মা থাকুক মনের মণিকোঠায়

2800

মণিকোঠা শুধুই মণিকোঠা নয়। মনের এই মণিকোঠার আরও নাম আছে। যেমন: মনের মণিকোঠা, অন্তরের অন্তস্তল ও মানমন্দির।

তো যাই হোক, মনের মণিকোঠা বলতে আমরা যা বুঝি তা হলো, প্রত্যেক মানুষের মনের ভেতরে থাকা একটা কোঠা। এই কোঠার নামই ‘মণিকোঠা’ বা ‘অন্তস্তল’ বা ‘মানমন্দির’।

এই কোঠা ছোট্ট একটা চিলেকোঠাসম নয়। এই কোঠা বাড়ির ঘরের ভেতরে থাকা একটা কোঠাও নয়। এটা একটা বিশাল কোঠা! প্রত্যেক মানুষের মনের ভেতরে থাকা এই সুবিশাল কোঠায় ছোটবেলা থেকে এই মণিকোঠায় সর্বপ্রথম গর্ভধারিণী মা-ই স্থান পেয়ে থাকে। আর যদি ভূমিষ্ট হবার সাথে সাথে গর্ভধারিণী মা মারা যায়, তা হলে যিনি মায়ের আদর দিয়ে ছোট্ট শিশুটিকে লালনপালন করে, তিনিই প্রথমে ছোট্ট শিশুটির মনের মণিকোঠায় স্থান পায়।

তারপর এই মণিকোঠায় স্থান পায় বাবা-সহ নিজের সংসারে থাকা ঘনিষ্ঠজনেরা।

তারপর একটু একটু করে যখন হাঁটি হাঁটি পা পা করে বড় হতে থাকে, তখন এই মণিকোঠায় স্থান দেয়া হয় নিজ গোষ্ঠীর আত্মীয়স্বজনদের। পাশাপাশি স্থান পায় সহপাঠী বন্ধুবান্ধব ও পাড়া প্রতিবেশীর অনেকেই। তাই এই মণিকোঠাকে অন্তরের অন্তস্তল বা মানমন্দিরও বলা হয়।

প্রশ্ন করতে পারেন, তবে কি এই মণিকোঠায় আত্মীয়স্বজন, সহপাঠী বন্ধুবান্ধব ও পাড়া প্রতিবেশী সবাই স্থান পায়? উত্তর হ্যাঁ এবং না দুটোই আসে। যেসমস্ত মানুষ আত্মীয়স্বজন, সহপাঠী, বন্ধুবান্ধব ও পাড়া প্রতিবেশীদের স্থান দিতে পেরেছেন, সে সমস্ত লোকদের বলা হয় মহৎ প্রাণের মানুষ বা মহামানব। আর যারা সবাইকে স্থান দিতে পারে না, তারা নামমাত্র মানুষ বা মানব। এরমধ্যে আমিও কিন্তু একজন। তবে আমি আমার মা-বাবা,ভাই-বোনদের তো মনের মণিকোঠায় স্থান দিয়েই ছিলাম। এদের সাথে আত্মীয়স্বজন, ঘনিষ্ঠ বন্ধুবান্ধব, সহপাঠী ও পাড়া প্রতিবেশীদের মধ্যে অনেকেরই স্বইচ্ছায় স্থান দিয়েছি এবং দেবার চেষ্টাও করেছি। এখন আমার মা নেই, বাবা নেই, ভাই নেই, চার বোনের মধ্যে দু’জনেই নেই। আমিও প্রায় শেষ বয়সে আসে যাবো যাবো বলে ভাবছি! তাই আমার এই মনের মণিকোঠা বা অন্তরের অন্তস্তল বা মানমন্দিরে স্থান দেয়া বা স্থান পাবার সময়-সুযোগ নেই।

কিন্তু আমার মতো মানুষ বা মানবের মধ্যে অনেকেই আছে, তাদের মনের মণিকোঠা একেবারেই সবসময়ের জন্যই খালি। এর কারণ হলো, এ সমস্ত মানুষেরা তাদের মনের মণিকোঠায় বা অন্তরের অন্তস্তল বা মানমন্দিরে কাউকে স্থান দিতে পারেনি। অর্থাৎ তারা কাউকে বিশ্বাসই করে না। পৃথিবীর সবাইকে এ সমস্ত মানুষেরা অবিশ্বাসের চোখেই দেখে থাকে। এমনকি তারা বিখ্যাত ধর্মগুরু বা বিখ্যাত আলেম বা খ্যাতিমান জ্ঞানী গুণীদেরও বিশ্বাস করতে পারে না। পারে না মানে একেবারে বিশ্বাস করেই না। তা হলে তারা নিজের মনের মণিকোঠায় আরেকজনকে স্থান দিবে কীভাবে? পারে না।

এ সমস্ত মানুষেরা শুধু নিজের সন্তানদেরই স্থান দিয়ে থাকে। নিজের সন্তানাদি ছাড়া অন্য কাউকে মনের মণিকোঠায় বা অন্তরের অন্তস্তল বা মানমন্দিরে স্থান বা বসাতে পারে না। তাই তাদের মনের মণিকোঠা বা অন্তরের অন্তস্তল বা মানমন্দিরে থাকা সুবিশাল জায়গা সবসময়ের জন্যই খালি পড়ে থাকে। এর বিনিময়ে কিন্তু তারাও কারোর মনের মণিকোঠায় বা অন্তরের অন্তস্তল বা মানমন্দিরে জায়গা পায় না।

কিন্তু এরা মনে করে থাকে যে, আমি সবার প্রিয় মানুষ! সবাই আমাকে সালাম দেয়, সম্মানও করে। আসলে কি এই অবিশ্বাসী মানুষদের মন থেকে ভালোবেসে সালাম দেয়? মানুষের মনের মণিকোঠায় স্থান দিয়ে কি সম্মান করে? মোটেই না। হয়তো সালাম দেয় অতি ভয়ে। আর নাহয় সম্মান করে কিছু সুবিধা ভোগের জন্য।

এখন আসি আসল কথায়। আসল কথা হলো, লেখাটা লিখলাম এই কারণে যে, বিশ্ব মা দিবসে বিশ্ববিখ্যাত সামাজিক যোগাযোগ সাইট ফেসবুকে দেখি মা-কে নিয়ে কত সম্মানজনক কথা। অনেকেই লিখছে, “আমার পৃথিবী আমার মা”। বাহ্, দারুণ কথা! আসলে কি সত্যি? এমনও-তো হতে পারে যারা এ সমস্ত লেখা বা স্ট্যাটাস দিচ্ছে, তাদের মধ্যে কারো কারোর গর্ভধারিণী মা বৃদ্ধাশ্রমে বসে বসে খোকা খোকা বলে ডাকছে আর কাঁদছে! অথচ মায়ের জন্য ফেসবুকে কত-না মায়াকান্না ভাব দেখাচ্ছে। এমন ভাব দেখানো লাভ কী?

আবার অনেকেই বিশ্ববিখ্যাত সামাজিক যোগাযোগ সাইট ফেসবুকে লিখে থাকে, “তোমাকে আমার মনের মণিকোঠায় স্থান দিয়েছি”। আসলে কি সত্যি? জানি না! সত্যিই জানি না! সত্যি হতেও পারে, মিথ্যাও হতে পারে।

তো যাই হোক, যে যেভাবে পারুন লিখতে থাকুন। আর যদি পারেন নিজের মনের মণিকোঠায় বা অন্তরের অন্তস্তল বা মানমন্দিরে নিজের মা-বাবা, ভাই-বোন, আত্মীয়স্বজন, পাড়া প্রতিবেশী, সহপাঠী, ঘনিষ্ঠ বন্ধুবান্ধবদের বিশ্বাস করে ভালোবেসে স্থায়ীভাবে স্থান দেয়ার চেষ্টা করবেন। কারণ মনের মণিকোঠা বা অন্তরের অন্তস্তল বা মানমন্দিরে ছোট্ট খানি জায়গা নয়। সুবিশাল জায়গা! এতো বড় জায়গায় যেকেউ ইচ্ছে করলে এই পৃথিবীর সবাইকে স্থান বা জায়গা দিতে পারে। যদি স্থান বা জায়গা দেয়ার মতো মন থাকে।

বি:দ্র: লেখাটা পড়ে কেউ মনে কষ্ট নিবেন না। যদি আপনার মানমন্দিরে আঘাত লেগে থাকে, তা হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখে ক্ষমা করে দিবেন।

বিশ্ব মা দিবসের শুভেচ্ছান্তে: নিতাই বাবু।

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
মা থাকুক মনের মণিকোঠায়, 5.0 out of 5 based on 1 rating
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

৪ টি মন্তব্য (লেখকের ২টি) | ২ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ০৯-০৫-২০২২ | ৭:৩১ |

    মনের মণিকোঠা বা অন্তরের অন্তস্তল বা মানমন্দিরে ছোট্ট খানি জায়গা নয়। সুবিশাল জায়গা! এতো বড় জায়গায় যেকেউ ইচ্ছে করলে এই পৃথিবীর সবাইকে স্থান বা জায়গা দিতে পারে। যদি স্থান বা জায়গা দেয়ার মতো মন থাকে। ___ সঠিক। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

    GD Star Rating
    loading...
    • নিতাই বাবু : ১০-০৫-২০২২ | ১৩:৩০ |

      বিশ্ব মাতৃ দিবস শুধু একদিনই। আমি বলতে চাই মা থাকুক প্রতিদিন প্রতিক্ষণ সবার মনের মণিকোঠায়। 

      শুভকামনা থাকলো দাদা। 

      GD Star Rating
      loading...
  2. আলমগীর সরকার লিটন : ০৯-০৫-২০২২ | ১১:৫৮ |

    খুব সুন্দর লেখেছেন কবি নিতাই দা

    সবকিছুই এক উপলব্ধিকর বিষয়

    GD Star Rating
    loading...
    • নিতাই বাবু : ১০-০৫-২০২২ | ১৩:৩১ |

      মা থাকুক বছরের প্রতিটি দিন প্রতিটি মুহূর্ত সকলের মনের মণিকোঠায়। এই প্রত্যাশা নিয়ে আপনাকে বিশ্ব মাতৃ দিবসের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি, দাদা। আশা করি ভালো আছেন সবসময়। 

      GD Star Rating
      loading...