কুজ্ঝটিকা (দ্বিতীয় পর্ব)

২.
অন্যদিনের তুলনায় আজকের রাতটা বেশ উত্তেজনায় কাটে। হোক না সে এক ব্যর্থ প্রেমের প্রতিচ্ছবি। তাতে কী ! সে একা, এটিই আমার কাছে ধ্রুব সত্য। এক পলকের দেখায় মনে হল, আমার কল্পনার নারীর সব গুণই তার কাছে বিদ্যমান। কেমন পাষাণ হলে এমন নারীকে ছেড়ে কেউ পালাতে পারে! আবার ভাবি, সে না পালালে তো আমার ভাবনার অবকাশও ছিলোনা। মনে মনে ধন্যবাদ জানাই ঐ পাষাণ হৃদয়ের অধিকারী ছেলেটিকে। আমার কল্পনার সব বৈশিষ্ট্য আছে সিনিগ্ধার কাছে। কেমন নিরীহ মায়া হরিণী চাহনি! এমন ছোটখাটো পাটকাঠির মতো চেহারা। আমার আজন্ম লালিত স্বপ্নের রমণী ঠিক এমনই। সেই ছোট্ট বিড়াল শাবকের মত কোলে লুকিয়ে রাখা যায়। মনে মনে ভাবলাম বিধাতা কারো মনের ইচ্ছা অপূর্ণ রাখেনা। তাইতো মেঘ না চাইতে বৃষ্টি!
ক্যাম্পাসে এলাম। মন কী বসে ক্লাসে! যদি দেখা হয় কীভাবে শুরু করব। বেশ কিছু শব্দ জাল তৈরি করলাম। বারবার মনে মনে আবৃত্তি করলাম। আবার কী চিন্তা করতে করতে সব ভুলে গেলাম, সব। আবার নতুন শব্দের শব্দ বুনন। আবার নতুন চিত্রকল্প! আবার ভুলে যাওয়া। আবার নতুন সংলাপ…।
এভাবে কেটে গেলো বেশ কিছুটা সময়। ক্লাসের সামনের করিডোর হাঁটাহাঁটি। সিনিগ্ধার গতদিনের বসার জায়গাটা বারবার দেখে নেয়া, এভাবে লম্বা একটা সময় কেটে যায়। পেছন থেকে শর্মিষ্ঠা ডাক না দিলে আজকের পুরো দিনটাই হয়তো এভাবে কেটে যেত।
কীরে আদিত্য, ক্যামন আছিস? ক্লাসে গেলিনা, এভাবে এখানে পায়চারি করছিস কেন? কারো জন্য অপেক্ষা করছিস? চল, ঝুপড়ি থেকে চা খেয়ে আসি। ভাবলাম মন্দ হয়না। যদি সিনিগ্ধার সাথে দেখা হয়ে যায়। তা হলেতো কথাই নেই। তাই বললাম, ঠিক আছে চল।
শর্মির সাথে যাচ্ছি, চা খেতে, কিন্তু মন যেন খুঁজে চলছে অন্য কিছু! আবার শর্মির প্রশ্নে চেতনা ফিরে পেলাম। কীরে আদিত্য, কী ভাবছিস?
কই, নাতো। কী ভাববো!
তোরে আজ অনেক বিষণ্ণ মনে হচ্ছে। নাকি, ক্যাম্পাসে আসতে না আসতে কারো প্রেমে মজেছিস?

শর্মিদের বাসা এই ক্যাম্পাসেই। তাই সব কিছু তাদের আগে থেকেই চেনা। সিনিগ্ধা আর শর্মি দুজনই উনিভার্সিটি কলেজ থেকে পাশ করেছে। তাদের বন্ধুত্বও তখন থেকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর আজ প্রথম এলাম ঝুপড়িতে। তাও আবার এক মেয়ে বন্ধুর সাথে। ভুলে যাচ্ছি অতীতের সব সংস্কার। মনে বিন্দুমাত্র শঙ্কা নেই। কে আমাকে এখানে চেনে। আমি এক সম্পূর্ণ স্বাধীনসত্তা। আর মনে মনে ভাবলাম, প্রেমে কি ভয় পেলে চলে!
একটা দোকানে বসতে যাবো এমন সময় দেখি, সিনিগ্ধা বসে একটা টেবিলে একা একা। তাকে দেখে যারপরনাই, খুশি হলাম বটে পাছে কিছু ধরা পড়ে সে ভয়ে গম্ভীর হয়ে সৌজন্যতার খাতিরে শুধু এইটুকু বললাম, জী আপনি এখানে? ভালোই হল, চা খেতে খেতে কিছুটা গল্প করা যাবে।
জী, ভালো আছি। আমাকে আপনি করে বলছেন কেন? আমরাতো ইয়ারম্যাট। এ কথাগুলো বলে সে শর্মির সাথে কথায় মগ্ন হয়ে গেলো। পাশে বসে নীরব শ্রোতার মত তাদের কথা শুনে গেলাম।
কী বলব! কিছুই খুঁজে পাচ্ছিনা। সকালের সংলাপ, রিহার্সেল, সব ভুলে গেলাম, সব।

(চলবে)

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

৮ টি মন্তব্য (লেখকের ৪টি) | ৪ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ১৩-১১-২০১৮ | ৬:৪৯ |

    গল্প নায়কের আজ তাহলে বিশেষ দিন। আলাপন। Smile

    GD Star Rating
    loading...
  2. রুকশানা হক : ১৩-১১-২০১৮ | ৯:০০ |

    গল্পটা পড়ার অপেক্ষায় রইলাম। শুভকামনা। 

    GD Star Rating
    loading...
  3. সৌমিত্র চক্রবর্তী : ১৩-১১-২০১৮ | ২১:০৫ |

    গল্প লেখকের আসনে নিজেকে বসিয়ে ভাবলাম গল্পটির বিষয়। প্রেমের গল্প হুসাইন ভাই। চলুক। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_smile.gif

    GD Star Rating
    loading...
  4. রিয়া রিয়া : ১৩-১১-২০১৮ | ২১:১৮ |

    Smile সিনিগ্ধা'কে এবার কিছু বলে ফেলুন। নিয়মিত পড়তে চাই ধারাবাহিকটি কবি দা।

    GD Star Rating
    loading...