সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে ডেঙ্গু। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য মতে, বছরের শুরুর দিন থেকে শনিবার (২৭ জুলাই) পর্যন্ত ডেঙ্গুর জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১০ হাজার ৫২৮ জন। এর মধ্যে ৭ হাজার ৮৪৯ জন চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরেছেন। আর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে অন্তত আট জন মারা গিয়েছে(বেসরকারি হিসেবে ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে)। ফলে ডেঙ্গুজ্বর নিয়ে মানুষের মাঝে উদ্বেগ, আতঙ্ক তৈরী হচ্ছে। অথচ সামান্য কিছু সতর্কতা ও সাবধানতা অবলম্বন করলে এর থেকে নিরাপদ থাকা সম্ভব।
এডিস মশার কামড় থেকে বাঁচতে যা করবেনঃ
১. ডেঙ্গু জ্বরের জন্য দায়ী এডিস মশকী রাতে/অন্ধকারে কামড়ায় না। এডিস মশা মূলত দিনের বেলা, সকাল ও সন্ধ্যায় কামড়ায়, তবে রাত্রে উজ্জ্বল আলোতেও কামড়াতে পারে। তাই এ সময় শরীর ভালোভাবে কাপড়ে ঢেকে রাখতে হবে। শিশুদের হাফপ্যান্টের বদলে ফুলপ্যান্ট বা পায়জামা পরাতে হবে।
২. দিনে ও রাতে মশারি ব্যবহার করতে হবে।
৩. দরজা-জানালায় নেট লাগাতে হবে।
৪. স্প্রে, লোশন, ক্রিম, কয়েল, ম্যাট ব্যবহার করা যেতে পারে।
৫. মশার আস্তানা ধ্বংশ করতে হবে
এডিস মশা পরিষ্কার বদ্ধ পানিতে ডিম পাড়ে। তাই টব, ফুলদানি, অব্যবহৃত কৌটা, ইত্যাদিতে যেন পানি জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বাড়ির আশপাশের ঝোপঝাড়, জঙ্গল, জলাশয় ইত্যাদি পরিষ্কার রাখতে হবে।
ডেঙ্গু জ্বরে বিশেষ কিছু সতর্কতাঃ
১. ডেঙ্গুর লক্ষণঃ
সাধারণভাবে ডেঙ্গুর লক্ষণ হচ্ছে জ্বর। ১০১ ডিগ্রি থেকে ১০২ ডিগ্রি তাপমাত্রা থাকতে পারে। জ্বর একটানা থাকতে পারে, আবার ঘাম দিয়েজ্বর ছেড়ে দেবার পর আবারো জ্বর আসতে পারে। এরসাথে শরীরে ব্যথা মাথাব্যথা, চেখের পেছনে ব্যথা এবং চামড়ায় লালচে দাগ (র্যাশ) হতে পারে। তবে এগুলো না থাকলেও ডেঙ্গু হতে পারে।
২. জ্বর হলেই কী চিন্তিত হবেন?
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক এবিএম আবদুল্লাহ বলছেন, “এখন যেহেতু ডেঙ্গুর সময়, সেজন্য জ্বর হল অবহেলা করা উচিত নয়।” জ্বরে আক্রান্ত হলেই সাথে-সাথে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন অধ্যাপক আবদুল্লাহ।তিনি বলছেন, ”ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে যারা মারা গেছেন, তারা জ্বরকে অবহেলা করেছেন। জ্বরের সাথে যদি সর্দি- কাশি, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া কিংবা অন্য কোন বিষয় জড়িত থাকেতাহলে সেটি ডেঙ্গু না হয়ে অন্যকিছু হতে পারে। তবে জ্বর হলেই সচেতন থাকতে হবে।” [উল্লেখ্য, দেশের সব বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু টেস্টের ফি ৫০০ টাকার বেশি না নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আজ রবিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. মো. আমিনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সুতরাং ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা গেলে কয়েকটা টেস্ট করিয়ে চিন্তামুক্ত থাকুন]
৩. বিশ্রামে থাকতে হবে
সরকারের কমিউনিক্যাবল ডিজিজ কন্ট্রোল বা সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ বিভাগের অন্যতম পরিচালক ড. সানিয়া তাহমিনা বলেন, ”জ্বর হলে বিশ্রামে থাকতে হবে। তিনি পরামর্শ দিচ্ছেন, জ্বর নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করা উচিত নয়। একজন ব্যক্তি সাধারণত প্রতিদিন যেসব পরিশ্রমের কাজ করে, সেগুলো না করাই ভালো। পরিপূর্ণ বিশ্রাম প্রয়োজন।”
৪. যেসব খাবার খাবেন
প্রচুর পরিমাণে তরল জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে। যেমন – ডাবের পানি, লেবুর শরবত, ফলের জুস এবং খাবার স্যালাইন গ্রহণ করা যেতে পারে। এমন নয় যে প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে, পানি জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে।
৫. যেসব ঔষধ খাওয়া উচিত নয়
অধ্যাপক তাহমিনা বলেন, ”ডেঙ্গু জ্বর হলে প্যারাসিটামল খাওয়া যাবে। স্বাভাবিক ওজনের একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি প্রতিদিন সর্বোচ্চ চারটি প্যারাসিটামল খেতে পারবে।”চিকিৎসকরা বলছেন, প্যারাসিটামলের সর্বোচ্চ ডোজ হচ্ছে প্রতিদিন চার গ্রাম। কিন্তু কোন ব্যক্তির যদি লিভার, হার্ট এবং কিডনি সংক্রান্ত জটিলতা থাকে, তাহলে প্যারাসিটামল সেবনের আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে গায়ে ব্যথার জন্যঅ্যাসপিরিন জাতীয় ঔষধ খাওয়া যাবে না। ডেঙ্গুর সময় অ্যাসপিরিন জাতীয় ঔষধ গ্রহণ করলে রক্তক্ষরণ হতে পারে।
৬.প্ল্যাটিলেট বা রক্তকণিকা
ডেঙ্গু জ্বরের ক্ষেত্রে প্ল্যাটিলেট বা রক্তকণিকা এখন আর মূল ফ্যাক্টর নয় বলে উল্লেখ করেন অধ্যাপক তাহমিনা।তিনি বলেন, ”প্ল্যাটিলেট কাউন্ট নিয়ে উদ্বিগ্ন হবার কোন প্রয়োজন নেই। বিষয়টি চিকিৎসকের উপর ছেড়ে দেয়াই ভালো।”সাধারণত একজন মানুষের রক্তে প্ল্যাটিলেট কাউন্ট থাকে দেড়-লাখ থেকে সাড়ে চার-লাখ পর্যন্ত।
৭. ডেঙ্গু হলেই কী হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে?
ডেঙ্গু জ্বরের তিনটি ভাগ রয়েছে। এ ভাগগুলো হচ্ছে – ‘এ’, ‘বি’ এবং ‘সি’।প্রথম ক্যাটাগরির রোগীরা নরমাল থাকে। তাদের শুধু জ্বর থাকে। অধিকাংশ ডেঙ্গু রোগী ‘এ’ ক্যাটাগরির।তাদের হাসপাতালে ভর্তি হবার কোন প্রয়োজন নেই। ‘বি’ ক্যাটাগরির ডেঙ্গু রোগীদের সবই স্বাভাবিক থাকে, কিন্তু শরীরে কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। যেমন তার পেটে ব্যথা হতে পারে, বমি হতে পারে প্রচুর কিংবা সে কিছুই খেতে পারছে না।অনেক সময় দেখা যায়, দুইদিন জ্বরের পরে শরীর ঠাণ্ডা হয়ে যায়। এক্ষেত্রে হাসপাতাল ভর্তি হওয়াই ভালো।’সি’ ক্যাটাগরির ডেঙ্গু জ্বর সবচেয়ে খারাপ। কিছু-কিছু ক্ষেত্রে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউ’র প্রয়োজন হতে পারে।
[ উল্লেখ্য, দেশের সব বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু টেস্টের ফি ৫০০ টাকার বেশি না নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সুতরাং লক্ষণ দেখা গেলে টেস্ট করিয়ে চিন্তামুক্ত থাকি]
বি. দ্রঃ
সাধারণত জুলাই থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ থাকে। কারণ এ সময়টিতে এডিস মশার বিস্তার ঘটে। আর এখন যেহেতু বর্ষাকাল বাসার ছাদে/অন্য কোথাও পানি জমে আছে কিনা লক্ষ রাখুন(আমি নিজেও ছাদের টব চেক করেছি)। সামান্য অসচেতনায় পানি জমিয়ে রেখে মশা উৎপাদন করে সিটি কর্পোরেশন/সরকারের চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার করে লাভ নেই। আমরা নিজেরা সচেতন হই, সুস্থ্য থাকি।
তথ্যসূত্রঃ বিবিসি বাংলা, বিডি নিউজ২৪
loading...
loading...
শেয়ার করার জন্য আপনাকে বিশেষ ধন্যবাদ মি. নিজু মন্ডল। আমাদের নিজেদেরকেও যেমন সচেতন হতে হবে পাশাপাশি অন্যদেরকে সচেতন করতে হবে। আমাদের দায়িত্ব।
loading...
ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব থেকে বাঁচতে হলে সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে হবে। একমত।
loading...
আমরা নিজেরা সচেতন হই, সুস্থ্য থাকি। শেয়ার করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ দাদা।
loading...
ধন্যবাদ নিজু মন্ডল ভাই।
loading...
সবাই সচেতন হলে কিছুটা কমে আসেব। ধন্যবা।
loading...
বি. দ্রঃ
ডেঙ্গু টেস্টের মূল্য বেসরকারিতে ৫০০ টাকা, সরকারিতে ফ্রি: স্বাস্থ্য অধিদফতর
ডেঙ্গু রোগ নির্ণয়ের জন্য টেস্টগুলোর মূল্যঃ
ক) NS1- ৫০০ টাকা (সর্বোচ্চ), যার পূর্বমূল্য ছিল ১২০০ – ২০০০ টাকা।
খ) IgM + IgE অথবা IgM/ IgE- ৫০০ টাকা (সর্বোচ্চ), যার পূর্বমূল্য ছিল ৮০০ – ১৬০০ টাকা।
গ) CBC (RBC + WBC + Platelet + Hematocrit)- ৪০০ টাকা (সর্বোচ্চ), যার পূর্বমূল্য ছিল ১০০০ টাকা।
এই মূল্য তালিকা ২৮ জুলাই থেকে কার্যকর হবে। পরবর্তী ঘোষণা না আসা পর্যন্ত এই মূল্য তালিকা কার্যকর থাকবে।
সবাইকে ধন্যবাদ।
loading...
লেখাটা অত্যান্ত যুগোপযোগী।ধন্যবাদ আপনাকে।
loading...