অনেক সময় খবরের কাগজে, আর ফেসবুক থেকে জানা যায়, কন্যা সন্তান নাকি অনেকেরই মাথার বোঝা। আবার সময় সময় শোনাও যায়। মাঝে-মাঝে স্বচক্ষে দেখাও যায় কন্যা সন্তান জন্মদানে সদ্যজাত শিশুটি মায়ের উপর কত-না অত্যাচার নেমে আসে নির্বিচারে! আবার অনেকেই বিয়ে-শাদি করার পর স্ত্রীর গর্ভে থাকা প্রথম সন্তান ছেলে হবে না মেয়ে হবে, তা নিয়েও ভাবতে থাকে; মাসের পর মাস! যাঁদের বর্তমান যুগের আল্ট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষা করানোর মতো সাধ্য থাকে, তাঁরা সন্তান ভূমিষ্ঠ হবার আগেই জেনে নেয় ছেলে না-কি মেয়ে হবে।
আল্ট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষা করার পর তাঁদের ভাবনা অনেকাংশে কমে যায়। আর যাদের আর্থিক দুরাবস্থা তারা মনের ভেতরে ছেলে নাকি মেয়ে, মেয়ে নাকি ছেলে জপতেই থাকে। আবার কারোর সহজ-সরল স্ত্রী পরপর দুটি মেয়ে সন্তান জন্ম দিলেই শ্বশুরালয় থেকে শুনতে হয় অনেক কটুবাক্য। আবার অনেক মেয়েদের উপর নেমে আসে অমানুষিক নির্যাতন। কোনো-কোনো মেয়ে পরপর দু-তিন বার কন্যা সন্তান জন্ম দিলে স্বামী কর্তৃক, শ্বাশুড়ি কর্তৃক নির্যাতনের শিকার হয়ে স্বামীর সংসার ছেড়ে পিত্রালয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। অনেক মেয়েরা মিথ্যে অপবাদ শুনতে শুনতে অতিষ্ঠ হয়ে নিজের জীবনের উপরও কষাঘাত শুরু করে স্বেচ্ছায়। অনেক মেয়েরা আত্মহত্যার পথও বেছে নেয়, স্বামীর কটুকথায়।
আসলে যে সবকিছুর মালিক মহান সৃষ্টিকর্তা, তা সুস্থ মস্তিষ্কে একবার ভেবেও দেখে না, আমার মতন এমন অনেক বোকারাম পুরুষেরা। অনেক পুরুষ মানুষই সন্তান জন্মদানের সব দায়দায়িত্ব বিয়ে করা সহজ-সরল একটা মেয়ের উপরই বাতলে দেয়। তারা মনে করে সন্তান জন্মদানে স্ত্রী বা বিবাহিত নারীর ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি। আসলে কিন্তু তা নয়! সন্তান দেওয়া না দেওয়া একমাত্র মহান সৃষ্টিকর্তার দয়ার উপরই নির্ভর করে বলে আমি মনে করি। তিনি মহান সৃষ্টিকর্তা কাউকে পরপর ৬ থেকে ৭ টি ছেলে সন্তানও দিয়ে থাকে।
যার ৬ থেকে ৭ টি ছেলে, সেই ব্যক্তি একটা কন্যা সন্তানের জন্য মহান সৃষ্টিকর্তার দরবারে কত-না প্রার্থনা করে। কিন্তু না, মহান সৃষ্টিকর্তা যাকে যা দেবার তা-ই দিয়ে থাকে। আবার যাদের ঘরে পরপর ৬ থেকে ৭ টি মেয়ে থাকে, তারা একটা ছেলের জন্য কতরকমের চেষ্টাই না করে থাকে। কতো মাজারে মন্দিরে গিয়ে মানত করে। কিন্তু না, তাতেও কাজ হয় না। যার ভাগ্যে যা আছে, আর মহান স্রষ্টা যাকে যা দেওয়ার দরকার মনে করে তা-ই হয়ে থাকে। একসময় আমি নিজেও কন্যা সন্তান হওয়াতে অঝোরে কেঁদেছিলাম। তবে আমার স্ত্রী কন্যা সন্তান জন্ম দেওয়ায় তাকে একটা কটুবাক্যও উচ্চারণ করিনি। কন্যা সন্তান ভূমিষ্ঠ হবার পর আমি শুধু কেঁদেছিলাম নিজে একজন সহায়সম্বলহীন হওয়াতে।
আমি বিয়ে করেছিলাম ১৯৮৬ সালে। বাংলাবর্ষে পহেলা আষাঢ়। বিয়ে করেছিলাম একজন খেঁটে খাওয়া গরিবের মেয়েকে। তা-ও আবার গরিবের মেয়েটিকে নিজের পছন্দমতো জেনেশুনেই জীবনসঙ্গিনী করেছিলাম। ১৯৮৯ সালে আমাদের সংসারের এক নতুন অতিথির আগমণ ঘটে। তখন আমার মা জীবিত ছিলেন। কথায় আছে, “মায়ে রাখে মেয়ের খবর। বাবা রাখে ছেলের খবর!” যখন আমার সহধর্মিণীর প্রসবব্যথা উঠে, তখন বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা। আমি ছিলাম আমার কাজে। আমার সহধর্মিণীর প্রসবব্যথার অবস্থা টের পেয়ে আমার মা তাড়াতাড়ি বাড়িওয়ালার স্ত্রীর কাছ থেকে ১০০/= টাকা ধার করে পুত্রবধূকে নিয়ে চলে গেলেন নারায়ণগঞ্জ পুরাতন ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে। অথচ আমি জানি না। আমি প্রতিদিনের মতো রাত ৮টায় ডিউটি শেষ করে সমবয়সী বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে রাত ১১টায় বাসায় ফিরি। বাসায় গিয়ে শুনি, মা আমার সহধর্মিণীকে নিয়ে ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে গেছে।
ওমনি আর দেরি না করে আমি দৌড়ে গেলাম, আমার মালিকের কাছে। উনাকে বলে-কয়ে কিছু টাকা নিয়ে চলে গেলাম ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে। গিয়ে দেখি মা আমার জন্য অপেক্ষা করে হাসপাতালের বারান্দায় বসে আছে। মাকে বসা দেখেই দৌড়ে গিয়ে মাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘মা তুমি এখানে এভাবে বসে আছো কেনো?’ মা বললো, ‘তোর অপেক্ষায় বসে আছি বাবা। আয় ভেতরে আয়।’ জিজ্ঞেস করলাম, ‘তোমার বউমা কোথায়?’ মা বললো, ‘ভেতরেই আছে। তোর মেয়ে হয়েছে বাবা।’
মায়ের মুখে মেয়ে হবার কথা শুনেই আমি কাঁদতে লাগলাম। আমার চোখে জল দেখে মা জিজ্ঞেস করলো, ‘ওরে অভাগা, তুই কাঁদিস কেন? এতো খুশির খবর! তোর তো হাসার কথা। তুই না হেসে কাঁদছিস?’ বললাম, ‘মা আমি কাঁদছি আগামী দিনের চিন্তা করে, মা। মেয়ে যখন বিয়ের উপযুক্ত হবে, আমি অধম মেয়ে বিয়ে দিবো কী করে, মা?’ মা বললো, ‘আরে অভাগা, তুই সেই চিন্তা করিস নে। যার চিন্তা সে-ই করবে। চল, ভেতরে চল। সন্তানের মুখ দেখে ভগবানকে ধন্যবাদ জানিয়ে মেয়ের দীর্ঘায়ু প্রার্থনা কর।’ এই বলেই মা আমার হাতে ধরে টেনে হাসপাতালে শুয়ে থাকা আমার সহধর্মিণীর কাছে নিয়ে গেলো। গিয়ে দেখি, আমার সহধর্মিণীর পাশে আমার সদ্যোজাত কন্যা সন্তানটি শুয়ে আছে। কিন্তু আমি তখনও কাঁদছিলাম।
মা আমার সদ্যোজাত মেয়েটিকে কোলে নিয়ে আমার সামনে এনে বললো, ‘নে কোলে নে! ওকে আশীর্বাদ কর।’ আমি আমার সদ্যোজাত কন্যা সন্তানটিকে কোলে নিয়ে মনে মনে মহান সৃষ্টিকর্তাকে বললাম, ‘হে প্রভু, তুমিই দিয়েছো, তুমিই একটা বিহিত করে দিও। আমি দয়াল অধম। মেয়ে বিয়ে দেবার মতো আমার কোনও সাধ্য নেই। যা করার তুমিই করবে, প্রভু।’ এই বলেই মেয়ের দু’গালে দুটো চুমু দিয়ে আবার আমার মায়ের কোলে দিয়ে দিলাম।
পরদিন সকালবেলা হাসপাতাল থেকে রিলিজ দিলো। হাসপাতালের বিল হলো ২০০/= টাকা। আমার সাথে আছে মাত্র তিনশো টাকা। এই তিনশো টাকা থেকে দুইশো টাকা হাসপাতালের বিল পরিশোধ করলাম। কিন্তু নার্স ও ডাক্তারদের বকসিস দেওয়া বাদ ছিলো! তাঁরা কিছু বকসিস চাইলে তাঁদের দিয়ে দিলাম একশো টাকা। তখন আমি হয়ে গেলাম খালি! মানে পকেট শূন্য! তারপর মা’র কাছে যে কয় টাকা ছিলো, তা দিয়ে কোনরকম বাসায় ফিরে গেলাম।
মেয়ে আস্তে আস্তে বড় হতে লাগলো। আমার মা একসময় না ফেরার দেশে স্বর্গীয় হলো। এরপর ১৯৯১ সালে আরও এক ছেলে আমাদের সংসারের আসলো। মেয়ে এসএসসি পাস করলো। ছেলেও নবম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হলো। আমি তখন পাবনা সিরাজগঞ্জ বেলকুচি। ফরিদপুর থেকে মেয়েকে দেখতে এলো। আমার কাছে খবর পৌঁছতেই আমি দ্রুত নারায়ণগঞ্জ ফিরে আসি। ছেলে পক্ষের কোনও দাবিদাওয়া ছিলো না। ছেলে পক্ষের কথা, যেভাবে পারি সেভাবেই মেয়েকে উঠিয়ে দিতে পারলেই হলো। তারপরও তো কিছু-না-কিছু লাগেই। হিন্দু বিয়ে বলে কথা। কিন্তু তখন আমার কাছে কানাকড়িও ছিলো না। সম্বলের মধ্যে ছিলো, নিজের সহধর্মিণী খেয়ে-না-খেয়ে মেয়ের জন্য আট আনা স্বর্ণের কানের দুল। সেটাই ছিলো একমাত্র সম্বল।
আমার কিছু শুভাকাঙ্ক্ষী ছিলো। আমি তাঁদের শরণাপন্ন হলাম। বিস্তারিত খুলে বললাম। তাঁরা কোনও প্রকার চিন্তা করতে বারণ করলেন। তারপরও কি চিন্তা দূর হয়? চিন্তায় এদিক-ওদিক ঘুরতে থাকি। একসময় ব্রাক সমিতি থেকে ৪০,০০০/=টাকা কিস্তিতে ওঠালাম। আমার শুভাকাঙ্ক্ষীরা জোগাড় করে দিলো মেয়ের হাতের শাখা বাঁধাই করে। নিজের বড় ভগ্নিপতি দিলো হাতের পলা। ভাগ্নি জামাই দিলো মেয়ের গলার হার। দুই শালা দিলো ছেলের আঙটি। এভাবে মিল-তাল করে বিয়ের কথা পাকাপাকি করে ফেললাম। দুইশো লোকের আয়োজনও করলাম।
তখন ছিলো বৃষ্টির মৌসুম। আমরা যেখানে ভাড়া থাকতাম, সেই জায়গাটা হলো একটা সরকারি মিলের শ্রমিকদের পরিত্যক্ত কোয়ার্টার। অনেক বড় জায়গা জুড়ে কোয়ার্টার। জায়গাটি ছিলো নিচু জায়গা। একটু বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হতো। বিয়ের বাকি এক সপ্তাহ। শুরু হলো বৃষ্টি আর বৃষ্টি। তুমুল বৃষ্টি! তা-ও আবার একাধারে রাতে দিনে চারদিন। পুরো এলাকা হয়ে গেলো বন্যা কবলিত। বিয়ের বাকি তিনদিন। বিয়ের কেনাকাটাও প্রায় শেষপর্যায়ে। ঘরে হাঁটুপানি। তার উপর আবার বিদ্যুতের নিশ্চয়তা ছিলো না। একবার বিদ্যুৎ চলে গেলে, আবার কখন আসবে, তার নিশ্চয়তা ছিলোই না। মানে বিদ্যুৎ যখনই চলে যায়, ফিরে আর আসে না। আসে আবার চলে যায়, এ অবস্থাই চলতে থাকে। আমি আমার মহান সৃষ্টিকর্তাকে ডাকতে লাগলাম, “হে প্রভু তুমি আমার সহায় হও! তুমি ছাড়া আমার কেউ নেই!” মহান সৃষ্টিকর্তা নিশ্চয়ই আমার ডাক শুনলেন। আমার প্রার্থনা মঞ্জুর করলেন।
রাত পোহালেই বিয়ের দিন। বৃষ্টি নেই। এমনকি আকাশে একছিটে কালো মেঘ পর্যন্ত নেই! বিদ্যুৎও আগের মতো আসে– যায় না। মানে লোডশেডিং বলতে নেই! আমার প্রতিবেশী সবাই তখন বলতে লাগলো, “নিতাই বাবু’র মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে মনেহয় জেনারেটর চালু করে রেখেছে! আর মহান সৃষ্টিকর্তা হয়তো নিজেই বৃষ্টি বন্ধ করে রেখেছে।” এসব ধারণা ছিলো আমার আশে-পাশে থাকে পরিবারগুলোর। অথচ ক’দিন আগেও অনেকে বলেছিল, ‘যেভাবে বৃষ্টি আর লোডশেডিং, এভাবে চলতে থাকলে নিতাই বাবুর মেয়ের বিয়ে পিছিয়ে যাবে।’ কিন্তু না, মহান সৃষ্টিকর্তা আমার সহায় ছিলো। তাই মহান সৃষ্টিকর্তা বিয়ের আগের দিন থেকেই আমার মেয়ের বিয়ের কার্যসম্পাদন হওয়ার জন্য সবকিছু ঠিক করে দিয়েছেন। শুধু বাদ রেখেছিলেন বাজনা। তবে বাজনাও কিন্তু মুহূর্তেই জোগাড় হয়ে গিয়েছিলো।
অনেকেরই জানা আছে যে, আমাদের হিন্দু বিয়ে বাজনা ছাড়া হয়-ই না। কিন্তু আমি কোথাও বাজনাওয়ালা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। বাজনার ব্যবস্থা করতে না পেরে একপর্যায়ে বাজনা ছাড়াই মেয়ের বিয়ের কার্যসম্পাদন করার চিন্তাভাবনা করে রেখেছিলাম। হঠাৎ পরিচিত এক লোকের সাথে সাক্ষাৎ! তার কাছে বাজনার ব্যাপারে দুঃখপ্রকাশ করতেই, তিনি তার হাতে থাকা মোবাইলে কল দিয়ে বললেন, ‘আমার এক পরিচিত লোকের মেয়ের বিয়ে। যেভাবে হোক তাড়াতাড়ি চৌধুরীবাড়ি এসে দেখা করো।’ আমাকে বললো, ‘দাদা এখানেই একটু অপেক্ষা করুন, বাজনাওয়ালা আসছে।’ উনার কথামতো সামনে থাকা এক চা-দোকানে গিয়ে দু’জনে বসলাম। চা-পান করতে করতে রিকশায় চড়ে বাজনাওয়ালা আমাদের সামনে এসে হাজির হলেন। বাজনাদারকেও চা-পান করালাম। এরপর বলে-কয়ে ২,৫০০/=টাকায় বাজনা ঠিক করলাম। অধিবাসের দিন বিকালবেলা থেকে তারা আমার বাসায় আসবেন। বিয়ের বাজনা বাজিয়ে পুরো এলাকা সরগরম করে তুলবে।
বিয়ের দিন সকালবেলা বাবুর্চি আসলেন। রান্না-বান্নার কাজ শুরু করলেন। আমি গেলাম পরিচিত এক চা-দোকানে চা-পান করার জন্য। এমন সময় আমার বড়’দা আমার সামনে এসে কাঁদা কাঁদা স্বরে বললো, ‘ধুতরা গোটা (ধুতরা গাছের ফল) জোগাড় করতে পারিনি!’ হায়! হায়! বলে কী! হিন্দু বিয়ের কার্যসম্পাদন করার জন্য ৮টা ধুতরা গোটার প্রয়োজন হয়। এই ধুতরা গোটা কেটে দুভাগ করে ভেতরের বীচিগুলো ফেলে দিয়ে তা দিয়ে সরিষার তেলের প্রদীপ জ্বালানো হয়। তাই ধুতরা গোটা ছাড়া তো পুরোহিতের কাজই হবে না। মোটকথা বিয়ের কাজই অসম্পন্ন থেকে যাবে।
দাদার ব্যর্থতার কথা শুনে আমি তখন মনে মনে ভাবতে লাগলাম! এমন সময় যেই চা’র দোকানে বসে চা-পান করছিলাম, সেই দোকানের মালিকের নাম জহির মিয়া। জহির ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আচ্ছা জহির ভাই, ক’দিন আগেও আপনার বাসার সামনে কয়েকটা ধুতরাগাছ দেখেছিলাম। তা কি আছে?’ জহির ভাই বললো, ‘আরে দাদা, এইতো দুইদিন আগে সব ধুতরাগাছ উপরে ফেলে বাসার সামনেই ফেলে রেখেছি। আপনি একটু কষ্ট করে আমার বাসার সামনে গিয়ে দেখুন, ধুতরা গাছে গোটা আছে কিনা!’ সাথে সাথে বড়দাদা-সহ আমি গেলাম জহির ভাইয়ের বাসায় সামনে। গিয়ে দেখি কয়েকটা ধুতরাগাছ এদিক-সেদিক হয়ে পড়ে আছে। তখন গাছগুলো ওলট-পালট করে দেখি গোটা আছে। তা-ও আবার আকারে একটু বড়সড় গোটা। খুঁজতে লাগলাম! এক-এক করে ৮টা ধুতরা গোটা-ই পেলাম। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো, চার-পাঁচটা গাছে মধ্যে কেবল ৮টা গোটা-ই ছিলো। আর একটা গোটাও গাছগুলোতে ছিলো না।
ভাবলাম, মহান সৃষ্টিকর্তা হয়তো আমার মেয়ের বিয়ের জন্যই এই গোটাগুলো রেখে দিয়ে ছিলো। যা এখন আমি খুঁজে পেলাম। মহান সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করে গোটাগুলো সাথে নিয়ে জহির মিয়ার চা-দোকানে এসে বসলাম। জহির ভাই জিজ্ঞেস করলো, ‘পেয়েছেন, দাদা?’ বললাম, ‘হ্যাঁ জহির ভাই, পেয়েছি। তা-ও আবার আমার প্রয়োজন মতোই পেয়েছি।’ জহির ভাই বললো, ‘তা ঠিক বুঝলাম না, দাদা।’ বললাম, ‘আমার মেয়ের বিয়ে কার্যসম্পাদন করার জন্য দরকার ৮টা গোটা। আপনার বাসার সামনে ফেলে রাখা গাছগুলোতে এই ৮টা গোটাই ছিলো। তা যেন মহান সৃষ্টিকর্তা নিজে আমার মেয়ের বিয়ের কার্যসম্পাদনের জন্যই রেখে দিয়েছিলেন। মহান সৃষ্টিকর্তাকে কৃতজ্ঞচিত্তে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
এরপর ধুতরা গাছের গোটাগুলো বাসায় নিয়ে গেলাম। রাতে বরযাত্রী আসলো। আমার ছেলে বোনের বিবাহ অনুষ্ঠানের ভিডিও করে রাখার জন্য ভিডিও ক্যামেরা আনলো। পুরোহিত আসলো। নিমন্ত্রণ দেওয়া লোকের সমাগম ঘটলো। খাওয়া-দাওয়া হলো। তারপর মহান সৃষ্টিকর্তার অশেষ কৃপায় বৃষ্টি, বিদ্যুত ও আরও অন্যান্য ঝায়-ঝামেলা ছাড়াই সুন্দরভাবে আমার মতো গরিবের মেয়ের বিয়ের কার্যসম্পাদন হয়েছিল।
কিন্তু আমি বোকারাম মেয়ে ভূমিষ্ঠ হবার পর অযথা কেঁদে কেঁদে বুক ভাসিয়েছিলাম! নিজের ঘরে আগত লক্ষ্মী দেবীকে নিজের মাথার বোঝা মনে করেছিলাম। মাথার বোঝা মনে করেছিলাম, নিজের কিছুই ছিলো না বলে। চিন্তা ছিলো শুধু একটাই! তাহলে মেয়ে বড়ো হলে বিয়ে দিবো কী করে, আর একেবারে খালি হাতে মেয়েকে পরের হাতে তুলেই বা দিবো কীভাবে! এসব চিন্তাই আমি বেশি চিন্তিত ছিলাম। কিন্তু তখন একবারও ভাবার সময় আমি পাইনি যে, মহান সৃষ্টিকর্তাই তো সৃষ্টি করেছেন নারী-পুরুষ। যা করার তিনিই তো করবেন। এতে আমার মতন অধমের কী করার সাধ্য আছে? আমার কোনও সাধ্য নেই! ছেলে হোক আর মেয়েই হোক, বিয়ে হবে কি হবে না; সব মহান সৃষ্টিকর্তার হুকুমেই হয়। আমার মতন বোকারামরা শুধু-শুধু ভেবেই মরি। আসলে কন্যা সন্তান কারোর মাথার বোঝা নয়! কন্যা সন্তান স্বর্গ হতে আসা ঘরের লক্ষ্মীদেবী।
loading...
loading...
কন্যা সন্তান মাথার বোঝা নয়– স্বর্গের লক্ষ্মীদেবী
শিরোনামটি কন্যা দিবস নামের বিশেষ দিনের তথাকথিত বুদ্ধি ব্যবসায়ীদের ব্যানার- প্রতিপাদ্য বা স্লোগান হতে পারতো। কেননা স্লোগান ওদের ব্যবসার অংশবিশেষ। ওদের বিপরীতে আপনার উপলব্ধি থেকে নিজ স্বীকারোক্তি যখন আসে … তখন কথাটিকে আমলে নিতেই হবে। বিশ্বাস করি 'কন্যা সন্তান মাথার বোঝা নয়– স্বর্গের লক্ষ্মীদেবী।'
জীবনের অভিজ্ঞতা পাঠকের সাথে শেয়ার করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
loading...
কন্যা সন্তান মাথার বোঝা নয়– স্বর্গের লক্ষ্মীদেবী। right dada
loading...
টেস্ট কমেন্ট ফ্রম মোবাইল।
loading...
জবাব ফ্রম ড্যাশবোর্ড
loading...
সম্মানিত মন্তব্যকারীদের মন্তব্যের জবাব যাঁর যাঁর মন্তব্যের জবাবে দেওয়া যাচ্ছে না। তাই সম্মানিত মন্তব্যকারীদের মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি, এই মন্তব্যের মাধ্যমে। সবার জন্য শুভকামনা থাকলো।
loading...
মেয়েরা আসলে কি লক্ষ্মী ছেলে কি সুন্দর লেখেছেন কবি নিতাই দা
loading...
@আলমগীর সরকার লিটন দাদা, আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
loading...
আপনার লেখা প্রায় সময়ই ভীষণ চিন্তার খোরাক হয়ে যায়।
কন্যা সন্তান বোঝা নয়; সম্পদ।
loading...