পবিত্র মাহে রমজান মাসে করণীয় কী?

27924 রমজান মাসে কি শুধুই রোজা রাখা? রমজান মাসে কি শুধু সময়মতো সেহরি খাওয়া আর সূর্যাস্তের সময় ইফতার কারা? এসব প্রশ্নগুলো শুধু আমাকে ভাবিয়ে তোলে। আমার মনে হয় সেহরি খাওয়া, রোজা রাখা আর ইফতার করার পাশাপাশি প্রতিটি ধর্মপ্রাণ মুসলমানের করণীয় অনেক কিছু আছে।

আমার বিশ্বাস : বিশ্বনবী যখন পানাহার করতেন, তখন তিনি তাঁরই আশেপাশে থাকা গরীব মানুষের কথা ভাবতেন! খুব ভাবতেন! তিনি ভাবতেন, “আমার আরও আরও গরীব উম্মতদের মাঝে কেউ-না-কেউ হয়তো না খেয়ে আছে”। না খেয়ে থাকা যে কতো কষ্ট, তা মহানবী খুব ভালো করে বুঝতে পারতেন। এই ভাবনা থেকেই হয়তো বছরে বারো মাসের মধ্যে শুধু এক মাস প্রতিদিন একবেলা করে পানাহার বর্জন করার আদেশ করার জন্য মহান সৃষ্টিকর্তা’ ( আল্লাহতালা) কাছে আবেদন করলেন। আর মহানবীর সেই উপলব্ধি, সেই ভাবনা, সেই আদেশ সেই আবেদন তখনই মহান সৃষ্টিকর্তা ( আল্লাহতালা) সম্মতি প্রধান করে মুসলিম জাহানের সকল ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জন্য ধর্মীয় আইনে পরিণত করে মাহে রমজান মাস সিয়াম সাধনার (রোজা) মাস হিসেবে পবিত্র ‘কুরআন’ এ নাজিল করেন।

মহানবীর উপলব্ধি ও ভাবনা : নবীজি প্রতিদিন যখনই যেকোনো কিছু পানাহার করতেন, তখনই তিনি আশেপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা গরীব ক্ষুধার্ত মানুষের কথা ভাবতেন! তিনি ভাবতেন, হয়তো আমার উম্মত কেউ-না-কেউ না খেয়ে ক্ষুধার জ্বালায় ছটফট করছে। হয়তো আমার উম্মতদের মধ্যে কারোর-না-কারোর পুরো পরিবারই না খেয়ে আছে। যারা না খেয়ে আছে তাদের মুখে খাবার তুলে দেয়াটাও তো আমাদের মধ্যে যাদের অনেক আছে, তাদের সকলের কর্তব্য দায়িত্ব। কিন্তু শুধু মুখে মুখে বললে কেউ-না-কেউ হয়তো এর গুরুত্ব দিবে না। তাই তিনি মহানবী মহান সৃষ্টিকর্তা’র ( আল্লাহতালা) কাছে বলে-কয়ে এই হিজরি বারোমেসে মধ্যে একটা মাস সকল উম্মতের জন্য সিয়াম সাধনা’র (রোজা) পাশাপাশি দানখয়রাতের মাস হিসেবে ধর্মীয় আইনে পরিণত করেন। যাতে প্রতিদিন মাত্র একবেলা পানাহার না করে তিনবেলা যারা পানাহার করতে পারছে না, তাদের কষ্টটা অনুভব করতে পারে। ক্ষুধার জ্বালা যে কী, তা যেন মহানবী’র সকল উম্মতগণ বুঝতে পারে।

কিন্তু সেই বুঝ কি কেউ বুঝতে পারছে? নবীজির সেই অনুভব কি কে অনুভবে আনতে পারছে? অনেকেই পুরো রমজান মাসে সিয়াম সাধনা (রোজা) করে থাকে। নিয়মিত সেহরি খাচ্ছে বা করছে। নিয়মিত পাচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করছে। সূর্যাস্তের সময় বা ইফতারের সময় নিয়মিত ইফতার করছে। ইফতার পার্টির আয়োজন করছে। নিয়মিত তারাবীহ নামাজ আদায় করছে।

কিন্তু তারা কি একবার ভাবছে যে, অনেকে রোজা রেখেও সূর্যাস্তের সময় ইফতার করতে পারছে না, তাদের জন্য যতসামান্য ইফতার সময়মতো পাঠিয়ে দেই? কেউ কি ভাবছে যে, আমাদের চারপাশে অনেক অসহায় মানুষেরা দিনকেদিন না খেয়ে দিন-রাত পার করছে, তাদের জন্য কিছু একটা করি? আমাদেরই পাশের বস্তির শিশুরা ঈদের দিন টাকার অভাবে নতুন জামা-কাপড় পরতে পারবেন না, তাদের জন্য সমমূল্যে কিছু জামা-কাপড় কিনে পাঠিয়ে দেই?

তাই আমি মহানবী বিশ্বনবী’র চিন্তা-চেতনা, সঠিক ভাবনা, সঠিক উপলব্ধি নিয়ে ভাবি! অনেককে দেখি মহানবী’র মুখমণ্ডলে থাকা পবিত্র দাঁড়ি অনুসরণ করে নিজেও দাঁড়ি রাখে। মহানবী’র পবিত্র পোশাকপরিচ্ছদ অনুসরণ করে নিজেও সেইরকম পোশাকপরিচ্ছদ ব্যবহার করে। এতে নাকি ধর্মীয় সুন্নত। পবিত্র কুরআন শরীফ বুকে রেখে মহানবী’র খাস উম্মত মনে করে করে মজলিশে ময়দানে গলা ফাটিয়ে নবীজি’র আদেশ-উপদেশ প্রচার করে। তাঁরাও কি তাঁদের গরীব আত্মীয়স্বজন ও না খেয়ে থাকা মানুষের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ কিছু করে থাকে? সিয়াম সাধনা রোজার মাস তো শুধু বছরের একটা মাস মাত্র। আরও তো এগারোটা মাস আছে। সেসব মাসেও তো আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য দরিদ্র অসহায় গরীব মানুষ। যদি ধর্মপ্রাণ মুসলমান আর মহানবী’র উম্মত হয়ে থাকেন, তা হলে শুধু মাহে রমজান মাসই নয় বরং বছরের পুরো বারোমাসই সমাজের অসহায় দরিদ্র গরীব মানুষের পাশে দাঁড়ানোটা কি আপনার দায়িত্ব কর্তব্য নয়?

রমজান মাসে কি শুধুই রোজা রাখা? রমজান মাসে কি শুধু সময়মতো সেহরি খাওয়া আর সূর্যাস্তের সময় ইফতার কারা? হ্যাঁ, তা ঠিক আছে। কিন্তু সিয়াম সাধনা’র পাশাপাশি আপনার চারপাশে থাকা দরিদ্র গরীব মানুষগুলোর কথাও ভাবা উচিৎ বলে মনে করি। আপনার যা আছে তা থেকে কিঞ্চিৎ পরিমাণ কিছু আপনার গরীব আত্মীয়স্বজনদের দিয়ে সাহায্য করুন। যদি আপনি সম্পদশালী হয়ে থাকেন, তাহলে তো দয়াল নবী’র আদেশ আপনি অক্ষরে অক্ষরে পালন করবেন, এমনটাই আশা রাখি।

মনে রাখা ভালো যে, এই মাহে রমজান মাস হলো বরকতের মাস। এই বরকতের মাসে যত দান করা যায়, ততই সওয়াব। যতই বেশি দানখয়রাত করা যায়, ততই নাকি আখেরাতে এবং এই দুনিয়ায় জীবদ্দশায় সুখশান্তি ভোগ করা যায়।

বি:দ্র: আমি একজন সনাতন ধর্মাবলম্বী। আমি হিন্দু। আমার এই লেখায় যদি কোনো ভুল হয়ে থাকে, তা হলে অপমান অপদস্ত না করে ক্ষমা করে দিবেন।

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
পবিত্র মাহে রমজান মাসে করণীয় কী?, 5.0 out of 5 based on 1 rating
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

৫ টি মন্তব্য (লেখকের ২টি) | ২ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ২৫-০৪-২০২২ | ১৭:৫৭ |

    এই মাহে রমজান মাস হলো বরকতের মাস। এই বরকতের মাসে যত দান করা যায়, ততই সওয়াব। যতই বেশি দানখয়রাত করা যায়, ততই আখেরাতে এবং এই দুনিয়ায় জীবদ্দশায় সুখশান্তি ভোগ করা যায়। ____ আলোচনার এই অংশটিও যথেষ্ঠ গুরুত্বপূর্ণ। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

    GD Star Rating
    loading...
    • নিতাই বাবু : ২৬-০৪-২০২২ | ১১:৪২ |

      মাহে রমজান নিয়ে লাখাটা লিখলাম খুবই ভয়ে ভয়ে। তো এখন দেখলাম লেখাটা আমার সার্থক হয়েছে, দাদা। শুভকামনা থাকলো। 

      GD Star Rating
      loading...
      • মুরুব্বী : ২৭-০৪-২০২২ | ৯:৪৮ |

        আপনার জন্যও একরাশ শুভ কামনা মি. নিতাই বাবু। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

        GD Star Rating
        loading...
  2. আলমগীর সরকার লিটন : ২৬-০৪-২০২২ | ৯:৩৬ |

    খুবি সুন্দর কথা বলেছেন আসলে এক মানুষ অনেক বদলে গেছে এসবের কথা আর ভাবে না যত ফেসাত কারী নিয়ে আছে——আপনাকেউ অনেক ধন্যবদা জানাই ভাল ও সুস্থ থাকবেন কবি নিতাই দা

    GD Star Rating
    loading...
    • নিতাই বাবু : ২৬-০৪-২০২২ | ১১:৪৪ |

      লেখায় আরও কিছু প্রকাশ করার ইচ্ছে ছিলো, দাদা। বেশিকিছু লিখিনি লেখার শব্দ সংখ্যা বেড়ে যায় ভেবে। তো যাক, এতটুকুতেই বেশ হয়েছে বলে মনে হয়। শুভকামনা থাকলো দাদা। 

      GD Star Rating
      loading...