ইহা একটি অকেজো জ্ঞান।
জ্বি, আজ আপনাদের সামনে একটি অকেজো জ্ঞানকেই হাজির করছি। কেন বলছি অকেজো জ্ঞান? কারণ আজ যে বিষয়টি আপনাদের সামনে হাজির করবো তার প্রচলন অনেক অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। ফলে এটা জেনে কখনোই কোনো কাজে লাগাতে পারবেন না, আর তাই যে জ্ঞান কোনো কাজে লাগেনা তাকে তো অকেজো জ্ঞানই বলে!! তাহলে শুরু করা যাক:
আমরা জানি-
৪ আনা = ২৫ পয়সা।
৮ আনা = ৫০ পয়সা।
১৬ আনা = ১০০ পয়সা বা ১ টাকা।
১ টাকা = ১০০ পয়সা।
কিন্তু এই “আনার” আগের হিবাসগুলি কি কি?
আমরা মাঝে মাঝেই বলতে শুনি –
– “তোমার কথার দু আনা দামও নেই।”
– “তোমার কানা কড়ি মূল্য নেই।”
– “পাই পয়সার হিসাব চাই।”
– “আমার হিসাব কড়ায়-গণ্ডায় বুঝে নিবো।”
ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু কথা হচ্ছে টাকা, আনা, পাই, কড়ি, গণ্ডা ইত্যাদির মূল্যমান বা হিসাব পদ্ধতি সম্পর্কে আমাদের কতোটা ধারনা আছে!!!
ছোট্ট একটা তালিকা দেখুন – এই তালিকার সাথে আবার উপরের বর্তমানে প্রচলিত হিসাবের মূল্যমান মিলানোর চেষ্টা করবেন না। এই তালিকাটি হচ্ছে সেই আদিকালে ব্যবহৃত আমাদের আদি বাংলার মূদ্রামূল্য বিন্যাস। সেই আদিকালে আমাদের দেশের মুদ্রাবিভাজন ছিলো নিম্ন রূপ-
২ অর্দ্ধ-পয়সা বা ৩ পাই = ১ পয়সা।
২ পয়সা বা ৬ পাই = ১ ডাবল পয়সা।
৪ পয়সা বা ২ ডাবল পয়সা = ১ আনা।
২ আনা বা ৪ ডাবল পয়সা = ১ দুয়ানি।
৪ আনা বা ২ দুয়ানি = ১ সিকি।
২ সিকি বা ৪ দুয়ানি = ১ আধুলি।
২ আধুলি বা ৪ সিকি বা ১৬ আনা = ১ টাকা।
১৬ টাকা = ১ মোহর।
এখানে বলে রাখা ভালো …
* অর্দ্ধ-পয়সা, পাই, পয়সা ও ডাবল পয়সা এই চারটি ছিল তাম্রমুদ্রা।
* দুয়ানি, সিকি, আধুলি ও টাকা ছিল রৌপ্যমুদ্রা।
* মোহর ছিল স্বর্ণমুদ্রা।
এগুলি সবই অতীত। বর্তমানের সাথে মিলানোর অপচেষ্টা না করাই ভালো।
এই তিন ধরনের তাম্রমুদ্রা, রৌপ্যমুদ্রা ও স্বর্ণমুদ্রা ছাড়াও কড়ির ব্যবহার মুদ্রা হিসেবে প্রচলন ছিল। যেমন-
* ৪ কড়া = ১ গণ্ডা
* ৫ গণ্ডা = ১ বুড়ি বা পয়সা।
* ৪ বুড়ি বা পয়সা = ১ পণ বা আনা।
* ৪ পণ বা আনা = ১ চৌক।
* ৪ চৌক বা ১৬ পণ = ১ টাকা বা কাহন।
ধরুন আপনি যদি বলেন “আমার হিসাব কড়ায়-গণ্ডায় বুঝিয়ে দাও।” তাহলে বিষয়টি হচ্ছে ১ টাকার (১৬×৪×৫×৪) = ১২৮০ ভাগের এক ভাগ পর্যন্ত নিখুঁতভাবে আপনাকে বুঝিয়ে দেয়ার কথা বলছেন।
যাই হোক কড়ায়-গণ্ডায় বুঝে নেয়ার চেয়েও যদি আরো বেশি নিখুঁত ভাবে বুঝে নেয়ার ইচ্ছে থাকে তাহলে তার ব্যবস্থাও ছিল সেই যুগে।
২০ বিন্দু = ১ ঘূণ
১৬ ঘূণ = ১ তিল
২০ তিল = ১ কাক
৪ কাক = ১ কড়া
আবার অন্য আরেকটি মূলমানও ছিলো-
৩ যব = ১ দন্তী
৩ দন্তী = ১ ক্রান্তি
৩ ক্রান্তি = ১ কড়া।
তাছাড়া আরো একটি ক্ষুদ্র মূল্যমাণ ছিলো এমন
৩২০ রেণু = ৭দ্বীপ = ৫ তাল = ১ কড়া।
এবার শেষ করবো এই অকেজো জ্ঞানের প্যাচাল। এই পুরো লেখাটির সমস্তু তথ্য নিয়েছি পঞ্চানন ঘোষের লেখা “শুভঙ্করী” বইটি থেকে।
তাই কৃতজ্ঞতা স্বরূপ একটি শুভঙ্করের মূদ্রাবিভাজন সম্পর্কিত আর্য্যা দিয়ে শেষ করছি।
“চারি কাকে বটৈক জানি, তিন ক্রান্তি বট বাখানি।
নবদন্তী করিয়া সার, সাতাইশ যবে বট বিচার।
আশি তিলে বটঙ্কর, লেখার গুরু শুভঙ্কর।।”
ভালো থাকবেন সকলে।
loading...
loading...
প্রয়োজন না থাকায় কিছু কিছু অকেজো জ্ঞান মাথা থেকে নেই হয়ে গিয়েছিলো। হারানো স্মৃতি ফিরে পেলাম দস্যু ভাই। আর্য্যা'র সমাধান না জানলেও উপভোগ করলাম।
loading...
আর্য্যা'র সমাধান আমারও জানা নাই।
loading...
loading...
loading...
অসাধারণ পোস্ট মরুভূমি ভাই।
loading...
ধন্যবাদ চক্রবর্তী দা।
loading...
যা জানা ছিল, তারচেয়েও আরও বেশি কিছু জানা হলো। সত্যি বললে বলতেই হয় যে, এটা সত্যি
অসাধারণ পোস্ট। আপনার তথ্যবহুল পোস্টখানা আজকালকার সকল শিক্ষার্থীদের নজরে পড়ার দরকার বলেে আমি মনে করি।
loading...
অপ্রচলিত এই সব হিসাব মনে রাখা খুবই কঠিন। আমি তাই মনে রাখার চেষ্টা করি না। শুধু আনন্দের জন্য পড়ি।
loading...
দারুণ পোস্ট!
অশেষ ধন্যবাদ !
loading...
স্বাগতম আপনাকে।
loading...
অনেকদিন পর পড়লাম। সচরাচর এই হিসেব গুলো ভুলতে বসেছিলাম ছবি দা।
loading...
আমিতো মনে রাখার চেষ্টাই করি না।
loading...