আতা কাহিনী

আতা ফল কোনটি?
আতা আর সীতা কি একই ফল?
আতা আর সরিফার পার্থক্য কি?
আতার আরেক না কি নোনা?

এই প্রশ্নগুলি মাঝে মাঝেই দেখতে পাই। মাঝে মাঝে বেশ ভালো রকমের যুক্তি-তর্কও দেখার সুযোগ হয়। অনেক দিন ধরেই ইচ্ছে ছিল এই বিষয়ে কিছু তথ্য উপস্থাপন করবো, আজ তাই করছি। মনে রাখতে হবে আমি শুধু কয়েকটি বইয়ের তথ্য এখানে উপস্থাপন করছি। লেখার শেষ অংশে আমার উপলব্ধি প্রকাশ করবো। আপনাদেরও তা প্রকাশের সমান সুযোগ রইলো।

আতা বিষয়ে কয়েকটি বইয়ের আলোচনা
১। কালীপদ বিশ্বাস ও এককড়ি ঘোষ লিখিত “ভারতীয় বনৌষধি” প্রথম খণ্ডের ১৩ নাম্বার উদ্ভিদ হচ্ছে আতা। বইটির ১১ ও ১২ নাম্বার পাতায় আতা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
নামের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে – ফলটির বাংলা নাম – আতা, হিন্দি নাম – সীতাফল আর তামিল নাম – সীতা, বৈজ্ঞানিক নাম – Annona squamosa L.।
মাঝারী আকারের গাছ, ১০ থেকে ১৫ ফুট উঁচু। পাতা ২-৩ ইঞ্চি লম্বা, আধ ইঞ্চি চওড়া।

২। শ্রীহরিমোহন মান্না প্রণীত “ফলের বাগান” বইতে ৪ নাম্বার উদ্ভিদ হচ্ছে আতা বইটির ১৪০ নাম্বার পাতায় আতা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
আতা সম্পর্কে সেখানে বলা হয়েছে –
“ফলগুলির গাত্রদেশ খাঁজকাটা বন্ধুর। ভিতরে শাঁস অতি কোমল।”

৩। নলিনীকান্ত চক্রবর্তী প্রণীত “ত্রিপুরার গাছপালা” বইতে ৫ নাম্বার উদ্ভিদ হচ্ছে আতা। বইটির ১৩ নাম্বার পাতায় আতা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
নামের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে ফলটির বাংলা নাম -আতা, অন্য নাম – সীতা ফল, বৈজ্ঞানিক নাম – Annona squamosa L.
“squamosa” অর্থ অসমান, এতে ফলের অসমান গায়ের কথা বুঝায়। এই ছোট বৃক্ষটি আমেরিকার উষ্ণ মন্ডলের আদিবাসী। ফল অসমান গাত্র বিশিষ্ট গোলাকার। ফলত্বকের একটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। উহা নরম সবুজাভ রঙের কতগুলি গোলাকার আঁশ জুড়ে যেন তৈরি। পাকা ফলে এই আঁশের মত অংশগুলি আলাদা করা যায়। ফলের মধ্যে মিষ্টি সাদা রঙের আঁশ থাকে।”

৪। শ্রীঊর্ণচন্দ্র সাহার সঙ্কলিত “আয়ূর্ব্বেদোক্ত উদ্ভিদ সংগ্রহ” বইতে ১৬ নাম্বার উদ্ভিদ হচ্ছে আতা বইটির ১৬ নাম্বার পাতায় আতা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
নামের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে ফলটির বাংলা নাম -আতা, সংস্কৃত নাম – আতৃপ্য, হিন্দি নাম – সরিফা, তৈ নাম – সিতাফলম। (“তৈ” তে ভারতের কোন একটা প্রদেশের নাম বুঝানো হয়েছে।) ইংরেজি নাম – custard apple এবং বৈজ্ঞানিক নাম – Annona squamosa L.।

নোনা বিষয়ে কয়েকটি বইয়ের আলোচনা
১। কালীপদ বিশ্বাস ও এককড়ি ঘোষ লিখিত “ভারতীয় বনৌষধি” প্রথম খণ্ডের ১৪ নাম্বার উদ্ভিদ হচ্ছে নোনা। বইটির ১২ নাম্বার পাতায় নোনা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
নামের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে ফলটির বাংলা নাম – নোনা আর সাঁওতালি নাম – গম, ইংরেজি নাম – true custard apple এবং বৈজ্ঞানিক নাম – Annona reticulata L.
মাঝারী আকারের গাছ, ২০ থেকে ৪০ ফুট উঁচু। পাতা ৫-৮ ইঞ্চি লম্বা, দেড় থেকে ২ ইঞ্চি চওড়া।

২। শ্রীহরিমোহন মান্না প্রণীত “ফলের বাগান” বইতে ২৬ নাম্বার উদ্ভিদ হচ্ছে নোনা। বইটির ১৯৭ নাম্বার পাতায় নোনা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
নোনা সম্পর্কে সেখানে বলা হয়েছে –
“নোনা আতা জাতীয় ফল, কিন্তু গুণে ইহা আতা হইতে নিকৃষ্ট। ইহা আতার মত অত রসাল ও সুগন্ধি নহে। আতা হইতে নিকৃষ্ট হইলেও খাইতে এ ফলও বিশেষ সুস্বাদু। এ ফলগুলির উপরিভাগে আতার মত খাঁজ নেই। ইহা পাকিলে পীতাভ লালবর্ণ হয়।”

৩। নলিনীকান্ত চক্রবর্তী প্রণীত “ত্রিপুরার গাছপালা” বইতে ৪ নাম্বার উদ্ভিদ হচ্ছে নোনা বইটির ১২ নাম্বার পাতায় নোনা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
নামের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে ফলটির বাংলা নাম -নোনা, অন্য নাম – রাম ফল, নোনা আতা, বৈজ্ঞানিক নাম – Annona reticulata L.
reticulata অর্থ জালিকাকার, ইহা ফলের উপরের অস্পষ্ট জালিকার বুঝায়। আতা গাছের সাথে এর পার্থক্য এর পাতা অনেক লম্বাটে, ফলের গা সমান,অবশ্য তাতে অস্পষ্ট জালিকাকার খাঁজ রয়েছে। ফলের ভেতরটা অনেকটা আতার মত তবে শাস অনেকটা বালির মত দানাদার এবং এর গন্ধ ততোটা ভাল নয়। ফলের আকার প্রাণীর হৃৎপিণ্ডের মত।

উপরের সূত্রগুলি মোতাবেক আমার ধারনা হয়েছে “যাহা লাউ, তাহাই কদু।” থুক্কু, “যাহা আতা, তাহাই সীতা বা সরিফা।” কারণ সীতা ও সরিফা নামগুলি শুধুমাত্র আতার সাথে ব্যবহার করা হয়েছে, নোনার সাথে কখনোই ব্যবহার করা হয়নি। আর আতার বৈজ্ঞানিক নাম – Annona squamosa L. এর squamosa থেকে এবং বইগুলির আলোচনা থেকে সহজেই বুঝা যায় যে আতার পৃষ্ঠদেশ হবে অসমান অমসৃণ।

অন্যদিকে নোনার ক্ষেত্রে সকল বইতেই তার নাম নোনা পাওয়া যাচ্ছে। নোনাকে কোন বইতেই সীতা বা সরিফা বলা হয়নি। আর নোনার বৈজ্ঞানিক নাম – Annona reticulata L. এর reticulata থেকে এবং বইগুলির আলোচনা থেকে সহজেই বুঝা যায় যে নোনার পৃষ্ঠদেশ হবে মসৃণ এবং অস্পষ্ট জালিকাকার।

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

৬ টি মন্তব্য (লেখকের ৩টি) | ২ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ২৪-০৬-২০১৮ | ১৬:৫০ |

    এই বৃদ্ধ বয়সেও আমার মধ্যে দ্বিধা ছিলো আতা আর নোনা নিয়ে। আজ বিভ্রম কাটলো। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

    GD Star Rating
    loading...
    • মরুভূমির জলদস্যু : ২৪-০৬-২০১৮ | ১৯:৫২ |

      চেষ্টা করেছি কয়েকটি বই থেকে তথ্য দিয়ে লেখাটিকে উপস্থাপন করতে। মোটামুটি নির্ভরযোগ্য ৪টি বই থেকে তথ্য নেয়া হয়েছে।

      GD Star Rating
      loading...
  2. রিয়া রিয়া : ২৪-০৬-২০১৮ | ১৯:০৪ |

    আজকের পোস্ট শুধু ছবিই নয়; শিক্ষণীয় মনে হয়েছে আমার কাছে। ধন্যবাদ দাদা।

    GD Star Rating
    loading...