আমি হিংসুক আমিই অহংকারী

আমি যখন দিনের শেষে সূর্যাস্তের আগে একা একা কোনো এক পথে হেঁটে চলি, আর যদি সূর্যাস্তের দৃশ্যটা চোখে পড়ে; তখন নিজের শেষ সময়ের কথাই ভাবতে ভাবতে পথ চলি। আর সূর্যটাকে বলি তুমি আজকের মতো আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছ ঠিক, রাত শেষে আবার আমাদের এই পৃথিবী নামক গ্রহটি আলোকিত করতে নিশ্চয়ই পূর্বাকাশে উদিত হবে। আবার এই পৃথিবীর সবকিছু তোমার আলোতে আলোকিত করে রাখবে। কিন্তু আমার জীবনটাও তো সূর্যের মতো একদিন-না-একদিন অস্ত যাবে। তাহলে সেটাই কি হবে আমার জীবনের শেষ অস্ত যাওয়? মনে তা-ই। কারণ আমি তো হিংসুক। আমি অহংকারী। তাই আমি আর সূর্যের মতো উদিত হতে পারবো না। কারণ, আমি মহান সৃষ্টিকর্তার আদেশ নির্দেশাদি মানছি না, তাই। আমি আমার মনগড়া নীতিতেই চলছি।

আর চন্দ্র-সূর্য গ্রহ-নক্ষত্রে মহান সৃষ্টিকর্তার আদেশ নির্দেশাদি মেনে চলেছে। চন্দ্র-সূর্য গ্রহ-নক্ষত্র মহান সৃষ্টিকর্তার আদেশ নির্দেশের একটুও হেরফের করছে না। কে পাপী আর কে তাপী, কে ধর্মী কে বিধর্মী সেই দিকে চন্দ্র-সূর্য গ্রহ-নক্ষত্র ফেরে তাকাচ্ছে না। সবার জন্যই সমানভাবে বিতরণ করে যাচ্ছে। চন্দ্র-সূর্যের কাছে সবাই সমান।

আর আমি চন্দ্র-সূর্য গ্রহ-নক্ষত্রের মতো হিংসা অহংকার না করে, আর ভেদা-ভেদ না করে চলতেই পারছি না! অথচ আমি মহান সৃষ্টিকর্তার জীবের সেরা জীব মানুষ। শুধু জীবের সেরা জীবের জন্যই মহান সৃষ্টিকর্তা চন্দ্র-সূর্য, গ্রহ-নক্ষত্র, আলো-আঁধা, পাহার-পর্বত, খাল-বিল, নদী-নালা, সাগর-মহাসাগ, গাছ-পালা, জীবজন্তু, পশু-পাখি, খাদ্য-শস্য ফুল-ফল-মূল, আকাশ-বাতাস, ঝড়তু-ফান, আগুন-পানি সবকিছুই জীবের সেরা জীবের উপকারের চিন্তা করেই সৃষ্টি করে রেখেছেন। তিনি গাছে দিয়েছেন ফল, নদীতে রেখেছেন জল। একটা গাছের ফল সবার জন্য যেমন সমান থাকে, একটা নদীর জলও সবার জন্য সমান থাকে। গাছ নিজের জন্য ফল জন্মায় না। যা জন্মা, তা জীবকুলের জন্য জন্মায়। পৃথিবীতে এমনও খাদ্যশস্যের গাছ আছে, সেসব গাছগুলো ফল জন্ম দিয়ে ফল পাকা মাত্রই গাছ মৃত্যুবরণ করে। যেমন– ধানের গাছ ও কলা গাছ সেসব গাছের মধ্যে অন্যতম এক উদাহরণ।

ধান খেতে ধান হলে, ধানগাছ কখনো বলে না যে, এই ধান পাপীরা খেতে পারবে না। আর কলাগাছে কলা জন্মালে কলাগাছ কখনো বনে না যে, আমার এই কলা পাপী-তাপীরা খেতে পারবে না। গাছেরা ফল জন্মায় সবার জন্য। নদী কখনো বলে না যে, আমার পানি পাপী-তাপীরা ছুঁতে পারবে না। সূর্য কখনো বলে না যে, আমি পাপী-তাপীদের আলো দিবো না। পাপীদের জন্য থাকবে সবসময় রাতের আঁধার। সূর্যের আলো সবার জন্য সমান। চাঁদও কখনো বলে না যে, আমার জোৎস্নার স্নিগ্ধ আলো শুধু তাঁদের জন্য, যাঁরা পাপ করেনি। যাঁরা পাপী, তাঁদের জন্য থাকবে আমার আমাবস্যার অন্ধকার! কিন্তু না, চাঁদের আলো সবার জন্যই সমান। আর আমি! আমি মহান সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টির সেরা জীব হয়ে পাপকে ঘৃণা না করে পাপীকে ঘৃণা করছি। আর প্রতিদিন নিজেই পাপ কাজে জড়িত থাকছি। কে ধর্মী কে বিধর্মী, তা নিয়েও বিরোধ সৃষ্টি করছি। মানুষের পাপপুণ্যের বিচার আমি নিজেই করছি।

ইশ! চন্দ্র-সূর্য নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা যদি আমার মতো কোনও মানুষের হাতে থাকতো, তাহলে দেখা যেতো কে-কে আলো পাচ্ছে, আর কে-কে আলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এই আলো বন্টন করা হতো ঘুষের বিনিময়ে। আলো বিতরণ করা হতো ক্ষমতাসীনদের মনোমত। আলো বিতরণ করা হতো পাপী-তাপী দেখে। যাঁদের একটু আধটু দোষ থাকতো, তাঁরাই সূর্যের আলো, চাঁদের কিরণ থেকে বঞ্চিত হতো। যেমনটা হয় দেশে কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিলে সরকারের দেওয়া রিলিফ নিয়ে। সরকারি চাকরির নিয়োগ নিয়ে। সরকারের দেওয়া ত্রাণসামগ্রী নিয়ে। ক্ষমতার জোরে এ-কে মারে, ও-কে মারে। এটা করে, ওটা করে। আমিও তো একজন মানুষ! যদি চন্দ্র-সূর্যের নিয়ন্ত্রণ আমার হাতে থাকতো, তাহলে মনে হয় আমিও পাপী-তাপী দেখেই আলো বিতরণ করতাম। পাপীকে সূর্যের আলো থেকে বঞ্চিত করতাম। তাপীকে চাঁদের কিরণ থেকে বঞ্চিত করতাম। বিধর্মীদের সারাজীবন আমাবস্যার অন্ধকার দিয়ে রাখতাম। কারণ ঐযে, আমি মানুষ! আমি হিংসুক। আমি অহংকারী তাই।

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

৬ টি মন্তব্য (লেখকের ৩টি) | ৩ জন মন্তব্যকারী

  1. ফয়জুল মহী : ১৭-০৭-২০২০ | ৫:৪৫ |

    আপনার জীবন সুন্দর ও সজীব হোক

    GD Star Rating
    loading...
    • নিতাই বাবু : ১৭-০৭-২০২০ | ২২:২৬ |

      সুন্দর মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদের সাথে শুভকামনাও থাকলো, শ্রদ্ধেয় দাদা।           

      GD Star Rating
      loading...
  2. মুরুব্বী : ১৭-০৭-২০২০ | ৯:৪৬ |

    আপনার আলোচনাটির সাথে পূর্ণমত বলতে পারেন। ভালো এবং নিরাপদ থাকবেন মি. নিতাই বাবু। আমাদের শুভেচ্ছা সব সময় রইবে আপনার সাথে। ধন্যবাদ।

    GD Star Rating
    loading...
    • নিতাই বাবু : ১৭-০৭-২০২০ | ২২:২৭ |

      সুন্দর গঠনমূলক মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদের সাথে থাকলো শুভকামনা। আশা করি এই সময়ে সপরিবারে ভালো থাকবেন।                

      GD Star Rating
      loading...
  3. ফকির আবদুল মালেক : ১৭-০৭-২০২০ | ১১:২৮ |

    আহা! মানুষগুলি এমন কেন? 

    ইনসাফ, ন্যায় নীতি নৈতিকতা হারিয়ে যায়। আমার মাঝে মাঝে মনে হয় ইনসাফ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের জন্যই মানুষকে স্রষ্টা সৃষ্টি করেছেন। 

     

    পোষ্টের জন্য ধন্যবাদ। ভাবাচ্ছে।           

    GD Star Rating
    loading...
    • নিতাই বাবু : ১৭-০৭-২০২০ | ২২:৩০ |

      এই করোনাকালেও কতরকম কুকীর্তি দেখতে হচ্ছে আমাদের। এতেই বোঝা যায় যে, মানুষের মনুষ্যত্ব আজ বুঝি হারিয়েই গেছে। 

      সুন্দর গঠনমূলক মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি, শ্রদ্ধেয় দাদা।                 

      GD Star Rating
      loading...