loading...
    • মরুভূমির জলদস্যু : ২৯-১১-২০১৮ | ২৩:৪৪ |

      ছবিটি কাঁটা মেহেদী ফলের।
      ইচ্ছে থাকলে কখনো না কখনো, সময় আর সুযোগ হয়েই যাবে।
      শুভকামনা রইলো।

      GD Star Rating
      loading...
  3. রিয়া রিয়া : ২৯-১১-২০১৮ | ১৩:২২ |

    এই পথ আমার অচেনা হলেও ভ্রমণের অপারপর বিন্যাস আর ছবি দেখে মনের মধ্যে আনন্দ জেগে উঠলো। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gif

    GD Star Rating
    loading...
    • মরুভূমির জলদস্যু : ২৯-১১-২০১৮ | ২৩:৪৫ |

      ভ্রমণ সংক্রান্ত লেখা গুলিতে আমি প্রচুর ছবি ব্যবহার করে। যাতে করে পাঠক ক্যামেরার চোখে অনেকটা দেখতে পারে।

      GD Star Rating
      loading...