বাংলা নববর্ষ পহেলা বৈশাখের সাথে ইলিশের সম্পর্ক কী?
পহেলা বৈশাখের সঙ্গে পান্তা-ইলিশের কোনও সম্পর্ক আছে বলে আমার মনে হয় না। যেখানে আগেকার সময়ে এই বৈশাখ ছিলো কৃষকদের মধ্যে সীমাবদ্ধ। তাঁরা চৈত্র সংক্রান্তিতে রাজা-জমিদারদের খাজনা বুঝিয়ে দিতো। রাজা-জমিদাররা তাদের পাওনা বুঝে পেয়ে, পহেলা বৈশাখে কৃষকদের মিষ্টান্ন দিয়ে আপ্যায়ন করতো। বাড়ি এসে কৃষকরা কাঁচামরিচ দিয়ে পান্তাভাত খেয়ে নতুন করে জমিতে চাষাবাদ শুরু করতো। গরিব কৃষকদের সেই বৈশাখ আজ ধনী-গরিব সবার ঘরে গিয়ে পৌঁছেছে।
একসময় মানুষ বাজার থেকে আটা কিনে লোকলজ্জার ভয়ে খুব গোপনে নিজেকে সামলে বাড়ি ফিরতো। যদি কেউ দেখে ফেলে, সেই ভয়ে। বাজার থেকে আটা কিনে এনেছে– কেউ দেখে বলবে, “লোকটা টাকার অভাবে আটা কিনে খাচ্ছে!” আর এখন সেই আটার দুর্মূল্যের কারণে গরিব মানুষ আটার সামনেও যেতে পারে না। একসময়ের গরিবের খাবার আটা এখন বড়লোকে খায়।
একসময় এদেশের প্রায় নদীতে ইলিশ মাছ পাওয়া যেত। ইলিশের মৌসুমে সস্তা দরের ইলিশমাছ খেয়ে ডায়রিয়া, কলেরা হয়ে গ্রামের পর গ্রাম ছাপ হয়ে যেত। সেই ভয়ে এদেশের ধনী ব্যক্তিরা ইলিশ মাছ খেতো না। ১৯৮৮ সালের বন্যার সময়ও দেখেছি, এদেশের মন্ত্রী এমপি মহোদয় বন্যার্তদের মাঝে ইলিশ মাছ বিতরণ করেছিল। কিন্তু তাঁরা কেউ খায়নি, ডায়রিয়া কলেরার ভয়ে। আর এখন সেই ইলিশ মাছ আন্তর্জাতিক বাজারে। আর মন্ত্রী, এমপি, ডাক্তার, বড়বড় ব্যবসায়ীদের দরবারের খাবারের পরিবেশনে থাকে।
বাংলা পহেলা বৈশাখে ইলিশের সুসম্পর্ক স্বাধীনতার পরবর্তী সময়েও দেখা যায়নি। ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে পহেলা বৈশাখ রূপ নিয়েছে নতুন সাজে। সেই সাথে পহেলা বৈশাখে যোগ হয়েছে গরিবের খাবার পান্তাভাতের সাথে বড়লোকের দামি ইলিশ।
অনেক বছর ধরে দেশের কিছু ব্যবসায়ী সংগঠন বৈশাখের সাথে পান্তা-ইলিশকে পহেলা বৈশাখের অনুষঙ্গ করে তুলেছে। প্রকৃত অর্থে এটি বানোয়াট সংস্কৃতিচর্চা। এর সঙ্গে বাঙালির কোনও সম্পর্ক নেই। পান্তা হচ্ছে গরীবের খাবার। আর যেকোনো উৎসবের সময় মানুষ যেখানে ভালো ভালো খাবার খায়, সেখানে আগেকার বড়লোকের ঘৃণিত খাবার গরিবের পান্তাকে খাওয়ানো হচ্ছে ব্যবসার খাতিরে।
শব্দনীড় প্লাটফরমের সবাইকে বাংলা শুভ নববর্ষের শুভেচ্ছা।
আজ আমরা হিন্দু মুসলিম দ্বিখণ্ডিত!
পহেলা বৈশাখ হলো বাংলা পঞ্জিকার প্রথম মাস। যা বৈশাখ মাসের ১ তারিখ বা বাংলা সনের প্রথম দিন। যাকে আমরা বাংলা ভাষাভাষীরা সাদরে বরণ করি নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে। যাকে বলা হয়, “বাংলা নববর্ষ”। দিনটি বাংলাদেশ এবং ভারতের কয়েকটা রাজ্যে পালিত হয়। আগেও এই পহেলা বৈশাখ খুব জাঁকজমক ভাবে ঢাক ঢোল পিটিয়ে, সবাই একইদিনে বিশেষ উৎসবের সাথে পালন করতো। কিন্তু এখন এই বিশেষ দিনটি দুইভাগে বিভক্ত। কেউ পালন করে ১৪ এপ্রিল, কেউ করে ১৫ এপ্রিল। অর্থাৎ, ১৪ এপ্রিল রাষ্ট্রীয় ভাবে সকল ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের, আর ২৫ এপ্রিল নীরবে পালন করতে হয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের।
তাই অনেকে অনেকসময় বলেও ফেলে যে, আজকের পহেলা বৈশাখ আমাদের; আগামীকাল হবে আপনাদের। তার মানে হলো, আজ রাষ্ট্রীয়ভাবে মুসলমানদের। আগামীকাল হবে হিন্দুদের। দুঃখ এখানেই, এক দেশে থেকেও একটি ঐতিহ্যবাহী উৎসব দুই ধর্মাবলম্বীদের দুইভাবে দুই দিনে করতে হচ্ছে। তা হয়েছে একটু ব্যবধানের কারণে।
ব্যবধান হলো, সৌরজগতের চাঁদ আর সূর্য, আর আন্তর্জাতিক মানদণ্ড। বাংলা দিনপঞ্জির সাথে হিজরী এবং খ্রিষ্টীয় সনের মৌলিক পার্থক্য হলো, হিজরী সন। যা হয় চাঁদের হিসাবে। আর খ্রিষ্টীয় সন আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। এ কারণে হিজরী সনের নতুন তারিখ শুরু হয় সন্ধ্যা আকাশে নতুন চাঁদ দৃশ্যমান হওয়ার পর। আর খ্রিষ্টীয় সনের নতুন দিন শুর হয়, ইউটিসি ±০০:০০ অনুযায়ী। পহেলা বৈশাখ রাত ১২ টা থেকে শুরু-না সূর্যোদয় থেকে শুরু; এ নিয়ে ভিন্নমত এখনো রয়েছে। ঐতিহ্যগত ভাবে সূর্যোদয় থেকে বাংলা দিন গণনার রীতি থাকলেও, ১৪০২ সালের ১ বৈশাখ থেকে বাংলা একাডেমী এই নিয়ম বাতিল করে, আন্তর্জাতিক রীতির সাথে সামঞ্জস্য রাখতে রাত ১২.০০ টায় দিন গণনা শুরুর নিয়ম চালু করে।
সেই থেকেই আজ আমরা এই পহেলা বৈশাখ দুইভাবে, আর দুইদিনে পালন করে থাকি। যা রাষ্ট্র এবং মুসলমান ধর্মাবলম্বীরা ১৪এপ্রিল। আর সনাতন ধর্মাবলম্বীরা ১৫ এপ্রিল বাংলা নববর্ষ বা পহেলা বৈশাখ পালন করে আসছে। সত্যি আজ আমরা হিন্দু মুসলিম ভাইভাই হয়েও, দুই ধর্মের মানুষ বছরের একটি বিশেষ দিনের আনন্দ দুইভাবে দুইদিনে পালন করতে হচ্ছে। তবু মনে দুঃখ নিয়ে, দুইভাবে দুইদিনে সবাইকে বাংলা নববর্ষ পহেলা বৈশাখের শুভেচ্ছা জানাই। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন!
loading...
loading...
দুইভাবে দুইদিনে সবাইকে বাংলা নববর্ষ পহেলা বৈশাখের শুভেচ্ছা।
চলুক আনন্দ ঘরে ঘরে। নিষ্কলুষ এই আনন্দের পাশে আমরা সবাই।
loading...
নতুন আলোয়
loading...
থাকুক দ্বিতত্ত্ব। বাংলা ক্যালেণ্ডারে পরিবর্তন হয়েছে জে. এরশাদের সময়ে। দিন গুলি ৩০/৩১ শে বেঁধে দেবার জন্য। এখানে অন্য কিছু আজকে না হয় নাইবা খুঁজি। তবে বৈশাখের এই পান্তা ইলিশের সংস্কৃতি থেকে বেড়িয়ে যাবার কৌশল শিখতে হবে আমাদের। শুভ বাংলা বর্ষ নিতাই বাবু।
loading...
নতুন আলোয়
loading...
বাংলা নববর্ষ পহেলা বৈশাখের শুভেচ্ছা জানাই। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন!
loading...
নতুন আলোয়
loading...
নববর্ষের শুভেচ্ছা।শুভ কামনা নিরন্তর।
loading...
নতুন আলোয়
loading...
নো দিখণ্ডতা। নববর্ষ কবি।
loading...
নতুন আলোয়
loading...
নববর্ষের শুভেচ্ছা কবি নিতাই দা।
loading...
নতুন আলোয়
loading...