যেসব কারণে সনাতন ধর্মে মুখাগ্নি করা হয়!

images (12)_1623182876946

মুখাগ্নি বা অন্ত্যোষ্টি বা অন্ত্যোষ্টিক্রিয়া হলো, জীবনের শেষ যজ্ঞ। অন্ত+ইষ্টি=অন্ত্যোষ্টি বা অন্ত্যোষ্টিক্রিয়া। অন্ত মানে শেষ আর ইষ্টি মানে যজ্ঞ আর ক্রিয়া মানে কার্য। আমরা জানি আমাদের সুপ্রাচীন পূর্বপুরুষদের বৈদিক সমাজ ছিল যজ্ঞপ্রধান সমাজ। জীবনের শুরু থেকে শেষাবধি সবই হতো যজ্ঞের মাধ্যমে ঈশ্বরকে উদ্দেশ্য করে। অশ্বমেধ যজ্ঞ, অগ্নিহোত্র যজ্ঞ ইত্যাদি যজ্ঞে ইশ্বরের উদ্দেশ্য হবি উৎসর্গ করা হতো।

এ হলো ঈশ্বরের দেয়া জীবন ও দেহ দ্বারা ঈশ্বরের সৃষ্ট প্রকৃতির উপাদান সমুহ ভোগ করার প্রেক্ষিতে ঈশ্বরের উদ্দেশ্য কৃতজ্ঞতাস্বরূপ তার উপাসনা করা। তাই অন্ত্যোষ্টি তথা জীবনের শেষ যজ্ঞে ঈশ্বর প্রদত্ত দেহ ঈশ্বরের উদ্দেশ্যেই হবি রূপে উৎসর্গ করা। এটা সত্যিই একটা চমৎকার ব্যাপার!

কথায় আছে ও সবারই জানা আছে যে, “জন্মিলে মরিতে হয়” এ কথা ধ্রুব সত্য। এটা আমরা অস্বীকার করতে পারি না। এ পৃথিবীতে যে কয়টি ধ্রুব সত্য আছে তারমধ্যে অন্যতম সত্য হলো প্রাণী বা জীবের মৃত্যু। যে প্রাণী জন্মগ্রহণ করবে, প্রকৃতির নিয়মানুযায়ী তাকে একসময় মরতেই হবে। অর্থাৎ দেহ ত্যাগ করতে হবে।

এই দেহ ত্যাগের জন্য সনাতন ধর্মের অনুসারীরা বিশ্বাস করে যে, মানুষ মৃত্যুর পর স্বর্গবাসী হয়। অর্থাৎ দেবলোকে যায়। কিন্তু, তিনি স্বর্গে বা দেবলোকে যাবেন কীভাবে?

বৈদিক নিয়মানুসারে দেবলোকে বা স্বর্গলোকে পাঠাতে হলে দেবতাদের পুরোহিত অগ্নিতে আহুতি দিতে হয়। অগ্নিদেবই সে অর্চনা বা আহুতি দেবলোকে নিয়ে যান। কাজেই যিনি মৃত্যুবরণ করেছেন বা দেহ ত্যাগ করেছেন তার প্রাণবায়ু অগ্নিদেবকে আহুতি না দিলে তিনি কি করে স্বর্গবাসী হবেন? প্রাণবায়ু মুখ দিয়ে বের হয় বলে মুখে অগ্নিসংযোগ করে মন্ত্রপাঠ করতে হতে হয়।

“ওঁ কৃত্বা তু দুষ্কৃতং কর্মং জানতা বাপ্য জানতা।
মৃত্যুকাল বশং প্রাপ্য নরং পঞ্চত্বমাগতম্
ধর্মাধর্ম সমাযুক্তং লোভ মোহ সমাবৃতম্
দহেয়ং সর্বগাত্রানি দিব্যান্ লোকন্ স গচ্ছাতু”

(ক্রিয়াকান্ড বারিধি)

অনুবাদ: তিনি জেনে বা না জেনে অনেক দুষ্কর্ম করে থাকতে পারেন। কালবশে মানুষ মৃত্যুবরণ করে থাকে। এ দেহ ধর্ম, অধর্ম্, লোভ, মোহ প্রভৃতি দ্বারা আচ্ছাদিত ছিল। হে অগ্নিদেব, আপনি তার সকল দেহ দগ্ধ করে দিব্যলোকে নিয়ে যান।

সনাতন ধর্মাবলম্বী কেউ মৃত্যুবরণ করলে মরদেহ আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হয়। যা সনাতন ধর্মে বলা হয় শবদাহ। এর আধ্যাত্মিক কারণ হলো: সনাতন ধর্মের অনুসারীরা পুনর্জন্মে বিশ্বাসী। এই ত্রিতাপদগ্ধ সংসারে পুনরায় জন্মগ্রহণ করে মানুষ দুঃখ-কষ্ট ভোগ করুক এটা কেউ চায় না।

যে দেহে তিনি এতদিন বাস করেছেন, তাকে সাজিয়ে গুছিয়ে রেখেছেন, পৃথিবীর যাবতীয় সুখের স্বাদ তাকে দিয়েছেন, ঐ দেহের প্রতি আকর্ষণ ও মায়া থাকা স্বাভাবিক। মনে করা হয় মৃতব্যক্তি তার দেহের প্রতি আকর্ষণে পুনঃ দেহ ধারণে তার আকাঙ্ক্ষা জাগতে পারে। তাই ঐ আকাঙ্ক্ষা দূর করার উদ্দেশেই আকর্ষণের বস্তু দেহটাকে পোড়ানো হয়।

সামাজিক কারণ: আর্য ঋষিদের ভবিষ্যৎ চিন্তা এতে প্রতিফলিত হয়েছে। মানুষ সৃষ্টি হবে এবং এমন একদিন আসতে পারে যখন স্থানাভাব দেখা দেবে। মানুষের দেহ না পুড়িয়ে মাটিতে পুঁতে রেখে দিলে ক্রমশ মাটিতে রাখার জায়গার অভাব দেখা দিতে পারে। আবার মানুষ মরণশীল। যেকোনো একভাবে না একভাবে মানুষকে মরতে হয়। এরমধ্যে বেশিরভাগ মৃত্যু হয় রোগে। এইসকল রোগব্যাধিতে মরা মরদেহ মাটিতে পচন ধরলে পরিবেশের উপর বিভিন্ন রোগজীবাণু ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। এসব চিন্তা মাথায় রেখেই হয়তো আর্য ঋষিগণ শবদেহ পোড়াবার বিধি দিয়েছেন।

পরিশেষে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জেনে রাখা ভালো:
পুরুষের মৃত্যু সংবাদ শ্রবণে বলুন– “দিব্যান্ লোকান্ স গচ্ছাতু”।
কোনও নারীর মৃত্য সংবাদ শ্রবণে বলুন– “দিব্যান্ লোকান্ সা গচ্ছাতু”।

সোর্স: sonatonvabona

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

৪ টি মন্তব্য (লেখকের ২টি) | ২ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ০৯-০৬-২০২১ | ৮:০৩ |

    পোস্টে যে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে; বিষয়টির তাৎপর্য জানা হয়ে উঠেনি এতো কাল। আজকে জানা হলো। পাঠের সুযোগ দানে অসংখ্য ধন্যবাদ মি. নিতাই বাবু। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

    GD Star Rating
    loading...
    • নিতাই বাবু : ০৯-০৬-২০২১ | ১৯:২২ |

      অনেকদিন ধরেই ভাবছিলাম আমাদের হিন্দু ধর্মের মরদেহ দাহ করার আগেই কেন মুখাগ্নি করা হয়। তো নিজের সাংসারিক ঝামেলার কারণে আর সময়-সুযোগ হচ্ছিল না। আজ কয়েকদিন ধরে একটু নিরিবিলি আছে বিধায়, লেখাটা প্রাণের নীড়ে শেয়ার করলাম। পড়েছেন জেনে অত্যন্ত খুশি হলাম। আশা করি এভাবেই উৎসাহ অনুপ্রেরণা দানে বাধিত করবেন। মন্তব্য দানে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আশা করি ভালো থাকবেন। 

      আর একটা কথা! আমি কিন্তু কথা দিয়েও কথা রাখতে পারিনি। তবে কথা যে রাখবো না, তা কিন্তু নয়। ইতোমধ্যেই আমি আমার কথা কাজে রূপান্তর করবে বলে আশাবাদী। শুভকামনা থাকলো। 

      GD Star Rating
      loading...
  2. আলমগীর সরকার লিটন : ০৯-০৬-২০২১ | ১০:৫৪ |

    বেশ কিছু জানলাম প্রিয় নিতাই দা

    কেমন আছেন 

    GD Star Rating
    loading...
    • নিতাই বাবু : ০৯-০৬-২০২১ | ১৯:২৬ |

      হ্যাঁ দাদা, আমি আছি আপনাদের আশীর্বাদে সেই আগের মতনই। অনেকদিন পর প্রাণের নীড়ে আপনাদের মাঝে আবার ফিরে এলাম। আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছে। আপনি-সহ সবার জন্য শুভকামনা থাকলো, দাদা। 

      GD Star Rating
      loading...