প্রতিবছর ঈদ কেন ১১দিন আগে হয়?

ffty

আচ্ছা, প্রতিটি ঈদ কেন প্রতিবছর ১০-১১ দিন আগে হয়?
যেমন: গত হয়ে যাওয়া ঈদ-উল-ফিতর অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৪ই মে ২০২১ইং। একবছর পরপর যদি ঈদ হয়, তা হলে তো এ বছর ১৪ ই মে অথবা মে মাসের ১৫ তারিখ পবিত্র ঈদুল ফিতর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। তা-ই নয় কি?

কিন্তু সেটা না হয়ে এবার কেন ২-৩ মার্চ ২০২২ ইং ঈদ-উল- ফিতর অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এটা একটু ভাবার বিষয় নয় কি?

তবে হ্যাঁ, এবিষয়ে ভাবনা-চিন্তার কিছুই নেই! কারণ, এখানে সবকিছুই চাঁদের হিসাবে অর্থাৎ চান্দ্র মাসের হিসাবেই হচ্ছে। তাই প্রতিবছর গত বছরের ১০-১১ দিন আগেই পবিত্র মাহে রমজান-সহ ঈদুল ফিতর অথবা ঈদ-উল-আযহা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কোনো-কোনো বছর মাহে রমজান শীতকালে আরম্ভ হয়। আবার কোনও বছর প্রচন্ড রোদে ঝড়-বৃষ্টি আর বান-তুফানেও মাহে রমজান আরম্ভ হয়ে থাকে। কিন্তু ইংরেজি অথবা বাংলা সনের কোনও নির্দিষ্ট সময়ে হচ্ছে না। এর কারণ শুধু একটাই। আর তা হলো চন্দ্র মাসের হিসাব।

আমরা জানি ইংরেজি ৩৬৫ দিনে একবছর। আবার কোনো-কোনো বছর ৩৬৬ দিনেও হয়ে থাকে। আর তা হয় প্রতি চার বছর পরপর। আরও সহজভাবে বললে বলতে হয়, যেকোনো ইংরেজি সালকে অর্থাৎ ২০২০ সালকে ৪ দিয়ে ভাগ করলে যদি ভাগফল অবশিষ্ট কোনও সংখ্যা না থাকে, তা হলে সে বছর বা সেই ইংরেজি সালই হবে ৩৬৬ দিনে। যাকে বলে লিপ ইয়ার। ঐ বছরই ফেব্রুয়ারি মাস ২৮দিনের পরিবর্তে ২৯ দিন হবে। যেমন: ২০২৪÷৪= ৫০৬ এখানে ভাগফলের শেষে কোনও অবশিষ্ট সংখ্যা নেই। তার মানে হলো, ২০২৪ ইংরেজি সাল হবে ৩৬৬ দিনে, আর ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাস হবে ২৯দিনে। সোজা কথায় ২০২৪ ইংরেজি সাল হবে লিপ ইয়ার।

এবার আসি আমাদের বাংলা সন নিয়ে আলোচনায় : জানা যায় ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে বাংলা একাডেমি ইংরেজি বর্ষের সাথে মিল রেখে বাংলা বর্ষপঞ্জি সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বাংলা সনের হিসাব সংস্কারের একটি সুপারিশও প্রণয়ন করেছে। পত্রিকার খবরের মাধ্যমে জানা যায় যে, বাংলা সনের প্রস্তাবিত সংস্কারে বৈশাখ থেকে আশ্বিন ৬ মাস ৩১ দিনে গণনা করা হবে। ফাল্গুন ব্যতীত কার্তিক থেকে চৈত্র ৫ মাস হবে ৩০ দিনের। ২৯ দিনে ফাল্গুন ধরা হবে। বছরে দিনের সংখ্যা ৩১x৬ (১৮৬) + ৩০ x ৫ (১৫০) +২৯= ৩৬৫ ঠিক রাখা হয়। বাংলা একাডেমির ভাবনামতে এ প্রস্তাবের ফায়দা হল ৮ ফাল্গুন ও ২১ ফেব্রুয়ারি, ১২ চৈত্রে ২৬ মার্চ, ২৫ বৈশাখে ৮ মে, ১১ জ্যৈষ্ঠে ২৫ মে এবং ১ পৌষে ১৬ ডিসেম্বর প্রাতিষঙ্গিক হবে। কিন্তু একসময় বাংলা বর্ষেও কোনো-কোনো মাস ৩২ ও ২৯দিনেও হতো। তবে এখন আর সেটা নেই। তবু্ও কিছুকিছু হিন্দুরা সেই আগেকার বাংলা বর্ষপঞ্জিই অনুসরণ করে আসছে। এর পেছনে আবার একটা কারণও আছে। কারণ হলো, ইংরেজি তারিখ গণনা শুরু হয় রাত ১২টার পর সময় ০০ থেকে। আর বাংলা তারিখ গণনা শুরু সূর্যোদয়ের সাথে। তাই অনেক হিন্দুরা ক্যালেন্ডারের ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ উদযাপন না করে এর পরদিন তাদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান সবই পালন করে থাকে।

তা করুক, সেটা যার যার ব্যক্তিগত ভাবমূর্তির আওতায় পরে। তা হলে বুঝাই গেলো যে বাংলা এবং আন্তর্জাতিক ইংরেজি সাল হুবহু একই নিয়মে চলছে। ব্যতিক্রম শুধু ইংরেজি চার বছর পরপর লিপ ইয়ার। যা হয় ৩৬৬ দিনে।

এবার হিজরি সন নিয়ে আলোচনা : হিজরি সন হল চাঁদের হিসাবে। যাকে বলা হয় ইসলামি চন্দ্রমাস। এই হিজরি সাল হলো ইসলামী চন্দ্র পঞ্জিকায ব্যবহৃত পঞ্জিকা। জানা যায় যার প্রথম বছর শুরু হয়েছিল ৬২২ খ্রিস্টাব্দ থেকে। সেই থেকে হিজরি মুহররম মাসকে ইসলামি নববর্ষের প্রথম মাস ধরা হয়।

জানা যায় হিজরি সালের এই প্রথম বছরে মহানবী ও তার সাহাবীরা মক্কা থেকে ইয়াসরিবে (বর্তমানে মদিনা) দেশান্তরিত হন। এই ঘটনাটি ইসলামি পরিভাষায় হিজরত নামে পরিচিত যা ইসলামে প্রথম মুসলিম সম্প্রদায় (উম্মাহ) সৃষ্টির পেছনে ভূমিকা রাখার জন্য স্মরণীয়। তাই মনে হয় এই হিজরত থেকেই হিজরি নামকরণ করা হয়েছে।

তো যাইহোক, বাংলা এবং ইংরেজি সালের সাথে ব্যতিক্রম হলো, মাস এবং বছরের দিন। হিজরি মাস চাঁদের হিসাবে হওয়াতে বছরের প্রতিটি মাসই ২৯.৫০ মানে সাড়ে ঊনত্রিশ দিনে হয়ে থাকে। যেমন: ৩৫৪÷১২=২৯.৫, আবার ৩৫৫÷১২=২৯.৫৮৩৩৩৩। সে হিসাবে হিজরি চন্দ্র পঞ্জিকায় একবছর গণনা করা হয়, ৩৫৪ বা ৩৫৫ দিনে। তা হলে দেখা যায় ইংরেজি সাল ৩৬৫দিন—হিজরি চন্দ্র পঞ্জিকা ৩৫৪দিন হলে ইংরেজি থেকে হিজরি ১১ দিন কম হয়। এই ১১দিন কম থাকার কারণে প্রতিবছর ইংরেজি বাংলা সালের নির্দিষ্ট কোনো তারিখে ঈদুল ফিতর অথবা ঈদ-উল-আযহা উদযাপন হয় না। প্রতিবছরই গত বছরের চেয়ে অন্তত ১০ বা ১১ দিন আগেই মাহে রমজান-সহ ঈদুল ফিতর ও ঈদ-উল- আযহা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। কিন্তু হিজরি ইসলামি চন্দ্র পঞ্জিকার ঠিক তারিখেই হচ্ছে।

বি:দ্র: লেখা আরও একবছর আগের।

শুভেচ্ছান্তে: নিতাই বাবু। আমি একজন হিন্দু। লেখায় ভুল হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইল। আর লেখা পড়ে ভালো লাগলে দয়া পর্বক লাইক/কমেন্ট ও শেয়ার করতে ভুলবেন না। পরিশেষে সাবাকে পবিত্র ঈদ-উল-আযহা’র অগ্রীম শুভেচ্ছা জানালাম।

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
প্রতিবছর ঈদ কেন ১১দিন আগে হয়?, 5.0 out of 5 based on 1 rating
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

৪ টি মন্তব্য (লেখকের ২টি) | ২ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ০৫-০৫-২০২৩ | ১২:৫৯ |

    আবারও সেই অনন্য রকম পোস্ট। আমার ব্যক্তিগত জানার পরিধি বেড়ে গেলো। বাহ্। অসংখ্য ধন্যবাদ মি. নিতাই বাবু। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gif

    GD Star Rating
    loading...
    • নিতাই বাবু : ০৫-০৫-২০২৩ | ১৮:১৪ |

      সুন্দর মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি, প্রিয় দাদা। আশা করি ভালো থাকবেন। 

      GD Star Rating
      loading...
  2. আলমগীর সরকার লিটন : ০৭-০৫-২০২৩ | ১১:৪২ |

    খুবি ভাব চিন্তার বিষয়——–

    GD Star Rating
    loading...
    • নিতাই বাবু : ০৭-০৫-২০২৩ | ১৩:০২ |

      সুন্দর মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি, কবি দাদা।

      GD Star Rating
      loading...