মেয়াদবিহীন 4G ইন্টারনেট প্যাকেজ চাই!
ডিজিটাল জীবনযাপন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দেশের সকলের জন্য দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা দিয়ে যাচ্ছে, বাংলালিংক, গ্রামীনফোন, এয়ারটেল, টেলিটক সহ আরও বেশ কয়েকটি জি.এস.এম ভিত্তিক মোবাইল ফোন সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান।
আগে বাটন মোবাইলের জন্য ছিলো GPRS সার্ভিস। এরপর বাটন মোবাইলের পাশাপাশি স্মার্ট ফোন বা এন্ড্রোয়েড মোবাইলের আবির্ভাব ঘটলে ইন্টারনেট সার্ভিসেরও পরিবর্তন ঘটে। মোবাইল ফোন সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো GPRS থেকে 2G সেবা চালু করে। তারপর 2G থেকে 3G। গতবছর ২০১৮ সাল থেকে আমরা 3G থেকে 4G ইন্টারনেট সেবা পেতে শুরু করি। দেশের মোবাইল ফোন সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও তাঁদের গ্রাহকদের দ্রুতগতির 4G ইন্টারনেট সেবা দিতে শুরু করে। সাথে দিতে থাকে তেলেসমাতি লোভনীয় অফারের পর অফার, সাথে মেয়াদ আর মেয়াদ।
স্বীকার করা যায়, বর্তমানে কল রেট আর 4G ইন্টারনেটের মূল্য আগের তুলনায় খুবই সাশ্রয়ী। একসময় দেশের যেকোনো স্থানে এক মিনিট কথা বলতে ৭ থেকে ৮ টাকা খরচ হতো। তা এখন প্রতি সেকেন্ড মাত্র ১পয়সা রেটে প্রতি মিনিট ৬০ পয়সা। ১৫% ভেট সহ প্রতি মিনিট ৭০পয়সারও কম। যা একসময় ছিল মানুষের কল্পনাতীত। তা এখন সত্যি বাস্তব। এ ব্যাপারে দেশের টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সহ মোবাইল ফোন সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে অজস্র ধন্যবাদ জানাতে হয়!
তবে আমরা সাশ্রয়ী রেটে কল করতে পারলেও, 4G ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা প্রতিনিয়ত মোবাইল ফোন সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর জোচ্চুরি আর বাটপারির জালেই আটকা পড়ে আছি। মোবাইল ফোন সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর জাল হলো, 4G ইন্টারনেট প্যাকেজের সাথে বেধে দেওয়া মেয়াদ বা সময়সীমা।
একজন গ্রাহক ১০ টাকা রিচার্জ করে কারোর কাছে কল না করলে, রিচার্জ করা ১০ টাকা মাসের পর মাস গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে জমা থাকে। এই জমাকৃত টাকা খরচের কোনও সময়সীমা নেই বা মোবাইল ব্যবহারকারীর অপারেটর কোম্পানিও সময়সীমা বেধে দেয় না। এজন্য সকল মোবাইল ব্যবহারকারী মোবাইল ফোন সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে সাধুবাদ জানায়।
কিন্তু দুখের বিষয় দুঃখের সাথে বলতে হয়, যেখানে রিচার্জ করা টাকা ব্যবহারকারীর ইচ্ছেমত খরচ করতে পারে; সেখানে 4G ইন্টারনেট ব্যবহারে গ্রাহককে তাঁদের ইচ্ছানুযায়ী সময়সীমা বেধে দেওয়া হচ্ছে কেন? এটা আমাদের দেশের জনগণের সাথে একরকম জোচ্চুরি আর প্রতারণা করার সামিল বলে অনেকেই মনে করে থাকেন।
আমি নিজেও একজন 4G ইন্টারনেট ব্যবহারকারী। প্রতিমাসে অন্তত ৫ থেকে ৬শ টাকার 4G বা ইন্টারনেট নামের মেগাবাইট আমার প্রয়োজন হয়। তা আমি যতো কষ্টেই থাকি-না-কেন, মেগাবাইট আমার লাগবেই লাগবে। তা যতো দূর্মূল্যই হোক-না-কেন! শুধু আমি কেন, এদেশে আমার মত অগণিত মানুষই বর্তমানে মেগাবাইট রুগী সেজে বসে আছে। এসব মানুষ মেগাবাইট ছাড়া তাঁদের দৈনন্দিন জীবনটাই মূল্যহীন মনে করে। মোটকথা 4G ইন্টারনেট বা মেগাবাইট নিজের ব্যবহারিক মোবাইল ফোনে থাকতেই হবে। তা ঘরে খাবার থাকুক আর না থাকুক!
ইন্টারনেটের প্রতি আমাদের এমন দুর্বলতা দেখে দেশের মোবাইল ফোন সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সকল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের গায়ে সুযোগ বুঝে কোপ মারছে। আর 4G ইন্টারনেটের জালে সকল ব্যবহারকারীদের তাঁদের মেয়াদের আওতায় বন্দি করে ফেলেছে। যা তাঁদের ইচ্ছেমত খামখেয়ালিতেই সবকিছু নির্ধারিত হচ্ছে। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন মোবাইল অপারেটর কোম্পানি দিচ্ছে লোভনীয় অফারের পর অফার! ফ্রি আর ফ্রি! কিন্তু ১ জিবি 4G-এর সঠিক মূল্য কত, তা এদেশের অনেকেই জানে না।
দেখা যায়, একএক মোবাইল ফোন সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের একেক রকমের নির্ধারিত মূল্য। গ্রামীণফোন অপারেটরে ২জিবি ৪৪ টাকা, মেয়াদ ৭ দিন। আবার এয়ারটেল অপারেটরে ২জিবি ২০৯ টাকা, মেয়াদ ৩০ দিন। আবার ৭ জিবি মাত্র ১৭৯ টাকা, মেয়াদ মাত্র ১০ দিন। এমন আরও শত রকমের 4G ইন্টারনেট প্যাকেজ আছে, আর নানারকম মেয়াদও বেধে দেওয়া আছে। আছে ফ্রি দেওয়ার নামে নানারকম অফার। হায়রে মেয়াদ, হায়রে লোভনীয় অফার!
যেখানে একজন ব্যবহারকারীকে ৪৪ টাকা আর ২০৯টাকায় ২ জিবি 4G ইন্টারনেটের মেয়াদ বেধে দেওয়া হচ্ছে, ৭ দিন থেকে ৩০ দিন। সেখানে আবার ৭জিবি 4G ইন্টারনেটের মূল্য মাত্র ১৭৯ টাকায় মেয়াদ দিচ্ছে ১০ দিন। তাহলে, ১৭৯ টাকায় ৭ জিবি 4G ইন্টারনেট গ্রাহক কি এতো কম সময়ের মধ্যে তা শেষ করতে পারবে? মনে হয় না! তাহলে এটা কী বোঝা যাচ্ছে? এটা বোঝা যাচ্ছে যে, ৭ জিবি থেকে ৩জিবি গ্রাহক খরচ করবে। আর বাদবাকি ৪ জিবি ইন্টারনেট পচা। তার মানে হলো ৪ জিবি 4G ইন্টারনেট ঘোষিত মোবাইল ফোন সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের হাতেই থেকে যাচ্ছে। এই হলো আমাদের দেশের মোবাইল ফোন সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর চালাকি আর জোচ্চুরি।
আবার দেখা যায় ৪৪ টাকা দিয়ে ২জিবি 4G ইন্টারনেটের ৩দিন মেয়াদে নিয়ে দুইদিনের আগেই মেগাবাইট শূন্য হয়ে যায়। আবার অনেকের থেকেও যায়। তারপর গ্রাহক যদি একই প্যাকেজ নিয়ে নেয়, তাহলে আগের ২জিবির থেকে যাওয়া মেগাবাইট নতুন প্যাকেজের সাথে যোগ হয়ে যায়। কিন্তু একই প্যাকেজ ছাড়া আর ঐ আগের ২জিবির থেকে যাওয়া মেগাবাইট গ্রাহকের নতুন প্যাকেজে আর যোগ হয় না। আগের প্যাকেজের থাকা মেগাবাইট সবই জলাঞ্জলি!
এখন কথা হচ্ছে যে, রিচার্জ করা টাকা খরচের যেমন মেয়াদ নেই, মেগাবাইট খরচের উপর মেয়াদ থাকবে কেন? গ্রাহক তাঁর সাধ্যমত 4G ইন্টারনেট ক্রয় করে, গ্রাহকের ইচ্ছা মতই খরচ করবে। এতে মোবাইল ফোন সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সমস্যা কোথায়? সমস্যা শুধু চুরি আর বাটপারি করতে না পারা!
দুঃখ হলো বাংলাদেশে যেসব মোবাইল ফোন সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান আছে, সেসব মোবাইল ফোন সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের জুচ্চুরি, বাটপারি আর গ্রাহকের সাথে প্রতারণার দিকে সরকার ফিরেও তাকাচ্ছে না।
অথচ মোবাইলে, ফেসবুকে আর অনলাইনে সরকারের বিরুদ্ধে কে কী বললো আর লিখলো, তা দেখার জন্য বর্তমান ডিজিটাল সরকার ডিজিটালি মেশিন স্থাপন করে রেখেছেন। কেউ ভুলবশত যদি ফেসবুকে, টুইটারে আর অনলাইনে সরকার বা কোনও মন্ত্রী মহোদয়কে নিয়ে কোনও সমালোচনা করে, তাহলে সাথে সাথেই অ্যাকশনের পর রি-অ্যাকশন শুরু হয়ে যায়। অথচ দেশের মোবাইল ফোন সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর চালাকি, বাটপারি আর প্রতারণার দিকে সরকারের টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় ফিরেও তাকাচ্ছে না।
মোবাইল ফোন সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো কল রেটের ধরণ ধারণ ঠিক রেখে ইন্টারনেটের মেয়াদের জালে জনগণকে বন্দি করে রেখেছেন। মোবাইল ফোন সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো দেশে জনগণকে ইন্টারনেট সেবার সাথে জনগণের কোটি কোটি টাকা দিনেদুপুরে ডাকাতি করে নিয়ে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সেদিকে একটু নজরও দিচ্ছে না। সরকারের টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের নমনীয়তার কারণে দেশের মোবাইল ফোন সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্মূল্যের বাজারে 4G ইন্টারনেটে মেয়াদের জাঁতাকল স্থাপন করে বসে আছে। আর জনগণকে ফ্রি ফ্রি-এর লোভ দেখিয়ে দিব্বি প্রতারণা করে যাচ্ছে।
এমতাবস্থায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করছি,
দেশের সকল মোবাইল ফোন সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর এহেন বাটপারি আর প্রতারণার দিকে একটু দৃষ্টি নিক্ষেপ করুন! যাতে দেশের সকল ইন্টারনেট ব্যবহারকারী নিরাপদে, নির্বিঘ্নে নিজের টাকা দিয়ে কেনা মেয়াদবিহীন ইন্টারনেট প্যাকেজ মনের আনন্দে ব্যবহার করতে পারে।
loading...
loading...
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের অনুরোধ …
দেশের সকল মোবাইল ফোন সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর এহেন বাটপারি আর প্রতারণার দিকে একটু দৃষ্টি নিক্ষেপ করুন! যাতে দেশের সকল ইন্টারনেট ব্যবহারকারী নিরাপদে, নির্বিঘ্নে নিজের টাকা দিয়ে কেনা মেয়াদবিহীন ইন্টারনেট প্যাকেজ মনের আনন্দে ব্যবহার করতে পারে।
সহমত।
loading...
রিচার্জ করা টাকা যেমন মাসের পর মাস জমা থাকতে পারে। মেগাবাইট জমা থাকবে না কেন? প্রশ্ন শুধু এখানেই থেকে যায়, শ্রদ্ধেয় কবি দাদা।
আপনার সুন্দর মূল্যবান মন্তব্যের জন্য অজস্র ধন্যবাদ । আশা করি ভালো থাকবেন।
loading...
সহমত পোষণ করছি কবি দাদা। সময় উপযোগী পোস্ট।
loading...
সুন্দর মূল্যবান মন্তব্যের জন্য অজস্র ধন্যবাদ। সাথে শুভকামনা থাকলো ।
loading...
সময়োপযোগী পোস্ট। সাধারণ ক্রেতারা প্রায় সবাই ভুক্তভোগী। কর্তৃপক্ষের সচেতনতা কাম্য।
loading...
ইন্টারনেটের উপর এমন মেয়াদের ফলে দিনদিন অনেকের পকেটই শূন্য হয়ে যাচ্ছে। এর ভুক্তভোগী আমি নিজেও একজন । যা আর লিখে শেষ করা যাচ্ছে না।
মন্তব্যের জন্য অজস্র ধন্যবাদ জানাচ্ছি, শ্রদ্ধেয় কবি দিদি।
loading...
কথাগুলি অনেকেরই কথা!
loading...
ইন্টারনেট ক্রয়ে মোবাইল সেবা প্রদানকারীদের মেয়াদের বিষাক্ত তীর এখন সমস্ত ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের বুকে আঘাত হানতে শুরু করেছে। এর থেকে আমরা রেহাই চাই। শান্তিমত মেয়াদবিহীন ইন্টারনেট ব্যবহার করতে চাই।
loading...
ভোক্তা অধিকারের কথা কেন ভুলে যায় সার্ভিস প্রোভাইডারেরা সেটাই বুঝিনা।
loading...
সার্ভিস প্রোভাইডারদের জুচ্চুরি আর প্রতারণার জালে আমরা সকল ইন্টারনেট ব্যবহারকারী একরকম বন্দি হয়ে আছি। তাঁদের এরূপ ইচ্ছার নিষ্পত্তি যে কবে ঘটবে তা কারোর জানা নেই, শ্রদ্ধেয় সৌমিত্র দাদা। এ অবস্থা থেকে রেহাই চাই।
loading...
যে কোন অফারে শর্ত জুড়ে দিলে অফার তার সম্মান হারায়। মেয়াদবিহীন না হয়ে মেয়াদ এক বছর অন্তত থাকা উচিত।
loading...
আপনার যুক্তির সাথে একমত পোষণ করছি শ্রদ্ধেয় রিয়া দিদি। এরকম হলেও এদেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা কিছুটা শান্তি পেত। কিন্তু এ দিকে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় ফিরেও তাকাচ্ছে না, আর দেখেও দেখছে না। দুঃখ থেকেই যায়।
loading...
4G ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা প্রতিনিয়ত মোবাইল ফোন সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর জোচ্চুরি আর বাটপারির জালেই আটকা পড়ে আছি।
loading...
আমার মতন অনেক ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ফকির হয়ে যাচ্ছে। তবু ইন্টারনেট ব্যবহার করা ছাড়তে পারছে না। কারণ, আমরা এখন অনেকেই ইন্টারনেট রোগে আক্রান্ত। তাই কেউ কিছু বলছেও না।
loading...
মেয়াদবিহীন 4G ইন্টারনেট প্যাকেজ হচ্ছে আমাদের দৈনন্দিন দূর্দশা।
loading...
বর্তমানে 4G ইন্টারনেটের বেধে দেওয়া মেয়াদ একরকম মরার উপর খরার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকেই সহ্য করতে পারছে না, আবার কিছু বলতেও পারছে না। নীরবে মনের ব্যথা মনেই শেষ করে দিচ্ছে। অনেকে বলে, "কী আর করা!"
loading...
আমার মোবাইল থ্রিজি। 4জি নেট ব্যবহারই করতে পারি না।
আমার সিমে আজকের অফারঃ (রবি ডাটা স্ক্র্যাচ কার্ড: ৪৯ টাকায় ৮০০ এমবি (৬০০+২০০ ইমো,ফেসবুক) ৭দিন)
loading...