কুকুরের জন্য ভাদ্র আশ্বিন এই দুইমাস এক বিশেষ সময়। এই দুইমাস কুকুরের প্রজনন কাল | এই সময়ে অলিতে গলিতে কুকুরের ঘেউ ঘেউ ডাক মানুষের মনে যতনা বিরক্তি জন্মায়, তার চেয়ে বেশি জন্মায় ভয় | ভয় হলো কুকুরের কামড়ের ভয়, কখন যেন কুকুরের কামড় খেতে হয়! এই দুইমাস সময় ভয়ে ভয়ে পার করতে পারলেই, আর তেমন একটা ভয় মানুষের মনে থাকে না। এরপর ভয়ের বদলে শুরু হয় আনন্দ! অনেকে হয়তো বলবেন, এটা আবার কিসের আনন্দ? আনন্দ হলো কুকুরের নতুন জন্মানো বাচ্চা নিয়ে ছেলে-পেলেদের মহানন্দ। তখন দেখা যায়, ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা সুন্দর ফুটফুটে হরেক রঙের কুকুরের বাচ্চাগুলোকে আদর করছে। কেউ রাখছে কোলে, কেউ রাখে পিঠে। শুধু ছোট ছেলে-মেয়েরা কেন, অনেক বড়রাও কুকুরের নতুন জন্মানো বাচ্চাকে পোষার জন্য অতি আদর করে নিজের ঘরে নিয়ে যায়। সেই পোষা অনেকের দীর্ঘস্থায়ী হয়, আবার অনেকের স্থায়ী হয়ে উঠে না। কেউ পনেরোদিন, কেউ একমাস পোষার পর বিরক্ত হয়ে বাচ্চাটিকে রাস্তায় ফেলে দেয়।
আবার অনেক কুকুরের বাচ্চা মানুষের আদরযত্ন থেকে বঞ্চিতও হয়ে থাকে। যাই হোক, ভাদ্র আশ্বিন মাসে জন্মানো সব কুকুরেই শেষমেশ বেওয়ারিশ হিসেবে গন্য করা হয়। এসব বেওয়ারিশ কুকুরগুলো শহরের অলিতে গলিতে বিড়বিড় করতে থাকে। এই কুকুরগুলোর মধ্যে অনেক কুকুর খাবারের অভাবে অনেকসময় পাগলেরমত হয়ে যায়। তখন পেটের ক্ষুধায় পাগল হওয়া কুকুরগুলো অনেকসময় ক্ষিপ্ত হয়ে মানুষকে কামড়ায়। কুকুরের কামড় খেয়ে আমাদের দেশের গ্রাম ও শহরে অনেক মানুষের মৃত্যুও ঘটে। ক্যকুরের কামড়ে জলাতঙ্ক রোগে ভুগে যখন দুই-একজন মানুষ মারা যায়, তখনই শুরু হয় বেওয়ারিশ কুকুর নিধন করা। প্রশাসনের কাছে দাবি জানানো হয়, এসব বেওয়ারিশ কুকুরগুলোকে নিধন করার। গণমানুষের দাবির মুখে পড়ে ইউনিয়ন পরিষদ অথবা সিটি কর্পোরেশন শুরু করে দেয়, বেওয়ারিশ কুকুর নিধন করা বা কুকুরকে জলাতঙ্ক রোগ প্রতিষেধক ইনজেকশন দেওয়া।
আগে দেখা যেত সিটি কর্পোরেশন থেকে ভাদ্রমাস শুরু হবার আগেই, একটা ট্রাক নিয়ে শহরের অলিতে গলিতে কুকুর নিধনের অভিযানে নামতো। এই কাজে নিয়োজিত থাকতো হরিজন সম্প্রদায়ের সুইপার নামের কয়েকজন মানুষ। তাদের হাতে থাকতো বড় লম্বা সাঁড়াশি। বেওয়ারিশ কুকুর দেখা মাত্রই অনেক কলাকৌশল অবলম্ব করে, কুকুরটিকে সাঁড়াশিতে আটকানো হতো। এরপর মোটা লম্বা লাঠি দিয়ে আটকানো কুকুরটির মাথায় আঘাত করে কুকুরটিকে মেরে ট্রাকে ফেলে রাখা হতো। পরে ওইসব মরা কুকুরগুলোকে শহরের বাইরে নির্জন এক জায়গায় নিয়ে মাটিচাপা দেওয়া হতো। তবে এখন বেওয়ারিশ কুকুরগুলোকে আর আঘাত করে মারা হচ্ছে না। মানবতার দৃষ্টান্ত রেখে বেওয়ারিশ কুকুরগুলোকে জলাতঙ্ক রোগ প্রতিষেধক ইনজেকশন দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। এমনটা দেখা যায় আমাদের নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ডে।
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে শুরু হয়েছে দীর্ঘমেয়াদী জলাতঙ্করোধে ভাসমান কুকুরকে প্রতিষেধক ইনজেকশন দেওয়া। গত ৩১ জুলাই সকালবেলা গোগনাইল চৌধুরীবাড়ি আরামবাগ রোডে দেখা যায়, অটোরিকশা চড়ে সিটি কর্পোরেশন থেকে আসা পাঁচ ছয়জন সদস্য নিয়ে গঠিত একটা টিম। এই টিমে অংশগ্রহণকারিরা প্রথমে মাছ ধরার নেট দিয়ে কুকুরকে আটকায়। এরপর স্প্রে দিয়ে কুকুরের শরীরে লাল অথবা ব্লু রঙ ছিটিয়ে দেয়। তখন কুকুরটি খুবই উত্তেজিত হয়ে উঠে। তখন অনেক নাড়াচাড়ার কারণে কুকুরের শরীরে ইনজেকশন পুশ করতে সমস্যা হয়। কুকুরটি শান্ত হতে কয়েক মিনিট সময় লেগে যায়। কুকুরটি শান্ত হলে কুকুরের শরীরে ইনজেকশন পুশ করে আটকানো নেট থেকে কুকুরটিকে ছেড়ে দেওয়া হয়। নেট থেকে ছাড়া পেয়ে ভাসমান কুকুরটি লেজ নেড়ে হেলেদুলে স্থান ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যায়। যথাসময়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের এমন উদ্যোগে মনুষ স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছে। অনেকেই সিটি কর্পোরেশনের মাননীয় মেয়রকে ধন্যবাদও জানাচ্ছে।
loading...
loading...
আপনার মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন কে ধন্যবাদ।
নারায়ণগঞ্জ সিটি বাদে; অন্যান্য সিটির দিকে যদি নজর দেই। সেখানে কেবলই ভীতি আর অনিয়মের ভাণ্ডার। এই ভীতি আর সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য অনীহা; দেশের সর্বত্র শুধু আজ থেকে নয় … বহুকাল থেকেই বিরাজ করছে। আমাদের দূর্ভাগ্য, আমাদের দেশের প্রশাসন যন্ত্র সময়ের কাজ সময়ে করতে শেখেনি। মূল বিষয় … সিদ্ধান্তহীনতা। ফাইল চালাচালি'র সনাতন রেওয়াজ।
loading...
আমাদের নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের এমন সময়োপযোগী পদক্ষেপ সত্যি সকলের কাছেই প্রশংসনীয় । জীবের প্রতি অনন্য দৃষ্টান্ত করা এই প্রথম। সেইসাথে আপনার সুন্দর মন্তব্যখানাও প্রশংসার দাবি রাখে। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় মুরুব্বি দাদা।
loading...
উত্তম এবং কার্যকরী ব্যবস্থা সময়েরটা সময়েই নেয়া উচিত।
loading...
জীবের প্রতি অনন্য দৃষ্টান্ত করা এই প্রথম। সেইসাথে আপনার সুন্দর মন্তব্যখানাও প্রশংসার দাবি রাখে। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ সৌমিত্র চক্রবর্তী । আপনার জন্য আমার এই
।
loading...
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন প্রশংসনীয় উদ্যোগ নেয়ায় খুশি হলাম।
loading...
সুন্দর মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় শাকিলা তুবা । আশা করি ভালো থাকবেন সবসময়।
loading...
মানবতার অনন্য দৃষ্টান্ত। ভীষণ ভালো লাগলো সংবাদটি জেনে। ধন্যবাদ দাদা।
loading...
সুন্দর মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় দিদি রিয়া রিয়া। আশা করি ভালো থাকবেন সবসময়।
loading...
* বেশ প্রশংসনীয় উদ্যোগ…
শুভরাত্রি।
loading...
সুন্দর মন্তব্যের জন্য আপনাকে অজস্র ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় মুহাম্মদ দিলওয়ার হুসাইন দাদা। আশা করি ভালো থাকবেন সবসময়।
loading...
সঙ্গত কারণে লেখাটা মন দিয়ে পড়লাম।
একবার একটা সেন্সেটিভ এলাকায় কুকুরের উপদ্রব বেড়ে গিয়েছিল। নানান কারণে ভ্যাক্সিনেট করা সম্ভব হচ্ছিলনা। তখন সিদ্ধান্ত নেয়া হলোঃ (১) অর্ধেক ডগ পপুলেশনকে গুলি করে মেরে ফেলা হবে (২) বাকি অর্ধেকের পুরুষ ডগগুলিকে ক্যাশট্রেশন করা হবে যাতে ডগ পপুলেশন আর না বাড়ে। এটা একটা যুদ্ধাক্রান্ত দেশের ২০১৫ সালের কথা।
তখন এনিম্যাল রাইটস গ্রুপ রাতের অন্ধকারে পোস্টারিং করে প্রতিবাদ জানিয়েছিল।এদেশে এনিম্যাল রাইটস গ্রুপ নেই ধারণা করি।
তথ্যসমৃদ্ধ এই লেখাটার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
loading...
আমাদের দেশে এনিম্যাল রাইটস গ্রুপ নেই ঠিক , তবে এনিম্যাল রাইটস এর সকল নিয়ম নীতি বর্তমানে মেনে চলা হচ্ছে দাদা। যদি তা নাইবা হতো, তা হলে সেই আগের মতন লাঠি দিয়ে মাথায় আঘাত করে কুকুরগুলো মেরে ফেলা হতো। তা কিন্তু হচ্ছে না দাদা। যাই হোক, এই নিয়মে বাংলাদেশে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনই মনে হয় প্রথম ভাসমান কুকুরগুলোকে ইনজেকশন দিয়ে বাঁচিয়ে রাখছে।
আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় দাদা। আশা করি ভালো থাকবেন সবসময়।
loading...