ছোটবেলায় দেখতাম আমাদের গ্রামে একসাথে পাশা-পাশি দুইটা বাড়ি। বাড়ি দুটোর নাম ছিলো জুগিবাড়ি। জুগি হলো আমাদের হিন্দুধর্মের একটা জাত বা সম্প্রদায়। জুগি সম্প্রদায়ের কাজ ছিল বস্ত্র তৈরি করা। তাঁরা যেই মেশিন বা কল দিয়ে কাপড় তৈরি করতো, সেটাকে বলা হতো তাঁত বা ঠকঠকি। সেই তাঁত ঠকঠকি চালিয়ে যারা কাপড় উৎপাদন করতো, তাদের বালা হতো তাঁতি বা জুগি বা কারিকর। কোনও কোনও স্থানে এসব তাঁতিদের ভিন্নভিন্ন নামেও ডাকাতে শোনা যায়। এখনও তাঁতিদের একেক জায়গায় অঞ্চল ভেদে একেক নামে ডাকা হয়। কোনও জায়গায় তাঁতি, কোনও জায়গায় ঝোলা, কোনও জায়গায় কারিকর নামেও ডেকে থাকে এই বস্ত্র তৈরি করার জাদুকর তাঁতিদের। তাঁত শিল্প বা বস্ত্র শিল্প নিয়ে কিছু লিখতে হলে, তার আগে সেই শিল্পের জন্মকথা বা ইতিহাস তুলে ধরতে হয়।
ওয়ারপিং মেশিন। কোনও কোনও স্থানে টানা আঁটা বা ড্রাম বলে।
এই মেশিনেই কাপড় তৈরির ভীম বা টানা তৈরি করা হয়।
এই তাঁতশিল্প বা বস্ত্রশিল্পের জন্মলগ্ন আমার জানা না থাকলেও আমি খুব অল্প বয়স থেকেই এই শিল্পের সাথে জড়িত। আর আমার বাবা, কাকা, জেঠা, বড়দা সবাই এই তাঁত শিল্প বা বস্ত্র শিল্পের সাথে আমার জন্মের বহু আগে থেকেই সম্পৃক্ত ছিলেন। আমাদের সংসার চলতো এই শিল্প থেকে শ্রমের বিনিময়ে উপার্জিত অর্থ দিয়ে। যার কারণে আমি বড় হয়ে নিজেও এই শিল্পের সাথে জরিয়ে যাই বংশগত ভাবে। তাই আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকেই এই তাঁত বা তাঁতি নিয়ে কিছু লিখতে চাই, কারণ, কোনও একসময় আমি নিজেও একজন তাঁতি বা বস্ত্র তৈরির কারিকর ছিলাম।
তাঁত (weaving) হচ্ছে এক ধরণের যন্ত্র বা মেশিন। যা দিয়ে তুলা (cotton) হতে উৎপন্ন সূতা (yarn) থেকে কাপড় (cloth) বানানো হয়। তাঁত বিভিন্ন রকমের হতে পারে বা দেখাও যায়। খুব ছোট ছোট তাঁতও আছে আমাদের দেশে। যা দিয়ে দেশীয় গামছা আর ওড়না তৈরি করা হয়। এসব তাঁত আমাদের দেশের বিভিন্ন জেলায় বিভিন্ন নামে পরিচিত। তা হলো– জাপানি কল, পিট লুম, টেপ লুম, ঠকঠকি, hand loom. (হাত তাঁত) এসব কল বা মেশিনগুলি হাতে চালানো হয়। এরপর যুগের সাথে তাল মিলিয়ে কাপড় উৎপাদন বৃদ্ধি করতে বৈদ্যুতিক শক্তিকে কাজে লাগিয়ে তৈরি করা হয় পাওয়ার লুম (power loom machine) যা বিদ্যুতের সাহায্যে চলে। এই পাওয়ার লুমের মধ্যেও বর্তমানে বহু প্রকার কাপড় তৈরি করার মেশিন আছে। যেগুলি বিদেশিদের দেখাদেখি আমাদের দেশে তৈরি করে তার নাম বাংলা মেশিন বা বাংলা লুম।
উইভিং ডিপার্টমেন্ট বা তাঁতঘর।
আর যেগুলি সরাসরি বিদেশ থেকে আসে, সেগুলি বিভিন্ন নামে পরিচিত। চায়না লুম, জাপানি পাওয়ার লুম, কুরিয়ান লুম, সুইজারলেন্ডি লুম। যেই দেশের মেশিন সেই দেশের নামটা মেশিনের আগে ব্যবহার করা হয়। তারপরও আরো আছে রিপিয়ার মেশিন। যেই মেশিন সূতার নুলি সংযুক্ত (মাকু ছাড়াই চলতে সক্ষম। আছে সেরোয়ার ফাইভ হান্ড্রেড, এই মেশিনটা রিপিয়ার মেশিনের মতো। প্রতি মিনিটে পাঁচ’শ’ বার বাইনের সূতা জুড়তে সক্ষম বিধায়, এর নাম রাখা হয় সেরোয়ার ফাইভ হান্ড্রেড। আছে সোলজার মেশিন। এগুলি সবই রিপিয়ার (repair machine) পরিবারের বংশধর। আরও আছে এয়ারজেট, ওয়াটারজেট মেশিন। এয়ারজেট মেশিন সূতার নলি (bobbin winder) মাকুর (seattle) পরিবর্তে বাতাস দ্বারা মাকুর কাজ করে বিধায়, তার নাম এয়ারজেট। আর ওয়াটারজেট মেশিন হলো সূতার নলি মাকুর পরিবর্তে পানির সাহায্যে মাকুর কাজ করা হয় বিধায়, তার নাম রাখা হয় ওয়াটারজেট।
যেই বস্তুটাকে কাজে লাগানোর জন্য এসব মেশিনের আবিস্কার তা হল তুলা। তুলা থাকেই হয় সূতা। সূতা দিয়ে তৈরি করা হয় কাপড়। কাপড় ছাড়া এই সুন্দর পৃথিবীর কোন মানুষের লজ্জা নিবারণ হয় না। সে হোক না-কোনও রাজা বাদশা। হোক কোনও দেশের প্রধানমন্ত্রী বা কোনও রাষ্ট প্রধান। লজ্জা নিবারণের জন্য সবার এক টুকরো কাপড় লাগবেই লাগবে। সেই কাপড় তৈরির মেশিন তাঁত (loom) আর কারিকর হলো তাঁতি (weaver)।
আমার ধারণায় পৃথিবীতে কাপড়ের আবিষ্কার; (cloth inventory)। এই সুন্দর পৃথিবীতে বস্ত্র আবিস্কার হয়েছিল শীত থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য। কারন; আদি যুগে লজ্জা কোন বিষয় ছিলো না। আমার মনে হয় তখন লজ্জা কাকে বলে তখনকার দিনের মানুষ তা বুঝত না। তখন তাঁরা সবসময় থাকত ক্ষুধা নিবারণের জন্য হতাশ আর ভয়ে থাকত দৌড়ের উপর । সেই আদিযুগে ঝড়-তুফান আর প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে তাদের মোকাবিলা করতে হতো দিন-রাত চব্বিশ ঘন্টা। যেখানে-সেখানে ওত পেতে থাকত বনের হিংস্র জীব জন্তু। সেখানে এই লজ্জা নামক জিনিসটার নামই তখন ছিল না। আর লজ্জা কী সেটা তখনকার মানুষ তা বুঝতোও না। তারা শুধু বুঝতো বেঁচে থাকা। তা লড়াই করে হোক, আর আপসেই হোক। তখন তাঁরা জীবনধারনের জন্য ছুটে বেড়াতো শুধু খাদ্যের সন্ধানে। সারাদিন খাদ্যে সংগ্রহ করে রাতে বনের হিংস্র প্রাণীদের আক্রমন হতে নিজেকে বাঁচানোর জন্য গাছের উচু জায়গায় বা কোনও পাহাড়ের গুহায় আত্মরক্ষা করে থাকতো।
তাহলে ধারনা করা যায় যে, তখন তাদের লজ্জা কোন প্রয়োজনীয় বিষয় ছিল না। যা এখনও দেখা যায় ব্রাজিলের আমাজন রেইন ফরেস্টের কিছু ভিডিও ইউটিউবে দেখলে। আদিযুগের মানুষের ছিল শুধু খাদ্যে আর রাতযাপনের অভাব আর চিন্তা। খাদ্য যাই পেতো তাই খেতো। কিন্তু শীতের হাত থেকে বাঁচার প্রয়োজনে তখন তাঁরা গাছের ছাল বা পশুর চামড়া ব্যবহার করে জীবনধারণ করতো। এভাবেই চলতে চলতে মানুষ শীত থেকে বাঁচার উপায় খুঁজে বের করে ফেলল। তা ছিল গাছের তুলা থেকে বহু কষ্টে সূতা তৈরি করে। সেই তূলা থেকে একদিন সূতার আবিস্কার করে ফেললো। একদিন মানুষ সেই সূতা দিয়েই তৈরি করা শুরু করে দেয় হাতে বুনা কাপড়। সেই আদি যুগের মানুষ যখন ধীরে-ধীরে সভ্য জগতে পা রখতে শুরু করলো, তখন তাদের কাপড় তৈরি করাও উন্নতির দিকে অগ্রসর হতে লাগল।
গাছের তুলা সংগ্রহ করে সেই তুলার আঁশ হতে হাতে পাঁক দিয়ে সূতা তৈরি করে, সেই সূতা এক থেকে দেড় হাজার সূতা সারিবদ্ধ ভাবে একসাথে করে ২০গজ বা তারও বেশি লম্বা একটা বড় রুলার (ঘুড়ি উড়ানোর নাটাই এর মতো) তৈরি করতো। (বর্তমানে সেই রুলার কোনও কোনও জায়গায় টানা বা ভীম (veeam) বলে পরিচিত) সেই টানা বা ভীমের মোট সূতাগুলিকে আলাদা আলাদা করে ১০/১১/১২/বা ১৩ ইঞ্চি লম্বা (rings) ‘ব’ বা ‘বয়া’ মাঝখানে সুইয়ের ছিদ্রের মতো থাকে এমন, সেই ছিদ্রযুক্ত জায়গা দিয়ে একটা একটা করে সূতা ভরে সাজানো হয়। এই কাজটাকে বলে ‘ব’গাঁথা বা ড্রয়ার বা রিচিং করা, কোনও কোনও জায়গায় এই কাজটাকে (নরসিংদী আর পাবনায়) হানা ‘ব’ বলা হয়। আমি নিজেও টেক্সটাইল মিলের একজন ড্রয়ারম্যান ছিলাম। মানে, হানা ‘ব’ ওয়ালা বা রিচিংম্যান। মানে রিচার্জ করা।
এই বয়াগুলো (কাপড়ের ডিজাইনের ওপর নির্ভর করে) দুইভাগে বিভক্ত বা ১০/১২ ভাগে বা তারও বেশি ভাগে বিভক্ত থাকে বা থাকতে পারে। এই সারিবদ্ধ বয়াকে বলে ঝাপ বা (ring frame) বয়ের ফ্রেম। এই ‘ব’ বা বয়ার ভিতর দিয়ে সূতাগুলো শানা বা হানা বা রিড এর ভিতরে সমান ভাগে ভাগ করে শানার (reide) ভিতরে ঢুকানো হয়। এই রিড বা শানা বা হানা ঘন আবার পাতলাও আছে। ১০ কাউন্ট হতে শুরু করে ২৫০ কাউন্টের শানাও আছে। যত বেশি কাউন্টের শানা বা রিড, তত থাকে তার শলা বা ঘর। যদি ৫০ কাউন্টের শানা বা রিড হয়, তবে প্রতি ইঞ্চিতে শানার ঘর বা শানার ফাঁক বা শলা থাকবে ৫০ এর অর্ধেক ২৫ ঘর বা ২৫ শলা। একএক ঘরে দুই সূতা করে হলে প্রতি ইঞ্চিতে সূতা থাকবে ১০০ সূতা। ৫০ ইঞ্চি কাপড়ের জন্য সূতার প্রয়োজন হবে ৫০০০ হাজার সূতা। আর ‘ব’ বা বয়াও থাকবে ৫০০০ হাজার ‘ব’ বা বয়া।
যখন তাঁত চালূ দেয় বা চালায় তখন এই ‘ব’ বা বয়ার ঝাপ বা ফ্রেম ওপর-নীচ হয়ে দুইভাগে ভাগ হয়ে ওঠা-নামা করতে থাকে। তখন ভীমের সূতাগুলিকে মাঝখানে সুরঙ্গ বা ফাঁক হয়ে যায়। সূতার এই ফাঁক দিয়ে তখন আলাদা একটা সূতার নলি সহ মাকু, ওই ফাঁক হওয়া সুরুঙ্গ দিয়ে আসাযাওয়া করতে থাকে। আর শানা বা রিড ওই সূতাগুলো চাপ দিয়ে একসাথে করে দেয়। তখনই তৈরি হয়ে যায় কাপড়। কাপড়ের গায়ে যেই নকশি বা ডিজাইন দেখা যায়, সেই নকশি বা ডিজাইন করা হয় জাপানি জ্যাকেট বা ডবির সাহায্যে। ডবি বা জ্যাকেট বহুরকমের হয়। যা দিয়ে তৈরি করা হয় জামদানি বা টাঙ্গাইল শাড়ী বা পর্দার কাপড়। সময় সময় জামা, পেন্ট, তোয়ালে, গেঞ্জির টিকেট, ও মকলম কাপড় তৈরি করতেও ডবি বা জ্যাকেটের প্রয়োজন হয়। জ্যাকেট বা ডবি হল একটা ছোট মেশিনের মতো যা তাঁত বা পাওয়ার লুমের উপরে সেটিং করা থাকে। পাওয়ার লুম আবিষ্কার হওয়ার আগেও হাত তাঁতের উপরে কাঠ দিয়ে নিজেদের তৈরি ডবি বসানো থাকতো। যা দিয়ে তৈরি হতো চাদর, নকশি করা হাতে বানানো শাড়ী। বর্তমানে ২৪ লিভারের ডবিও আছে। লিভার হল যা দিয়ে সূতার ঝাপগুলি টেনেটেনে ওঠা-নামা করায় তাকেই বলে লিভার। সবমিলিয়ে বলা হয় ডবি বা জ্যাকেট। শাড়ি কাপড় তৈরি করতে হলে জ্যাকেট ছাড়া কিছুতেই সম্ভব নয়।
আমরা যখন আদর্শ কটন মিলে থাকতাম, তখন মিলের ভিতরে গিয়ে দেখতাম আমার বড়দাদা বসে-বসে বয়ের ভিতরে সূতা ঢুকাচ্ছে। সাথে থাকতো একজন সুদক্ষ হেলপার বা সহকারি। আমিও শখ করে হেলপারের জায়গায় বসে আমার বড়দাদার সাথে সূতা গাঁথতাম। সেই থেকেই আস্তে আস্তে আমার কাপড়ের মিলে বা টেক্সটাইল মিলে তাঁতের কাজ শিখা। আমি নিজেও দীর্ঘদিন তাঁত মেশিনে বা পাওয়ার লুমে কাজ করেছি। এরপর হলাম একজন দক্ষ ড্রয়ারম্যান বা রিচিংম্যান। সরকারি সেসব বড়-বড় মিলে কাপড় তৈরির সব মেশিনপত্র থাকতো। তুলা থেকে সূতা, সূতা থেকে কাপড়। তারপর কাপড়ে রং করে পরে বাজারে বা বিদেশে রপ্তানি কারা হতো। সেসব মিলে তুলা আসতো নৌকায় বা সড়কপথে।
প্রথমে তুলা যেত ব্লু রুমে। ব্লু রুমে তুলাকে রিচার্জ করে আসতো স্প্রিং ডিপার্টমেন্টে। স্প্রিং এ তৈরি হতো সূতা। সূতা হয়ে চলে যেত (warping) ওয়ারপিং এ। সেখান থেকে ভীম হয়ে চলে যেত সাইজিঙে (সূতা মাড় করার মেশিন)। সাইজিং থেকে সূতা মাড় হয়ে বা ভীম হয়ে আসে তাঁতে। তাঁত থেকে কারিকর বা তাঁতিরা তাঁত চালিয়ে তৈরি করতো কাপড়। সেই কাপড় আবার রং কারার জন্য চলে যেত ডাইং-এ। ডাইং থেকে কাপড় রং হয়ে চলে যেত হাটবাজারে বা বিদেশে।
বস্ত্রশিল্পের কারিকর বা তাঁতিদের বর্তমান দিনকাল:
বছরখানেক আগে আমাদের নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় একটা প্রাইভেট টেক্সটাইল মিলে গিয়েছিলাম, একজন পরিচিত তাঁতির সাথে দেখা করতে। গিয়ে দেখি সেখানে আমার পরিচিত অনেক তাঁতিরা কাজ করছে। তাদের জিজ্ঞেস করলাম, কেমন আছেন? বর্তমানে কী অবস্থা টেক্সটাইল মিলের? উত্তর পেলাম, না-দাদা-না ভালো না। কাজ করলে দিনকার রোজ হয়। না করলে আর হয় না।
সেখানকার একটা ভিডিও ইউটিউবে আপলোড করে রেখেছি।
youtu.be/63tpwYJfUCc
তাদের পড়নে দেখলাম জীর্ণকাপড়, আর কঙ্কালের মতন জীর্ণদেহ। সবমিলিয়ে একেবারে দুরাবস্থা। সেই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তাঁতে কাজ করে এখনও ঠিকমতো সংসার চালাতে পারছে না পরিচিত তাঁতিরা। অথচ তাঁত চালিয়ে মানুষের লজ্জা নিবারণের জন্য কাপড় তৈরি করে যাচ্ছে দিনের পর দিন রাতের পর রাত। আমিও একসময় ছিলাম সেই কাপড় তৈরির কারিকর বা তাঁতি ও ড্রয়ারম্যান। এই কাপড় ছাড়া কারোর উপায় আছে কি? আমার জানামতে এই কাপড় ছাড়া কোনও দেশের রাজা-বাদশাদেরই লজ্জা নিবারণ হয় না। খাদ্য ছাড়া মানুষ নাকি ১১দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। কিন্তু বস্ত্র ছাড়া মানুষ এক সেকেন্ডও থাকতে পারবে বলে আমার মনে হয় না।
তাঁতিদের আর্তনাদ ও গর্ব অহংকার:
আজ আমরা কারিকর বা তাঁতিরা গর্ব করে বলতে পারি, আমরা সারা দুনিয়ার মানুষের লজ্জা নিবারণের বস্ত্র বা কাপড় তৈরির কারিকর বা তাঁতি। আমরা পরের লজ্জা নিবারণের জন্য বস্ত্র বা কাপড় তৈরি করে, আমাদেরই সমসময় টাকার অভাবে বস্ত্রহীন হয়ে থাকতে হয়। আমাদের মায়ের শরীরে পেঁচানো থাকে ছেঁড়া কাপড়। নিজের স্ত্রীর পরনে থাকে ছেঁড়া কাপড়। ছেলে-মেয়ের পরনে থাকে ছেঁড়া কাপড়। আর দিনের পর দিন থাকি না খেয়ে। সময়সময় কাজে বা মিলে ডিউটি করতে যেতে হয় না খেয়ে। সারা বছর থাকতে হয় ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে। একগজ কাপড় তৈরি করে পাই দুইটাকা। সারাদিনের মুজুরি গড়ে পাই, ২৫০/৩০০ টাকা। বিদ্যুৎ না থাকলে উৎপাদন নাই তো মুজুরি নাই। ঈদ/পূজায় বোনাস নাই। বাৎসরিক কোনো ভাতা নাই। প্রাইভেট কোনও মিলে চাকরির নিশ্চয়তা নাই। তবু আমরা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শিল্পের কারিকর, বস্ত্র কারিকর। সকলের লজ্জা নিবারণের কারিকর। আমরা কাপড় তৈরির কারিকর, আমরা গর্বিত তাঁতি। জয় হোক মানবতার।
loading...
loading...
পরিশেষ এই কথাটি নিশ্চয়ই স্বীকার করতেই হবে জয় হোক মানবতার।
কোন কাজই ছোট নয়; সকল শ্রমই সম্মানের দাবী রাখে। যে শ্রম আর মেধার সমন্বয়ে শিল্পের বিকাশ … সেই শ্রমিকদের আজকের এই দুর্দশা আমাদের চেতনাকে খাটো করে দেয়। কোথায় যেন হৃদয়ে কাঁটা বিঁধে থাকে। বিশ্বের এমন অবহেলা আর কোথাও কি রয়েছে। মনে হয় না। রুগ্ন শিল্প বাঁচাতে সরকার এগিয়ে আসে। বাংলাদেশে !!!
loading...
কিন্তু দাদা এই কাজটাকে বর্তমানে অনেকেই ঘৃণা করে । তাঁতিদের সময় অসময় সবসময় মানুষে দুরদুর করে। সংসার চালানোর জন্য দেকানেও সময়সময় বাকি দিতে চায় না।কারণ, তাঁতিদের মুজরি কম। মালিকদয় তাঁতিদের বেতনও দেয় দেরি করে তাই। এর বাস্তব সাক্ষী আমি নিজেই। তাঁরা একবারও ভাবে না যে, এই তাঁতিদের তৈরিকৃত কাপড় দিয়েই আমাদের ইজ্জত রক্ষা।
loading...
অনেক অজানা তথ্য কৌশল জানলাম। বর্তমানে হাতে বোনা কাপরের চাহিদা কিছুটা হলেও বৃদ্ধি পেয়েছে মানুষের সৌখিনতার কারনে। যদি এটাকে আরও আধুনিকায়ন করা যায় তাহলে আশা করি চাহিদা বাড়বে তবে এজন্য চাই পৃষ্টপোষক।

loading...
না শ্রদ্ধেয় দাদা, এ বিষয়ে কোনও সরকারই কোনও উদ্দোগ নেয় না। এসব চিন্তাভাবনাও তাদের নেই। তাই আজ হারিয়ে যেতে বসেছে এসব হস্তশিল্পগুলো।
loading...
চমৎকার পোস্ট । তাঁতীদের দিনকাল নিয়ে লেখা এ সময়ের একটি অসাধারণ প্রতিবেদন নিঃসন্দেহে। শুভকামনা ।
loading...
আপনার সুন্দর মন্তব্যে আমার এই নগণ্য লেখা সূচিত হলো শ্রদ্ধেয় দাদা। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
loading...
আমরা কারিকর বা তাঁতিরা গর্ব করে বলতে পারি, আমরা সারা দুনিয়ার মানুষের লজ্জা নিবারণের বস্ত্র বা কাপড় তৈরির কারিকর বা তাঁতি। আমরা পরের লজ্জা নিবারণের জন্য বস্ত্র বা কাপড় তৈরি করে, আমাদেরই সমসময় টাকার অভাবে বস্ত্রহীন হয়ে থাকতে হয়। আমাদের মায়ের শরীরে পেঁচানো থাকে ছেঁড়া কাপড়। নিজের স্ত্রীর পরনে থাকে ছেঁড়া কাপড়। ছেলে-মেয়ের পরনে থাকে ছেঁড়া কাপড়। আর দিনের পর দিন থাকি না খেয়ে।
দুঃখ পেলাম নিতাই দা। এখনও এমন দিন আছে।
loading...
আছে দিদি! এখনো নরসিংদী মাধবদীতে যেসমস্ত তাঁতিরা কাজ করে, তাদের অবস্থায় বেশি ভালো নেই। নুন আনতে পান্তা ফুরায়ের মতন অবস্থা থাকে বারোমাসই। তা নিজের চোখেই দেখা। তাদের আয় বলতে কিছুই নেই, আছে বছর ধরে দেনার বোজা। এর অনেক কারণই আছে দিদি।
loading...
আমরা তাঁতি, আমরা মানুষের লজ্জা নিবারণের কাপড় তৈরি করি।
কথাটি উচ্চারণে যে সৎসাহস এবং হিম্মত আপনি দেখিয়েছেন তাতে আপনার প্রতি আমার সম্মান বাড়লো দাদা। বিস্তারিত এই পোস্টের বক্তব্য আমার দীর্ঘদিন মনে থাকবে। আপনি ভালো থাকুন।
loading...
শ্রদ্ধেয় সৌমিত্র দাদা এই কাজে যতদিন সম্পৃক্ত ছিলাম, ততদিন বেশিরভাগ সময়ই কষ্টেই ছিলাম। যা আর লিখে শেষ করা যাবে না। তাই আরকিছু লিখলামও না। ভালো থাকবেন শ্রদ্ধেয় দাদা।
loading...