কুজ্ঝটিকা (তৃতীয় পর্ব)


সিনিগ্ধার চেহারায় বিষণ্ণতারচাপ আছে কিন্তু কথা বলতে গেলে বেশ মিশুক প্রকৃতিরই মনে হয়। সমাজ বিজ্ঞানের ছাত্রী হলেও বেশ গুছিয়ে কথা বলতে পারে। রাগও আছে অসম্ভব, তাই কথা বলতে বেশ সতর্ক থাকতে হয়। দুএকদিনের মধ্যে আমাদের মধ্যে বেশ বন্ধুত্ব হয়েছে। শর্মি না থাকলেও আড্ডা দিতে কোন সমস্যা হয়না। সরাসরি গ্রাম থেকে এসেছি বলে আমার জড়তাগুলো ধীরেধীরে কাটিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছি।

ইদানিং আমার ডিপার্টমেন্টে তার আনাগোনা বেড়েছে। ক্লাসের সুযোগে কিংবা ক্লাস করার অনিচ্ছাতে আমাদের বিভাগীয় সেমিনারে তার একটা অস্থায়ী ঠিকানা গড়ে নিয়েছ। তাকে সেমিনারের সামনে দেখলে আর কি মন বসে ক্লাসে! জারুলতলা যেন ডাকছে আমাদের আয়, ছুটে আয়। ক্লাসে রুটিনের সাথে দুজনের নিবিড় আড্ডার একটা ক্লাস যুক্ত হয়েছে। ক্লাসে ফাঁকি চলে, দুজনের গল্পে ফাঁকি চলেনা। এ যেন এক অবধারিত কর্মসূচি। ঝড় বৃষ্টি বাদল কোন কিছুতে ক্লান্তি নেই। ক্যাম্পাসও যেন মেনে নিতে চায়না দুজনের দেখা না হওয়া। অল্পদিনে ক্যাম্পাসের সবার পরিচিত মুখ হয়ে উঠলাম। রাজনীতি, সমাজনীতি, অর্থনীতি কোনকিছু বাদ যায়না আমাদের আলোচনায়।

ক্যাম্পাসে আমাদের বন্ধুর সংখ্যা বেশ কিছুটা বেড়েছে। গল্প গান বেশ আনন্দে কেটে যাচ্ছে দিনগুলো। মাঝে মাঝে ভাবি, যে আদিত্য গ্রাম ছেড়ে শহরে এসেছে, সে কি সঠিক পথে এগুচ্ছে! ভুলে গেছে মায়ের স্বপ্ন!। জানিনা এ কোন মায়ার বন্ধনে জড়াচ্ছি? প্রাত্যহিক রুটিনে পরিবর্তন আসে, একটা রুটিনে কখনো পরিবর্তন আসেনা, সিনিগ্ধার সাথে ছুটিয়ে আড্ডা দেয়া। আমার ক্লাসের প্রতি সিনিগ্ধা অনেক যত্নশীল। ক্লাস ফাঁকি দেয়া তার বেশ অপছন্দ। আমার ক্লাস শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের ক্লাসের সামনে বসে থাকবে কিন্তু ক্লাস না করে চলে আসাটা সে কোনোমতে মেনে নিতে পারতোনা। কিন্তু নিজের ক্লাসের প্রতি ছিল বেশ উদাসীন। সপ্তাহান্তেও একদিন ক্লাসে যেতো কিনা সন্দেহ। ইদানিং অনেকে সিনিগ্ধাকে আমার ডিপার্টমেন্টের ছাত্রী মনে করে ভুল করতে শুরু করেছে। হঠাৎ আজ সিনিগ্ধার মুখে এ কী শুনি!

জানিস আদিত্য, আমাদের প্রথম বর্ষের পরীক্ষার রুটিন দিয়েছে।
-জানবোনা কেন? আমাদের পরীক্ষাও তো একসাথে হবে।
-ও, তাইতো।
-পরীক্ষার রুটিন দিয়েছে তো কী হয়েছে? তুই পরীক্ষা দিবি?
-কেন দেবনা? জানিস না, ফাস্ট ইয়ারে ড্রপ দেয়া যায়না? ভর্তি বাতিল হয়ে যাবে। পরীক্ষা না দিলে বাবা অনেক রাগ করবেন।
– ক্লাসে যাসনা, কী পরীক্ষা দিবি!
– চল, আজ লাইব্রেরি ওয়ার্ক করি।
– ঠিক আছে, চল।
যে কথা, সেই কাজ। দুজনে চললাম লাইব্রেরির দিকে। পথে শর্মির সাথে দেখা হয়ে গেল। কী রে কোথায় যাস? আমাদের তো ভুলেই গেলি।
– এসব কী বলছিস। সবার আগে তো তোর সাথেই দেখা হয়। কিছুক্ষণ আগে তো একসাথে ক্লাস করে বের হলাম।
– তার পর তো কোথায় উধাও হয়ে যাস, আর দেখা যায়না। লুকিয়ে লুকিয়ে জল খাচ্ছিস বুঝি!
– ছি, এসব কী বলছিস?
– সিনিগ্ধা আমার যেমন বন্ধু, তোরও তো তাই।

সিনিগ্ধাঃ তোরা কি এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঝগড়া করবি? নাকি লাইব্রেরিতে যাবি, আমি যাচ্ছি কিন্তু।
শর্মিঃ দাড়া, আমিও যাবো।

তিনজন ছুটে চললাম লাইব্রেরির দিকে। একগাদা বই নিলাম। আজ আমরা বেশ মনযোগী স্টুডেন্ট। কিন্তু সিনিগ্ধা যেন কিছুতে পড়ায় মন বসাতে পারছেনা।
জানিস আদিত্য, ইদানিং আমার কিছুতে মন বসছেনা। আমার কাছে কোন কিছুই ভালো লাগেনা। একটা সাদা কাগজ দে, দেখি কিছু লেখা যায় কিনা? কী লিখছে সে দিকে না তাকিয়ে আমি আর শর্মি রবীন্দ্র সাহিত্য নিয়ে কিছুটা আলোচনা করছি। সিনিগ্ধা তার নিজের মত লিখছে। হঠাত কোন কথা না বলে, তার লিখা কাগজটা হাতে ধরিয়ে দিয়ে বের হয়ে গেল। কাগজটি লিখা ছিল-
আদিত্য,
আমার কোন কিছু ভালো লাগেনা। আমার ভালো না লাগা জীবনটা তোকে উৎসর্গ করলাম। এ জীবন নিয়ে তুই যে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারিস। আমাকে বাঁচিয়েও রাখতে পারিস। চাইলে হত্যাও করতে পারিস।

… ইতি
সিনিগ্ধা।

(চলবে)

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

৮ টি মন্তব্য (লেখকের ৪টি) | ৪ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ১৫-১১-২০১৮ | ৭:২২ |

    আজকের পর্বটি এমন এক ক্লাইমেক্সে এসে দাঁড়ালো যে, পরের পর্বে গল্প লিখকের মনের অবস্থা আর প্রত্যুত্তর কি হতে পারে সেটাই ভাবছি। Smile জয়তু প্রিয় কবি। শুভ সকাল।

    GD Star Rating
    loading...
    • মুহাম্মদ দিলওয়ার হুসাইন : ১৭-১১-২০১৮ | ৪:২২ |

      * প্রিয় প্রেরণাদাতা মুরুব্বী, অনেক অনেক ধন্যবাদ।

      আপনাকদের অনুপ্রেরনাই লিখার উৎস। ভালো থাকুন সবসময়। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gif

      GD Star Rating
      loading...
  2. সৌমিত্র চক্রবর্তী : ১৫-১১-২০১৮ | ১৯:৪৬ |

    এই পর্যায় পর্যন্ত পড়লাম কবি হুসাইন ভাই। বাকি সিনারিওর অপেক্ষায় ….

    GD Star Rating
    loading...
  3. রিয়া রিয়া : ১৫-১১-২০১৮ | ২০:০১ |

    সিনিগ্ধাকে ভীষণ ফীল করছি কবি দা। সিনিগ্ধার জন্যই তো নায়কের এই গতি। দেখা যাক কি অপেক্ষা করছে দুজনের জন্য। মিলন না বিরহ। আমার তো মনে হয় বিরহ।

    GD Star Rating
    loading...
    • মুহাম্মদ দিলওয়ার হুসাইন : ১৭-১১-২০১৮ | ৪:২৬ |

      * প্রিয় কবি দি, চরিত্র কাল্পনিক। বিষয়বস্তু অনেকাংশেই সত্য বলে সাহিত্যরসে কিছু ঘাটতি আসতে পারে। 

      আদিত্যের জীবনটা খুব কাছে থেকে দেখা।

      শুভরাত্রি।

      GD Star Rating
      loading...
  4. কালাম হাবিব : ১৫-১১-২০১৮ | ২২:৪৩ |

    ভালো লাগলো! https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gif

    GD Star Rating
    loading...